ফ্রিল্যান্সিং শিখতে কত সময় লাগে। ফ্রিল্যান্সিং শিখতে কি কি লাগে
ফ্রিল্যান্সিং শিখতে কত সময় লাগে? বর্তমান সময়ে ফ্রিল্যান্সিং খুবই জনপ্রিয় একটি পেশা। আপনি নিজেই হয়তো ফ্রিল্যান্সিং পেশায় সাথে নিজেকে যুক্ত করতে চাচ্ছেন। তবে ফ্রিল্যান্সিং পেশায় নিজেকে যুক্ত করার আগে আপনাকে অবশ্যই ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে সঠিক ধারণা নিতে হবে। আপনার যদি ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকে,তাহলে ফ্রিল্যান্সিং পেশায় নিজেকে কোনদিন সফল করতে পারবেন না।
এই জন্য আপনাকে প্রথমে ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে সঠিক তথ্য নিতে হবে। ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে সঠিক ধারণা নেয়ার পর, আপনি যদি ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে কাজ শুরু করে দেন। তাহলে অবশ্যই ফ্রিল্যান্সিং জীবনে সফলতা অর্জন করতে পারবেন। তাই
আজকে ফ্রিল্যান্সিং শিখতে কত সময় লাগে ও ফ্রিল্যান্সিং শিখতে কতদিন সময় লাগে তা নিয়ে আলোচনা করবো। চলুন মূল আলোচনা শুরু করি।
ফ্রিল্যান্সিং কি?
বর্তমান সময়ে ঘরে বসে নিজের ইচ্ছামত সময় দিয়ে ইন্টারনেটের মাধ্যমে টাকা উপার্জন করাকে ফ্রিল্যান্সিং বলে। ফ্রিল্যান্সিং করে আমাদের দেশ ও দেশের বাইরে হাজার হাজার মানুষ টাকা উপার্জন করছে। আপনিও যদি ফ্রিল্যান্সিং করে টাকা ইনকাম করতে চান। তাহলে অবশ্যই আপনাকে ফ্রিল্যান্সিং ভালোভাবে শিখতে হবে।
ফ্রিল্যান্সিং শিখতে কত সময় লাগে?
ফ্রিল্যান্সিং শিখতে কত সময় লাগে এটা নির্ভর করবে আপনি কোন সেক্টরে কাজ শিখতে চাচ্ছেন। আমরা সবাই জানি, ফ্রিল্যান্সিং এ অনেক সেক্টর রয়েছে। তাই আপনি যদি ভিডিও এডিটিং শিখতে চান, তাহলে অল্প সময় লাগবে। আবার আপনি যদি ডিজিটাল মার্কেটিং শিখতে চান, সেক্ষেত্রে সময়টা অনেক বেশি লাগবে।
এজন্য আপনাকে কেউ সঠিকভাবে বলতে পারবে না, ফ্রিল্যান্সিং শিখতে কত সময় লাগতে পারে। তবে অনেকেই ধারণা করেছেন যে, ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে কাজ শেখার জন্য আপনাকে সর্বনিম্ন ৬ মাস সময় দিতে হবে। আপনি যেকোন সেক্টরে কাজ শেখেন না কেন, আপনাকে ৬ মাস সময় দিতেই হবে।
ফ্রিল্যান্সিং সেক্টর গুলোর মধ্যে রয়েছে ডিজিটাল মার্কেটিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, ওয়েবসাইট ডিজাইন এন্ড ডেভেলপমেন্ট, কন্টেন্ট রাইটি ও ভিডিও এডিটিং ইত্যাদি।
এই কয়েকটি প্রধান প্রধান সেক্টরের মধ্যে আবার অনেক ভাগ রয়েছে। গ্রাফিক্স ডিজাইনের মধ্যে রয়েছে লোগো ডিজাইন ও ব্যানার ডিজাইন। এখন আপনি যদি শুধু লোগো ডিজাইন শিখতে চান, তাহলে তুলনামূলকভাবে অনেক কম সময় লাগবে।
আবার যদি পুরো গ্রাফিক্স ডিজাইন কোর্স শিখতে চান, তাহলে তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি সময় লাগতে পারে।
বিষয়টি একটু পরিষ্কার করা যাক। ধরুন আপনি সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং শিখতে চান। সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং হচ্ছে ডিজিটাল মার্কেটিং এর অন্তর্ভুক্ত একটি সেক্টর। এখন সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং শিখতে আপনার সর্বোচ্চ একমাস সময় লাগবে।
তবে আপনি যদি ডিজিটাল মার্কেটিং পুরো কোর্স শিখতে চান, সেক্ষেত্রে আপনার ছয় মাস সময় দিতে হবে। আশা করি, এখন আপনি বিষয়টা পরিষ্কার বুঝতে পেরেছেন।
কিন্তু ইউটিউবে আপনি বিভিন্ন রকমের ভিডিও দেখবেন। তারা বলে এক মাসের মধ্যে ফ্রিল্যান্সিং কোর্স সম্পূর্ণ করুন। অথবা এক মাস ফ্রিল্যান্সিং কোর্স সম্পূর্ণ করে টাকা উপার্জন করুন। এরকম চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে আপনি কখন ফ্রিল্যান্সিং শেখার প্রতি আগ্রহ হবেন না। অথবা এরকম চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে কোন প্রতারণার শিকার হবেন না।
কারণ আপনাকে সেক্টর অনুযায়ী ফ্রিল্যান্সিং শেখার সময়টা নির্ধারণ করতে হবে। এছাড়াও যারা বলে ডিজিটাল মার্কেটিং মার্কেটিং এর কোর্স এক মাসে পুরোপুরি শিখিয়ে দিব। গ্রাফিক্স ডিজাইন কোর্স এক মাসে এ টু জেড শিখতে পারবেন। এরকম চটকদার বিজ্ঞাপন থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকার চেষ্টা করুন।
আপনি যেকোন একটা ভালো প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং শিখতে পারেন,এটা সম্পূর্ণ নির্ভর করবে আপনার চিন্তাধারার উপর। তবে এটা আপনাকে মানতেই হবে ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরের যেকোন সেক্টরে কাজ শেখার জন্য আপনাকে সর্বনিম্ন ৩ মাস সময় দিতে হবে।
ফ্রিল্যান্সিং শিখতে কত দিন লাগবে?
ফ্রিল্যান্সিং শিখতে কত দিন লাগবে সেটা নির্ভর করবে আপনি কোন সেক্টরে কাজ শিখতে চাচ্ছেন। ফ্রিল্যান্সিং এ বিভিন্ন রকমের সেক্টর রয়েছে। চলুন কোন সেক্টরে কাজ শিখতে কতদিন সময় লাগবে তা দেখে নেওয়া যাক।
গ্রাফিক্স ডিজাইনঃ বর্তমান সময়ে ফ্রিল্যান্সিং এর জনপ্রিয় একটি সেক্টর হল গ্রাফিক্স ডিজাইন। গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখার জন্য সর্বনিম্ন আপনাকে ৬ মাস সময় দিতে হবে। তাহলে আপনি গ্রাফিক্স ডিজাইনে ভালো দক্ষতা অর্জন করতে পারবেন।
ডিজিটাল মার্কেটিংঃ ফ্রিল্যান্সিং এর অন্যতম আরেকটি প্রধান সেক্টর হল ডিজিটাল মার্কেটিং। ডিজিটাল মার্কেটিং এর সকল শাখায় আপনি যদি কাজ শিখতে চান। তাহলে সর্বনিম্ন ৫/৬ মাস সময় লাগবে। তবে অনেকের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৪ মাস সময় লাগে।
ওয়েব ডিজাইন এন্ড ডেভেলপমেন্টঃ নতুন যে সকল ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরের কাজ শিখতে আসে তাদের প্রথম পছন্দ হলো ওয়েব ডিজাইন এন্ড ডেভেলপমেন্ট। এ সেক্টরের সকল কাজ শিখতে গেলে মোটামুটি ভাবে ৪/৬ মাস সময় ব্যয় করতে হবে। তাহলে ওয়েব ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টে ভালো কিছু করতে পারবেন।
এছাড়াও কনটেন্ট রাইটিং, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, এফিলিয়েট মার্কেটিং ও SEO ইত্যাদি শিখতে সর্বোচ্চ ১/২ মাস সময় লাগে।
ফ্রিল্যান্সিং শিখতে কী কী লাগে?
নতুন যারা ফ্রিল্যান্সিং শিখবে তাদের প্রশ্ন থাকে ফ্রিল্যান্সিং শেখার জন্য আমার কি কি জিনিস প্রয়োজন। তাই আমরা নিচে ফ্রিল্যান্সিং শেখার জন্য যে যে উপকরণ প্রয়োজন তা নিয়ে আলোচনা করবো।
ডিভাইসঃ ফ্রিল্যান্সিং শেখার জন্য প্রথম আপনার প্রয়োজন হল একটি ডিভাইস। অর্থাৎ, আপনি যে যন্ত্রের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ করবেন। ধরুন আপনি মাঠের ধান কাটতে গেলেন। তাহলে আপনার অবশ্যই কিছু উপকরণ নিয়ে যেতে হবে। ঠিক তেমনিভাবেও ফ্রিল্যান্সিং শেখার জন্য আপনার একটি যন্ত্রের প্রয়োজন।
হতে পারে ল্যাপটপ / কম্পিউটার অথবা স্মার্টফোন। এ তিনটি ডিভাইসের মধ্যে যেকোন একটি ডিভাইস হলে আপনি ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ শুরু করে দিতে পারেন।
এখন অনেকেই প্রশ্ন করবে মোবাইল ফোন দিয়ে কি ফ্রিল্যান্সিং শুরু করা যাবে? অবশ্যই, ফ্রিল্যান্সিং এর এমন অনেক সেক্টর রয়েছে যেগুলো সেক্টরে আপনি স্মার্টফোন দিয়ে কাজ করতে পারবেন। যেমন এফিলিয়েট মার্কেটিং, কন্টেন্ট রাইটিং ও সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এরকম অনেক কাজ আছে, যেগুলো মোবাইল দিয়েও করা যায়।
ইন্টারনেটঃ ঘরে বসেই অনলাইনে মাধ্যমে টাকা উপার্জনের মাধ্যম হল ফ্রিল্যান্সিং। এই জন্য আপনার অবশ্যই ইন্টারনেট কানেকশন লাগবে। ইন্টারনেট কানেকশন হতে পারে আপনার মোবাইলের ডাটা অথবা ওয়াইফাই লাইন। যেকোনো একটি ইন্টারনেট কানেকশন হলে আপনি ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ শুরু করে দিতে পারেন। ইন্টারনেট কানেকশন ছাড়া কখনোই ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ করা সম্ভব না।
দক্ষতা অর্জন করাঃ ফ্রিল্যান্সিং শেখার জন্য আপনার একটি ডিভাইস ও ইন্টারনেট কানেকশন লাগবে। এরপর আপনার যে জিনিসটা লাগবে ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরের উপর দক্ষতা। ধরুন আপনি গ্রাফিক্স ডিজাইন সেক্টরে কাজ শিখতে চাচ্ছেন। এখন আপনাকে গ্রাফিক্স ডিজাইন সম্পর্কে পুরোপুরি ধারণা অর্জন করতে হবে।
গ্রাফিক্স ডিজাইন সেক্টরে কি কি কাজ রয়েছে। এই কাজগুলো আগে ছয় মাস সময় নিয়ে শিখতে হবে। কাজের প্রতি দক্ষতা অর্জন করতে হবে। তারপর আপনি নিজেই যখন গ্রাফিক্স ডিজাইন এর প্রতি দক্ষতা অর্জন করবেন।
তবে বর্তমানে দক্ষ ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যা খুবই কম। এই জন্য আপনাকে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। আপনি যদি ৬ মাস সময় নিয়ে গ্রাফিক্স ডিজাইন বা ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্স করেন। তাহলে দেখবেন আপনি একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হয়ে যাবেন। আর বর্তমান সময়ে দক্ষ ফ্রিল্যান্সারের কাজের কোন অভাব নেই।
ধৈর্য ধারণ করাঃ যখন আপনি ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে পুরোপুরি কাজ শিখবেন। তখন আপনাকে অবশ্যই ধৈর্য ধারণ করতে হবে। যাদের ধৈর্য ধারণ করার ক্ষমতা নেই, তারা কখনো ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে সফলতা অর্জন করতে পারবে না।
আমরা সবাই জানি, যেকোন কর্মক্ষেত্রে গেলে অবশ্যই হতাশা, চিন্তা ও নানা রকমের দুশ্চিন্তা আমাদের হয়ে থাকে। ঠিক তেমনিভাবেও ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে প্রথম অবস্থায় আপনাকে এরকম সকল দুশ্চিন্তার শিকার হতে হবে। দেখা যাবে আপনি ছয় মাস অথবা এক বছর কোন কাজ পাবেন না।
আপনি যদি ছয় মাস বা এক বছর কোন কাজ না পান, অবশ্যই হতাশ হয়ে পড়বেন। কিন্তু আপনি যদি হতাশা না হয়ে,ধৈর্য সহকারে ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে লেগে থাকতে পারেন। তাহলে অবশ্যই ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে দেখবেন একদিন সফল হয়ে যাবেন।
শেষ কথা
ফ্রিল্যান্সিং শিখতে কত সময় লাগে ও ফ্রিল্যান্সিং শিখতে কি কি লাগে আশা করি তা জানতে পেরেছেন। তাই আপনি যদি নিজেকে ফ্রিল্যান্সিং পেশায় নিজেকে যুক্ত করতে চান। তাহলে অবশ্যই আপনাকে যেকোনো একটি ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে উপর দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
তো বন্ধুরা, আমাদের আজকের আর্টিকেল কেমন লাগলো তা অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। এছাড়াও আজকের আর্টিকেল সম্পর্কিত যদি কোন প্রশ্ন থাকে। তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করবেন।এরকম ইনকাম রিলেটেড নতুন নতুন আপডেট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে চোখ রাখবেন।