?> বিভিন্ন অর্থব্যবস্থায় মৌলিক অর্থনৈতিক সমস্যা গুলো সমাধানের উপায়
বিভিন্ন অর্থব্যবস্থায় মৌলিক অর্থনৈতিক সমস্যা গুলো সমাধানের উপায়

বিভিন্ন অর্থব্যবস্থায় মৌলিক অর্থনৈতিক সমস্যা গুলো সমাধানের উপায়

বিভিন্ন অর্থব্যবস্থায় মৌলিক অর্থনৈতিক সমস্যা গুলো সমাধানের উপায় Measures to Solve the Fundamental Economic Problems of Different Economic System)

নিচে বিভিন্ন অর্থব্যবস্থায় মৌলিক অর্থনৈতিক সমস্যা গুলো সমাধানের উপায় আলোচনা করা হলো :

ক. ধনতান্ত্রিক বা পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থা (Capitalistic Economy): পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থায় রাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করে না। এক্ষেত্রে ব্যক্তিমালিকানার আধিক্য, উৎপাদনকারী ও ভোক্তার সার্বভৌমত্ব বজায় থাকে। বাজার কাঠামোতে স্বয়ংক্রিয় মূল্য ব্যবস্থা অর্থনৈতিক সমস্যাসমূহের সমাধানের পথ নির্দেশ করে।

১. এ ব্যবস্থায় সম্পদের ব্যক্তিগত মালিকানা এবং উৎপাদন, ভোগ, বণ্টন ইত্যাদির ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত উদ্যোগের অবাধ স্বাধীনতা (laissez faire) বিদ্যমান। কী কী দ্রব্য সেবা, কী পরিমাণে উৎপাদন করা হবে, কীভাবে উপাদান নিয়োগ করা হবে, উৎপাদিত পণ্যের বণ্টন ও ভোগের নীতি কী হবে সেসব ক্ষেত্রে বেসরকারি উদ্যোক্তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। উদ্যোক্তা এমনভাবে উপাদান নিয়োগ করে যেন তার মুনাফা সর্বাধিক হয়

২. কীভাবে উৎপাদন হবে? শ্রম এবং মূলধনের প্রাপ্যতার ভিত্তিতে সর্বনিম্ন ব্যয় উৎপাদনের প্রচেষ্টা গ্রহণ করে উৎপাদন হবে।

৩. এ ব্যবস্থায় উৎপাদন, ভোগ ও বণ্টন এ তিনটি মৌলিক কর্মকাণ্ড দাম ব্যবস্থার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। বাজারে পণ্য ও সেবার দাম তার চাহিদা ও যোগানের অবাধ ক্রিয়ার (Q = Q.) দ্বারা নির্ধারিত হয় এবং দামের তারতম্য অনুযায়ী দ্রব্যের উৎপাদন ও উপাদানসমূহের বণ্টন নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। দাম ব্যবস্থার অদৃশ্য হাতের (Invisible hand) মাধ্যমেই ভোগ ও বণ্টন ক্রিয়া পরিচালিত হয়। এ দাম ব্যবস্থাকে স্বয়ংক্রিয় দাম ব্যবস্থা (Automatic price mechanism) বলে। এ দাম ব্যবস্থার মাধ্যমে ভোগ ও উৎপাদন কার্যক্রমের মধ্যে সমন্বয়

সাধন করে এবং উৎপাদনের প্রকৃতি নির্ধারণ ও আয়ের বণ্টন সম্পন্ন করে থাকে ৪. কার জন্য উৎপাদন-দাম ব্যবস্থা নির্ধারণ করে। যার আর্থিক সামর্থ্য বেশি সে বেশি ভোগ করে এবং যার সামর্থ্য কম সে কম ভোগ করে।

৫. সম্পদ দক্ষতার সাথে ব্যবহৃত হয় না, অপচয় হয়।

৬. সুদ, ঘুষ, মজুতদার ও কালোবাজারি বিদ্যমান। ফলে সামাজিক ন্যায়বিচার অর্জিত হয় না, কেবল পার্থিব কল্যাণ সাধিত হয়।

খ. নির্দেশমূলক অর্থব্যবস্থা (Command Economy): নির্দেশমূলক অর্থব্যবস্থায় ব্যক্তিমালিকানা অনুপস্থিত, পরিকল্পনা কমিশন কর্তৃক কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা নিয়ন্ত্রিত হয়, সম্পদের মালিকানা সমাজের হাতে থাকে।
১. এ ব্যবস্থায় কী কী দ্রব্য সেবা, কী পরিমাণে ও কীভাবে উৎপাদিত হবে, উৎপাদনের উপাদানসমূহের নিয়োগ বিন্যাস কেমন হবে এবং উৎপাদিত দ্রব্যসামগ্রীর বণ্টন কীভাবে হবে তা কেন্দ্রীয়ভাবে নির্ধারিত হয়ে থাকে। রাশিয়ার লেনিন এবং জার্মানির কার্ল মার্কস-এর মতাদর্শে এ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। সরকারের কেন্দ্রীয় পরিকল্পনারভিত্তিতে উপরের ৩টি সমস্যার (What, How and For Whom) সমাধান হয়ে থাকে।
২. এক্ষেত্রে সমাজের ব্যক্তিগত মুনাফার পরিবর্তে সামাজিক কল্যাণের দিকে লক্ষ রেখেই উৎপাদন, বণ্টন ও ভোগ কার্যক্রম নিয়ন্ত্রিত হয়।

৩.সমাজতন্ত্রে যোগ্যতা অনুসারে কাজ ও কাজ অনুযায়ী পারিশ্রমিক এবং একই নিয়মে মজুরি বন্টন করা হয়।
৪. এ ব্যবস্থায় সর্বাধিক সামাজিক কল্যাণ সাধনের উদ্দেশ্যে পরিকল্পনার মাধ্যমে সামগ্রিক অর্থনৈতিক কার্যাবলি ও সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু পুরোপুরি সক্ষম হয় না।
৫. সুদ বিদ্যমান, তবে ঘুষ ও কালোবাজারি নিয়ন্ত্রণে থাকে।

গ. মিশ্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থা- (Mixed Economy): মিশ্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ব্যক্তিগত কর্মোদ্যোগ ও সরকারিকর্মোদ্যোগ পাশাপাশি বিরাজমান।
১. এ ব্যবস্থায় অর্থনৈতিক সম্পদ ব্যবহারের উদ্দেশ্যে সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতই প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে। তবে বেসরকারি খাতের কার্যাবলির ওপর কম-বেশি সরকারি নিয়ন্ত্রণ থাকে। তাই মিশু অর্থনীতিতে উৎপাদন, ভোগ ও বণ্টন-সংক্রান্ত কার্যাবলির ক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয় দাম ব্যবস্থা যেমন কার্যকর তেমনি কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণও কম-বেশি বিদ্যমান।

২. সরকারি মুদ্রানীতি, রাজস্বনীতি, বাণিজ্যনীতি ইত্যাদির মাধ্যমে দাম ব্যবস্থার ওপর প্রভাব বিস্তার করে থাকে। সামগ্রিক দ্রব্যসামগ্রীর উৎপাদন ও দামনীতি রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনার দ্বারা নির্ধারিত হয়ে থাকে। পাশাপাশি প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে দাম ও উৎপাদন ব্যবস্থা পরিচালিত হয়ে থাকে

৩. সামাজিক দ্রব্যের উৎপাদন ও যোগানের দায়িত্ব সরকারি খাতে ন্যস্ত করা হয় বলে অনিয়ন্ত্রিত দাম ব্যবস্থা এসব ক্ষেত্রে কার্যকর হয় না। পক্ষান্তরে, মৌলিক শিল্পসমূহ ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে বেসরকারি খাত যে উদ্যোগ গ্রহণ করে সেখানে স্বয়ংক্রিয় দাম ব্যবস্থা কার্যকর থাকে। তবে সেই দাম ব্যবস্থা সঠিকভাবে অনিয়ন্ত্রিত নয়, আবার পুরোপুরি সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীনও নয়।
৪. এখানে সুদ মুক্ত ও পার্থিব কল্যাণ অর্জিত হয়, তবে সম্পদের অপচয়, সামাজিক ন্যায়বিচার সম্ভব হয় না; ঘুষ ও কালোবাজারি আংশিক নিয়ন্ত্রণে থাকে।

এভাবে দেখা যায়, মিশ্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় অর্থনৈতিক সমস্যাবলির সমাধান প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে একদিকে দাম ব্যবস্থা অন্যদিকে সরকারি নিয়ন্ত্রণ এ উভয় শক্তি কাজ করে। তবে মিশ্র অর্থনীতিতে প্রতিযোগিতা অপূর্ণাঙ্গ বলে এখানে অদৃশ্য হাতের নিয়ন্ত্রণ হ্রাস পায়।

ঘ. ইসলামি অর্থব্যবস্থা (Islamic Economy):
১. ইসলামি অর্থব্যবস্থায় হারাম দ্রব্য সামগ্রী উৎপাদিত না হয়ে কেবলমাত্র হালাল দ্রব্য সামগ্রিক শ্রম ও মূলধন প্রাপ্তির সাপেক্ষে সর্বনিম্ন ব্যয় প্রচেষ্টায় ন্যায়ভিত্তিক মুনাফার লক্ষ্যে উৎপাদিত হয়ে বিনিময় হবে।
২. ধনীদের সম্পদে দরিদ্রদের অধিকার থাকে।
৩. ঘুষ ও সুদমুক্ত অর্থনীতিতে সম্পদের অপচয় হয় না।
৪. ন্যায়বিচার ও ইহলৌকিক ও পারলৌকিক কল্যাণ অর্জিত হয়। একক কাজ: বিভিন্ন অর্থব্যবস্থায় মৌলিক অর্থনৈতিক সমস্যাগুলোর সমাধানের উপায় উল্লেখ কর।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *