?> বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের বিশেষ সমস্যাবলি - Best Information
ইসলামী ব্যাংকিংয়ের বিশেষ সমস্যাবলি

বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের বিশেষ সমস্যাবলি

বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের বিশেষ সমস্যাবলি

 

ইসলামী অর্থবাজারের অনুপস্থিতি

বাংলাদেশে ইসলামী অর্থবাজারের (Islamic Money Market) অনুপস্থিতির কারণে ইসলামী ব্যাংকসমূহ তাদের উদ্বৃত্ত তহবিল অর্থাৎ সাময়িক অতিরিক্ত তারল্য ‘সরকারী ট্রেজারি বিল’, *অনুমোদিত সিকিউরিটিজ’ বা ‘বাংলাদেশ ব্যাংক বিল’ ইত্যাদিতে বিনিয়োগ করতে পারে না। সুদের কারণে স্বাভাবিকভাবেই ইসলামী ব্যাংকসমূহ বাংলাদেশ ব্যাংকে রক্ষিত তারল্য-সঞ্চিতির অনুমোদিত অংশ এবং অতিরিক্ত তারল্য ঐ সমস্ত সিকিউরিটিতে বিনিয়োগ করতে পারে না।

 

ইসলামী ব্যাংককে তার সকল জামানত বাংলাদেশ ব্যাংকে নগদ টাকায় জমা রাখতে হয়। এভাবে ইসলামী ব্যাংকের অতিরিক্ত তারল্য বিনিয়োগবিহীন অবস্থায় থেকে যায়। ফলে ইসলামী ব্যাংকসমূহের মুনাফা অর্জনের ওপর এর অবশ্যম্ভাবী নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের নিকট ইসলামী ব্যাংকসমূহের ‘ইসলামী মুদারাবা বন্ড’ চালুর দাবি ছিল দীর্ঘদিনের, যা সম্প্রতি কার্যকরী হয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক উদ্যোগ নেয়ায় Government Islamic Investment Bond (GIIB) নামে একটি শরীয়াহ্ অনুমোদিত বন্ড বাজারে এসেছে।

 

ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)-এর উদ্যোগে সম্প্রতি Islamic Mutual Fund (IMF) প্রবর্তন করা হয়েছে। এটিও শরীয়াহভিত্তিক হালাল ফান্ডে ইসলামী ব্যাংকগুলোর অলস তহবিল বিনিয়োগে নতুন মাত্রা সংযোজন করবে। এ জাতীয় ইনস্ট্রুমেন্ট প্রচলিত ব্যাংকসমূহের সাথে অসম প্রতিযোগিতা হ্রাস করতে সহায়ক হবে। উপরন্তু ইসলামী কমন মার্কেট উন্নয়নে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে।

 

নিয়ন্ত্রণমূলক তত্ত্বাবধানমূলক স্বতন্ত্র কাঠামোর অভাব

বাংলাদেশ সরকার আইডিবি প্রতিষ্ঠার সনদে স্বাক্ষরকারী অন্যতম দেশ হিসেবে এদেশের ব্যাংক-ব্যবস্থা পর্যায়ক্রমে ইসলামীকরণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ ব্যাপারে সরকারী উদ্যোগ এখনো খুব আশাপ্রদ নয়।

 

আশির দশকের শুরুর দিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জাতীয়করণকৃত ব্যাংকিং খাত পর্যায়ক্রমে ইসলামীকরণের লক্ষ্যে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিলো, যা নানা কারণে সফল হয়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক জাতীয়করণকৃত ব্যাংকিং খাত ইসলামীকরণের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবার পর বেসরকারী খাতে ইসলামী ব্যাংকিং চালু হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদেরকে ইসলামী শরীয়ার আলোকে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি প্রদান করে ।

 

বাংলাদেশে বেসরকারী পর্যায়ে উৎসাহজনকভাবে দ্রুত বিকাশমান ইসলামী ব্যাংক ব্যবস্থাকে সহযোগিতা দান রাষ্ট্রীয় প্রতিশ্রুতির অংশ। ইসলামী ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণমূলক (Regulatory) ও তত্ত্বাবধানমূলক (Supervisory) স্বতন্ত্র কাঠামো এখনো তৈরি হয়নি। অবিলম্বে এ ঘাটতি পূরণ হলে তা এদেশের ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রমে শৃঙ্খলা বিধানে সহায়ক হবে।

 

ইসলামী ব্যাংকসমূহের জন্য একটি পৃথক আইন ব্যবস্থা, লাইসেন্স- এর জন্য যথাযথ আবশ্যকতা নির্ধারণ, ন্যূনতম মূলধন ও তারল্যের পরিমাণ নির্ধারণ, ঝুঁকি পরিমাপিত সম্পদ শ্রেণীকরণের ব্যবস্থাসহ ইসলামী ব্যাংকসমূহের প্রয়োজন অনুযায়ী স্বতন্ত্র সুবিবেচনাপ্রযুক্ত নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা (Prudential Regulation) প্রণয়ন করা উচিত।

 

সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক-এর উদ্যোগে ইসলামী ব্যাংকসমূহের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য একটি ‘গাইড লাইন’ প্রণয়নের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন মহাব্যবস্থাপককে প্রধান করে একটি ‘ফোকাস গ্রুপ’ গঠন করা হয়েছে। ফোকাস গ্রুপটি ইসলামী ব্যাংকগুলোর জন্য একটি ‘গাইড লাইন’ প্রণয়নের কাজ সম্পন্ন করে এনেছে। এটি একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ।

 

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক কুয়ালালামপুরভিত্তিক Islamic Financial Services Board বা ‘আইএফএসবি’-এর সদস্য হয়েছে। দেশের ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রম জোরদারকরণে এটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ ইতিবাচক পদক্ষেপ ।

 

সহযোগী মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানের অভাব

কোন পদ্ধতিই কেবলমাত্র তার নিজস্ব উপাদান দ্বারা সমৃদ্ধ হতে পারে না । তাকে আরো অনেক সহযোগী (Supportive) প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর করতে হয়। এটা ইসলামী ব্যাংকের জন্যও প্রযোজ্য। কোন উপযুক্ত প্রকল্প চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে ইসলামী ব্যাংকগুলো অর্থনীতিবিদ, আইনজ্ঞ, ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী, ব্যবস্থাপনা পরামর্শক নিরীক্ষক এবং এরূপ আরো অনেক প্রতিষ্ঠানের সেবার দ্বারা লাভবান হতে পারে। কিন্তু ইসলামী ব্যাংকসমূহের স্বতন্ত্র ও বিশিষ্ট প্রয়োজন এবং চাহিদা পূরণের জন্য এ ধরনের প্রতিষ্ঠান এখনো গড়ে ওঠেনি।

 

 সিনিয়র ইসলামী ব্যাংকারদের উন্নততর প্রশিক্ষণের জন্য বাংলাদেশে কেন্দ্রীয়ভাবে কোন প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান নেই। এছাড়া কেন্দ্রীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠানও এদেশে গড়ে ওঠেনি।

 

গ্রাহকদের মধ্য থেকে উদ্যোক্তা সৃষ্টির জন্যও ইসলামী ব্যাংকসমূহের গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ফোরামের প্রয়োজন রয়েছে। ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রমকে সুন্দরভাবে পরিচালনার জন্য বাংলাদেশে এ ধরনের সহযোগী ও মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানের বিকাশ ঘটেনি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *