?> ইসলামী বীমার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
ইসলামী বীমার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

ইসলামী বীমার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

ইসলামী বীমার লক্ষ্য উদ্দেশ্য (Aim and Objectives of Islamic Insurance) 

ইসলামী তাকাফুলের (বীমার) কতকগুলো মৌলিক উদ্দেশ্য রয়েছে। এগুলো নিম্নরূপ :

. আর্থিক নিরাপত্তা : বর্তমান যুগে মানুষের প্রত্যেকটি কাজে-কর্মে ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে। সব সময় ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তার বোঝা মাথায় নিয়ে কোন “মানুষের পক্ষেই সুষ্ঠুভাবে কাজ ও ব্যবসা পরিচালনা সম্ভব নয়। দুশ্চিন্তা এমন এক ব্যাধি যা ব্যাক্তিকে নিঃশেষ করে দেয়। বীমা চুক্তির মাধ্যমে বীমা গ্রহীতা এ সব ঝুঁকি “ও অনিশ্চয়তার বিরুদ্ধে আর্থিক নিরাপত্তা লাভ করে। এ নিরাপত্তা ও প্রশান্তিবোধ মানুষের জীবনকে গতিময় করে তোলে। তাছাড়া কর্মজীবনের শুরুতে ব্যক্তির মাঝে কাজের যে শক্তি ও প্রেরণা থাকে দিনে দিনে তা কমতে থাকে। কিন্তু কর্মশক্তি হ্রাস পেলেও সাংসারিক দায়িত্ব বেড়ে যায়। বৃদ্ধ বয়সে সম্ভাব্য দৈন্যতা থেকে রেহাই পাওয়ার উদ্দেশ্যে অনেকে বীমা চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। এভাবে মূলত ব্যক্তি কিছুটা সঞ্চয়ী হয়ে উঠে, যা অবসর জীবনে ব্যক্তিকে আত্মপ্রত্যয়ী ও স্বচ্ছলভাবে জীবনযাপনের সুযোগ এবং সম্ভাব্য ক্ষতির বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতিরক্ষা প্রদান করে। ১৫৫ সর্বোপরি ইসলামী বীমার উদ্দেশ্য হবে সমাজের সকল স্তরের মানুষকে ইসলামী তাকাফুলের (বীমার) আওতায় নিয়ে আসা এবং নানাবিধ অনিশ্চয়তা ও ঝুঁকির বিপরীতে আর্থিক নিরাপত্তা বিধান করা।

 

. সুদমুক্ত মূলধন গড়ে তোলা : সুদসহ বিভিন্ন শর্তযুক্ত বৈদেশিক সাহায্যের হাত থেকে রক্ষার জন্য জনগণের সঞ্চয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি করে মূলধন গড়ে তোলা ইসলামী বীমা প্রতিষ্ঠার অন্যতম উদ্দেশ্য।

 

. অর্থনীতি বাস্তবায়নের পরিবেশ সৃষ্টি : মুদারাবাসহ বিভিন্ন ইসলামী বিনিয়োগপদ্ধতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশে ইসলামী অর্থনীতির নীতিমালা বাস্তবায়নের পরিবেশ সৃষ্টি করা।

 

. অর্থনৈতিক ঝুঁকির বিপরীতে সহযোগিতা : পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে অর্থনৈতিক ঝুঁকির বিপরীতে সহযোগিতা করা এবং লভ্যাংশ বণ্টন নিশ্চিত করা। বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য প্রতিরোধ গড়ে তোলা ইসলাম পরিপন্থী নয়। ভবিষ্যতের অপ্রত্যাশিত ক্ষতি, লোকসান কিংবা দুর্দশার বিপরীতে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে ন্যায় ও ইনসাফপূর্ণ সমাজগঠন আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পূর্বশর্ত। রাসূল (স.) অসহায়দের সহায়তা করতেন এবং তাঁর সাহাবীদেরকে তাদের কষ্ট নিবারণের আদেশ দিতেন। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত রাসূল (স.) বলেন, مَنْ نَفَسَ عَنْ مُؤْمِنٍ كُرْبَةٌ مِنْ كُرَبِ الدُّنْيَا، نَفْسَ اللَّهُ عَنْهُ كُرْبَةٌ مِن كُرَبِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ

“যে ব্যক্তি কোন মুমিনের জাগতিক একটি কষ্ট দূর করে, আল্লাহ তা’আলা তার পরকালীন একটি কষ্ট নিবারণ করবেন।”

 

বীমা চুক্তিতে আবদ্ধ সদস্যগণ পারস্পরিক সহযোগিতা এবং ভ্রাতৃত্ববোধের চেতনায় উদ্দীপ্ত হয়, যা একটি জাতির অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও স্বনির্ভরতার পথ সুগম করে। আল্লাহ তা’আলা বলেন, وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى অর্থাৎ, “সৎকর্ম ও তাকওয়ায় তোমরা পরস্পর সাহায্য করিবে।”

 

. বিপদাপদ, দুর্ঘটনা মোকাবিলায় আর্থিক নিরাপত্তা : রাসূল (স.) ভবিষ্যত প্রজন্মের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও উন্নয়ন ধারাবাহিকতা নিশ্চিতকরণে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, إِنَّكَ أَن تَدَعَ وَرَثَتَكَ أَغْنِيَاءَ خَيْرٌ مِنْ أَنْ تَدَعَهُمْ عَالَةً يَتَكَفَّفُونَ النَّاسَ فِي أَيْدِيهِمْ ، وَإِنَّكَ مَهُمَا انْفَقْتَ مِنْ نَفَقَةٍ، فَإِنَّهَا صَدَقَةٌ، حَتَّى النُّقْمَةُ الَّتِي تَرْفَعُهَا إِلَى فِي امْرَأَتِكَ

 

অর্থাৎ, “তোমাদের উত্তরাধিকারীদের নিঃস্ব, পরমুখাপেক্ষী ও অপরের ওপর নির্ভরশীল করার চেয়ে স্বচ্ছল, ধনী করে রেখে যাওয়া উত্তম এবং তুমি যা কিছু খরচ করবে, তা সাদাকা হিসেবে পরিগণিত হবে। এমনকি তোমার স্ত্রীর মুখে তুমি যে লোকমা তুলে দাও তাও সাদাকার অন্তর্ভুক্ত। “

 

. বিধবা এতিমদের আর্থিক নিরাপত্তা বিধান: বীমাব্যবস্থা বিধবা ও এতিমদের ভবিষ্যতের আর্থিক নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তা বিধান করে। রাসূল (সা.) দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ লাভের উদ্দেশ্যে বিধবা এতিমদের সাহায্য ও সহযোগিতা করার উপ‌দেশ দেন।

 

. ভ্রাতৃত্ব সংহতি প্রতিষ্ঠা : ইসলামী বীমা যেহেতু সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও সংহতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা সম্প্রসারণের একটি পারষ্পরিক লেনদেনের চুক্তি, তাই এ থেকে কিছু লাভ করা এ চুক্তির উদ্দেশ্য হবে না। তাই কোন বীমা পলিসির উভয় পক্ষের মধ্যে একটি পারস্পরিক সহযোগিতা যেখানে বীমা গ্রাহক পুরো মেয়াদকালে প্রিমিয়াম দিতে থাকে, বিনিময়ে বীমা গ্রহিতার অপ্রত্যাশিত কোন বস্তুগত ঝুঁকি, বিপদ কিংবা ক্ষতি থেকে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দেবে। বীমা চুক্তির কোন পক্ষ যদি পারষ্পরিক সহযোগিতা প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে লাভ করার মতলব আঁটে তবে লেনদেনটি নৈতিক ও ধর্মীয়ভাবে অগ্রহণযোগ্য হবে। তাই উভয় পক্ষকে তাদের অন্তরে পারষ্পরিক সহযোগিতার মূলনীতি অনুসরণের লক্ষ্যে পবিত্রতা ও আন্তরিকতার সৃষ্টি করতে হবে।

 

. সুদমুক্ত বিনিয়োগ তরান্বিত করা : ইসলামী বীমা কোন পরিস্থিতিতেই সুদভিত্তিক কোন বিনিয়োগ করতে পারে না। তাছাড়া ব্যবসা পরিচালনায় ঘারার বা অস্বচছতারও আশ্রয় নিতে পারে না। বরং তার সকল বিনিয়োগে মুদারাবা বা মুশারাকা পদ্ধতি অবলম্বন করে এবং যৌথ জামানত ও পারস্পরিক সাহায্য প্রদানের দায়-দায়িত্ব পালনার্থে চাঁদার নির্দিষ্ট অংশ তাবাররু হিসেবে দান করার অঙ্গীকার করে। তাবাররুর উদ্দেশ্য হচ্ছে চুক্তিতে অংশগ্রহণকারীদেরকে তাদের সাথী অংশগ্রহণকারীর ক্ষতিপূরণে আন্তরিক সহায়তা দানে কৃত অঙ্গীকার যথাযথ বাস্তবায়নে সক্ষম করে তোলা ।

 

. সমাজ কল্যাণ বিধান : ইসলামী বীমার সমাজকল্যাণ কাজে সহায়তা করার জন্য যাকাত বা সাদাকাহ তহবিল গঠন করে। এ তহবিলে যাকাত, সাদাকাহ ও সন্দেহযুক্ত আয় জমা হয় এবং তা দিয়ে সমাজক্যাণমূলক বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন ও দারিদ্র বিমোচনে অংশগ্রহণ করে। ইসলামী জীবন ব্যবস্থা যে ঐশী নীতিমালার উপর প্রতিষ্ঠিত তার উদ্দেশ্য হচ্ছে ব্যক্তি ও সমাজ উভয়ের কল্যাণ। সেবা প্রদান, জাগতিক উৎকর্ষ সাধনে কল্যাণমূলক কাজে অংশগ্রহণে মুসলিম জাতি একটি সর্বত্তোম আদর্শ। আল্লাহ তা’আলা বলেন, অর্থাৎ, “তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানবজাতির জন্য তোমাদের আবির্ভাব হইয়াছে। তোমরা সৎকার্যের নির্দেশ দান কর, অসৎকার্যে নিষেধ কর এবং আল্লাহে বিশ্বাস কর।’

 

১২. ইসলামী শরী’আহ মোতাবেক মুনাফা অর্জনের প্রচেষ্টা চালানো এবং সঞ্চয়ের এ ইসলামী বিধান অনুসরণ করা।

১৩. একটি মেয়াদের মধ্যে জমাকৃত অর্থের ফেরত পাওয়াসহ মুনাফা পাওয়ার নিশ্চয়তা বিধান করা।

১৪. অংশগ্রহণকারীদের যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে সুন্দর সমাজ গঠন করা।

 ১৫. ইসলামী অর্থনীতি বাস্তবায়নে সহায়ক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *