?> শ্রমবাজার কী? শ্রমবাজারের প্রকাভেদ, শ্রমের দক্ষতা নির্ধারক বিষয়সমূহ
শ্রমবাজার

শ্রমবাজার কী? শ্রমবাজারের প্রকাভেদ, শ্রমের দক্ষতা নির্ধারক বিষয়সমূহ

শ্রমবাজার কী(Labour Market) , শ্রমবাজারের প্রকাভেদ, শ্রমের দক্ষতা নির্ধারক বিষয়সমূহ।

শ্রমবাজার বলতে শ্রমের ক্রেতা অর্থাৎ উৎপাদক বা নিয়োগকারী ও শ্রমের বিক্রেতা অর্থাৎ শ্রমিকদের মধ্যে দরকষাকষির মাধ্যমে একটি নির্ধারিত দাম তথা মজুরিতে শ্রমের ক্রয়-বিক্রয়কে বোঝায়। শ্রমিকরা উৎপাদনে সহায়তা করে বলে উৎপাদক বা নিয়োগকারীদের দিক থেকে শ্রমের জন্য চাহিদা সৃষ্টি হয়। আর শ্রমিকরা কাজের বিনিময়ে অর্থ উপার্জন করে বলে তাদের দিক থেকে আসে শ্রমের যোগান। সুতরাং দ্রব্য বাজারের মতোই শ্রম বাজারেও শ্রমের চাহিদা ও যোগানের পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া দ্বারা নির্ধারিত একটি মজুরিতে শ্রমের ক্রয়-বিক্রয় চলে। এ ক্রয়-বিক্রয় দেশের কোনো একটি অঞ্চল বা সমগ্র দেশে বা পৃথিবীর যেকোনো স্থানে সংঘটিত হতে পারে বলে শ্রমের বাজার আঞ্চলিক, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক হতে পারে।

শ্রমবাজার বলতে তাই কোনো একক বাজারকে বোঝায় না, পরস্পর সম্পর্কিত অনেকগুলো শ্রম বাজারকে বোঝায়। শ্রম বাজারের তাৎপর্য: শ্রম বাজারকে পৃথকভাবে অধ্যয়নের রয়েছে। শ্রমসেবা থেকে অর্জিত আয়ই হলো এদেশের পরিবারসমূহের বৃহৎ অংশের আয়ের প্রাথমিক উৎস। এদেশের জাতীয় আয়ের তিন-চতুর্থাংশই হলো মজুরি, বেতন ও উদ্যোক্তার আয়ের মজুরি উপাদান। তাই শ্রমের গুরুত্ব শুধু উৎপাদনের উপকরণ হিসাবেই নয়, আয়ের উৎস হিসাবেও পুরুত্বপূর্ণ।

শ্রমবাজার এর প্রকাভেদ (Types of Labour Market)

শ্রমবাজার প্রধানত দুই প্রকার।
(ক) অভ্যন্তরীণ শ্রম বাজার
(খ) বিদেশি বা আন্তর্জাতিক শ্রম বাজার। .

অভ্যন্তরীণ শ্রমবাজার কে আবার তিন ভাগে ভাগ করা যায়।
১. কৃষি শ্রমের বাজার: গ্রামাঞ্চলে প্রতিদিন দিনমজুর আশপাশের কৃষিজমিতে কাজ করে। অথবা কাজবিহীন অঞ্চলের শ্রমিকগণ এককভাবে বা দলবদ্ধভাবে কাজপ্রবণ অঞ্চলে গমন করে এবং দরকষাকষির মাধ্যমে কাজে নিযুক্ত হয়।

২. শহরে শ্রমের বাজার: প্রতিদিন সকাল বেলা বিভিন্ন শহরে বিশেষ বিশেষ স্থানে বিভিন্ন পেশার লোক কাজের জন্য সমবেত বিভিন্ন জন এ শ্রমিক সমাবেশ থেকে তাদের কাঙ্ক্ষিত লোক দরকষাকষির মাধ্যমে নির্বাচন করে কাজে লাগায়।

৩. শিক্ষিত লোকের শ্রমবাজার: বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অফিস,স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, বিমা ইত্যাদি সংস্থার মাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে লোক নিয়োগ করে। বিদেশি বা আন্তর্জাতিক শ্রমবাজার: সরকার সরাসরি জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো এবং বায়রার মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে লোক প্রেরণ করে থাকে।

শ্রমের দক্ষতা নির্ধারক বিষয়সমূহ(The Determinants of Efficiency of Labour)

শ্রমিকের কাজ করার ক্ষমতাকে শ্রমের দক্ষতা বলে) শ্রমের দক্ষতা বাড়লে শ্রমিকের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ে। অর্থাৎ‍ দক্ষ শ্রমিক বলতে কম সময়ে অধিক পণ্য উৎপাদনকে বোঝায়। এর সূত্র হলো শ্রমিকের দক্ষতা = উৎপাদনের পরিমাণ + সময় অর্থাৎ EL = Q+ 1, EL = শ্রমিকের দক্ষতা, Q = উৎপাদন, 1 = সময়, স্থির থেকে Q বৃদ্ধি পেলে শ্রমিক দক্ষ হবে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে শ্রমের দক্ষতা বেশি হওয়ায় সেখানে উৎপাদনের পরিমাণ ও মান দুই-ই বেশি। শ্রমের দক্ষতা নিম্নলিখিত কয়েকটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে

১. কাজ করার ইচ্ছা: শ্রমিকের কাজ করার ইচ্ছা কয়েকটি বিষয় দ্বারা প্রভাবিত হয়। যেমন— উপযুক্ত বেতন, বেতন বৃদ্ধির সুযোগ, উন্নতির সম্ভাবনা, কাজের স্থায়িত্ব, ছুটি ও অবসর, অন্যান্য আর্থিক সুবিধা প্রভৃতি। এসব বিষয় শ্রমিকের কাজ করার ইচ্ছাকে বাড়িয়ে দেয়।

২ কাজ করার ক্ষমতা: প্রথমত, কাজ করার সামর্থ্যের ওপর শ্রমের দক্ষতা নির্ভরশীল। কাজ করার সামর্থ্য আবার নির্ভর করে শ্রমিকের শারীরিক যোগ্যতা, জলবায়ু, খাদ্য, বুদ্ধিমত্তা, নৈতিক ও চরিত্রগত গুণাগুণ এবং কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রভৃতি বিষয়ের ওপর।

৩. কারখানার পরিবেশ: কারখানার চারপাশ ও ভিতরের অবস্থা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং প্রচুর আলো, বাতাস যুক্ত হলে এবং কারখানায় শৃঙ্খলা থাকলে শ্রমিকের দেহ-মন সুস্থ ও সুখী থাকে। ফলে তার দক্ষতা বাড়ে।

৪. আধুনিক যন্ত্রপাতি: কারখানায় আধুনিক যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম এবং নতুন নতুন উৎপাদন কৌশল ব্যবহার করা হলে শ্রমিকরা কাজে উৎসাহ বোধ করে। এর ফলে তাদের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ে। উন্নত দেশের শ্রমিক নিত্য নতুন উৎপাদন পদ্ধতি ও আধুনিক যন্ত্রপাতি নিয়ে কাজ করে বলে তাদের দক্ষতা অনেক বেশি।

৫. সংগঠনের নৈপুণ্য: কারখানার পরিচালন ব্যবস্থা দক্ষ ও উচ্চমানসম্পন্ন হলে সেখানকার শ্রমিকের দক্ষতা ও কাজের ইচ্ছা সহজেই বৃদ্ধি পায়।
৬. সামাজিক নিরাপত্তা: কারখানায় কাজের সময় কোনো দুর্ঘটনায় শ্রমিক পঙ্গু বা অসুস্থ হয়ে কর্মহীন হতে পারে বা তার মৃত্যুও ঘটতে পারে। এরকম অবস্থায় আর্থিক নিরাপত্তা ব‍্যবস্থা থাকা বাঞ্ছনীয়। অর্থাৎ ক্ষতিপূরণ দান, বিমা, বৃদ্ধ বয়সে পেনশন প্রভৃতি সুযোগ-সুবিধা প্রচলিত থাকলে শ্রমিকদের নিরাপত্তাহীনতার অবসান ঘটে। ফলে তাদের। কর্মদক্ষতা বাড়তে পারে। এছাড়াও সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, গঠনমূলক শ্রমিক সংঘ, নিয়োগকারীর সাথে সুসম্পর্ক, কারন অব্যাহত উন্নতি প্রভৃতি বিষয় শ্রমিকের দক্ষতাকে বাড়িয়ে দেয়।

 

Recent Posts

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *