?> ইসলামী ব্যাংকের জমা গ্রহণের পদ্ধতি ও নীতি - Best Information
ইসলামী ব্যাংকের জমা গ্রহণের পদ্ধতি ও নীতি

ইসলামী ব্যাংকের জমা গ্রহণের পদ্ধতি ও নীতি

ইসলামী ব্যাংকের জমা গ্রহণের পদ্ধতি ও নীতি

জমা গ্রহণের নীতি

ক. ইসলামী ব্যাংক জনসাধারণকে সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তুলতে উৎসাহ যোগায়। শুধু বড় সঞ্চয়ের প্রতি আগ্রহী না হয়ে ছোট জমাকারীদের সম্পদকে জাতীয় আর্থিক প্রবাহে নিয়োজিত করে।

খ.ইসলামী ব্যাংক সকলের কাছে সঞ্চয়ের এ চিত্র তুলে ধরে যে, সঞ্চয়ের মাধ্যমে তিনি ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হতে পারেন এবং একই সাথে তিনি সামাজিক দায়িত্বও পালন করতে পারেন।

গ. সঞ্চয়ী গ্রাহক ও ব্যাংকের সম্পর্ক মুদারাবা পদ্ধতির অংশীদারি নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত। এক্ষেত্রে গ্রাহক ‘সাহিবুল মাল’ এবং ব্যাংক ‘মুদারিব’হিসেবে দায়িত্ব পালন করে।

ঘ. ইসলামী ব্যাংক জনগণের সঞ্চয়কে শরীয়াহ্ অনুমোদিত খাতে শরীয়াহসম্মত পদ্ধতিতে বিনিয়োগ করে হালাল মুনাফা অর্জনে সাহায্য করে।

৫. ইসলামী ব্যাংক শরীয়ার ‘আল ওয়াদিয়া’ নীতির ভিত্তিতে ‘আল ওয়াদিয়া চলতি হিসাব’ পরিচালনা করে। এ ক্ষেত্রে গ্রাহক হলেন ‘মুয়াদ্দি’। আর ব্যাংক ‘মুয়াদ্দা ইলাইহি’। এ হিসাবে জমাকৃত অর্থ ব্যবহারের ব্যাপারে গ্রাহক (মুয়াদ্দি) ব্যাংক (মুয়াদ্দা ইলাইহি)-কে অনুমতি দেয়। ব্যাংক গ্রাহককে তার অর্থ চাওয়ামাত্র ফেরত দেয়ার অঙ্গীকার করে।

 

 আল ওয়াদিয়া চলতি হিসাব

‘আল ওয়াদিয়া’ শব্দটি আরবী ‘ওয়াদিয়ূন’ থেকে উদ্ভুত। এর অর্থ:

  • ১. সংরক্ষণ করা,
  • ২. জমা করা,
  • ৩. বাদ দেয়া,
  • ৪. পরিত্যাগ করা ইত্যাদি।

আল ওয়াদিয়া চুক্তিতে দু’টি পক্ষ থাকে। জমাগ্রহণকারী পক্ষকে বলা হয় ‘মুয়াদ্দা ইলাইহি’। জমাকারী পক্ষকে বলা হয় ‘মুয়াদ্দি’। যে বস্তু জমা রাখা হয়, তা হলো ‘মুয়াদ্দা’।

 

ইসলামী ব্যাংক সুদভিত্তিক ব্যাংকের চলতি হিসাবের বিকল্প ‘আল ওয়াদিয়া’ পদ্ধতি অনুসরণ করে। এই পদ্ধতিতে ব্যাংক বা মুয়াদ্দা ইলাইহি জমাকারীর (মুযাদি) অর্থ (মুয়াদ্দা জমা নেয়। জমাকারী (মুয়াদ্দি) ব্যাংককে এই অর্থ ব্যবহারের অনুমতি দেয়। ব্যাংক জমাকারীর সম্মতির ভিত্তিতে সে অর্থ ব্যবহার করে। ব্যাংক জমাকারীকে তার অর্থ চাওয়ামাত্র ফেরত দিতে বাধ্য থাকে।

 

‘আল ওয়াদিয়া’ হলো অর্থের নিরাপত্তা বিধানের চুক্তি। এর দ্বারা জমাকারী ব্যাংকের সাথে কোন ব্যবসায়ে অংশ নেন না। ব্যাংকের ব্যবসায়ের কোনরূপ ঝুঁকিও বহন করেন না। তিনি তার জমা টাকা কোন সময় ফেরত নেয়ার অধিকার রাখেন। এই পদ্ধতিতে জমাকারী ব্যাংকের কাছ থেকে কোন মুনাফা পান না। জমাকৃত অর্থের নিরাপদ হেফাযত করা ও অন্যান্য সেবা প্রদানের বিনিময়ে ব্যাংক জমাকারীর কাছ থেকে সার্ভিস চার্জ নিতে পারে।

 

ইসলামী ব্যাংকের আল ওয়াদিয়া

 চলতি হিসাব ও সুদভিত্তিক ব্যাংকের চলতি হিসাবের মধ্যে পার্থক্য সুদভিত্তিক ব্যাংকের চলতি হিসেবের সাথে ইসলামী ব্যাংকের চলতি হিসাবের

পার্থক্য ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে মৌলিক ও গভীর। যথা:

১. ইসলামী ব্যাংকের চলতি হিসাব শরীয়ার আল ওয়াদিয়া নীতির ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। সুদভিত্তিক ব্যাংকের চলতি হিসাব পরিচালনায় শরীয়ার কোন নীতি বা পদ্ধতি বা বিধান অনুসরণের তাকীদ বা প্রয়োজন অনুভব করা হয় না। এদিক থেকে দুই ব্যাংকের চলতি হিসাবের মাঝে পার্থক্য নীতি ও নিয়তের।

 

২. আল ওয়াদিয়া চলতি হিসাবে জমাকারীর কাছ থেকে তার অর্থ ব্যবহারের পূর্ব অনুমতি নেয়া হয়। সুদভিত্তিক ব্যাংকের চলতি হিসাবে জমাকারীর কাছ থেকে তার অর্থ ব্যবহারের অনুমতি নেয়ার শার’ঈ বাধ্যবাধকতা অনুভব করা হয় না। (বিনা অনুমতিতে অন্যের গচ্ছিত সম্পদ ভোগ বা ব্যবহার শরীয়ার দৃষ্টিতে আমানতের খেয়ানতের সামিল। আর খেয়ানতকারী ইসলামের দৃষ্টিতে মুনাফিক।)

৩. আল ওয়াদিয়া চলতি হিসাবে জমা অর্থ শরীয়াহ্ পরিপন্থী কোন পদ্ধতিতে বা কোন হারাম খাতে ব্যবহার করা হয় না। ব্যাংক এ ব্যাপারে জমাকারীকে নিশ্চিত করে। অন্যদিকে সুদভিত্তিক ব্যাংক চলতি হিসাবে জমা অর্থ সুদের ভিত্তিতে হালাল-হারাম নির্বিশেষে যেকোন খাতে ব্যবহার করে।

 

‘আল ওয়াদিয়া’ ও ‘আল আমানাহ’র পার্থক্য

শরীয়ার নীতি অনুযায়ী কারো কাছে কোন কিছু গচ্ছিত রাখার একটি চালু পদ্ধতি ‘আমানত’ বা ‘আল আমানাহ’। ‘আল ওয়াদিয়া’ ও ‘আল আমানাহ? মধ্যে পার্থক্য খুবই সরল ও স্পষ্ট। আল আমানাহ পদ্ধতিতে আমানত গ্রহণকারী তার কাছে গচ্ছিত আমানতকারীর অর্থ বা বস্তু ব্যবহার করতে পারেন না। ঐ সম্পদে কোনরূপ পরিবর্তন বা যোগ-বিয়োগ করতে পারেন না। কিন্তু আল ওয়াদিয়া চুক্তি অনুযায়ী জমা গ্রহণকারী (মুয়াদ্দা ইলাইহি) জমাকারীর (মুয়াদ্দি) অনুমতি নিয়ে জমা অর্থ বা বস্তু (মুয়াদ্দা) ব্যবহার করতে পারেন।

ব্যাংকিং সেবায় ইসলামী ব্যাংকের চলতি হিসাব ‘আল ওয়াদিয়া’ পদ্ধতিতে পরিচালিত হয়। অন্যদিকে ইসলামী ব্যাংকের লকার সার্ভিস পরিচালিত হয় “আল আমানাহ’ নীতির ভিত্তিতে। ইসলামী ব্যাংক, আল ওয়াদিয়া চলতি হিসাবের টাকা ওয়াদিয়া চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ব্যবহার করে এবং চাওয়া মাত্র ফেরত দেয়। কিন্তু লকারে গচ্ছিত সম্পদ যে অবস্থায় রাখা হয় সে অবস্থায় হেফাযত করে।

 

মুদারাবা হিসাব

‘মুদারাবা’ শব্দটি আরবী ‘দারব’ বা ‘দারবুন’ থেকে উদ্ভূত। এর অর্থ আল্লাহর রহমতের তালাশে সফর করা। “… আল্লাহ জানেন, তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়বে, কেউ কেউ আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধানে দেশ ভ্রমণ করবে এবং কেউ কেউ আল্লাহর পথে সংগ্রামে নিয়োজিত হবে।(সূরা মুয্যাম্মিল : ২০)

‘মুদারাবা’ হলো অংশীদারী কারবারের একটি পদ্ধতি। মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে ব্যবসা পরিচালনার জন্য দু’টি পক্ষ মুদারাবা নীতির ভিত্তিতে চুক্তিবদ্ধ হন। একপক্ষ (পুঁজির মালিক) মূলধন সরবরাহ করেন। তাকে বলা হয় ‘সাহিবুল মাল’। অন্যপক্ষ তার মেধা, যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, সামর্থ ও মেহনতের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনার উদ্যোগ নেন। এ উদ্দেশ্যে তিনি সাহিবুল মালের মূলধন ব্যবহার করেন। এই উদ্যোক্তা বা ব্যবস্থাপক পক্ষকে বলা হয় ‘মুদারিব’।

মুদারাবা চুক্তির বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ‘সাহিবুল মালের দায়িত্ব অর্থ যোগানোর মধ্যে সীমাবদ্ধ। ব্যবসা পরিচালনায় তিনি অংশ নেন না। ‘মুদারিবা ব্যবসায়ের একজন ট্রাস্টি ও প্রতিনিধি হিসেবে ব্যবসা পরিচালনা করেন।

ব্যবসা পরিচালনায় মুদারিবকে সততা ও দক্ষতার পাশাপাশি সর্বোচ্চ সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। ইচ্ছাকৃত অবহেলা, প্রতারণা বা মিথ্যা বর্ণনার কারণে ব্যবসায় ক্ষতি হলে সেক্ষেত্রে মুদারিব দায়ী হবেন।

 

মুদারাবা হিসাবের ব্যাপারে শরীয়ার নীতি

শরীয়ার নীতিমালা অনুযায়ী ব্যাংক মুদারাবা তহবিল সংগ্রহ করে। ব্যাংক তার বিভিন্ন মেয়াদী বিনিয়োগের পরিকল্পনা ও চাহিদা বিবেচনায় রেখে নানা ধরনের জমাকারীকে আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে মুদারাবা পদ্ধতিতে বিভিন্ন মেয়াদের এবং বিভিন্ন ধরনের হিসাব খোলার ব্যবস্থা রাখতে পারে। সেসব হিসাব সঞ্চয়ী, স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী, দীর্ঘমেয়াদী প্রভৃতি বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। গ্রাহকদের আগ্রহ ও চাহিদা এবং অন্য কোন কল্যাণমূলক লক্ষ্য সামনে রেখে বিভিন্ন স্কিমের মাধ্যমেও জমা সংগ্রহ করা যেতে পারে।

বেশি মেয়াদে অর্থ জমা করে জমাকারী ব্যাংকের ব্যবসায়ে বেশি ঝুঁকি বহন করেন। অন্যদিকে দীর্ঘমেয়াদী জমা বিনিয়োগ করা ব্যাংকের জন্য বেশি সুবিধাজনক। এ কারণে সাধারণতঃ জমার মেয়াদের ওপর ভিত্তি করে অর্থের গুরুত্ব বা ‘ওয়েটেজ’ নির্ধারণ করা হয়। অন্যকোন দৃষ্টিকোণ থেকেও ব্যাংক কোন বিশেষ জমা প্রকল্পকে অধিক গুরুত্ব বা ওয়েটেজ দিতে পারে

মুদারাবা তহবিল থেকে অর্জিত আয় ব্যাংক ও জমাকারীর মধ্যে পূর্বনির্ধারিত অনুপাতে বণ্টন করা হয়। যেমন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড ও তার মুদারাবা জমাকারীদের মধ্যে লাভ বণ্টনের বর্তমান অনুপাত হলো জমাকারী ৬৫: ব্যাংক ৩৫। ব্যবসায়ে লোকসান হলে ‘সাহিবুল মাল’ আর্থিক ক্ষতি বহন করেন। এ ক্ষেত্রে মুদারিবের সময়, শ্রম ও মেধার লোকসান হয় ।

 

মুদারাবা নীতিতে ব্যাংকের মুনাফা বণ্টন

মুদারাবা হিসাবে মুনাফা বণ্টনের সাধারণ নীতিমালা হলো :

১. মুদারাবা তহবিলের আয় মুদারিব ও সাহিবুল মালের মধ্যে চুক্তির শর্ত অনুসারে আনুপাতিক হারে বণ্টন হয়।

২.মুদারাবা তহবিল বিনিয়োগ ছাড়াও ব্যাংক তার বিভিন্ন সেবার মাধ্যমে কমিশন, এক্সচেঞ্জ, সার্ভিস চার্জ ইত্যাদি আয় করেন। এসব আয়ে জমাকারীদের অংশ থাকে না।

৩. মুদারাবা জমাকারীগণ মুদারাবা তহবিলের বিনিয়োগ আয়ে অগ্রাধিকার পেয়ে থাকেন। বিনিয়োগ আয়ে মুদারাবা জমার অংশ হিসাব করার কৌশল :

মুদারাবা জমাকারীগণ মুদারাবা তহবিল বিনিয়োগ আয়ের একটি পূর্বনির্ধারিত অংশ (যেমন কমপক্ষে ৬৫ ভাগ) পান । ব্যাংক বাকি অংশ (যেমন ৩৫ ভাগ) তার আয় হিসেবে পায় ।

ক. ব্যাংক তার আয়ের একটি অংশ (যেমন ২০ ভাগ) বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনার জন্য ব্যয় করে।

খ. ব্যাংক বিনিয়োগ আয়ের বাকি অংশ (ধরা যাক ১৫ ভাগ) বিনিয়োগ ক্ষতি-পূরণ সঞ্চিতি হিসেবে সংরক্ষণ করে।

 

হিসাবসমূহে লাভ বণ্টনের ‘ওয়েটেজ’ পদ্ধতি

জমাকারীদের সকল হিসাবের অর্থের গুরুত্ব ব্যাংকের কাছে সমান নয়। হিসাবের মেয়াদ যত বেশি হয়, সাধারণত সেই অর্থ ব্যাংক ততই সুবিধাজনকভাবে দীর্ঘসময়ের জন্য বিনিয়োগ করার সুযোগ পায়। অন্যদিকে জমাকারী বেশি মেয়াদে অর্থ জমা করে ব্যাংকের ব্যবসায়ে বেশি ঝুঁকি নেন। এ কারণে ব্যাংক প্রধানত মেয়াদকাল বিবেচনা করে বিভিন্ন হিসাবের ভিন্ন ভিন্ন ওয়েটেজ বা গুরুত্বের ভিত্তিতে লাভ নির্ধারণ করে। এ ছাড়া কোন সামাজিক কল্যাণমূলক জমাকে ব্যাংক বাড়তি ওয়েটেজ দিতে পারে। যেমন নির্ধারিত আয়ের লোকদের পবিত্র হজ্জ পালন উৎসাহিত করতে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড হজ্জ অ্যাকাউন্টের জমাকে সর্বোচ্চ ওয়েটেজ দেয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *