?> মুদারাবা পরিচিতি ও মুদারাবা বিনিয়োগ পদ্ধতি - Best Information
মুদারাবা বিনিয়োগ পদ্ধতি

মুদারাবা পরিচিতি ও মুদারাবা বিনিয়োগ পদ্ধতি

মুদারাবা বিনিয়োগ পদ্ধতি(Murdaraba Investment Method)

মুদারাবা ইসলামী ব্যাংকিং-এর অন্যতম একটি বিনিয়োগ পদ্ধতি। মুদারাবা বলা হয় এমন ধরনের কারবারকে যেখানে দু’টি পক্ষ থাকে। মুনাফার উদ্দেশ্যে একপক্ষ মূলধন সরবরাহ করে আর অপরপক্ষ মেধা ও শ্রম ব্যয় করে উক্ত মূলধন দিয়ে কারবার/ব্যবসায় পরিচালনা করে। ব্যবসায় লাভ হলে উভয় পক্ষের মধ্যে পূর্ব- শর্তানুসারে বণ্টিত হয়। আর লোকসান হলে মূলধন সরবরাহকারী পক্ষকে তা বহন করতে হয়।

মুদারাবা পরিচিতি(Introduction of Mudarabah)

মুদারাবা’ শব্দটি আরবি ‘দারব’ বা ‘দাররুন’ থেকে উদ্ভূত। এর অর্থ আল্লাহর রহমতের তালাশে সফর করা, অন্বেষণ করা, দৃষ্টান্ত দেয়া, পরিভ্রমণ করা, পদচারণা বা ভ্রমণ করা ইত্যাদি অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আল কুরআনে শব্দটি পরিভ্রমণ করা অর্থে বিভিন্ন আয়াতে ব্যবহৃত হয়েছে। এর আভিধানিক অর্থ বিচরণ বা চলাফেরা করা। যেহেতু ব্যবসায় পরিচালনাকারী পৃথিবীতে একস্থান থেকে অন্যস্থানে, এক দেশ থেকে অন্য দেশে গমন করে ব্যবসায় করে থাকেন, তাই ইসলামী আইনবিদগণ এর নাম দিয়েছেন মুদারাবা । আল্লাহর অনুগ্রহ অনুসন্ধান বা ব্যবসার উদ্দেশ্যে ভ্রমণকে মুদারাবার মৌলিক বিষয় হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। মুদারাবা পরিভাষাটি হানাফী, হাম্বলী ও যায়েনীয়া মাযহাব ত্রয়ের অনুসারীরা ব্যবহার করে থাকেন। পক্ষান্তরে, মালেকী ও শাফেয়ী মাযহাবের অনুসারিগণ মুদারাবা-এর স্থলে মুকারাদা বা কিরাদ পরিভাষাটি ব্যবহার করে থাকেন। মুকারাদা বা কিরাদ নামকরণটি মালেকী ও শাফেয়ী মাযহাবের কিতাবগুলোতে বহুল ব্যবহৃত। প্রাচীন আরবি ভাষায় ও কুরআনে ব্যবহৃত নাররুন শব্দ থেকে এক প্রকারের যৌথ ব্যবসায় বুঝার জন্য মুসারিবা শব্দটি উদ্ভাবন করা হয়।

১. ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (Islamic Development Bank) মুদারাবার সংজ্ঞা দিয়েছে এভাবে, “Mudaraba is a form of partnership where one party (Sahib al mall/Rabbul mall) provides the fund while the other provides the expertise and management. The later is refered to as the Mudarib (Manager). Any profit accrued is shared between the two parties on a pre-agreed basis, while capital loss is exlusively borne by the partner providing the capital (Sahib al maal).” 1238 অর্থাৎ, “মুদারাবা এক ধরনের অংশীদারিত্ব যেখানে একপক্ষ (সাহিব-আল-মাল/ রাব্বুল মাল) তহবিল সরবরাহ করেন এবং অন্যপক্ষ তার দক্ষতা ও ব্যবস্থাপনা বিনিয়োজিত করেন। তাকে আখ্যায়িত করা হয় মুদারিব (ব্যবস্থাপক) হিসেবে। ব্যবসায়ের অর্জিত লাভ দু’পক্ষের মধ্যে পূর্ব স্বীকৃত অনুপাত অনুসারে ভাগ হয়। পুঁজির লোকসান হলে তার পুরোটাই পুঁজি সরবরাহকারী (সাহিব-আল-মাল) বহন করেন।”

২. দি অ্যাকাউন্টিং এন্ড অডিটিং অর্গানাইজেশন ফর ইসলামিক ফাইন্যান্সিয়াল

ইনস্টিটিউশনস (AAOIFI) মুদারাবার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছে, “Mudaraba is a partnership in profit whereby one party provides capital (Rab al maal) and the other party provides labour (Mudarib).” অর্থাৎ, “মুদারাবা হচ্ছে মুনাফায় অংশীদারিত্ব, যেখানে একপক্ষ (রাব্বুল মাল) মূলধন যোগায় এবং অপরক্ষে (মুদারিব) শ্রম দান করে।

৩. ব্যাংক কোম্পানি আইন (সংশোধন) ১৯৯৫ এ মুদারাবার সংজ্ঞা প্রদান করতে গিয়ে বলা হয়েছে, “Mudaraba means such an agreement in terms of which a bank conducted in accordance with the Islamic Shariah provides capital for anything and the customer employs his efficiency, efforts, labour and intelligence.” ‘ অর্থাৎ, “মুদারাবা অর্থ এমন চুক্তি যার শর্তানুসারে ইসলামী শরী’আহ্ মোতাবেক পরিচালিত কোনো ব্যাংক কোনো কিছুতে মূলধন সরবরাহ করে এবং গ্রাহক তাতে তার দক্ষতা, প্রচেষ্টা, শ্রম এবং প্রজ্ঞা নিয়োজিত করে।”

৪. ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড-এর মুদারাবা ম্যানুয়েলে মুদারাবার সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, “Mudaraba is a partnership in profit whereby one- party provides capital and the other party provides skill and labour. The provider of capital is called ‘Sahib-al-maal’ while the provider of skill and labour is called ‘Mudarib’.” অর্থাৎ, “মুদারাবা হলো মুনাফাভিত্তিক এমন একটি অংশীদারিত্ব যেখানে একপক্ষ মূলধন যোগান দেন এবং অন্যপক্ষ তার দক্ষতা ও মেহনত কাজে লাগান। পুঁজির যোগানদারকে বলা হয় সাহিব-আল-মাল। দক্ষতা ও মেহনত বিনিয়োগকারীকে বলা হয় ‘মুদারিব’।”

৫. ড. সাইয়েদ আল হাওয়ারীর মতে, ৬. সাদ আল হারানের মতে, “মুদারাবা হচ্ছে এমন এক ধরনের অংশীদারিত্ব যেখানে একপক্ষ মূলধন যোগান দেয় অপরপক্ষ শ্রম প্রদান ও ব্যবসায় পরিচালনা করে। মূলধনের মালিককে রাব্বুল মাল এবং ব্যবসায় পরিচালনাকারীকে মুদারিব বলে। “Mudaraba is a kind of partnership of the condition that the capital is to be supplied by one and the labours and work by the other. The owner of the capital is called Rabbul mall and the worker ‘Mudarib.’
২. অর্থাৎ, “মুদারাবা হলো দু’টি পক্ষের চুক্তি যাতে একপক্ষ অপরপক্ষকে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট পরিমাণ লাভের বিনিময়ে ব্যবসার নিমিত্তে অর্থ যোগান দেয়। এতে একপক্ষ অর্থ যোগান দেয় যাকে রাব্বুল মাল বলা হয়। আর অপরপক্ষকে বলা হয় মুদারিব, যাকে এ অর্থের বিনিয়োগ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। উভয় পক্ষের মধ্যে লাভের পরিমাণ বণ্টন করা হবে তাদেরই চুক্তি অনুযায়ী যা সমুদয় লাভের অর্ধেক বা এক-তৃতীয়াংশ বা অন্য যেকোনো পরিমাণ হতে পারে।’

৭. এ জেড. এম. শামসুল আলমের মতে, “এ ধরনের ব্যবসায়ে একজন বা একপক্ষ মূলধন সরবরাহ করেন এবং অপর পক্ষ ব্যবসায় অভিজ্ঞতা এবং শ্রম নিয়োগ করেন- সে ধরনের ব্যবসায়কে বলা হয় মুদারাবা পদ্ধতির ব্যবসায়। “

৮. মুফতি মুহাম্মদ তাকী উছমানী’র মতে, “মুদারাবা অংশীদারিত্বের একটি বিশেষ পদ্ধতি। যে অংশীদারিত্বে এক শরিক অপরকে ব্যবসায় বিনিয়োগের জন্য অর্থ সরবরাহ করে। পুঁজি বিনিয়োগ করে প্রথম পক্ষ, তাকে বলা হয় ‘রাব্বুলমাল’ বা ‘পুঁজি বিনিয়োগকারী’ অপরদিকে ব্যবসার ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা (Management) এবং কাজের দায়িত্ব থাকে দ্বিতীয় পক্ষের ওপর, যাকে বলা হয় ‘মুদারিব’ বা ‘কারবারি’।”

৯. এম. নাজাতুল্লাহ্ সিদ্দিকীর মতে, “মুদারাবার অর্থ হচ্ছে একপক্ষ ব্যবসায়ের মূলধন সরবরাহ করবে এবং অপরপক্ষ এই মূলধন দ্বারা কারবার করবে এবং চুক্তি অনুযায়ী কারবারের মুনাফার একটা নির্ধারিত অংশ লাভ করবে (এখানে মূলধন সরবরাহকারীর শ্রম থাকে না, কারবারি পক্ষকেই শ্রম বিনিয়োগ করতে হয়।)

১০. ড. মোহাম্মদ হায়দার আলী মিয়া লিখেছেন, “মুদারাবা এমন একটি অংশীদারি কারবার যেখানে একপক্ষ পূর্ণ মূলধন সরবরাহ করে আর অন্যপক্ষ শ্রম, অভিজ্ঞতা ও বুদ্ধিমত্তা দিয়ে ব্যবসায় পরিচালনা করে। মূলধনের মালিককে ‘সাহিব- আল-মাল’ এবং মূলধন ব্যবহারকারীকে ‘মুদারিব বলে’। ১২৩

১১. স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের ওয়েবসাইট মুদারাবার সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, “Mudarabah is a form of partnership where one party provide the funds while the other party provides expertise and management. The people who bring in money are called ‘Rab-ul-Maal’. The later is referred to as the Mudarib. Any profits accured are shared between the two parties on a pre-agreed basis, while loss is borne only by the provider of the capital.

১২. অধ্যাপক মুজাহিদুল ইসলাম-এর মতে, “মুদারাবা এমন একটি ইসলামী বিনিয়োগ পদ্ধতি যেখানে একপক্ষ পুঁজির যোগানদাতা (Supplier of capital) এবং অপরপক্ষ পুঁজির ব্যবহারকারী (User of capital) রূপে বিবেচিত। মুদারাবা ব্যক্তি পর্যায়ে যেমনি হতে পারে, তেমনি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের (যেমন-ব্যাংক) মধ্যেও মুদারাবা গঠন করা যেতে পারে।”

ইসলামী শরী’আহর দলিল(Evidence of Islamic Shariyah)

মুদারাবা বিনিয়োগ পদ্ধতির বৈধতা আল-কুরআন, আসু-সুন্নাহ ও ইজমা দ্বারা সমর্থিত। কুর’আনে অনেক আয়াত রয়েছে, যা ফিক্হ বিশারদগণ মুদারাবার বৈধতার পক্ষে প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন ।

১. কুরআনের বাণী-

عَلِمَ أَنْ سَيَكُونُ مِنْكُمْ مَّرْضَى وَ أَخَرُوْنَ يَضْرِبُونَ فِي الْأَرْضِ يَبْتَغُونَ مِنْ

فَضْلِ اللَّهِ

অর্থাৎ, “তিনি জানেন তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়বে, কেউ কেউ আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধানে দেশ ভ্রমণ করবে এবং কেউ কেউ আল্লাহর পথে সংগ্রামে নিয়োজিত হবে।

এ আয়াতটি মুদারাবা বিনিয়োগের কুরআনিক ভিত্তি। এ আয়াতে ব্যবহৃত ‘দরাবা’ (অর্থ- পরিভ্রমণ করা, অন্বেষণ করা) শব্দ থেকেই মুদারার শব্দটি এসেছে। এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ঐসব পরিভ্রমণকারীদের কথা বলা হয়েছে যারা বৈধ পন্থায় ব্যবসায় বা হালাল আয়ের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হয় এবং অর্জিত রিজিক দ্বারা নিজের ও পরিবার-পরিজনদের ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করে থাকে। এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা মহানবী (সা.)-এর সেসব সাহাবীদের প্রশংসা করেছেন যারা ব্যবসার উদ্দেশ্যে দেশ- বিদেশে ভ্রমণ করতেন। এসব ব্যবসায়ীদের অনেকে ছিলেন যারা বিভিন্ন সামর্থ্যবান ব্যক্তি থেকে মুদারাবা ভিত্তিতে মূলধন নিয়ে মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে ভ্রমণ করতেন। এসব লোকদের প্রশংসা কেবল মুদারাবা পদ্ধতির শরী’আহসম্মত হওয়ার দলিলই নয় এবং আল্লাহ তাআলার পছন্দনীয় কারবার হওয়ার অন্যতম প্রমাণ। অন্যকথায় মুদারাবা আল্লাহ তাআলার নিকট পছন্দনীয় একটি ব্যবসায় পদ্ধতি।

২. মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের অন্য আয়াতে বলেন-

لَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ أَنْ تَبْتَغُوا فَضْلًا مِنْ رَّبِّكُمْ

অর্থাৎ, “তোমাদের ওপর আল্লাহর অনুগ্রহ অন্বেষণ করাতে কোনো ক্ষতি নেই। ১২৭

৩. মুদারাবার বৈধতার শরঈ দলিল হিসাবে আরও উল্লেখ করা যায় যে, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) যখন নবুওয়াত প্রাপ্ত হলেন, তখন লোকেরা এরূপ মুদারাবা লেনদেনে লিপ্ত ছিল। মহানবী (সা.) তাদের এ লেনদেনের স্বীকৃতি দিলেন এবং তিনি নিজেই নবুওয়াত প্রাপ্তির পর তার স্ত্রী হযরত খাদিজা (রা.)-এর সম্পদকে মুদারাবা ব্যবসায় নিয়োজিত করেছিলেন। হযরত খাদিজা (রা.) এবং নবুওয়াতপূর্ব জীবনে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ব্যবসায়সংক্রান্ত চুক্তি এবং সম্পর্ক ছিল মুদারাবাভিত্তিক। মুসলিম ইতিহাসে সর্বপ্রথম মুদারিব ছিলেন হযরত মুহাম্মদ (সা.)। এরূপ লেনদেনের বৈধতার ব্যাপারে শরী’আহ বিশারদগণের মধ্যে ঐকমত্য রয়েছে। মহানবী (সা.)-এর জীবদ্দশায় মুসলিমগণ এ ধরনের কারবার করতেন।

৪. হাদীসের একটি বর্ণনা-

عَنْ صَالِحِ بْنِ صُهَيْب عَنْ أَبِيهِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ثَلَاثُ فِيهِنَّ الْبَرَكَةُ الْبَيْعُ إِلَى أَجَلٍ وَالْمُقَارَضَةُ، وَأَخْلَاطُ الْبُرِ بِالشَّعِيرِ.

لِلبَيْتِ لَا لِلبيع

অর্থাৎ, “হযরত সালেহ বিন শুহাইব তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, তিনটি জিনিসে বরকত রয়েছে; বাকি বেচাকেনা, মুদারাবা এবং বিক্রয়ের উদ্দেশ্য ব্যতীত খাওয়ার জন্য গমের সাথে যব মেশানো।

৫. হাদিসের একটি বর্ণনা মতে,

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: كَانَ الْعَبَّاسُ بْنُ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ إِذَا دَفَعَ مَالًا مُضَارَبَةً اشْتَرَطَ عَلَى صَاحِبِهِ أَنْ لَا يَسْلُكَ بِهِ بَحْرًا، وَلَا يَنْزِلَ بِهِ وَادِيًا، وَلَا يَشْتَرِيَ بِهِ ذات كبد رَطْبَةٍ فَإِنْ فَعَلَ فَهُوَ ضَامِنٌ، فَرَفَعَ شَرْطَهُ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ

عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَأَجَازَهُ

অর্থাৎ, “হযরত আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব (রা.) মুদারাবা পদ্ধতিতে মূলধন বিনিয়োগ করতেন এবং মুদারিবের ওপর নিম্নবর্ণিত শর্তাদি আরোপ করতেন : (ক) মুদারিব তার মালামাল নিয়ে সাগরপথে পরিভ্রমণ করবেন না: (খ) উপত্যকা পাড়ি দেবেন না; (গ) গবাদিপশু কেনাবেচার ব্যবসায় করবেন না। এসব শর্ত লঙ্ঘন করে। কারবার করলে এবং তাতে ক্ষতি হলে মুদারিব সেজন্য দায়ী হবেন। এ শর্তগুলো মহানবী (সা.)-কে পড়ে শোনানো হলে তিনি তাতে অনুমোদন দেন।

৬. সাহাবিগণও মুদারাবা পদ্ধতিতে কারবার করতেন। তাদের মধ্যে হযরত ওমর ফারুক (রা.), হযরত উসমান ইবনে আফ্ফান (রা.), হযরত আলী ইবনে আবু তালিব (রা.), হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রা.), হযরত ওমর ফারুক (রা.)-এর দুই পুত্র হযরত আব্দুল্লাহ ও হযরত উবায়দুল্লাহ (রা.), হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। তাঁদের সমসাময়িক কেউ এর বিরোধিতা করেননি। এভাবে মুদারাবা পদ্ধতি বৈধ হওয়ার ব্যাপারে ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। হযরত ইয়াকুব আল- মাদানী (রা.) বর্ণনা করেছেন যে, তাঁকে হযরত উসমান বিন আফ্ফান (রা.) মুদারাবার ভিত্তিতে কিছু মাল দিয়েছিলেন এই শর্তে যে, তিনি পরিশ্রম করবেন এবং মুনাফার মধ্যে উভয়েই শরিক থাকবেন। হযরত হাকীম ইবনে হিযাম (রা.) অনুরূপভাবে মুনাফা দেয়ার শর্তে পুঁজি এনে কারবার করতেন। ১৩২

৭. মুদারাবার বৈধতা সম্পর্কে মুসলিম ফকিহগণও একমত। উপরন্তু তাঁরা ইসলামপূর্ব যুগে প্রচলিত মুদারাবার ক্ষতিকর দিকগুলো বন্ধ করে এর উপকারিতাকে আরও বৃদ্ধি করে দিয়েছেন। ইবনুল মুনযির উল্লেখ করেছেন যে, ফকিহগণের মধ্যে মুদারাবা পদ্ধতির কারবারের ব্যাপারে ঐকমত্য রয়েছে।

মুদারাবার শ্রেণিবিভাগ(Classification of Mudarabah)

চুক্তির ভিত্তিতে মুদারাবা বিনিয়োগ দু’প্রকার। যেমন-

১. মুদারাবা আল মুতলাক (Jao Mudarabah al Mutlaq) : যে মুদারাবা ব্যবসায় মুদারিবকে কোনরূপ শর্ত আরোপ ছাড়াই সাহিব-আল-মাল কর্তৃক ব্যবসায় করার অনুমতি দেয়া হয়, তাকে ‘আল মুদারাবা আল মুতলাক’ বা ‘সাধারণ (Unrestricted) মুদারাবা’ বলে। অর্থাৎ যে মুদারাবা চুক্তিতে ব্যবসার স্থান, সময়সীমা, শ্রেণি, অংশীদারগণের সংখ্যা, ব্যবসার প্রকৃতি, পরিধি ইত্যাদি কিছুই নির্দিষ্ট থাকে না তাকে মুদারাবা মুতলাক বলা হয়। এ পদ্ধতিতে মুদারিব যে কোনো স্থানে, যেকোনো পণ্যের ব্যবসায় স্বাধীনভাবে পরিচালনা করতে পারে। রাব্বুলমাল মুদারিবকে যেকোনো ধরনের ব্যবসায় করার স্বাধীনতা প্রদান করে, তাহলে মুদারিব যদি ইচ্ছানুযায়ী যেকোনো ব্যবসায় অর্থ বিনিয়োগ করতে পারেন। মুদারিব আরও যেসব কাজ করার ক্ষমতা রাখেন না তা হলো-

ক. অন্যকে অংশীদার করা বা আরেকজন মুদারিব গ্রহণ করা।

খ. সাহিব-আল-মালের সম্মতি ছাড়া মুদারাবা ব্যবসায় তার নিজের পুঁজি মিশিয়ে। ফেলা। ১৩৫

২. মুদারাবা আল মুকাইয়্যোদা (Mudarabah al Muqayyad) : যে মুদারাবা ব্যবসায় মুদারিবের কোনো অযাচিত চাপ বা নিয়ন্ত্রণ ছাড়া সাহিব-আল-মাল ব্যবসায়ের ধরন, মেয়াদ ও স্থান ইত্যাদি নির্দিষ্ট করে দেয়, তাকে ‘আল মুদারাবা আল মুকাইয়্যোদা’ বা বিশেষ (Restricted) মুদারাবা বলে। অর্থাৎ যে মুদারাবা চুক্তিতে ব্যবসার স্থান, ব্যবসার ধরন, সময়সীমা, অংশীদারের সংখ্যা, মালামাল ক্রয়ের বিবরণ, কোথায় কীভাবে বিক্রি করবে ইত্যদি যাবতীয় বিষয়গুলো নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয় তাকে মুদারাবা মুকাইয়্যেদা বলে। এ পদ্ধতিতে উদ্যোক্তার পূর্ণ স্বাধীনতা থাকে না। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী সাহিব-আল-মালের নির্দেশ মোতাবেক উদ্যোক্তাকে অবশ্যই ব্যবসায় পরিচালনা করতে হবে। এর ব্যতিক্রম হলে তা অবৈধ হবে। রাব্বুলমাল মুদারবিকে বিশেষ ধরনের ব্যবসায় করা নির্দিষ্ট করে দিতে পারে। এক্ষেত্রে মুদারিবকে শুধু রাব্বুল মালের নির্দেশ মোতাবেক ব্যবসায় অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে।

হরযত আব্বাস (রা.) কর্তৃক শর্তযুক্ত মুদারাবা-মুদারাবা মুকাইয়্যাদাহকে রাসূলুল্লাহ (সা.) অনুমোদন করেছেন। তাই শর্তযুক্ত মুদারাবা (মুদারাবা মুকাইয়্যাদাহ) বৈধ হওয়ার বিষয়টি হাদীস দ্বারা অনুমোদিত।

হযরত ইমাম শাফিঈ ও ইমাম মালিক (রহ)-এর মতানুসারে মুদারাবা সবসময় মুতালাক্বাহ (শর্তহীন) হতে হবে। সাহিব-আল-মাল মুদারিবের ওপর এই শর্ত আরোপ করতে পারবে না যে তার মূলধন নিয়ে মুদারিবকে নির্ধারিত নগরে কিংবা নির্ধারিত পণ্যের ব্যবসায় করতে হবে কিংবা অমুক সময় ব্যবসায় করতে পারবেন, কিংবা অমুক ব্যক্তির সাথেই তাকে ব্যবসায় করতে পারবেন, কিংবা অমুক ব্যক্তির সাথেই তাকে ব্যবসায় করতে হবে ইত্যাদি। এরূপ শর্ত আরোপ করা হলে মুদারাবা ফাসিদ হয়ে যাবে।

পক্ষান্তরে, ইমাম আবু হানিফা (রহ) ও ইমাম আহমাদ (রহ)-এর মতে, মুদারাবা যেমন শর্তহীন হওয়া বৈধ, তেমনি (শর্তযুক্ত) মুকাইয়্যাদাহ্ হওয়াও বৈধ। আর শর্তারোপ করা হলে মুদারিব উক্ত শর্ত লঙ্ঘন করতে পারবেন না। সে শর্ত ভঙ্গ করলে। বা এজন্য ব্যবসার ক্ষতি হলে উক্ত মুদারিবকেই বহন করতে হবে।

মুদারাবার বিনিয়োগ পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য

(Characteristics of Mudaraba Investment Method) মুদারাবা পদ্ধতিতে ব্যাংকিং বিনিয়োগের বেশকিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপ :

১. মুদারাবা দ্বি-পাক্ষিক অংশীদারি কারবার। মুদরাবা কারবারে যিনি অর্থ বা মূলধন দিয়ে অংশগ্রহণ করেন তাকে সাহিব-আল-মাল (Shahib al mal) বা পুঁজির যোগদানদাতা (Supplier of Capital) বলা হয়। তাকে রাব্বুল মালও বলা হয় ।

২. মূলধন ব্যবহারকারী মুদারিব (Mudarib) বা আমিল (Amil) বা মুকারিদ (Muqarid) বা পরিচালক বা উদ্যোক্তা (Entrepreneur) বা মুদারাবা কারবারের ব্যবস্থাপক পুঁজির ব্যবহারী (User of Capital) হিসেবে পরিচিত হয়ে থাকেন।

৩. সাহিব-আল-মাল কারবার পরিচালনায় অংশগ্রহণ করেন না। তবে প্রয়োজনীয়। পরামর্শ দিতে পারেন। ব্যাংক সাহিব-আল-মাল হিসেবে দক্ষ ও অভিজ্ঞ উদ্যোক্তা নির্বাচনপূর্বক মূলধন যোগায় এবং স্বনিয়োজিত উদ্যোক্তা বা গ্রাহক ‘মুদারিব’ হিসেবে সে মূলধন ব্যবসায় খাটান। মুদারিব তার দক্ষতা, মেধা, সময় ও শ্রম দিয়ে ব্যবসায় পরিচালনা করেন। এ পদ্ধতিতে ব্যাংক সরাসরি ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে অংশ নেয় না। অথবা মুদারিবের কাজে হস্তক্ষেপ করে না।

৪. স্বাভাবিক ব্যবসায়িক লোকসান হলে সাহিব-আল-মাল তা বহন করেন। তবে মুদারিব বা তার কর্মচারী কিংবা প্রতিনিধি কর্তৃক শর্ত লঙ্ঘন, অবহেলা, অদক্ষ ব্যবস্থাপনা বা বিশ্বাস ভঙ্গের কারণে লোকসান হলে মুদারিব দায়ী হবেন। এ ক্ষেত্রে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।

৫. মুদারাবার অর্থ শরী’আহসম্মত খাতে বিনিয়োগ করতে হবে। ব্যবসায়ের লাভ চুক্তির শর্ত অনুযায়ী পূর্বনির্ধারিত হারে (As per agreed upon ratio) ব্যাংক ওউদ্যোক্তার মধ্যে ভাগ হয়। যেমন ২৫% ৭৫%, ৩০% ৭০%, ৪০% ও ৬০%, ৫০% ৫০%, ৪৫% ৫৫%, ৬০% : ৪০% হারে লাভের অংশ ভাগ করে নেয়।

৬. চুক্তির শর্ত পালন নিশ্চিত করতে ব্যাংক গ্রাহকের কাছ থেকে পারফরমেন্স গ্যারান্টি নিতে পারে। প্রকৃত লোকসানের দায়িত্ব সাহিব-আল-মাল হিসেবে ব্যাংক বহন করে। অন্যকথায় লোকসান হলে পুরোটাই ব্যাংক বহন করবে। এক্ষেত্রে মুদারিব বা উদ্যোক্তাকে হারাতে হয় তার মেধা, যোগ্যতা, সুনাম, শ্রম ও ব্যয়িত সময়ের ক্ষতি স্বীকার করতে হয়, কোনো আর্থিক লোকসান তাকে বহন করতে হয় না। অথবা যদি নিরপেক্ষ তদন্তে নিঃসন্দেহে প্রমাণিত হয় যে, মুদারিবের গাফিলতির জন্যই লোকসান হয়েছে, তাহলে ব্যাংক লোকসানের পুরো দায়ভার বহনে সম্মত নাও হতে পারে।

৭. উদ্যোক্তা (মুদারিব) বা তাঁর কর্মচারী বা প্রতিনিধির শর্ত লঙ্ঘন, অবহেলা, অদক্ষ ব্যবস্থাপনা, অব্যবস্থা বা বিশ্বাস ভঙ্গের কারণে বা চুক্তি ভঙ্গজনিত কারণে ব্যবসায়ে লোকসান হলে ব্যাংক উদ্যোক্তার কাছ থেকে ন্যায্য ক্ষতিপূরণ আদায় করে নেয়ার অধিকার রাখে।

৮. ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া উদ্যোক্তা অন্য কোনো উৎস থেকে ব্যবসায়ের মূলধন নিতে পারে না। নিলে তা উদ্যোক্তার ব্যক্তিগত ঋণ হিসেবে গণ্য হবে।

৯. মুদারাবা কারবার থেকে মুনাফার নির্ধারিত অংশের অতিরিক্ত কোনো পারিশ্রমিক বা ভাতা কিংবা নিজস্ব কোনো খরচ ব্যক্তিগত ঋণ হিসেবে গণ্য হবে।

১০. চুক্তির মেয়াদ শেষে লাভ-লোকসান হিসাব চূড়ান্ত করে কারবার সমাপ্ত করতে হয়।

১১. মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে সম্মত সময়সূচি অনুসারে (যেমন : তিন মাস, ছয় মাস, এক বছর পর পর) প্রাক্কলিত লাভ-লোকসান বন্টন করা যেতে পারে। তবে তা অগ্রিমরূপে গণ্য হয় মেয়াদ শেষে চূড়ান্ত হিসাবের সাথে তা সমন্বয় করতে হবে।

১২. ব্যাংক শুধু প্রকৃত লোকসানের দায়িত্ব গ্রহণ করে। অন্যকথায় ক্ষতির ক্ষেত্রে মূলধন সরবরাহকারী হিসেবে ব্যাংক আর্থিক ক্ষতি এবং ব্যবসায় পরিচালনাকারী শ্রমের ক্ষতি বহনে বাধ্য থাকবে।

মুদারাবার শর্তাবলি(Terms of Mudarabah)

মুদারাবা বিনিয়োগের শর্তাবলি নিম্নে আলোচনা করা হলো-

ক. মুদারাবা চুক্তিসংক্রান্ত শর্তাবলি (Terms Related to Madarabah Contrant)

১. লিখিত চুক্তি হচ্ছে মুদারাবা কারবারের ভিত্তি। চুক্তিতে কারবারের মৌলিক বিষয়গুলো সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে।

২. মুদারাবা চুক্তিতে দু’টি পক্ষ থাকে।

৩. মুদারাবা কারবারের একপক্ষ অপরপক্ষের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে।

৪. মুদারাবা একটি বিশ্বস্ততার চুক্তি। তাই মুদারিবের অবহেলা, অব্যবস্থাপনা, অসততা, প্রতারণা, অসদাচরণ, চুক্তি ভঙ্গ ইত্যাদি কারণ ব্যতীত অন্য কোনো কারণে কারবারে লোকসান হলে এর জন্য মুদাবির দায়ী হবে না।

৫. মুদারাবা চুক্তিপত্রে ব্যবসার উদ্দেশ্য, ব্যবসার মেয়াদ (যদি কারবার নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য হয়ে থাকে), মূলধনের পরিমাণ, মুনাফার অংশ, কারবারের ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার নিয়ম ও শর্তাবলি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।

৬. আল কুরআনের নির্দেশ অনুযায়ী মুদারাবা চুক্তি লিখিত হতে হবে।

৭. মুদারাবা চুক্তির মেয়াদ উল্লেখ করা মুদারাবা শর্তাবলির অন্তর্ভুক্ত নয়। কেননা, মুদারাবা এমন চুক্তি যা যে কোনো সময় বাতিল করা যায়। ১৩৮

খ. মূলধনসংক্রান্ত শর্তাবলি(Terms Related to Capital )

১. মুদারাবা চুক্তিতে মূলধনের পরিমাণ সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে।

২. মুদারাবার মূলধন নগদে বা স্বর্ণের আকারে হয়। তবে কোনো স্থাবর বা অস্থাবর সম্পদও মুদারাবার মূলধন হতে পারে। এক্ষেত্রে মুদারাবা ব্যবসার মূলধন। হিসেবে প্রদত্ত সম্পদ কোনো অভিজ্ঞ ব্যক্তি বা সার্ভেয়ার প্রতিষ্ঠান কর্তৃক কিংবা উভয় পক্ষের সম্মতিক্রমে উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক যথাযথ মূল্যায়ন করে তা চুক্তিতে মূলধন হিসেবে (মূল্যকে মূলধন হিসেবে) উল্লেখ করতে হবে। তবে এ ধরনের সম্পদের মূল্য নির্ণয় করে তা চুক্তিতে লিপিবদ্ধ করা না হলে তা বৈধ হবে না। কারণ এমতাবস্থায় মূলধন ও লাভ উভয়টিই অজ্ঞাত রয়ে যায়। এ ধরনের অজ্ঞাত, দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ও অস্পষ্টতাকে শরী’আহ’তে ঘারার বলা হয়। ঘারার যুক্ত ব্যবসায়িক লেনদেন ও চুক্তি শরী’আহতে বৈধ নয়।

৩. ভুল বুঝাবুঝি এড়ানোর জন্য চুক্তিবদ্ধ পক্ষসমূহের নিকট মূলধনের পরিমাণ, প্রকৃতি ইত্যাদি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। অন্যকথায় মূলধনের পরিমাণ স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে। কেননা মুদারাবা চুক্তি শেষ হওয়ার পর তার পরিমাণ সুনির্দিষ্ট না থাকলে মূলধন ফেরত নেয়ার সময় বিবাদের সৃষ্টি হতে পারে।

৪. সাহিব-আল-মালের কাছে মুদারিব বা কারবারি এবং অন্য কারো দেনা মুদারাবা ব্যবসার মূলধন হিসেবে বিবেচিত হবে না।

৫. মূলধন সম্পূর্ণ অথবা ব্যবসায়ের প্রকৃতি অনুসারে চুক্তির শর্তানুযায়ী পর্যায়ক্রমে মুদারিবের কাছে সমর্পণ করতে হবে, যেন মুদারিব তার ব্যবসায় পরিচালনা করতে পারেন।

৬. মুদারাবা পুঁজির গ্যারান্টি প্রদান করা যাবে না। অন্যকথায় মুদারিব-এর নিকট থেকে পুঁজির গ্যারান্টি নেয়া বৈধ নয়।
৭. মুদারাবার সমুদয় মূলধন মুদারিবকে হস্তান্তর করতে হবে, যেন মুদারিব নিজেই তা বিনিয়োগ করতে পারেন। মুদারিবকে মূলধন ব্যবহারের সুযোগ করে দিতে হবে। মূলধনের ওপর সাহিব-আল-মালের হস্তক্ষেপ থাকলে উক্ত মূলধন দ্বারা মুদারাবা ব্যবসায় শুদ্ধ হবে না।

৮. ব্যাংকের নিকট গ্রাহকের কোনো দায়কে মুদারাবা মূলধন বলে গণ্য করা বৈধ নয়।

৯. মুদারাবা ব্যবসায় লাভ হলে তা ভোগ করার অধিকার সাহিবুল মাল ও মুদারিবের। কেউ একা লাভ নিতে পারে না ।

১০. বাকিতে ক্রয়-বিক্রয় ব্যবসায়ের একটি সাধারণ নিয়ম। মুদারিব সাহিব-আল- মালের অনুমতিতে বাকিতে পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবেন। তবে সাহিব আল মালের নিষেধ থাকলে তা করা যাবে না।

১১. মুদারিবের নিকট সাহিব-আল-মালের প্রাপ্য কিংবা অন্য কারো নিকট সাহিব- আল-মাল প্রাপ্য ঋণকে মুদারাবা মূলধন হিসেবে গণ্য করা বৈধ হবে না।

১২. মুদারিব কারবারের মুনাফা হতেই তার অংশ পাবেন, মূলধন হতে নয়। যদি কারবারে লোকসান হয় তবে কোনো অবস্থাতেই মুদারিব মূলধন থেকে কিছু দাবী করতে পারবেন না।

১৩. সাহিব-আল-মালের অনুমতি নিয়ে অপর কোনো সাহিব-আল-মালের কাছ থেকে পুঁজি নিয়ে সকল পুঁজি একত্রিত করে মুদারাবা ব্যবসায় পরিচালনা করা যায়।

১৪. সাহিব-আল-মালের অনুমতি ছাড়া মুদারিব অন্য কারো কাছ থেকে কারবারের জন্য ঋণ গ্রহণ করতে পারবেন না বা কাউকে কারবার থেকে ঋণ দিতেও পারবেন না।

গ. লাভ-লোকসানসংক্রান্ত শর্তাবলি (Terms Related to Profit and Loss )

১. উদ্যোক্তা ও অর্থের মালিকের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী অর্জিত লভ্যাংশ অংশীদারিত্বমূলক হতে হবে, যেন মুদারিব তার শ্রমের বিনিময় পায় এবং সাহিব আল- মাল তার পুঁজির বিনিময় পায়।

২. ভবিষ্যতে বিরোধ এড়ানোর জন্যে মুনাফা বণ্টনের পদ্ধতি সুস্পষ্টভাবে মুদারাবা চুক্তিপত্রে উল্লেখ থাকতে হবে। অন্যকথায় চুক্তিতে লাভের অনুপাত বা লাভের কত অংশ সাহিব-আল-মালের এবং কত অংশ মুদারিবের তা উল্লেখ করা আবশ্যক। উভয় পক্ষের সম্মতির ভিত্তিতে মুনাফা বণ্টনের অনুপাত নির্ধারিত হবে। অন্যকথায় মুদারাবায় অর্জিত লভ্যাংশের কে কত অংশ পাবে উভয় পক্ষের জন্য তা নির্দিষ্ট হতে হবে।
উভয়কে চুক্তি অনুযায়ী লভ্যাংশ ভাগ করে নিতে হবে। অন্যকথায় লাভের ভাগ পূর্বনির্ধারিত ও স্বীকৃতি হারে ব্যবসায়ী ও মূলধন সরবরাহকারী পরস্পরে ভাগ করে নেয় । ৩. নির্দিষ্ট পরিমাণ লাভ বা শতকরা নির্দিষ্ট হারে লাভ নির্ধারণ করা বৈধ নয়।

৪. কোনো পক্ষ নির্দিষ্ট পরিমাণ লাভ পাওয়ার শর্ত আরোপপূর্বক মুদারাবা চুক্তি করলে সে চুক্তি ফাসিদ বলে গণ্য হবে; কিন্তু শর্ত করা হলে, লাভের একটা নির্দিষ্ট হার পর্যন্ত উভয়ে নির্দিষ্ট অনুপাতে ভাগাভাগি করে নিবেন আর উক্ত হারে বেশি লাভ অর্জিত হলে তা মুদারিব বা সাহিব-আল-মালের কোনো একপক্ষ পাবেন, তাহলে এটা বৈধ।

৫. চুক্তি করার সময়ই লাভ কটনের হার নির্ধারণ করতে হবে। অনুরূপভাবে উভয়ের সম্মতিক্রমে পরবর্তীতে লাভ বণ্টনের হার পরিবর্তন করা বৈধ। তবে এ ক্ষেত্রে চুক্তি বলবৎ থাকার মেয়াদ উল্লেখ থাকা প্রয়োজন।

৬. চুক্তির সময় লাভ বণ্টনের হার উল্লেখ না করা হলে প্রচলিত রীতি অনুযা।। লাভ বণ্টন করা হবে। আর কোনো প্রচলিত নিয়ম না থাকলে মুদারাবা চুক্তি ভঙ্গ বা ফাসিদ হয়ে যাবে। এমতাবস্থায় মুদারিব তার পারিশ্রমিকের মূল্য পাবেন। মুদারিব যে কাজ করেছেন অনুরূপ কাজের জন্য অন্যরা যেমন মজুরি পেয়ে থাকেন তিনিও ততটা পাওয়ার অধিকারী হবেন।

৭. কারবারে ক্ষতি বা লোকসান হলে তা বহন করেন সাহিব-আল-মাল। অন্যকথায় পুঁজি সরবরাহকারীকেই লোকসানের দায়ভার নিতে হবে। এক্ষেত্রে শ্রম বিনিয়োগকারী উদ্যোক্তাকে লোকসানের কোনো কিছুই বহন করতে হবে না। কারণ তার শ্রম এক্ষেত্রে যথেষ্ট বিবেচিত হবে

৮. মুদারাবা কারবারের আর্থিক দায় সাহিব-আল-মালের পুঁজির সমান। অতিরিক্ত দায়ের জন্য মুদারিব দায়ী হবেন।

৯. ব্যাংক কর্তৃক মুদারাবা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে লোকসান হলে ব্যাংক বহন করতে। ১০. মুদারাবা কারবারের লোকসান Carry forward করা যাবে না।

১১. পূর্বনির্ধারিত মুনাফার পরিবর্তে প্রকৃত মুনাফা বণ্টন করতে হবে।এ প্রসঙ্গে ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ) হযরত ওমর ফারুক (রা.)-এর দুই পুত্রের মুদারাবা ব্যবসায় মুনাফা বণ্টনের ব্যাপারে একটি ফায়সালার কথা উল্লেখ করেছেন। বর্ণিত আছে, হযরত ওমর ফারুক (রা.)-এর দুই পুত্র হযরত আব্দুল্লাহ্ (রা.) এবং হযরত উবাইদুল্লাহ (রা.) ইরাকের সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। তাঁরা ফিরে আসার সময় হযরত ওমর ফারুক (রা.) নিযুক্ত বসরার আমির হযরত আবু মুসা আল আশ’আরী (রা.)-এর সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলেন। হযরত আবু মূসা আল- আশ’আরী (রা.) তাঁদের দু’জনকে স্বাগত জানালেন এবং বললেন, আমি এমন কোনো কাজ যদি পেতাম যা দ্বারা তোমাদের দু’জনকে উপকার করতে পারতাম, তাহলে। অবশ্যই আমি তা করতাম। অতঃপর তিনি বললেন, হ্যাঁ এখানে বায়তুল মালের কিছু সম্পদ রয়েছে আমি তা আমিরুল মুমিনীনের কাছে পাঠাতে চাই। আমি তা তোমাদের দু’জনকে ধার দিতে চাই। তোমরা তা দিয়ে ইরাক থেকে কিছু দ্রব্যসামগ্রী ক্রয় করে নিয়ে যাবে এবং মদীনায় গিয়ে তা বিক্রি করে মূলধন আমিরুল মুমিনীনের কাছে পৌঁছে দেবে আর লাভ তোমরা দু’জনে নিয়ে নেবে। তাঁরা বললেন, ঠিক আছে। হযরত আবু মুসা আল-আশা আরী (রা.) তাই করলেন এবং আমিরুল মুমিনীনের কাছে পত্র লিখে তাদের কাছ থেকে মূলধন গ্রহণ করতে বললেন। অতঃপর তাঁরা মদীনায় পৌঁছে মালামাল বিক্রি করার পর লাভ হলো। হযরত ওমর ফারুক (রা.) তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের মতো সকল সৈন্যকেও কি ধার দেয়া হয়েছে? তাঁরা বললেন, না। হযরত ওমর ফারুক (রা.) বললেন, তোমরা আমিরুল মুমিনীনের পুত্র হওয়ার কারণেই তোমাদেরকে ধার দেয়া হয়েছে। কাজেই তোমরা লাভসহ মূলধন ফেরত দাও ।

হযরত ওমর ফারুক (রা.)-এর কথা শুনে হযরত আব্দুল্লাহ (রা.) চুপ থাকলেন, কিন্তু হযরত ওবায়দুল্লাহ (রা.) বললেন, হে আমিরুল মুমিনীন, মূলধন খোয়া গেলে তো আমরা জামিনদার হতাম। হযরত ওমর ফারুক (রা.) বললেন, তোমরা লাভসহ মূলধন ফেরত দাও। হযরত আব্দুল্লাহ (রা.) চুপ থাকলেন; কিন্তু হযরত ওবায়দুল্লাহ (রা.) একই কথা পুনরাবৃত্তি করলেন। হযরত ওমর ফারুক (রা.)-এর সভাসদগণের একজন বললেন, হে আমিরুল মুমিনীন, চাইলে একে মুদারাবা হিসাবে গণ্য করতে পারেন। এ প্রস্তাবে হযরত ওমর ফারুক (রা.) রাজি হয়ে গেলেন এবং মূলধন ও লাভের অর্ধেক গ্রহণ করলেন আর হযরত আব্দুল্লাহ (রা.) ও ওবায়দুল্লাহ (রা.)-কে লাভের অর্ধেক প্রদান করলেন ঘটনাটি ইমাম মালিক (রা.) তাঁর মুয়াত্তা গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন।

উক্ত হাদীস থেকে দেখা যাচ্ছে যে, কোনো কারণে মুদারাবা চুক্তি বাতিল হয়ে গেলে এবং লাভ হয়েছে বলে প্রতীয়মান হলে মুদাবির ও সাহিব-আল-মালের মধ্যে লাভ সমান দু’ভাগে বণ্টিত হবে।

ঘ. মুদারাবা চুক্তি বাতিলসংক্রান্ত শর্তাবলি(Terms Related to Termination of Mudarabah Contract)
নিম্নলিখিত অবস্থায় মুদারাবা চুক্তি অবলুপ্ত হতে পারে-

১. শর্তহীন মুদারাবার ক্ষেত্রে দু’পক্ষের যেকোনো একপক্ষ মুদারাবা কারবার অবলুপ্ত করতে পারে।

২. শর্তযুক্ত মুদারাবার ক্ষেত্রে উভয়পক্ষের সম্মতিক্রমে যেকোনো সময় মুদারাবা চুক্তি অবলুপ্ত করা যায়। একপক্ষ এককভাবে মুদারাবা চুক্তি বাতিল করতে পারবে না।

৩. চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে মুদারাবা কারবার বিলুপ্ত হয়ে যায়।

৪. মুদারাবা কারবারে নিয়োজিত মূলধন নিঃশেষ হয়ে গেলে অথবা মুদারাবা কারবারের মূলধন সম্পূর্ণভাবে বিনষ্ট অথবা লোকসান হলে চুক্তি বাতিল হয়ে যাবে।

৫. মুদারিব কিংবা-সাহিব-আল-মাল দু’জনের কেউ মৃত্যুবরণ করলে মুদারাবা চুক্তি ভঙ্গ হয়ে যাবে ।

৬. মুদারিব হিসেবে কর্মরত প্রতিষ্ঠানের বিলুপ্তি হলে অথবা মুদারাবা কারবারের অবলুপ্তি ঘটলে বা উভয়ে সম্মত হলে মুদারাবা কারবার বাতিল হয়ে যাবে।

ঙ. সাহিব-আল-মালের অধিকার সংক্রান্ত শর্তাবলি (Terms Related to the Rights of Sahib al Maal)

১. মুদারাবা ব্যবসায় লভ্যাংশ যখন ভাগ করা হবে তখন সাহিব-আল-মালকে উপস্থিত থাকতে হবে। তার অনুপস্থিতিতে মুদারিব তার প্রাপ্য লাভ গ্রহণ করতে পারবেন না।

২. ব্যবসায় অবহেলা বা অসুদপায় গ্রহণ করলে তার জন্য সাহিব-আল-মাল দায়ী হবে না এবং তখন ব্যবসায় লোকসান হলে তা সে বহন করবে না।

৩. সাহিব-আল-মালের অনুমতি ব্যতীত মুদারিব অন্য কোনো সূত্র থেকে মূলধন গ্রহণ করতে পারবেন না।

৪. সাহিব-আল-মালের জন্য এটা বৈধ হবে না, তিনি দুই অংশে বিভক্ত করে মুদারিবকে মূলধন প্রদান করবেন এই শর্তে যে, এক অংশের লাভ তার নিজের এবং অপর অংশের লাভ মুদারিবের। তার জন্য এরূপ করাও বৈধ নয় যে, চুক্তির এক মেয়াদের লাভ তার এবং অবশিষ্ট মেয়াদের লাভ মুদারিবের কিংবা একটি ব্যবসায়িক ড্রীলের লাভ তার অপরটি লাভ মুদারিবের।

৫. সাহিব-আল-মালের অনুমতি ব্যতীত মুদারিব মূলধন পুনরায় অন্য কারো কাছে বিনিয়োগ করতে পারবেন না। তিনি এরূপ করলে তা সীমালঙ্ঘন (চুক্তিলঙ্ঘন) বলে বিবেচিত হবে। এ প্রসঙ্গে ‘বিদায়াতুল মুজতাহিদ’ গ্রন্থে বলা হয়েছে, প্রসিদ্ধ ফকিহগণের মধ্যে এ ব্যাপারে কোনো মতপার্থক্য নেই যে, মুদারিব মুদারাবার মূলধন অপর কারো কাছে মুদারাবা পদ্ধতিতে বিনিয়োগ করলে এবং ক্ষতি হলে তা মুদারিবকে বহন করতে হবে আর লাভ হলে পূর্ব-শর্তানুসারেই বণ্টিত হবে।

চ. মুদারিবের অধিকার, ক্ষমতা ও দায়িত্ব সম্পর্কিত শর্তাবলি(Terms Related to Power, Rights and Duties of Mudarib)

১. মুদারিব তার শ্রম ও দক্ষতার বলেই কারবারের অংশীদার হয়; এক্ষেত্রে পরিশ্রমের বিনিময়ে বেতন-ভাতা পাওয়ার প্রশ্ন আসে না।

২. ব্যবসায়ে প্রকৃত লোকসান হলে তার অংশ মুদারিবের ওপর বর্তাবে না। অন্য কথায় চুক্তি লঙ্ঘন ব্যতীত অন্য কোনো কারণে কারবারে ক্ষতি হলে বা মূলধন খোয়া গেলে তাকে তা বহন করতে হবে না।

৩. মুদারিব তার উদ্যোগের জন্য কারবারের লভ্যাংশ দাবি করতে পারবে।

৪. কারবারের মুনাফায় মুদারিবের সুনির্দিষ্ট অংশের উল্লেখ থাকবে, কোনো সুনির্দিষ্ট পরিমাণের উল্লেখ থাকবে না। অন্যকথায় মুদারিবকে ব্যবসায় ব্যবস্থাপনার জন্যে কত অংশ লাভ দেয়া হবে তা নির্ধারিত হতে হবে।

৫. মুদারিব স্বয়ং পুঁজির ব্যবহার, পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করবে এবং প্রয়োজনে এ বিষয়ে কাউকে এজেন্ট নিয়োগ করতে পারবে।

৬. মুদারিব কারবারসংক্রান্ত কাজে প্রয়োজনীয় ব্যয় যেমন- যাতায়াত খরচ, যানবাহন ভাড়া, থাকা-খাওয়ার খরচ ইত্যাদি আদায় করতে পারবেন। ফিক্হবিদদের সর্বসম্মত মত হচ্ছে, মুদারিব পূর্ব-সিদ্ধান্তকৃত আনুপাতিক হারে মুনাফা ব্যতীত মুদারাবার ব্যবসায় পরিচালনার কারণে কোনো রকম বেতন, ভাতা বা বিনিময়ের দাবি করতে পারবে না। তবে ইমাম আহমাদ (রহ) মুদারিবকে মুদারাবা অ্যাকাউন্ট থেকে দৈনিক খোরাকের খরচ ঐ সময় গ্রহণ করার অনুমতি প্রদান করেন কিন্তু হানাফী ফিক্হবিদদের মতে, মুদারিব মুদারাবা অ্যাকাউন্ট থেকে দৈনিক খোরাকের খরচ ঐ সময় গ্রহণ করতে পারবেন, যখন সে মুদারাবা ব্যবসার জন্য নিজ শহরের বাইরে ভ্রমণ করবেন। তখন সে তার থাকা-খাওয়া ইত্যাদির খরচ গ্রহণ করতে পারবেন। নিজ শহরে থাকাকালীন সময়ে দৈনিক কোনো খরচের পাওনাদার হবেন না।

যদি মুদারাবার কোনো ব্যবসায় লোকসান হয় এবং কোনো ব্যবসায় লাভ হয়, তাহলে প্রথমে লাভ দ্বারা লোকসানের ক্ষতিপূরণ করা হবে। ক্ষতিপূরণের পর যা থাকবে, তা উভয়ের মাঝে পূর্ব-সিদ্ধান্তকৃত আনুপাতিক হারে বণ্টন করা হবে। ১৯৭

৭. মুদারিব যদি তার কোনো সম্পন্ন মুদারাবা ব্যবসার সাথে একীভূত করে ফেলে। তাহলে নিজের সম্পদের দ্বারা ব্যবসায় অংশীদার এবং অন্যের (সাহিব-আল-মালের) সম্পদ দ্বারা মুদারিব বিবেচিত হবেন। মুদারিব তার নিজস্ব পুঁজির মাধ্যমে অংশীদার হিসেবে লাভ পাবেন এবং মুদারাবা কারবারের লাভ তার ও সাহিব-আল-মালের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী বণ্টিত হবে।

৮. ব্যবসায় লাভ অবশ্যই সাহিব-আল-মালের উপস্থিতিতে বিতরণ করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই মুদারিব তার লাভের অংশ নিজে নিজেই সাহিব-আল-মালের অনুপস্থিতিতে গ্রহণ করতে পারবেন না। ইবনে রুশদ বলেছেন, ফকিহগণ এ ব্যাপারে একমত যে, সাহিব-আল-মালের উপস্থিতি ব্যতীত লাভের নিজের অংশ নিয়ে নেয়া মুদারিবের জন্য বৈধ নয়। সম্পদ বণ্টন এবং মুদারিব কর্তৃক নিজে অংশগ্রহণ করার সময় সাহিব-আল-মালের উপস্থিতি শর্ত। কোনো সাক্ষীর উপস্থিতিতে লাভ বণ্টন করা যথেষ্ট নয়।

মুদারাবা ব্যবসার জন্য মুদারিবের গুণাবলি(Qualities of Mudarib for Mudaraba Business)

মুদারাবা কারবারের জন্য মুদারিবের নিম্নরূপ গুণাবলি অর্জন করা প্রয়োজন :
১. শরী’আহ্’র প্রতি অনুগত (Adherence to Shariha) : মুদারিব বা গ্রাহককে অবশ্যই শরী’আহ্’র নিয়ম-নীতি জানা এবং তা যথাযথ প্রতিপালনের সদিচ্ছ থাকতে হবে।

২. সত্যবাদিতা (Truthfulness) : মুদারিবের বড় গুণ হচ্ছে সত্যবাদিতা।

মুসলিম ইতিহাসের প্রথম মুদারিব হযরত মুহাম্মদ (সা.) সদা সত্য কথা বলতেন বলে তাঁর উপাধি হয়েছিল ‘সাদিক’।

৩. বিশ্বস্ততা আমানতদারিতা (Trust Worthiness ) : বিশ্বস্ততা বা আমানতদারিতা মুদারিবের আর একটি গুণ। মুদারিবকে অবশ্যই আমানতদারিতার সাথে কারবার পরিচালনা করতে হবে।

৪. দৃঢ় প্রতিজ্ঞা (Commitment) : প্রতিজ্ঞা বা প্রতিশ্রুতি পালনে মুদারিবকে অবশ্যই দৃঢ় হতে হবে।

৫. সক্ষমতা (Ability) : মুদারিবকে কারবার পরিচালনায় সবদিক থেকে সক্ষম হতে হবে।

৬. সম্ভাবনা (Potentiality) : মুদারিবকে অবশ্যই ব্যবসায় পরিচালনার ক্ষেত্রে সম্ভাবনাময় হতে হবে।

৭. অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা (Expertize and Efficiency) : সংশ্লিষ্ট কারবারে মুদারিবের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা থাকা বাঞ্ছনীয় ।

৮. অকৃত্রিমতা (Genuineness) : মুদারিবকে সবদিক থেকে অকৃত্রিম হতে হবে। কোনকিছু বাড়িয়ে বলা বা করা অথবা চেপে যাওয়ার স্বভাব থেকে দূরে থাকতে হবে।

এ বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ রেখে মুদারাবা কারবারে মুদারিব/গ্রাহক নির্বাচন করতে হবে। এক্ষেত্রে মুদারাবা গ্রাহক নিজস্ব আগ্রহে ব্যাংকে আসতে পারেন অথবা ব্যাংকও নিজস্ব প্রয়োজনে উপরিউক্ত গুণাবলিসম্পন্ন গ্রাহক সমাজ থেকে খুঁজে বের করতে পারেন। সমাজে বহু সৎ, যোগ্য ও কর্মতৎপর লোক থাকতে পারেন, যারা পুঁজি অভাবে ব্যবসায় করতে পারতেন না।

 

আরো জানুন: মুশারাকা পরিচিতি ও মুশারাকা বিনিয়োগ পদ্ধতি

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *