ব্যষ্টিক এবং সামষ্টিক অর্থনীতি (Micro and Macro Economics)ধারণা ,উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ।
নিচে ব্যষ্টিক এবং সামষ্টিক অর্থনীতি ধারণা ,উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ আলোকপাত করা হলো:
অর্থনীতির পরিধি সর্বদাই পরিবর্তন হচ্ছে। অর্থনীতির জনক এডাম স্মিথ তার ‘The Wealth of Nations’ গ্রন্থে বলেন, “অর্থনীতি অনুসন্ধান করে জাতিসমূহের সম্পদের কারণ ও প্রকৃতি।” ১৯৩০ সালে আমেরিকায় মহামন্দা দেখা দেয়। লর্ড জে. এম. কেইন্স তার বিখ্যাত “কার্যকর চাহিদার” (effective demand) মাধ্যমে মহামন্দা দূর করেন এবং ১৯৩৬ সালে তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘The General Theory of Employment, Interest and Money” প্রকাশিত হয়। মহামন্দার পূর্বে ব্যষ্টিক অর্থনীতি এবং মহামন্দার পরে সামষ্টিক অর্থনীতির ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। নরওয়ের ওসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং প্রথম অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার প্রাপ্ত র্যাগনার ফ্রিশ (Ragner Frisch) ১৯৩৩ সালে অর্থনীতিকে ব্যষ্টিক অর্থনীতি (Micro Economics) এবং সামষ্টিক অর্থনীতি (Macro Economics) নামে দুভাগে ভাগ করেন। অর্থনীতিকে কেবল আলোচনার সুবিধার জন্যই এ বিভক্তিকরণ করা হয়।
ব্যষ্টিক অর্থনীতি (Micro Economics)
Micro শব্দটি গ্রিক শব্দ Mikros থেকে এসেছে। এর বাংলা অর্থ ব্যষ্টিক অর্থাৎ অতি ক্ষুদ্র। ব্যন্টিক বলতে একক বোঝায় (অর্থনীতির যে শাখায় অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষুদ্র এখকের বা গ্রুপের অর্থনৈতিক আচরণ বিশ্লেষণ করা হয়, তাকে ম্যাষ্টিক অর্থনীতি বলে।) অন্যভাবে বলা যায়, অর্থনীতির যে শাখায় অর্থনৈতিক এককসমূহের তথা ভোক্তা, ফার্ম বা উপকরণের মালিকের আচরণ এবং তাদের কার্যাবলি পৃথক পৃথকভাবে আলোচনা করা হয়, তাকে ব্যষ্টিক অর্থনীতি বলে। যেমন একজন ভোস্তার আচরণ, চাহিদা, ভোগ, আয়, ব্যয়, সঞ্চয় এবং একটি ফার্মের ভারসাম্য ইত্যাদি ব্যষ্টিক অর্থনীতির ওপর প্রথম পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ হলো আলফ্রেড মার্শালের ‘The Principles of Economics” “যা ১৮৯০ সালে প্রকাশিত হয়।
অধ্যাপক মরিস ডব-এর মতে, “অর্থনীতির আণুবীক্ষণিক অবলোকন ও বিশ্লেষণকে ব্যষ্টিক অর্থনীতি বলে।” সুতরাং ব্যষ্টিক অর্থনীতির লক্ষ্য হলো অর্থনৈতিক ঘটনাকে একক ও ব্যক্তিগত দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করা।
ব্যষ্টিক অর্থনীতির মূল আলোচ্য বিষয় নিচে উপস্থাপন করা হলো;
ব্যষ্টিক অর্থনৈতিক তত্ত্ব (Micro Economic Theory):
ক. উৎপাদন মূল্য:
১. চাহিদা তত্ত্ব (Demand Theory);
২. উৎপাদন ও ব্যয়তত্ত্ব (Theory of Production & Cost )
খ. বণ্টন তত্ত্ব:
১. মজুরি (Wages);
২. খাজনা (Rent);
3. সুদ (Interest),
8. মুনাফা (Profit)
গ. কল্যাণমূলক অর্থনৈতিক তত্ত্ব (Welfare Economic Theory) : Micro Economic Theory- Ahuja
সামষ্টিক অর্থনীতি (Macro Economics)
গ্রিক শব্দ Makros থেকে ইংরেজি Macro শব্দটির উদ্ভব, যার অর্থ বৃহৎ অর্থনীতির ধারণা বা ঘটনাকে সামগ্রিক বা পূর্ণাঙ্গভাবে তথা জাতীয় পর্যায়ে বিশ্লেষণ করাকে সামষ্টিক অর্থনীতি বলে। অন্যভাবে অর্থনীতির বিভিন্ন সমস্যাকে একট বা খণ্ড খণ্ডভাবে ব্যাখ্যা না করে সামগ্রিকভাবে ব্যাখ্যা করা হলে তাকে সামষ্টিক অর্থনীতি বলা হয়। যেমন- একটি দেশের জাতীয় আয়, জাতীয় উৎপাদন, মোট সঞ্চয়, সুদ ও মজুরির হার প্রভৃতি সামষ্টিক অর্থনীতির অন্তর্ভুক্ত। জি. একলি-এর মতে, “সামষ্টিক অর্থনীতি বৃহদায়তন পরিবেশে অর্থনৈতিক কার্যক্রম সম্পর্কে আলোচনা করে।”
ওরলি এম এমোস (Orley M. Amos.)-এর মতে, “সামষ্টিক অর্থনীতি হলো অর্থনীতির এমন একটি শাখা যা সমগ্র অর্থনীতি নিয়ে আলোচনা করে।” সুতরাং, সামষ্টিক অর্থনীতি দেশের মোট উৎপাদন, সামগ্রিক চাহিদা, সামগ্রিক যোগান, জাতীয় সঞ্চয়, জাতীয় বিনিয়োগ, সাধারণ মূল্যস্তর ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করে।।
সামষ্টিক অর্থনীতির মূল বিষয়সমূহ নিচে প্রদান করা হলো সামষ্টিক অর্থনৈতিক তত্ত্ব (Macro Economic Theory):
(ক) আয় ও কর্মসংস্থান তত্ত্ব (Theory of income & employment)
১. ভোগ তত্ত্ব (Consumption theory)
২. বাণিজ্যচক্রের উত্থান-পতন বা বাণিজ্যচক্র তত্ত্ব (Trade cycle theory)
৩. বিনিয়োগ তত্ত্ব (Investment theory)
(খ)সাধারণ মূল্যস্তর ও মুদ্রাস্ফীতি তত্ত্ব (Theory of general price level & inflation)
(গ)অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির তত্ত্ব (Theory of economic growth)
(ঘ)সামষ্টিক বন্টন তত্ত্ব (Macro theory of distribution)