আল কুরআন এর পরিচয়
আল কুরআন আল্লাহ তা’আলার কালাম। সর্বশেষ নবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মদ (স.)- এর কাছে হযরত জিব্রাঈল (আ.)-এর মাধ্যমে দীর্ঘ তেইশ বছর ধরে তিনি এ কালাম নাযিল করেছেন। আল কুর’আন এক সংশয়হীন নির্ভুল গ্রন্থ। এর আল্লাহর কালাম হওয়ার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। আল কুর’আন নাযিলের সময় কিছুসংখ্যক আরব এ ব্যাপারে সন্দেহ করেছিল। এ পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তা’আলা মহাবিশ্বের সব মানুষকে উন্মুক্ত চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন, সন্দেহবাদীরা যেন আল-কুরআনের যে কোনো একটি সূরার মতো সূরা রচনা করে নিয়ে আসে। ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে হযরত রাসূল (স.)-এর মৃত্যুর মাধ্যমে আল-কুরআন নাযিল সম্পন্ন হয়েছে। এরপর অতিক্রান্ত হয়েছে প্রায় দেড় হাজার বছর। কিন্তু অদ্যাবধি পৃথিবীর কেউ এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সক্ষম হয়নি।
আল-কুর’আন শব্দটি قرء শব্দের মাসদার বা ক্রিয়ামূল। এর অর্থ পাঠ করা। তবে এটি مقروء বা পঠিত অর্থে ব্যবহৃত হয়। হযরত জিব্রাইল (আ.) হযরত রাসূলুল্লাহ (স.)কে আল-কুর’আন পাঠ করে শোনাতেন। হযরত রাসূলুল্লাহ (স.) পাঠ করে শোনাতেন সাহাবী (রা.)-গণকে। তাঁরা একে অন্যের কাছে এবং নিজেরা নিজেরা কুরআন পাঠ করতেন। এরপর পৃথিবীর সব প্রান্তের মুসলিম প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত সালাতে বাধ্যতামূলকভাবে কুরআন পাঠ করে। আল-কুরআন তাই পৃথিবীর সর্বাধিক পঠিত গ্রন্থ।
ইমাম যারকারী (র.)-এর মতে, আল-কুর’আন হলো কালামসমষ্টি যা মুতাওয়াতির বা “অবিচ্ছিন্ন সনদে বর্ণিত, যা তিলাওয়াত করা হয় এবং যার তিলাওয়াত আল্লাহর ইবাদত হিসেবে গণ্য।
আল্লামা আশরাফ আলী থানবী (র.)-এর মতে, আল-কুরআন হলো শব্দ ও অর্থ উভয়ের সমষ্টি আল্লাহ তা’আলার সে কালাম যা তাঁর কাছ থেকে হযরত মুহাম্মদ মুস্তাফা (স.)-এর ওপর নাযিল হয়েছে এবং মুহাম্মদ (স.)-এর কাছ থেকে সংশয়হীন পদ্ধতিতে মাসহাফে লিখিত হয়ে আমাদের কাছে পৌঁছেছে।
ইমাম আব্দুল ওয়াহাব আল্লাফের মতে, যাবতীয় পরিবর্তন, পরিবর্ধন, পরিমার্জন, সংযোজন ও বিয়োজনের সম্ভাবনাযুক্ত আল্লাহ তা’আলার সেই বাণী হলো আল-কুরআন যার ভাষা আরবি। অর্থ ও মর্ম সবই যথার্থ। শুরু সূরা ফাতিহা ও শেষ সূরা নাস দিয়ে এবং হযরত জিব্রাঈল (আ.)-এর মাধ্যমে যা হযরত রাসূলুল্লাহ (স.)-এর ওপর নাযিল হয়েছে আর মুতাওয়াতির বা নিরবচ্ছিন্ন সনদে যা আমাদের কাছে এসে পৌঁছেছে।
ইমাম আবুল বারাকাত আন-নাসাফীর মতে, আল-কুরআন হলো কিতাব যা হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর ওপর নাযিল করা হয়েছে। যা মাসহাফে লিখিত এবং যা সন্দেহাতীত পদ্ধতিতে ধারাবাহিকভাবে সংকলিত হয়েছে। এটি শব্দ ও অর্থের সমন্বিত নাম।
মুফতি আমীমুল ইহসানের মতে, আল-কুর’আন এমন এক কিতাব যা আমাদের নেতা বিশ্বনবী মুহাম্মদ (স.)-এর ওপর নাযিল হয়েছে। যে গ্রন্থের ছোট্ট একটি সূরার মুকাবিলা করতে সারা দুনিয়ার মানুষ সক্ষম নয় ।
কাজেই আল কুর’আন আল্লাহ তা’আলার সে বাণী যা অনাদিকাল থেকে লাওহে মাহফুযে সুরক্ষিত ছিল। এরপর আল্লাহ তা’আলা হযরত জিব্রাঈল (আ.)-এর মাধ্যমে যা দীর্ঘ তেইশ বছরে ক্রমান্বয়ে হযরত রাসূলুল্লাহ (স.)-এর কাছে নাযিল করেছেন। যা যথাযথভাবে লিখিত ও সুরক্ষিত হয়েছে এবং অবিকল ও অবিকৃত অবস্থায় বিদ্যমান রয়েছে। এর শব্দ, অর্থ, মর্ম, উপস্থাপনা, বিন্যাস ইত্যাদি সবই আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে।