বিজ্ঞানের শাখা বা ক্ষেত্ৰ
বিজ্ঞানের ক্ষেত্র মূলত দুটি। একটি সামাজিক বিজ্ঞান অন্যটি প্রাকৃতিক বিজ্ঞান। জীববিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নসহ এ ধরনের সব বিজ্ঞান প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত। অন্যদিকে মানুষের আচার-ব্যবহার এবং সমাজ নিয়ে যে বিজ্ঞান তা সমাজবিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত। তবে যে ধরনেরই হোক, বিজ্ঞানের আওতায় পড়তে হলে উক্ত জ্ঞানটিকে সুনির্দিষ্ট পর্যবেক্ষণ এবং পরীক্ষণের মাধ্যমে প্রমাণিত হতে হয়। এ একই শর্তের অধীনে যে গবেষকই পরীক্ষণটি করুন না কেন, ফলাফল একই হতে হয়। অর্থাৎ ব্যক্তি চেতনা অনুযায়ী বিজ্ঞানভিত্তিক পরীক্ষণের ফলাফল কখনো পরিবর্তিত হতে পারে না।
গণিতশাস্ত্রকে অনেকেই বিজ্ঞানের তৃতীয় শাখা হিসেবে বিবেচনা করেন। তাদের মতে প্রাকৃতিক বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান ও গণিত এই তিনটি শ্রেণি মিলে বিজ্ঞান। এ দৃষ্টিকোণে গণিত হলো আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞান আর প্রাকৃতিক ও সামাজিক বিজ্ঞান হলো পরীক্ষণমূলক বিজ্ঞান। প্রাকৃতিক ও সামাজিক বিজ্ঞানের সঙ্গে গণিতের মিল-অমিল উভয়ই রয়েছে। গণিত একদিক থেকে পরীক্ষণমূলক বিজ্ঞানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ যে, উভয়টিই একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে পদ্ধতিগত অধ্যয়ন করে। আর পার্থক্য হলো, পরীক্ষণমূলক বিজ্ঞানের পরীক্ষণের মাধ্যমে প্রমাণ করা হলেও গণিতে কোনো কিছু প্রতিপাদন করা হয় আগের একটি সূত্রের ওপর নির্ভর করে। এ আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞান যার মধ্যে পরিসংখ্যান এবং যুক্তিবিদ্যাও পড়ে, অনেক সময়ই পরীক্ষণমূলক বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। তাই পরীক্ষণমূলক বিজ্ঞানে উন্নতি করতে হলে আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞানের প্রসার আবশ্যক। কীভাবে কোনো কিছু কাজ করে (প্রাকৃতিক বিজ্ঞান) বা কীভাবে মানুষ চিন্তা করে (সামাজিক বিজ্ঞান) তা বুঝতে হলে আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞানের কাছে হাত পাতা ছাড়া উপায় নেই।
বিজ্ঞানকে প্রধানত দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। যথা- বিষয়নিষ্ঠ বিজ্ঞান ও আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান ।
বিষয়নিষ্ঠ বিজ্ঞান : বিষয়নিষ্ঠ বিজ্ঞান বস্তু বা ঘটনা সম্পর্কীয় অবধারণ অর্থাৎ বস্তু বা ঘটনার প্রকৃত অবস্থা নিয়ে জড়িত বলে বস্তু বা ঘটনার স্বরূপ, উৎপত্তি, বিকাশ ইত্যাদি সম্পর্কে সুসংহতরূপে আলোচনা করে। পদার্থবিদ্যা, রসায়নবিদ্যা, জীববিদ্যা, মনোবিদ্যা ইত্যাদি হচ্ছে বিষয়নিষ্ঠ বিজ্ঞান। উদাহরণত বলা যায়, পদার্থবিদ্যা জড় বা পদার্থের প্রকৃত অবস্থা বা স্বরূপের বিশ্লেষণ এবং মনোবিদ্যা ব্যক্তির আচরণের প্রকৃত অবস্থা বা স্বরূপের বিশ্লেষণ নিয়ে জড়িত।
আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান : আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান প্রধানত বস্তু বা ঘটনা সম্পর্কীয় অবধারণের পরিবর্তে মূল্যসম্পর্কীয় অবধারণ অর্থাৎ বস্তু বা বিষয়টি কী হওয়া উচিত তা নিয়ে জড়িত বলে বস্তুটির প্রকৃত অবস্থা বা স্বরূপের বিশ্লেষণের পরিবর্তে বস্তুটির আদর্শ বা মানের প্রেক্ষিতে উচিত-অনুচিতের প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করে। এদিক থেকে যুক্তিবিদ্যা, নন্দনতত্ত্ব, নীতিবিদ্যা ইত্যাদি আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান।
আরো জানুন: