?> ইসলামী বীমার বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Islamic Insurance)
ইসলামী বীমার বৈশিষ্ট্য

ইসলামী বীমার বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Islamic Insurance)

ইসলামী বীমার বৈশিষ্ট্য(Characteristics of Islamic Insurance)

 

ইসলামী বীমা ইসলামের সহযোগিতা ও কল্যাণকামীতার ওপর প্রতিষ্ঠিত। তাই এ বীমা বেশকিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের দাবিদার। ইসলামী বীমার বৈশিষ্ট্যগুলো সাধারণ, শরী’আর দৃষ্টিকোণে এবং পদ্ধতিগত এ তিন শ্রেণিতে বিভক্ত। নিম্নে ইসলামী বীমার বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করা হলো।

 

. ইসলামী বীমার বৈশিষ্ট্য

. লাভলোকসানভিত্তিক বীমা : ইসলামী বীমায় বীমা গ্রহীতাদের বিশেষ ভূমিকা থাকে। বীমা গ্রহীতাগণ কেবল গ্রহীতা নয়; বরং বীমা ব্যবসায়ের অংশীদারের মর্যাদা পায়। ফলে ইসলামী বীমার মুনাফা ভোগে বীমা গ্রহীতাগণ যেমন অংশীদার তেমনি লোকসানের দায়ও তারা বহন করেন। লাভ-লোকসানের অংশীদারিত্ব ইসলামী বীমার গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়ে দেয়।

 

. ইসলামী শরীআহভিত্তিক বীমা : ইসলামী বীমা ইসলামী শরী’আহর ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত হয়। প্রচলিত সনাতন বীমার সকল সুযোগসুবিধা ঠিক রেখে এ বীমা তার সবধরনের কর্মকাণ্ডে ইসলামী শরী’আহর নীতি প্রতিপালন করে।

 

. সুদ পরিহার : ইসলামী বীমার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এ বীমা লেনদেনের কোনো পর্যায়েই সুদের কারবার করে না। প্রিমিয়াম গ্রহণ ও পলিসি পূর্ণ করার বিনিময়ে গ্রাহককে সুদ প্রদান করে না অথবা নিজেরাও কোথাও তহবিল বিনিয়োগ করে সুদ গ্রহণ করে না। এতে সম্পূর্ণভাবে সুদমুক্ত লেনদেন হয়

 

. জুয়া পরিহার : ইসলামী বীমায় জুয়া কিংবা জুয়ার কোনো উপাদানের অস্তিত্ব থাকে না। এ বীমায় দৈবক্রমে, সময় সন্ধিক্ষণে জুয়ার মতো সম্পদ লাভের কোনো অঙ্গীকার থাকে না; বরং সব পর্যায়ে যুক্তিসঙ্গত ব্যবসায়িক ঝুঁকি থাকে, যাতে যৌক্তিকভাবেই লাভ বা লোকসান হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

 

. অস্পষ্টতা পরিহার : ইসলামী বীমা পলিসিতে গ্রহণকারীর বীমাপত্রে কোনো অস্পষ্টতা ও অস্বচ্ছতা রাখা হয় না। এর সব শর্ত, চুক্তির বিষয় ও প্রাসঙ্গিক অন্যান্য বিষয় হয় স্পষ্ট। স্পষ্টতা ও স্বচ্ছতা এ বীমাকে বিশেষ গ্রহণযোগ্যতা প্রদান করে থাকে।

 

. হালাল খাতে বিনিয়োগ : ইসলামী বীমা ইসলামী শরী’আহ কর্তৃক অনুমোদিত হালাল তথা বৈধ খাতগুলোতে শুধু অর্থ বিনিয়োগ করে থাকে। এ বীমা ইসলামী শরী’আহ পরিপন্থি কোনো খাতে অর্থ বিনিয়োগ করে না।

 

. কল্যাণমূলক বিনিয়োগকে অগ্রাধিকার দেয়া : প্রচলিত সাধারণ বীমার মতো ইসলামী বীমাও মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে মূলধন বিনিয়োগ করে; কিন্তু এ বীমার বিশেষত্ব হলো এটা অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে জনগুরুত্বপূর্ণ খাতে অর্থ বিনিয়োগ করার পদক্ষেপ গ্রহণ করে। ইসলামী বীমা কল্যাণমূলক কাজে বিশেষ বিশেষ প্রকল্পের অধীন অর্থ বিনিয়োগ করে ।

 

. শরীআহ উপদেষ্টা পরিষদ : ইসলামী বীমা আমানত গ্রহণ, বিনিয়োগ, মুনাফা অর্জন ও কটনের সকল পর্যায়ে ইসলামী শরী’আহর পূর্ণ অনুশীলন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি শরী’আহ উপদেষ্টা পরিষদ বা শরী’আহ কাউন্সিল থাকে। শরী’আহ উপদেষ্টা পরিষদ স্বাধীনভাবে মতামত দিয়ে বীমার প্রতিটি কাজ শরী’আহসম্মত হওয়ার বিষয়টি সুনিশ্চিত করেন।

 

. মুদারাবা মুশারাকা পদ্ধতির বিনিয়োগ : ইসলামী বীমা আমানত গ্রহণ ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ইসলামী শরী’আহর মুদারাবা-মুশারাকা নীতির অনুসরণ করে। মুদারাবা নীতিতে গ্রাহক তার যোগ্যতা, সময় ও শ্রম বিনিয়োগ করে আর বীমা প্রতিষ্ঠান মূলধন যোগান দেয়। মুশারাকা পদ্ধতিতে দুপক্ষই অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে সম বা অসম পরিমাণ মূলধন যোগান দিয়ে থাকে। ব্যবসার ক্ষেত্রে মুদারাবা ও মুশারাকা পদ্ধতির বিনিয়োগ হালাল ও ইসলামসম্মত।

 

১০. পরস্পরের দায়িত্বের অংশীদারিত্ব : ইসলামী বীমার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো পরস্পরের মধ্যে দায়িত্বের অংশীদারিত্ব। এ ব্যবস্থায় বীমাভুক্ত ব্যক্তিরা একজন অন্যজনের ব্যবসায়বাণিজ্য, জীবন-সম্পদ এবং স্বার্থ সংরক্ষণের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কোনো কারণে কারো কোনো ধরনের ক্ষতি-লোকসান হলে বীমাভুক্ত প্রত্যেকে তার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাই এককভাবে কেউ ব্যাপক আকারে ক্ষতিগ্রস্ত হন না।

 

১১. পারস্পরিক সহযোগিতা : ইসলামী বীমার একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো পারস্পরিক সহযোগিতা। পারস্পরিক কল্যাণকামিতা ও সহযোগিতার এ বিষয়টি রীমাকে ইসলামী বীমায় রূপান্তরিত করেছে। ইসলামী রীমায় যৌথ জামানত ও পারস্পরিক সাহায্য প্রদানের দায়-দায়িত্ব পালনার্থে বীমা পলিসি গ্রাহক তাদের বীমা কিস্তির নির্দিষ্ট অংশ পারস্পরিক সহযোগিতা হিসেবে প্রদান করে থাকে। এটা মুদারাবা নীতিতে স্বাভাবিক বীমাচুক্তির অতিরিক্ত। এ চুক্তিটি বীমা পলিসি গ্রাহকদেরকে তাদের সাথি অংশগ্রহণকারীর ক্ষতিপূরণে আন্তরিক সহায়তা দেয়ার জন্য তাদের করা অঙ্গীকার যথাযথভাবে পালনে সক্ষম করে তোলে। সাথি অংশগ্রহণকারীদের ক্ষতিপূরণে প্রয়োজনীয় দায়-দায়িত্ব পালনের পরে ইসলামী বীমার মুনাফা বণ্টন করা হয়।

 

১২. ক্ষতিপূরণের যৌথ ব্যবস্থা : ইসলামী বীমা পারস্পরিক ক্ষতি-লোকসানের যৌথ ব্যবস্থাবিশেষ। মানুষের জীবনে নানা রকম ঝুঁকি রয়েছে। রয়েছে ক্ষতি- লোকসানের বিভিন্ন আশঙ্কা। কিছু কিছু ক্ষতি এমন হয় যে, মানুষের একার পক্ষে তা পূরণ করা সম্ভব নয়। ইসলামী চুক্তিতে এ জাতীয় ক্ষতি যৌথভাবে পূরণের ওয়াদা থাকে। ইসলামী বীমা ঝুঁকি মোকাবিলায় যৌথ অংশীদারিত্বের এই বিষয়টি অপরিহার্য করে থাকে।

 

১৩. স্বার্থ সংরক্ষণ : ইসলামী বীমাভুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে কারো কোনো ক্ষতি হলে যৌথ উদ্যোগে সে ক্ষতিপূরণ করা হয় ঠিকই; কিন্তু কোনোভাবেই তা কারো স্বার্থ হানি করে নয়। ইসলামী বীমা বীমাভুক্ত সকলের স্বার্থ সংরক্ষণ করে। কারো ক্ষতি করে। অন্যের উপকার করা ইসলামের নীতি নয়।

 

১৪. পারস্পরিক আস্থা বিশ্বাস : ইসলামী বীমার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো। পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস। বীমাকারীরা বীমাপ্রতিষ্ঠানের ওপর, বীমাপ্রতিষ্ঠান বীমাকারীদের ওপর এবং বীমাকারী ও বীমাপ্রতিষ্ঠান নিজেরা নিজেদের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রাখে বলেই বীমা সম্পন্ন করা হয়ে থাকে।

 

১৫. পারস্পরিক সংহতি ঐক্য : সংহতি ও ঐক্য ইসলামের প্রধান মূলনীতি।

মহান আল্লাহ কুরআন মাজীদে ঘোষণা করেছেন, وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا

“তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জু (কুরআন ও ইসলাম) দৃঢ়ভাবে ধর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।

 

ইসলামী বীমার ক্ষেত্রে এ নীতি অনুসরণ করা হয়ে থাকে। বীমাভুক্ত সদস্যরা। পারস্পরিক সংহতি ও ঐক্যের মাধ্যমে সমষ্টিগত স্বার্থের পক্ষে কাজ করে থাকে। কাজেই তাদের একজনের লাভ হলে সকলেই লাভবান হয়। একজন ক্ষতিগ্রস্ত হলে সবাই সে ক্ষতি মেনে নেয়।

 

. ইসলামী শরীআর দৃষ্টিকোণে বৈশিষ্ট্য : ইসলামী শরী’আহ বিশেষজ্ঞগণ বিদ্যমান সুদি বীমাব্যবস্থাকে ইসলামীকরণের জন্যে যেসব পরিবর্তনের সুপারিশ করেছেন সেগুলো এক কথায় যুগান্তকারী, অনবদ্য ও বীমা গ্রহীতার স্বার্থ সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে খুবই বলিষ্ঠ ও কার্যকর। এসব পরিবর্তন ও সংযোজনই ইসলামী তাকাফুল বা বীমাব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য বলে বিবেচিত। বৈশিষ্ট্য যথাক্রমে :

 

১. বীমাগ্রহীতাগণকে কোম্পানীর শেয়ারহোল্ডারদের মতোই বিবেচনা করা হবে যেন তারা কোম্পানীর মুনাফা বা নিট উদ্বৃত্তের অংশীদার হতে পারেন।

 

২. কোনো নির্দিষ্ট বছরে বীমাগ্রহীতাগণ যে প্রিমিয়াম প্রদান করেছেন তাতে যদি তাদের অংশের লোকসান পূরণ না হয় তাহলে তারা অতিরিক্ত অর্থ প্রদানে বাধ্য থাকবেন।

৩. কোম্পানীর বোর্ড অব ডিরেকটরস-এ বীমাগ্রহীতাগণের পক্ষ হতে পর্যাপ্ত প্রতিনিধি থাকবেন এবং তারা কোম্পানীর নীতি নির্ধারণ থেকে শুরু করে সকল হিসাব। পর্যবেক্ষণ করার ক্ষমতা রাখবেন।

 

৪. কোম্পানী তার তহবিল শরী’আহসম্মত উপায়ে বিনিয়োগ করবে। শরী’আহতে নিষিদ্ধ ও সুদের সংশ্রব রয়েছে এমন কোনো ধরনের ব্যবসায় বাণিজ্য বা কার্যক্রমে কোনো অর্থ বিনিয়োগ বা লেনদেন করা চলবে না।

 

৫. বীমাপ্রতিষ্ঠানটির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবেই একটি শরী’আহ সুপারভাইজারি বোর্ড/কাউন্সিল থাকবে। শরী’আহর আলোকে প্রতিটি কাজ তদারকি করা তাদের আবশ্যিক দায়িত্ব হিসেবে গণ্য হবে।

 

৬. ইসলামী তাকাফুল ব্যবস্থায় পলিসিগ্রহীতা শরী’আহর বিধান মোতাবেক নোমিনী বা মনোনীত ব্যক্তি নির্ধারণ করবেন। শরী’আহবিরোধী নোমিনী মনোনয়ন গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হবে না।

 

৭. বীমা কোম্পানী দুটি পৃথক ও সুস্পষ্ট হিসাব (Accounts) রক্ষা করবে : (ক) শেয়ারহোল্ডারদের হিসাব ও (খ) পলিসিগ্রহীতাদের হিসাব। পলিগ্রিহীতাদের হিসাবে তাদের জমাকৃত প্রিমিয়াম, চাঁদা এবং তাদের তহবিল বিনিয়োগ করার ফলে অর্জিত মুনাফায় তাদের যে অংশ সবই জমা হবে।

 

পলিগ্রিহীতাদের হিসাব থেকে সার্ভিস চার্জ ও দাবি পূরণের পর উদ্বৃত্ত হতে প্রয়োজনীয় রিজার্ভ আলাদা রেখে অবশিষ্ট অর্থ তাদের মধ্যেই পুনঃবণ্টিত হবে। যদি কোনো ঘাটতি দেখা দেয় তাহলে তা সাধারণ তহবিল হতে পূরণ করা হবে। অবশ্য যদি কোনো সাধারণ রিজার্ভ তহবিল না থেকে থাকে অথবা থাকলেও সেই তহবিল ঘাটতি পূরণের জন্যে যথেষ্ট বিবেচিত না হয় তাহলে শেয়ারহোল্ডারদের রিজার্ভ ও মূলধন হতে তা করযে হাসানা আকারে গ্রহণ করা হবে। ভবিষ্যতে পলিসিগ্রহীতাদের হিসাবে উদ্বৃত্ত হলে তা থেকে প্রথমেই এই করযে হাসানা পরিশোধিত হবে। শেয়ারহোল্ডারগণ কোনোক্রমেই পলিসিগ্রহীতাদের তহবিল বা উদ্বৃত্ত গ্রহণ করতে পারবে না। শেয়ার মূলধন বিনিয়োগ হতে উপার্জিত আয় শেয়ারহোল্ডারদের একাউন্টেই দেখানো হবে এবং চলতি ব্যয় ও অন্যান্য দাবি পরিশোধের পর উদ্বৃত্ত অর্থ তাদের মধ্যেই বণ্টিত হবে।

 

৮. একটি যাকাত বা সাদাকা তহবিল গঠিত হতে হবে। শেয়ার মূলধন, রিজার্ভ ও মুনাফা হতে প্রতিবছর ২.৫% হারে গ্রহণ করে এই তহবিলে জমা করা হবে। পলিগ্রিহীতাদের সম্মতিসাপেক্ষে তাদের হিসাবের নিট উদ্বৃত্ত হতেও বার্ষিক ২.৫% হারে যাকাত আদায় করে এই তহবিলে জমা দেওয়া যেতে পারে। তহবিলটি কোম্পানীর বোর্ড অব ডিরেক্টরসের গৃহীত উপবিধি অনুসারে বোর্ড অব ট্রাস্টি দ্বারা পরিচালিত হবে।

 

. ইসলামী বীমার পদ্ধতিগত বৈশিষ্ট্য

১. ইসলামী জীবনবীমার প্রধানতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর স্বচ্ছতা। ইসলামী বীমা কোম্পানী তাকাফুল স্কীমে অংশগ্রহণকারী সদস্যদের প্রদত্ত অর্থের জিম্মাদার (Trustee)। স্বভাবতই জমাকৃত অর্থ কিভাবে বিনিয়োগ করা হবে, কত অংশ জমাকারীর নিজস্ব হিসাবে জমা থাকবে, কত অংশ অনুদান (Tabarru) হিসেবে জমা করা হবে, অংশগ্রহণকারীর নিজস্ব হিসাবের লভ্যাংশের কত ভাগ বীমা কোম্পানী গ্রহণ করবে, কত ভাগ নিজস্ব হিসাবে জমা হবে, এসব ব্যাপারে চুক্তির সময় সুস্পষ্ট উল্লেখ করতে হয়। সনাতন জীবন বীমা পলিসিতে এ ধরনের কোনো বিষয় উল্লেখ করতে হয় না।

 

২. প্রতিবছর নিজস্ব হিসাবের জমা, লভ্যাংশের জমা ইত্যাদি পারিবারিক তাকাফুল স্কীমের প্রতিটি অংশগ্রহণকারীকে প্রেরণ করতে হয়। ফলে ইসলামী জীবন বীমার হিসাবরক্ষণ পদ্ধতি সনাতন জীবন বীমার হিসাবরক্ষণ পদ্ধতি হতে ভিন্নতর। এক্ষেত্রে প্রচলিত আইন ও বিধি মোতাবেক যেসব হিসাব বিবরণী জীবন বীমা কোম্পানীকে প্রস্তুত করতে হয় ইসলামী জীবন বীমার হিসাব পদ্ধতি ভিন্নতর হওয়ার ফলে কিছু সমস্যার সৃষ্টি হবে।

 

৩. ইসলামী জীবন বীমার সমর্থন মূল্য (Surrender Value) নির্ণয় করা হয়। সনাতন বীমার পদ্ধতি হতে ভিন্নতর পদ্ধতিতে। বীমা আইনে সমর্পণ/গ্যারান্টিকৃত সমর্পণ মূল্য নির্ণয়ের ফর্মুলা বীমা নিয়ন্ত্রক কর্তৃক নির্ধারিত হয়। ইসলামী জীবন বীমায় সমর্পণ মূল্য নির্ভর করবে অংশগ্রহণকারীর নিজস্ব হিসাবে লাভসহ কত জমা আছে তার ওপর।

 

৪. ইসলামী বীমায় স্কীমে অংশগ্রহণকারীর ভুল তথ্য/মিথ্যা তথ্য প্রদানের কারণে চুক্তি বাতিল হতে পারে; কিন্তু অংশগ্রহণকারীর প্রদত্ত অর্থ বাজেয়াপ্ত করা যায় না। সনাতন জীবন বীমা পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চুক্তি অনুসারে যদি প্রিমিয়াম দেয়া না। হয় তাহলে বীমাপত্রটি বাতিল হয় এবং যদি বীমাপত্রটি পরিশোধিত মূল্য প্রাপ্ত না হয়। (Paid up Value) তাহলে জমা দেয়া টাকা ফেরত দেয়া হয় না। ইসলামী জীবন বীমা যেকোনো অবস্থায় ‘নিজস্ব হিসাবে জমাকৃত টাকা লাভসহ ফেরত দেয়া হবে। এমনকি বীমাগ্রাহক আত্মহত্যা করলেও নিজস্ব হিসাবে জমাকৃত টাকা লাভসহ প্রাপ্য হয়।

 

৫. সনানত বীমাব্যবস্থায় বীমাগ্রাহকের মনোনীত ব্যক্তি/ব্যক্তিগণ পলিসির টাকা এককভাবে পাবার অধিকারী। কিন্তু ইসলামী জীবন বীমাব্যবস্থায় মনোনীত ব্যক্তি ইসলাম ধর্মের অনুসারী হলে তিনি বীমা কোম্পানী হতে যে অর্থ প্রাপ্য হন তা ইসলামের উত্তরাধিকার আইন অনুসারে বণ্টন করার নিশ্চয়তা বিধান করতে হয়

 

৬. ইসলামী জীবন বীমাব্যবস্থায় অংশগ্রহণকারীর নিজস্ব হিসাবে লভ্যাংশের অর্থ নিয়মিতভাবে জমা করার পাশাপাশি অনুদান হিসাবের নিট উদ্বৃত্তাংশ গাণিতিক মূল্যায়নের (Actuall Valuation) ভিত্তিতে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে পুনঃবণ্টন করতে হয়। সনাতন বীমায় লাভবিহীন পলিসি বিক্রয় করা যায়; কিন্তু ইসলামী জীবন বীমায় অংশগ্রহণকারী সবসময় লভ্যাংশের হকদার।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *