ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ সমূহ
ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ সমূহ কি কি, ফ্রিল্যান্সিং কোন কাজের চাহিদা বেশি ও সবচেয়ে জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং কাজ কোনটি এ বিষয়ে আপনার যদি জানা না থাকে। তাহলে আজকের আর্টিকেল মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন। কারণ আজকে আর্টিকেলের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ সমূহ কি কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
বর্তমান সময়ে বহুল জনপ্রিয় ও চাহিদা সম্পন্ন পেশা হল ফ্রিল্যান্সিং। ছোট বড় সকলেই ফ্রিল্যান্সিং থেকে টাকা ইনকাম করতে চায়। আপনিও হয়তো ফ্রিল্যান্সিং থেকে টাকা ইনকাম করার কথা ভাবছেন। এজন্য ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ সমূহ কি কি তা জানতে চান।
ফ্রিল্যান্সিং থেকে টাকা ইনকাম করার আগে অবশ্যই আপনাকে ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ে সঠিক ধারণা নিতে হবে। তাই আপনাদের সুবিধার জন্য আজকে আমরা ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে সঠিক গাইডলাইন নিয়ে হাজির হয়েছি। চলুন ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করি।
ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ সমূহ কি কি?
ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে নিজেকে যুক্ত করার আগে অবশ্যই আপনাকে ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ সমূহ সম্পর্কে জানতে হবে। তাই চলুন ফ্রিল্যান্সিং এর সব থেকে জনপ্রিয় কাজগুলো কি কি তা দেখে নেই।
- ডিজিটাল মার্কেটিং
- গ্রাফিক্স ডিজাইন
- ওয়েব ডিজাইন এন্ড ডেভেলপমেন্ট
- কনটেন্ট রাইটিং
- এফিলিয়েট মার্কেটিং
- ভিডিও এডিটিং
১। ডিজিটাল মার্কেটিং
ফ্রিল্যান্সিং জগতের সবথেকে জনপ্রিয় ও চাহিদাসম্পন্ন একটি সেক্টর হল ডিজিটাল মার্কেটিং। ফ্রিল্যান্সিং কোন কাজের চাহিদা সবথেকে বেশি। এ প্রশ্নের উত্তরে আমি বলব ডিজিটাল মার্কেটিং কাজের চাহিদা সবথেকে বেশি।
ইন্টারন্যাশনাল যে কয়েকটি ফ্রিল্যান্সার মার্কেটপ্লেস রয়েছে। সব মার্কেটপ্লেসগুলোতে ডিজিটাল মার্কেটিং কাজের ডিমান্ড অনেক বেশি। শুধু ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটপ্লেসই নয়, আমাদের বাংলাদেশের লোকাল মার্কেটপ্লেসেও ডিজিটাল মার্কেটারের চাহিদা অনেক বেশি।
তাই নিজেকে যদি ফ্রিল্যান্সিং এ যুক্ত করতে চান। তাহলে ডিজিটাল মার্কেটিং সেক্টর আপনার জন্য অনেক ভালো হবে। কারণ ভালো ভাবে যদি ডিজিটাল মার্কেটিং শিখতে পারেন। তাহলে আপনাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হবে না। ডিজিটাল মার্কেটিং থেকে অনেক টাকা আয় করতে পারবেন।
কিন্তু ডিজিটাল মার্কেটিং সেক্টরটা একটু বড়। এই সেক্টরের মধ্যে অনেকগুলো ক্যাটাগরি রয়েছে। আপনি ইচ্ছা করলে যে একটি ক্যাটাগরীতে দক্ষতা অর্জন করতে পারেন।
নিজেকে ডিজিটাল মার্কেটিং এর যেকোন একটি ক্যাটাগরিতে দক্ষ গড়ে তুলতে পারেন। তাহলে অবশ্যই এখান থেকে আপনি ভালো কিছু অর্জন করবেন।
২। গ্রাফিক্স ডিজাইন
ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ সমূহের মধ্যে সবথেকে বেশি জনপ্রিয় হলো গ্রাফিক্স ডিজাইন। বর্তমান সময়ে প্রতিটি কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের জন্য অবশ্যই লোগো তৈরি করতে হয়। এছাড়াও অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য একজন অভিজ্ঞ গ্রাফিক্স ডিজাইনার দরকার। ভবিষ্যতে গ্রাফিক্স ডিজাইন কাজের চাহিদা আরো বেড়ে যাবে।
বর্তমান সময়ে গ্রাফিক্স ডিজাইন ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরের মধ্যে অনেক জনপ্রিয় একটি সেক্টর। তাই আপনার যদি ফ্রিল্যান্সিং করে টাকা ইনকাম করার চিন্তাভাবনা থাকে। তাহলে আপনি গ্রাফিক্স ডিজাইন বেছে নিতে পারেন।
ভবিষ্যতে গ্রাফিক্স ডিজাইন কাজের চাহিদা আরো বেড়ে যাবে। তাই গ্রাফিক্স ডিজাইন সেক্টরে দক্ষতা অর্জন করলে কখনোই তা বৃথা যাবে না। তবে গ্রাফিক্স ডিজাইন পেশা সকলের জন্য না। যারা নিজের ক্রিয়েটিভিটি বা সৃজনশীলতা দিয়ে বিভিন্ন রকমের ডিজাইন করতে পারে। তাদের জন্যই মূলত গ্রাফিক্স ডিজাইন।
৩। ওয়েব ডিজাইন এন্ড ডেভেলপমেন্ট
ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরের আরেকটি জনপ্রিয়। ওয়েব ডিজাইন এন্ড ডেভেলপমেন্ট সেক্টরে কাজ হল ওয়েবসাইট তৈরি করা ও ওয়েবসাইট সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম পরিচালনা করা।
বর্তমানে সকল ধরনের প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির জন্য অবশ্যই ওয়েবসাইট আবশ্যক। এছাড়াও পরিসংখ্যানে দেখা গেছে প্রতি মিনিটে প্রায় হাজার হাজার ওয়েবসাইট তৈরি করা হচ্ছে। একজন অভিজ্ঞ ও দক্ষ ওয়েব ডিজাইনার এন্ড ডেভলপারের ডিমান্ড অনেক বেশি।
তাই ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে যদি নিজের ক্যারিয়ার শক্ত ভাবে দাঁড় করাতে চান ও বেশি টাকা উপার্জন করতে চান। তাহলে অবশ্যই ওয়েব ডিজাইন এন্ড ডেভেলপমেন্ট সেক্টরে নিজেকে যুক্ত করুন।
৪। কনটেন্ট রাইটিং
ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে অন্যতম আরেকটি জনপ্রিয় পেশা হলো কনটেন্ট রাইটিং। বর্তমান সময়ে সারা বিশ্বে কনটেন্ট রাইটিং যাবে চাহিদা অনেক বেশি। এখন জেনে নেওয়া যাক কনটেন্ট রাইটিং সেক্টরটি কাদের জন্য।
মূলত যারা লেখালেখি করতে পছন্দ করে। অথবা যারা লেখালেখি করতে ভালোবাসে। তাদের জন্যই মূলত কনটেন্ট রাইটিং সেক্টর। বর্তমানে এমন অনেক ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস রয়েছে। যেখানে একজন অভিজ্ঞ কনটেন্ট রাইটারের মূল্য অনেক বেশি।
বিশেষ করে যারা ইংরেজি ভাষায় কনটেন্ট লিখতে পারে। তাদের চাহিদা অনেক বেশি থাকে। দেখা যায় শুধুমাত্র কনটেন্ট রাইটিং করে প্রতি মাসে প্রায় ৫০০ ডলার ইনকাম করছে।
তাই আপনার মধ্যে যদি লেখালেখি করার অভ্যাস থাকে। তাহলে আপনি কনটেন্ট রাইটিং সেক্টরে নিজেকে যুক্ত করুন। আমাদের দেশেও বাংলা ভাষায় কন্টেন্ট রাইটিং করার অনেক ওয়েবসাইট রয়েছে। যেখান থেকে অনায়াসে প্রত্যেক মাসে ১০ হাজার টাকা ইনকাম করা সম্ভব।
৫। এফিলিয়েট মার্কেটিং
ফ্রিল্যান্সিং সেক্টর থেকে খুব অল্প সময়ে টাকা ইনকাম করার অন্যতম উপায় হল এফিলিয়েট মার্কেটিং। এফিলিয়েট মার্কেটিং হল কোন কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের পণ্য বা প্রোডাক্ট বিক্রি/প্রমোট করা।
বর্তমান সময়ে এফিলিয়েট মার্কেটিং জব অনেক বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কারণ সবাই এখন অনলাইনে বেশি কেনাকাটা করে থাকে। তাই আপনিও বিভিন্ন কোম্পানির সাথে এফিলিয়েট প্রোগ্রামের যুক্ত হয়ে। অনলাইনের মাধ্যমে অন্য কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের প্রোডাক্ট প্রমোট করতে পারেন।
তাহলে দেখবেন অল্প দিনের মধ্যেই এফিলিয়েট মার্কেটিং থেকে ভালো পরিমান টাকা আর্নিং করতে পারবেন। তবে অবশ্যই আপনাকে এফিলিয়েট মার্কেটিং সম্পর্কে ধারণা নিতে হবে।
৬। ভিডিও এডিটিং
অনলাইন জগতে ভিডিও কনটেন্ট এর চাহিদা অনেক বেশি। বিশেষ করে youtube এর জনপ্রিয়তা যত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভিডিও কন্টেন্টের চাহিদাও তত পেতে পাচ্ছে। শুধু ইউটিউবে ভিডিও কন্টেনের চাহিদা বেশি তা না। বিভিন্ন রকমের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম গুলোতে ভিডিও এডিটিং এর চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
তাই নিজের মধ্যে যদি ভিডিও এডিটিং করার মন-মানসিকতা থাকে। নিজে যদি ভিডিও এডিটিং এ দক্ষতা থাকে। তাহলে ভিডিও এডিটিং সেক্টরে নিজেকে যুক্ত করতে পারেন। বর্তমান ও ভবিষ্যতে একজন ভালো ভিডিও এডিটরের চাহিদা অনেক বেশি থাকবে।
তাই দেরি না করে নিজেকে ভিডিও এডিটিং সেক্টরে দক্ষ করে গড়ে তুলুন। তাহলে আশা করা যায় এই সেক্টর থেকে ভালো পরিমান টাকা ইনকাম করতে পারবেন।
৭। ডাটা এন্ট্রি
ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরের সব থেকে সহজ কাজ হল ডাটা এন্ট্রি। বিশেষ করে নতুন যারা অনলাইন থেকে টাকা আয় করতে চায়। তারা অবশ্যই ডাটা এন্ট্রির কাজ দিয়ে শুরু করতে পারেন। অত্যন্ত সহজ ডাটা এন্ট্রির কাজ।
সাধারণত বিভিন্ন ধরনের ক্যাপচা পূরণ ও বিভিন্ন টাইপিং এর কাজ রয়েছে ডাটা এন্ট্রি সেক্টরে। তাই সকলেই এই কাজটি সহজেই করতে পারবে। তবে অবশ্যই ইউটিউব দেখে আপনাকে ডাটা এন্ট্রির বেসিক কাজগুলো শিখে নিতে হবে। কাজ ভালোভাবে শেখার পর, বিভিন্ন রকম ডাটা এন্ট্রি ওয়েবসাইট রয়েছে। তারপর সেসব ওয়েবসাইটে ডাটা এন্ট্রির কাজ করে টাকা আয় করতে পারেন।
৮। ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট
ফ্রিল্যান্সিং জগতে আরেকটি জনপ্রিয় পেশা হল ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট। ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট হলো ঘরে বসে কোন প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির কাজ করে দেওয়া। বর্তমানে সময়ে ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট কাজের চাহিদা অনেক বেশি।
একজন ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট বিভিন্ন রকমের কাজ করে থাকে। মেইল, নিউজলেটার ম্যানেজ করা, বিভিন্ন ব্যনার পোস্টার বানানো এবং তা পোস্ট করা, এক্সেলের কাজ, ডাটা এন্ট্রি ও কপিরাইটিং ইত্যাদি। একজন ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রতিদিন সর্বনিম্ন ৫/১০ ডলার ইনকাম করতে পারে।
শেষ কথা
আশা করি, ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ সমূহ সম্পর্কে আপনি বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। আপনি যদি নিজেকে যুক্ত করতে চান। তাহলে অবশ্যই সহজ কাজ দিয়ে প্রথমে শুরু করতে হবে। কারণ প্রথমে যদি কঠিন কাজ দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করেন। তাহলে বেশি দূর আগাতে পারবেন না।
আমরা অনেকেই ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে আসতে অনেক ভয় পাই। তবে ভয় পাবার কোন কারণ নেই। ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরের কাজ বেশি কঠিন না। আপনি যদি মনোযোগ সহকারে কাজ করতে থাকেন। তাহলে ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরের কাজগুলো সহজ মনে হবে।
বর্তমানে এমন হাজার হাজার বাংলাদেশী তরুণ-তরুণী রয়েছে। যারা ফ্রিল্যান্সিং থেকে মাসে হাজার হাজার ডলার ইনকাম করছে। ঠিক তেমনি ভাবে আপনিও ফ্রিল্যান্সিং সেক্টর থেকে টাকা ইনকাম করতে পারবেন। তাই আজকের আর্টিকেল অনুসরণ করে যেকোন একটি সেক্টরের প্রতি দক্ষতা অর্জন করুন।