?> উৎপাদন কী? উৎপাদনের বৈশিষ্ট্য ও উপকরণ সমূহের গুরুত্ব
উৎপাদন কী উৎপাদনের বৈশিষ্ট্য ও উপকরণ

উৎপাদন কী? উৎপাদনের বৈশিষ্ট্য ও উপকরণ সমূহের গুরুত্ব পর্যালোচনা 

উৎপাদন কী, উৎপাদনের বৈশিষ্ট্য ও উৎপাদনে উপকরণ সমূহের গুরুত্ব পর্যালোচনা 

উপযোগ সৃষ্টির জন্য যেসব বস্তু বা সেবাকার্য প্রয়োজন হয় এবং উৎপাদক বা ফার্ম উৎপাদনের নিমিত্তে যা ক্রয় করে, তাকে উৎপাদনের উপকরণ (factor/input) বলে। অর্থাৎ উৎপাদনে যেসব বস্তুগত ও ব্যক্তিগত উপাদানের সাহায্য গ্রহণ করতে হয়, তাদেরকে উৎপাদনের উপকরণ বা উপাদান বলে। একটি দ্রব্য উৎপাদন করতে হলে অনেক উপকরণের প্রয়োজন হয়। যেমন- ধান উৎপাদন করতে হলে জমি, শ্রম, বীজ, লাঙল, পানি, সার প্রভৃতি হলো উপকরণ বা উপাদান।

উৎপাদন এর বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Production)

উৎপাদন এর বৈশিষ্ট্য:
১. উৎপাদনে বস্তুগত উপকরণ ব্যবহৃত হয়
২. উৎপাদনে কারিগরি জ্ঞান যুক্ত হয়
৩.যন্ত্রপাতি
৪. সময়
৫. বস্তুগত উৎপন্ন যা চূড়ান্ত ফল নির্দেশ করে
৬. বিনিময় মূল্য প্রযোজ্য হয়।
৭. উপযোগ সৃষ্টি হয়।

একটি দেশের উৎপাদন নির্ভর করে—
১. সম্পদের পরিমাণ ও উৎকর্ষ।
২. উৎপাদন পদ্ধতি।
৩. মৌলিক সুবিধা তথা অর্থনৈতিক অবকাঠামোর ওপর।
৪. সাইক্লোন, পাহাড়-পর্বত, নদী-নালা, বন্যা, আবহাওয়া ও ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক অবস্থা ।
৫. দেশের রাজনৈতিক অবস্থা প্রভৃতির ওপর।

উৎপাদন এর উপকরণ :

১. ভূমি (Land): প্রাকৃতিক সম্পদ

২. শ্রম (Labour): দৈহিক ও মানসিক কর্ম চেষ্টা

৩. মূলধন (Capital): উৎপাদনের উৎপাদিত উপাদান

৪. সংগঠন (Organization):সমন্বয়সাধন এবং নিয়ন্ত্রণ করে।

উৎপাদন কাজে প্রযুক্তির প্রকারভেদসমূহ: উৎপাদনে বিভিন্ন উপাদান স্থির ধরে সমাজে প্রচলিত কারিগরি জ্ঞানের সহায়তায় শ্রম ও মূলধনের একটি অনুপাত ব্যবহারের মাধ্যমে যে উৎপাদন কৌশল নির্ধারণ করা হয়, তাকে উৎপাদনে প্রযুক্তি বলে।

অধ্যাপক হিকস তিন ধরনের প্রযুক্তিগত উন্নয়নের কথা উল্লেখ করেছেন।
১. মূলধননিবিড় কৌশল (Capital intensive): মূলধন > শ্রম অর্থাৎ K >L

২. শ্রমনিবিড় কৌশল (Labour intensive ): শ্রম > মূলধন অর্থাৎ L> K

৩. নিরপেক্ষ কৌশল (Neutral intensive): মূলধন = শ্রম অর্থাৎ K=L

অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে শ্রম বেশি কিন্তু মূলধন কম আবার, উন্নত দেশে মূলধন বেশি কিন্তু শ্রম কম ব্যবহৃত হয়। তাই অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে শ্রমনিবিড় কৌশল উপযুক্ত এবং উন্নত দেশে মূলধননিবিড় কৌশল বেশি প্রয়োগ করা হয়।

উৎপাদনের উপকরণসমূহের গুরুত্ব (Comparative Importance of Factors of Production)

কোনো দ্রব্য উৎপাদনে ভূমি, শ্রম, মূলধন ও সংগঠন-এ চারটি উপাদানই অপরিহার্য। এদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া কোনো দ্রব্যের উৎপাদন সম্ভব নয়। তবে উৎপাদনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উপাদানের গুরুত্ব খানিকটা তারতম্য লক্ষ করা যায় ।
১. ভূমির গুরুত্ব: ভূমি হলো উৎপাদনের প্রথম ও প্রধান উপকরণ। জলে, স্থলে, অন্তরীক্ষে প্রকৃতি প্রদত্ত যত সম্পদ বা ঐশ্বর্য রয়েছে এবং যা প্রকৃতি মানুষের কল্যাণে অকাতরে দান করেছে তাই ভূমি। যেমন- মাটি খনি, বনভূমি, মাছ ধরার জলাশয়, গোচারণ ভূমি, বায়ুমণ্ডল ইত্যাদি। ভূমিকে বাদ দিয়ে উৎপাদন সম্ভব নয়। বর্তমানকালে মানুষের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান এবং শিল্পের কাঁচামাল সরবরাহের উৎস হিসাবে ভূমির গুরুত্ব অপরিসীম

২. শ্রমের গুরুত্ব: শ্রম উৎপাদনের দ্বিতীয় উপকরণ। পারিশ্রমিকের বিনিময়ে উৎপাদন কাজে ব্যবহৃত মানুষের সকল প্রকার শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রমকে শ্রম বলে। তবে শুধু আনন্দলাভের উদ্দেশ্যে পরিশ্রম করা হলে, তাকে শ্রম বলা হয় না। এ কারণে যে নিজের আনন্দের জন্য গান গায়, ছবি আঁকে তার পরিশ্রম, শ্রম নয়। কিন্তু যে গায়ক পারিশ্রমিকের বিনিময়ে গান গায়, তার গান শ্রম হিসেবে গণ্য হবে।

৩. মূলধনের গুরুত্ব: উৎপাদনের চারটি উপাদানের মধ্যে মূলধন অন্যতম। সাধারণ অর্থে ব্যবসায় বাণিজ্যে নিয়োজিত অর্থকে মূলধন বোঝায়। অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে মূলধন বলতে, মানুষের শ্রমের বিনিময়ে উৎপাদিত এমন উপাদানকে বোঝায় যা ভোগের মাধ্যমে শেষ হয়ে যায় না বরং পুনরায় উৎপাদনের ক্ষেত্রে স্থায়ী উপাদান হিসাবে কাজ করে উৎপাদন কার্যক্রমকে চালু এবং অধিক উৎপাদনে ভূমিকা রাখে। আধুনিক সমাজে উৎপাদন প্রক্রিয়া জটিল হওয়ার কারণে পুঁজির প্রয়োজন অত্যধিক এবং মূলধনকেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বলা হয়।

৪. সংগঠনের গুরুত্ব :সংগঠন বলতে জমি, শ্রম ও মূলধনের মধ্যে সমন্বয়সাধন বা সংযোগ স্থাপনের কাজকে বোঝায়। অসংখ্য বিশেষীকৃত উপাদানের সাহায্যে বর্তমানকালের বৃহদায়তন উৎপাদন ব্যবস্থা পরিচালিত হয়। ফলে বিভিন্ন উপকরণের মধ্যে সমন্বয়সাধনের জন্য সংগঠনের গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *