Sub-Heading
প্রশ্ন: কখন কেন হুদায়বিয়ার সন্ধি সংঘটিত হয়েছিল? তার ঘটনা ও গুরুত্ব।
ভূমিকা:
ইসলামের ইতিহাসে হোদায়বিয়ার সন্ধি এক নতুন অধ্যায়ের শুভ সূচনা করে। মহান আল্লাহ (রাসূল (সা:) কে বায়তুল্লাহ শরীফে বিজয়ীবেশে প্রবেশ করানোর জন্য হুদায়বিয়ার সন্ধির ভূমিকা অপরিসীম। যেমন আল্লাহ বলেন, إِنَّا فَتَحْنَا لَكَ فَتْحاً مُّبِيناً
আর ইকামতে দ্বীন আন্দোলনের ইতিহাসে এ বিজয়ের সমকক্ষ কোন বিজয় নেই। তাই ZvB P.K Hitti বলেন, In 628 A.D. Mohammad led a body of 1400 believers to the city of his birth and exacted the pact of at hudaybiyah.
হোদায়বিয়ার সন্ধির পটভূমি:
প্রখ্যাত হাদীসবেত্তা ইমাম যুহরী (র.) বলেন, মহানুভবতার শ্রেষ্ঠ আদর্শ মহাপুরুষ হযরত মুহাম্মদ (সা.) স্বদেশ দর্শন ও হজ্জ পালনের জন্য ১৪০০ সাহাবীসহ মক্কাভিমুখে গমন করে হুদায়বিয়া নামক স্থানে উপনীত হয়ে শিবির স্থাপন করেন। কাফেররা তাঁকে কোনভাবেই মক্কায় প্রবেশ করতে দেবে না মর্মে দৃঢ় অবস্থান নেয়। পরিবেশে সেখানে মহানবী (সা.) ও কুরাইশদের মধ্যে একটি সন্ধি চুক্তি সম্পাদতি হয়। যেহেতু হুদায়বিয়ার নামক স্থানে এ চুক্তি সম্পাদতি হয়, সেহেতু ইসলামের ইতিহাসে এটি হুদায়বিয়ার সন্ধি নামে পরিচিত। অবশ্য এ সন্ধিকে ঐতিহাসিক আমীর আলী Land mark বলে অভিহিত করেছেন।
হুদায়বিয়ার সন্ধির ঘটনা:
মহানবী (সা:)-এর জীবনী লেখক যুহরী বলেন, রাসূল (সা:) ৬২৮ খ্রিস্টব্দে ১৪০০ সাহাবাসহ ওমরা পালনের জন্য মক্কার অভিমুখে গমন করেন, মক্কা থেকে ৯ মাইল দূরে হুদায়বিয়া নামক স্থানে শিবির স্থাপন করেন। কাফেররা তাকে কোনভাবে মক্কায় প্রবেশ করতে দিবে না বলে দৃঢ় অবস্থান নেয়। পরিস্থিতি অবলোকন করে রাসূল (সা:) প্রথমে খিরাশ বিন উমাইয়া ও পরে উসমান বিন আফফান (রা:) কে দূত হিসেবে প্রেরণ করেন। আর বলে পাঠান যে, আমরা কেবল উমরা করতে এসেছি অন্য কোন উদ্দেশ্য নাই।
কাফেররা ওসমান (রা:) কে আটক রাখে। এদিকে শিবিরে খবর আসে যে উসমান (রা:) শহিদ হয়েছেন। তখন মুসলমানদের ধৈর্যের বাধ ভেঙ্গে প্রতিশোধ গ্রহণ করা অনিবার্য হয়ে পড়ে তখন রাসূল (সা:) একটি গাছের নীচে দাড়িয়ে সকলের বায়আত নেন। যা বাইয়াতে রিজওয়ান নামে প্রসিদ্ধ।
এ শপথের খবর কুরাইশদের কাছে পৌঁছালে তারা উসমান (রা:)কে ছেড়ে দেন এবং সন্ধির প্রস্তাব করেন।
অত:পর সুহাইল বিন আমরের নেতৃত্বে কুরাইশ ও মুসলমানদের মধ্যে দীর্ঘ আলোচনার পরে একটি সন্ধি সাক্ষরিত হয়, যার নাম ‘হুদায়বিয়া’। ঐতিহাসিক আমীর এ সন্ধিকে land mark বলে অভিহিত করেছেন।
সন্ধির শর্তাবলী:
হুদায়বিয়া সন্ধির তাৎপর্য:
১. সুষ্পষ্ট বিজয়: আপাত দৃষ্টিতে হুদায়বিয়ার সন্ধিকে মুসলমানদের একটি ক্ষতিকর সন্ধি চুক্তি মনে হলেও এ সন্ধিই ইসলামের প্রচার প্রসার এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে দ্বীনকে বিজয়ি শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠার পথ উন্মুক্ত করে। তাই মহান আল্লাহ বলেন,
إِنَّا فَتَحْنَا لَكَ فَتْحاً مُّبِيناً
২. মহানবী (সা:)-এর নেতৃত্বের স্বীকৃত:
হুদায়বিয়ার সন্ধির ফলে কুরাইশরা মুসলমানদেরকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রশক্তি বলে লিখিত ভাবে মেনে নেয় এবং সর্বপ্রথম মদীনা প্রজাতন্ত্রকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র ও রাসূল (সা:)কে এর নেতা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়।
৩. মক্কা বিজয়ের মুভ সূচনা:
হুদায়বিয়ার সন্ধি মক্কা বিজয়ের সূচনা করে এবং সমগ্র আরব উপদ্বীপে দ্বীনকে বিজয়ী শক্তির মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করে। আর এ সন্ধির দুবছর পর রাসূল (সা:) বিনা রক্তপাতে মক্কাজয় করেন। মহান আল্লাহ বলেন,
وَأُخْرَىٰ لَمْ تَقْدِرُواْ عَلَيْهَا قَدْ أَحَاطَ ٱللَّهُ بِهَا
৪. কুরাইশদের ক্ষমতা হ্রাস:
হুদায়বিয়ার সন্ধির ফলে কুরাইশদের শক্তি দিন দিন হ্রাস পেতে থাকে। এ সন্ধি সম্পর্কে ঐতিহাসিক যুহরী বলেন, There was no man of sense and judgement amongst the idolotors who was not led thene by to join islam.
৫. শান্তি প্রতিষ্ঠা:
মুসলমানগণ আপাতত কুরাইশদের আক্রমণ হতে নিশ্চিত মুক্তি পেয়ে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাসের সুযোগ লাভ করে। Encyclopedia of Islam এর ভাষায় “এ সন্ধির ফলে মুসলমানগণ ক্রমাগত যুদ্ধ বিগ্রহ হতে অব্যাহতি পায় এবং এ সন্ধি ছিল চূড়ান্ত বিজয়ের প্রথম পর্যায়।”
৬. মুসলমানদের মর্যাদা বৃদ্ধি:
পি.কে. হিট্টি বলেন, “এ সন্ধির ফলে মুসলমানদের রাষ্ট্রীয় ও ধর্মীয় মর্যাদা বৃদ্ধি পায় এবং প্রথমবারের মতো কুরাইশরা তাদেরকে একটি স্থায়ী রাজনৈতিক শক্তিরূপে লিখিতভাবে স্বীকার করে নেয়।
৭. অর্থনৈতিক ফলাফল:
হুদায়বিয়ার সন্ধির ফলে মদীনা রাষ্ট্রের বহিবানি জ্যের ব্যাপক সম্প্রসারণ ঘটে মদীনার সাথে মক্কা ও তায়েফের ব্যবসাযিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। মদীনার মুসলমানগণ ব্যবসায় বাণিজ্যে মনোনিবেশ করে নিজেদের আর্থিক স্বচ্ছলতা সৃষ্টির সুযোগ পান।
৮. ইমান ও প্রত্যয় বৃদ্ধি:
হুদায়বিয়ার সন্ধির ফলে আল্লাহ কর্তৃক নিয়ামক লাভের মাধ্যমে মুসলমানদের ঈমানী শক্তি ও প্রত্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন,
هُوَ ٱلَّذِيۤ أَنزَلَ ٱلسَّكِينَةَ فِى قُلُوبِ ٱلْمُؤْمِنِينَ لِيَزْدَادُوۤاْ إِيمَاناً مَّعَ إِيمَانِهِمْ
৯. পাপ মোচনের সোপান:
এ সন্ধি রাসূল (সা:) ও মুমিনদের অতীত সমস্ত গুনাহ মাফ করে পরিপূর্ণ নিয়ামতসহ সরল পথে মহান আল্লাহ তাদের পরিচালিত করেছেন। যেমন:
لِّيَغْفِرَ لَكَ ٱللَّهُ مَا تَقَدَّمَ مِن ذَنبِكَ وَمَا تَأَخَّرَ وَيُتِمَّ نِعْمَتَهُ عَلَيْكَ وَيَهْدِيَكَ صِرَاطاً مُّسْتَقِيماً
উপসংহার:
হুদায়বিয়ার সন্ধি ইসলামের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এ সন্ধি ছিল তাওহীদের এক মহাবিজয় ও মক্কা বিজয়ের সুগম পথ। আর রাসূল (সা:) সত্যিকার অর্থে একজন রাষ্ট্রনৈতিক নেতা হিসেবে চিহ্নিত হন। অপরদিকে কুরাইশদের শক্তি দিন দিন ক্ষীয়মাণ হয়ে আসে। জীবনীকার মুহুরী বলেন, There was no man of sense and judgement amongst the idolators who was not bed there by to join istam.
হুদায়বিয়ার সন্ধি এর উপর ভিত্তি করে নিচে একটি কুইজ দেওয়া আছে।
নিচের কুইজটির উত্তর প্রদান করে নিজের দক্ষতা যাচাই করুন।
রিয়াজুলকে অনুসরণ করুন:
ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সকল সাবজেক্ট এর উত্তর পত্র পেতে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।
যোগাযোগ করার ঠিকানা: