খ্রিষ্ট ধর্ম কী? খ্রিষ্ট ধর্ম এর উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ
খ্রিষ্ট হিব্রু শব্দ বা আরবী মসীহ শব্দের সমার্থবোধক। আল-কুরআনে ঈসা (আ:) কে মসীহ বলা হয়েছে। অর্থ ত্রাণকর্তা। christo খ্রিষ্ট শব্দের অর্থ আশীর্বাদ পুষ্ট। মুক্তি দাতা, ত্রাণকর্তা ইত্যাদি। যেহেতু ঈসা (আ:) জন্মের পর থেকেই অনেকগুলো অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন যা জনগণের কল্যাণ ও আশীর্বাদ স্বরূপ ছিল তাই তাঁকে Jesus Chriso বলা হত।
আল-কুরআনে তাদেরকে ‘আহলুল কিতাব’, ‘আহলুল ইঞ্জিল’ ও ‘নাসারা’ বলা হয়েছে। ‘নাজারা’ নামক জনপদের দিকে সম্বোধন করে ইংরাজীতে Nzarath বলা হয়। কেউ কেউ বলেন, আল্লাহর বাণী, ‘হাওয়ারীগণ বলেন আমরা আল্লাহর সাহায্যকারী’ এখানে শব্দ থেকে তাদের নাম ।
Nzarath বলেন, ইয়াহুদী ধর্ম মতের উপর ভিত্তিশীল যে একেশ্বরবাদী ধর্মে খ্রিষ্টকে ঈশ্বর ও মানুষের মধ্যে মধ্যস্থকারী গণ্য করা হয়েছে, খ্রিষ্টের আত্মোৎসর্গমূলক মৃত্যুর দ্বারা মানবজাতির প্রায়শ্চিত্ত সাধিত হয়েছে এবং তাঁর ধর্মীয় ও নৈতিক পরিসরের মধ্যে
সমগ্র মানবজাতিকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এই ধর্ম খ্রিষ্টের জীবন ও বাণী কেন্দ্রিক, কোন ধরাবাধা বিধি বিধানের উপর এ ধর্ম প্রতিষ্ঠিত নয়।
খ্রিষ্ট ধর্ম এর প্রবর্তক
খ্রিষ্ট ধর্ম বিশ্বাসীগণ মনে করেন, যীশুই খ্রিষ্ট ধর্মের প্রবর্তক। মূলতঃ ঈসা (আ:) ইসলাম ধর্মের প্রতিই মানুষকে আহবান জানিয়েছেন। ঈসা (আ:) ও তার অনুসারীগণ মুসলমান ছিলেন তাঁরা খ্রিষ্টান ছিলেন না। আল-কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াত তার প্রমাণ বহন করে।
وفلما أحس عيسى منهم الكفر قال من أنصاري إلى الله قال الحواريون نحن أنصار الله آمنا بالله
واشهد بأنا مسلمون
‘যখন ঈসা (আ:) তাদের কুফুরী অনুধাবন করলেন তখন তিনি বললেন, আল্লাহর পথে।কারা আমার সাহায্যকারী? হাওয়ারীগণ বললেন, আমরাই আল্লাহর পথে সাহায্যকারী।আমরা আল্লাহতে ঈমান এনেছি, নিশ্চয় আমরা মুসলমান এ বিষয়ে আপনি স্বাক্ষী থাকুন।’
প্রকৃতপক্ষে ঈসা (আ:) এর উর্ধ্বলোকে তিরোধানের পর ইয়াহুদী ধর্ম থেকে খ্রিষ্ট ধর্মে ধর্মান্তরিত সেন্ট পৌল ঈসা (আ:) এর প্রকৃত অনুসারী হওয়ারীদের বিরোধিতা করে নতুন নতুন আকীদা বিশ্বাস সংযোজন করেন এবং ঈসা (আ:) এর শরী‘য়তকে খ্রিষ্টধর্ম নামকরণ করেন।
খ্রিষ্ট ধর্ম এর সেন্ট পৌলের সংক্ষিপ্ত জীবনী
সাধু পৌলের পূর্ব নাম ছিল শৌল। তিনি Cilicia এর Tarsus (রোমান ইউরোপ) শহরে জন্মগ্রহণ করেন এবং এখানেই পড়ালেখা করে বেড়ে ওঠেন। তিনি গমলিয়েল নামক বিশিষ্ট শিক্ষকের নিকট ইয়াহুদী ধর্ম শিক্ষা করেন। ৬৭ তিনি একজন খাঁটি ইয়াহুদী ধর্ম বিশ্বাসী ও কঠোরভাবে ধর্ম প্রতিপালনকারী ছিলেন। যীশুর সমর্থক ও অনুসারীদের নির্মমভাবে অত্যাচার করে হত্যা করতেন। ইহুদী প্রধান পুরোহিত ও ধর্ম যাজকদের নির্দেশে যীশুর সমর্থকদের বন্দি করতে তিনি দামেস্ক থেকে জেরুজালেম শহর যাচ্ছিলেন। দ্বিপ্রহরে দামিস্কের কাছাকাছি এসে হঠাৎ চারদিকে উজ্জ্বল স্বর্গীয় আলো লক্ষ্য করলেন, আর তিনি মাটিতে পড়ে গেলেন। কেউ যেন তাকে বলছেন ‘শৌল শৌল, কেন তুমি আমাকে কষ্ট দিচ্ছ?’ তিনি জবাবে বললেন ‘প্রভু আপনি কে?’ তিনি বললেন, ‘আমি নাযারতের যীশু যাকে তুমি কষ্ট দিচ্ছ।’ শৌল বললেন, ‘প্রভু আমি কি করবো?’ প্রভু আদেশ দিলেন, ‘তুমি ওঠো, দামিস্কে যাও। তোমার জন্য যা নির্ধারিত আছে সেখানেই তোমাকে বলা হবে।’ আলোর ঝলকানিতে তার চোখ অন্ধ হয়ে গেছে। তাই তাঁর সঙ্গীরা তাকে ধরে নিয়ে গেল দামিস্কে। সেখানে সাধু অননিয় নামে একজন খ্রিষ্টভক্তের দু’আর বদৌলতে পৌল দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেলেন। সাধু অননিয় বললেন, *যীশু তোমাকে নির্বাচন করেছেন। অতএব তুমি তাঁর সাক্ষী যা দেখেছ যা শুনেছ সব মানুষের কাছে বলবে’। তখন শৌল বাপ্তিস্ম গ্রহণ করলেন এবং সেন্ট পৌল নাম ধারণ করলেন। সেন্ট পৌল খ্রিষ্ট ধর্ম প্রচারে ও প্রসারে যে অবদান রেখেছেন তা অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি নতুন নিয়মের ১৩টি পুস্তকের রচয়িতা। তিনি রোমে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।”
সেন্ট পৌল কর্তৃক প্রবর্তিত খ্রিস্ট ধর্ম ক্রমান্বয় স্বার্থন্বেষী যাজক-পুরোহিতদের মনগড়া কল্প-কাহিনীতে পরিণত হয়। রোমান ক্যাথলিক ধর্ম যাজকগণ মানুষের পাপ মুক্তির সার্টিফিকেট বিক্রয় শুরু করে। বিভিন্ন প্রকার পাপের জন্য বিভিন্ন পরিমান অর্থদণ্ড নির্ধারণ করে এবং ঘোষণা দেয় অর্থদণ্ড দিয়ে মুক্তিসন্দ ক্রয় করলে সে নিশ্চিত পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়-স্বজনসহ স্বর্গে প্রবেশ করবে। এমনি এক মূহুর্তে মার্টিন লুথারের আবির্ভাব হয়।
খ্রিষ্ট ধর্ম এর মার্টিন লুথারের জীবনী
মার্টিন লুথার ১৪৮৩ সালের ১০ নভেম্বর জার্মানীর ইসলেবেন নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম হ্যান্স লুথার এবং মাতার নাম মার্গারেট লুথার। পিতা ম্যান্সফিল্ডের দস্তার খনিতে চাকুরী শুরু করলেও আর্থিক প্রাচুর্যের কারণে চাকুরী ছেড়ে দিয়ে ১৪৯০ সালে ম্যান্সফিল্ড শহরের কাউন্সিলর হয়েছিলেন। ফলে মার্টিন লুথারের বাল্যজীবন ও শিক্ষা-দীক্ষার কোন ত্রুটি হয়নি। তিনি প্রথমে ম্যান্সফিল্ডের ল্যাটিন স্কুলে ও পরে ম্যাকডেবার্গের স্কুলেও লেখা পড়া করেন। ১৫০১ সালে ১৭ বছর বয়সে ‘ইরফোর্ট’ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ম্যাট্রিক পাশ করেন।” একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৫০২ সালে বি.এ ও ১৫০৫ সালে এম.এ ডিগ্রী লাভ করেন। পরবর্তীতে তিনি উইটিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৫১২ সালে থিওলজীতে পি এইচ.ডি. লাভ করেন এবং ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা শুরু করেন। কিছু দিন পরে তিনি রোমে গিয়ে ধর্ম সম্পর্কে গবেষণা করেন। বাইবেলের ৯৫ টি টিকা ও সমালোচনা লিখে পাপ মুক্তিসনদের বিপক্ষে প্রামাণ্য দলীল উপাস্থাপন করেন। ১৫১৭ সালে গীর্জার প্রচলিত রীতি নীতিসংস্কারের জন্য প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করেন। রোমান ক্যাথলিক ধর্ম যাজকগণ তার চরম বিরোধিতা শুরু করেন। জামার্নিতে লুথারের মতবাদ ব্যাপকতা লাভ করে। জার্মানের প্রিন্স এই আন্দোলন সমর্থন করেন এবং রোমান আধিপত্য থেকে জার্মানকে মুক্ত করেন। উত্তর, দক্ষিণ ও কেন্দ্রীয় জার্মানের পুরো অঞ্চলে তাঁর সমর্থক বৃদ্ধি পায়। এভাবেই খ্রিস্ট সমাজ প্রটেস্টান ও রোমান ক্যাথলিক দুভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। ছাড়াও তাদের আরো একটি সম্প্রদায় রয়েছে তাদেরকে অর্থোডক্স বলা হয়।
১৫৪৬ সালে ১৮ ফেব্রুয়ারী মার্টিন লুথার ইসলেবেন শহরেই শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। তাকে Church of all church এ সমাহিত করা হয়।
খ্রিষ্ট ধর্ম এর উপাসনা
ধর্মে উপাসনা বলতে স্রষ্টার ইবাদত ও মানব কল্যাণ উভয়টিকেই বুঝায়। মানবতার কল্যাণ ও স্রষ্টার সন্তুষ্টি বিধানের জন্য কতকগুলো ধর্মীয় কাজ সম্পাদন করে থাকে। এগুলোকে উপাসনা বলা হয়।
১. জনপ্রচলিত প্রার্থনা: পবিত্র বাইবেল পাঠ। এই বাইবেল পাঠ ব্যক্তিগত ও সমষ্টিকভাবে পাঠ করা যায়। ব্যক্তিগতভাবে বাইবেল পাঠ করে তারা জীবনের সঠিক পথে চলতে চেষ্টা করে। কিন্তু যখন বিশেষ উদ্দেশ্যে সমবেতভাবে আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে দিয়ে বাইবেল পাঠ করা হয় তখন তাকে প্রার্থনা সভা বলে। দৈনিক প্রার্থনা: সাধারণত দিনে কমপক্ষে তিনবার প্রার্থনা করা হয়ে থাকে।
- সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রভুর কাছে নতুন দিন উৎসর্গ করে;
- দুপুরে খাওয়ার আগে খাদ্য ও নিত্য প্রয়োজনীয় উপাদানের জন্য প্রভুকে ধন্যবাদ দেয়।
- রাতে ঘুমাবার আগে ঐ দিনের জীবনাচারণের আত্ম সমালোচনা করেপ্রভুর নিকট ক্ষমা চায় এবং তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
এ ছাড়াও জপমালা ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের একটি বিশেষ প্রার্থনা। মা মারিয়ামের নিকট স্বর্গদূত যে কথা বলেছিলেন তা ১৫০ বার আবৃত করা এবং তমধ্যে প্রতি ১০ বার অন্তর অন্তর যীশুর জীবনের একটি প্রধান ঘটনা স্মরণ করে ধ্যান করা।
২. মণ্ডলী নিয়মসিদ্ধ প্রার্থনা
ক) স্তোত্র সংহিতা: দৈনিক পাঁচবার মনবেত হয়ে প্রার্থনা করা। যাজক ও ব্রতচারী ব্রতচারিনীগণ এই নিয়ম পালন করতে বাধ্য।
- i. ভোরকালীন প্রার্থনা,
- ii. প্রাতঃকালীন প্রার্থনা,
- iii. প্রাহরিক প্রার্থনা,
- iv. সন্ধ্যাকালীন প্রার্থনা,
- v. নিদ্ৰা পূর্ব প্রার্থনা।
খ) পবিত্র সংস্কারাবলী
i. দিক্ষাস্নান: অনুষ্ঠানিক ভাবে ধর্ম গ্রহণকারী ব্যক্তিকে মাথায় পানি দিয়ে অথবা গোছল করিয়ে দিয়ে বুঝান হয় যে, এই ব্যক্তি খ্রিষ্ট ধর্মে প্রবেশ করে নবজীবন ও পূণ্য অর্জন করে পরমেশ্বরের সন্তান ও তাঁর স্বর্গ-রাজ্যের উত্তরাধিকারী হয়ে উঠেছে। ৭৬
ii. হস্তার্পণ: বিশপ বা মণ্ডলীর পরিচালক খ্রিষ্ট ভক্তের উপর হাত রেখে ও কপালে তৈল লেপন-চিহ্ন দিয়ে বুঝান হয় যে, এ ব্যক্তি মণ্ডলীর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালনে সক্ষম।
iii. খ্রিস্টযাগ: একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে খ্রিষ্টভক্তগণ যীশুর শেষ ভোজ স্মরণ করে তাঁর মৃত্যু ও পুনরুত্থানের সহভাগী হন এবং প্রসাদ খাদ্যরূপে (আশির্বাদিত রুটি ও দ্রাক্ষারস) গ্রহণ করেন। খ্রিষ্টানরা এ অনুষ্ঠানকে খ্রিষ্টযাগ বলে। তাদের ধারনামতে এর দ্বারা মানুষ ও পরমেশ্বরের মধ্যে এবং মানুষে মানুষে সু-সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রত্যেক রবিবার সমবেতভাবে খ্রিষ্ঠযাগে যোগ দেয়া খ্রিষ্টমগুলির একটা প্রধান নিয়ম। এ ছাড়াও এর আরো কতকগুলো অংশ আছে সেগুলো হচ্ছে উদ্বোধনী ও ক্ষমা প্রার্থনা, ঐশীবাণী ঘোষণায় পবিত্র বাইবেল পাঠ, বিশ্বাসোক্তি অর্থাৎ খ্রিষ্টীয় ধর্মে বিশ্বাস ঘোষণা ও সার্বজনীন প্রার্থনা, যাগের উপকরণ প্রস্তুতি, প্রসাদীয় প্রার্থনা, খ্রিষ্টপ্রসাদ গ্রহণ, সমাপনী প্রার্থনা ও বিদায়
iv. পুনর্মিলন সংস্কার: খ্রিষ্টভক্তগণ কখনো কখনো ব্যক্তিগতভাবে বা সমবেত ও আনুষ্ঠানিকভাবে পুরোহিত দ্বারা এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। এর উদ্দেশ্য হলো যাতে প্রাত্যহিক জীবনে যে সমস্ত পাপ করা হয়, সেগুলো ক্ষমা করা হয় এবং ইশ্বর ও মণ্ডলীর সাথে পুনর্মিলিত হওয়া যায়। এজন্য পুরোহিত দ্বারা তারা পরমেশ্বরের কাছ থেকে ক্ষমা ও আশীবাদ লাভ করেন।
v. রোগীদের লেপনঃ পুরোহিত মণ্ডলীর সাথে প্রার্থনা করে রোগগ্রস্ত খ্রিষ্টভক্তদের দেহে তেল লেপন করেন। যাতে তারা খ্রিষ্টের যন্ত্রণার অংশীদার হয়ে পবিত্র আত্মার প্রভাবে পাপ থেকে মুক্ত হন এবং খ্রিষ্টরই মত কষ্টকে বরণ করে নিজের ও বিশ্ব মানবের জন্য পরিত্রাণ লাভ করতে পারেন।
৩. উপবাস অর্থাৎ রোযা ও সহমর্মিতার কাজ:
সাধারণত খ্রিষ্টানরা তপস্যাকালে অর্থাৎ যীশুর পুনরুত্থান পার্বণের পূর্ব ৪০ দিন উপবাস করেন এবং গরীবদের ও তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নের জন্য চাঁদা তোলেন। ক্যাথলিক মণ্ডলির ভক্তেরা পূর্ণ উপবাস করেন বছরে মাত্র দু’দিন।
যথা- ক) ভস্ম বুধবার অর্থাৎ তপস্যাকালের প্রথম দিন।
খ) পূণ্য শুক্রবার: অর্থাৎ খ্রিষ্ট মরণের স্মরণ দিবস: উপবাসের প্রধান উদ্দেশ্য হলো পরমেশ্বরের পরিকল্পনা গভীরভাবে উপলব্ধি করা। এ কারণে উপবাসকালে তারা দুনিয়া থেকে মন ফিরিয়ে আধ্যাত্মিক জীবনের প্রতি লক্ষ্য রেখে পরমেশ্বরের কথা ভাবে। এছাড়াও এতে তারা না খেয়ে থাকা গরীবদের দুঃখ কষ্টের সহভাগী হয়ে তাদের সেবা করতে উৎসাহ পান। এই কারণে খ্রিষ্টানরা উপবাসকালে প্রার্থনা ও সহমর্মিতার কাজের উপর বেশি গুরুত্ব দেন এবং জগতের উন্নতি ও মানব কল্যাণের জন্য পরিশ্রম করতে অনুপ্রেরণা পান।
খ্রিষ্ট ধর্ম এর ধর্ম গ্রন্থ
হিব্রু বনী ইসরাইলী ইয়াহুদীরা যখন তাওরাত ও যাবুর হারিয়ে পথভ্রষ্ট হয়ে যাচ্ছিল তখন তাদেরকে এক আল্লাহর প্রতি ঈমানদার হওয়ার জন্য ঈসা (আ:) এর জন্ম। তাঁর প্রতি ইঞ্জিল অবতীর্ণ হয়। ফলে তাওরাত ও যাবুর Old Testament বা Old Covenant এবং ইঞ্জিল New Testament বা Gosples নামে পরিচিত। এই নতুন ও পুরাতন উভয় সন্ধির সংযুক্ত নাম বাইবেল।”
খ্রিষ্ট ধর্ম এর আকীদাহ ও বিশ্বাস
খ্রিষ্টানদের মতে ঈশ্বরের ত্রিবিদ রূপ যথা:-
- পিতা (god the Father),
- পুত্র (God the son) ও
- পবিত্র আত্মা (God the Holy Sprit)।
খ্রিষ্ট ধর্ম এর তিনটি শাখা রয়েছে:-
- ক্যাথলিক (Catholic),
- প্রটেস্ট্যান্ট (Protestant) ও
- অর্থোডক্স (Orthodox )
মাজুসী ধর্ম
উল্লেখ্য যে, মাজুসী ধর্ম সম্পর্কে তৃতীয় অধ্যায়ে পারসিক ধর্মের মধ্যে বিশদভাবে আলোচনা করা হয়েছে।
সাবেয়ী ধর্ম
ইয়াহইয়া (আ:) এর অনুসারী বর্তমানে ‘সাবেয়ী মানদায়ী’ নামে খ্যাত সম্প্রদায় সাবেয়ী ধর্মানুসারী বলে জানা যায়। বর্তমান ইরাক ও ইরানের বিভিন্ন অঞ্চলে তাদের বসবাস। তারা তারকা-নক্ষত্রপুঞ্জকে পবিত্র জ্ঞান করে। সর্বদা উত্তর দিক হয়ে উপাসনা করে। প্রবাহিত পানিতে বাপ্তিশ্ম গ্রহণ করে। মুসলিম পণ্ডিতদের মতে তারা আহলে কিতাবের মত। কিন্তু ইবন তাইমিয়্যাহ তাদেরকে দু’ভাগ’ বিভক্ত মনে করেন। ৮১
১. একেশ্বরবাদী সাবেয়ী
২. অংশিবাদী (মুশরিক) সাবেয়ী
যারা একেশ্বরবাদী তারা আহলে কিতাবের মত। তারা ইয়াহুদী, খ্রিষ্টান ও মাজুসদের শাখা রূপে বিবেচিত হতে পারে। কিন্তু যারা অংশীবাদী সাবেয়ী তারা ফিরিশতাদের উপাসনা করে এবং গ্রহ-নক্ষত্রের তিথি অনুযায়ী ক্রিয়া করে ও পূজা করে।
ধর্ম প্রবর্তক
তারা মনে করে তাদের ধর্ম আদম (আ:) এর ধর্ম। তারা সেমেটিক বংশভূত এবং ইয়াহইয়া (আ:) তাদের নবী। আব্দুল্লাহ ইবন শায়খ সাম (১৯৬৯ সালের দিকে বাগদাদে বাস করতেন) তাদের আধ্যাত্মিক নেতা। সেমেটিক ভাষায় রচিত তাদের বেশ কিছু ধর্মগ্রন্থের সন্ধান পাওয়া।
আরো জানুন:
- ইসলাম ধর্ম কী? এর উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ, ধর্মের প্রবর্তক ও স্তম্ভসমূহ
- ইয়াহুদী ধর্ম কী? এর উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ