একচেটিয়া প্রতিযোগিতামূলক বাজার (Monopolistic Competition) : একচেটিয়া প্রতিযোগিতামূলক বাজারের বৈশিষ্ট্য(Characteristics of Monopolistic Competition Market)
পূর্ণ প্রতিযোগিতা ও একচেটিয়ার কারবার, ক্লাসিক্যাল ব্যষ্টিক অর্থনৈতিক তত্ত্ব হিসাবে পরিচিত। এ দুটি বাজারের ওপর সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরেন ক্যামব্রিয়া অর্থনীতিবিদ স্তাফা (Srafia)। ১৯৩০ সাল প্রথম ভাগে অর্থনীতিবিদগণ দুইটি বাজারের মাঝামাঝি একটি অবস্থার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
আর. জি. লিপসির মতে, একচেটিয়া বাজার হলো একটি শিল্প।
একচেটিয়া প্রতিযোগিতার প্রবক্তা আমেরিকান অর্থনীতিবিদ ই, এইচ. চেম্বারলিন (The Theory of Monopolistic Competition, 1933, E, H. Chamberlin)। পরবর্তীতে তার সাথে যুক্ত হন ইংরেজ অর্থনীতিবিদ জোন রবিনসন (The Economics of Imperfect Competition, Joan Robinson)। চেম্বারলিন দ্রব্য পৃথকীকরণ ও বিজ্ঞাপনের ওপর এবং রবিনসন নাম বৈষম্যকরণ ও শোষণ এর ওপর গুরুত্ব প্রদান করেন।
একচেটিয়া প্রতিযোগিতামূলক বাজার বলতে এমন বাজার কাঠামোকে বোঝায়, যেখানে বহুসংখ্যক বিক্রেতা বাজারে। অবাধে প্রবেশ ও প্রস্থানের স্বাধীনতা নিয়ে কর্মরত থাকে এবং প্রত্যেক বিক্রেতা দ্রব্য পৃথকীকরণের মাধ্যমে (রঙ, গল্প, মোড়ক, পরিবেশনার উপায়) কিছুসংখ্যক ক্রেতার ওপর কিছুটা একচেটিয়া ক্ষমতা প্রয়োগ করে। চেম্বারলিন পূর্ণ প্রতিযোগিতা ও একচেটিয়া কারবারের মধ্যে সমন্বয় সাধন করেন। সুতরাং, যে বাজারে একচেটিয়া বাজারের কিছু বৈশিষ্ট্য এবং বহুলাংশে পূর্ণ প্রতিযোগিতার বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকে, সে বাজারকে উক্ত বৈশিষ্ট্যের কারণে একচেটিয়া প্রতিযোগিতামূলক বাজার বলে।
ই. এইচ. চেম্বারলিন এর মতে, যে বাজারে, অসংখ্যক বিক্রেতা একই জাতীয় কিন্তু আলাদা আলাদা দ্রব্য বিক্রি করে তাকে একচেটিয়া প্রতিযোগিতামূলক বাজার বলা হয়।
এ বাজারে ফার্মের সংখ্যা দশ-এর চেয়ে অধিক হয়। এরূপ বাজারে বিক্রেতা বিভিন্ন ট্রেডমার্ক এবং ব্রান্ডের মাধ্যমে দ্রব্য পৃথকীকরণের চেষ্টা করে। যেমন- বিভিন্ন রকম টুথপেস্ট, সাবান, বিভিন্ন কোম্পানির শাড়ি-কাপড়, ব্লেড ইত্যাদি।
একচেটিয়া প্রতিযোগিতামূলক বাজার এর বৈশিষ্ট্য(Characteristics of Monopolistic Competition Market)
১. অনেক ছোট ফার্ম আছে যারা কিনা মোট উৎপাদনের সামান্য পরিমাণ পণ্যসেবার বাজারে যোগান দেয়।২.প্রত্যেক বিক্রেতা নানাভাবে যেমন- ট্রেডমার্ক, ব্রান্ড, লেবেল, মোড়ক, বিজ্ঞাপন, আকৃতি, রঙ ইত্যাদির মাধ্যমে প্রধ্য পৃথকীকরণ করে থাকে।
৩. যে কোনো ফার্ম বাজারে যে কোনো সময় প্রবেশ করতে পারে কোনো বাধা নেই, আবার . যে কোনো ফার্ম পুরাতন ফার্ম প্রস্থানও করতে পারে কোনো বাধা নেই।
৪. বিক্রয়ের পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য দাম হ্রাস করতে হয়। ফলে গড় আয় বা চাহিদা রেখা বামদিক থেকে ডানদিকে নিম্নগামী হয়। এ বাজারে চাহিদা রেখার ঢাল; একচেটিয়া বাজারের চাহিদা রেখার ঢাল অপেক্ষা কম হয়।
৫.বিক্রেতা পৃথকীকৃত দ্রব্য বিক্রি করে এবং সে কম-বেশি স্বাধীন নাম নীতি অনুসরণ করতে পারে।
৬.ক্রেতারা বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আগে থেকেই দ্রব্যের প্রকৃতি, গুণাগুণ ও দাম সম্পর্কে ধারণা পায় ।
৭.পণ্যভেদ থাকায় বিক্রয় খরচ অপরিহার্য। প্রত্যেক বিক্রেতা বাজার দখল ও ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার জন্য বিজ্ঞাপনের ব্যয় ও বিক্রয় খরচ বহন করে।
৮.বাজারে দলীয় বা গ্রুপ ভারসাম্য কার্যকর হয়।
৯. আদর্শ উৎপাদন ও অতিরিক্ত ক্ষমতা বিদ্যমান।
১০. বাজার সম্পর্কে অপূর্ণাঙ্গ জ্ঞান বিদ্যমান।
১১.স্বল্পসময়ে অস্বাভাবিক মুনাফা অর্জন করলে ও দীর্ঘকালে স্বাভাবিক মুনাফা অর্জন করে থাকে।