?> মজুরি: কী, আর্থিক মজুরি ও প্রকৃত মজুরির মধ্যে তুলনা - BestInfo
আর্থিক ও প্রকৃত মজুরি (Money Wage and Real Wage)কী, আর্থিক মজুরি ও প্রকৃত মজুরির মধ্যে তুলনা , মজুরির সাথে আয়ের তুলনা ।

মজুরি: কী, আর্থিক মজুরি ও প্রকৃত মজুরির মধ্যে তুলনা

আর্থিক ও প্রকৃত মজুরি (Money Wage and Real Wage)কী, আর্থিক মজুরি ও প্রকৃত মজুরির মধ্যে তুলনা , মজুরির সাথে আয়ের তুলনা ।

মজুরি সাধারণত দুই প্রকার। যথা—নামিক বা আর্থিক মজুরি ও প্রকৃত মজুরি।

ক. আর্থিক মজুরি (Money Wage)( কোনো নির্দিষ্ট সময়ে একজন শ্রমিক তার কাজের পারিশ্রমিক হিসাবে যে পরিমাণ অর্থ পায় তাকে আর্থিক মজুরি বলে। যেমন, একজন শ্রমিক তার কর্মস্থলে এক মাস কাজ করে ৫,০০০ টাকা মজুরি পেলে ঐ অর্থই হবে তার আর্থিক মজুরি। এ মজুরি অর্থের মাধ্যমে পরিমাপ ও প্রকাশ করা হয়।

খ.প্রকৃত মজুরি (Real Wage) ( শ্রমিক তার আর্থিক মজুরি দিয়ে যে পরিমাণ দ্রব্যসামগ্রী ও সেবা ক্রয় করে এবং চাকরিস্থল থেকে যে সব আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা লাভ করে এ দুয়ের সমষ্টিকে প্রকৃত মজুরি বলে। কর্মক্ষেত্রের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বলতে বিনামূল্যে প্রাপ্ত বাসস্থান, পোশাক-পরিচ্ছদ, ওষুধপত্র, যানবাহন, বিদ্যুৎ ইত্যাদি বোঝায়। সুতরাং প্রকৃত মজুরির মানদণ্ড হলো দ্রব্যসামগ্রী ও সেবা কর্ম। একজন শ্রমিকের প্রকৃত অবস্থা তার আর্থিক মজুরির ওপর নির্ভর করে না বরং তা নির্ভর করে শ্রমিকের প্রকৃত মজুরির ওপর। প্রকৃত মজুরির সূত্র: W= W + OA
+C
P

P এখানে, W, = প্রকৃত মজুরি, w = আর্থিক মজুরি, OA “অর্থের মাধ্যমে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা, C = = অআর্থিক অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা।

আর্থিক মজুরি ও প্রকৃত মজুরির মধ্যে তুলনা (Comparison between Money Wage and Real Wage)
নিচে এ দুই মজুরির মধ্যে তুলনা করা হলো :
১. শ্রমিক অর্থের হিসাবে যে মজুরি পায় তাকে আর্থিক মজুরি বলে। এ মজুরি অর্থ দ্বারা পরিমাপ করা হয়। যেমন—কোনো শ্রমিক কারখানায় এক মাস কাজ করে ৭,০০০ টাকা পেলে তা হবে তার আর্থিক মজুরি। পক্ষান্তরে, আর্থিক মজুরি দ্বারা ক্রয়কৃত দ্রব্য ও সেবার পরিমাণ এবং কর্মক্ষেত্র থেকে প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধা এ দুয়ের সমষ্টি হলো প্রকৃত মজুরি। প্রকৃত মজুরি দ্রব্য ও সেবা প্রাপ্তির পরিমাণ দ্বারা পরিমাপ করা হয়। যেমন- কোনো শ্রমিক মাসিক ৭,০০০ টাকায় প্রাপ্ত আর্থিক মজুরি দিয়ে সংসারের জন্য প্রয়োজনীয় যতগুলো দ্রব্যসামগ্রী ও সেবা ক্রয় করে এবং কর্মসংস্থান থেকে বিনামূল্যে যে পোশাক-পরিচ্ছদ, বাসস্থান, পরিবহন সুবিধা লাভ করে এসব মিলিয়ে হবে তার প্রকৃত মজুরি।

২. আর্থিক মজুরির পরিমাণ দামস্তরের ওপর নির্ভর করে না। কিন্তু প্রকৃত মজুরি দামস্তর দ্বারা প্রভাবিত হয়। আর্থিক মজুরি স্থির থাকা অবস্থায় দামস্তর বাড়লে প্রকৃত মজুরি কমে; কারণ সে অবস্থায় একই সমান অর্থ দিয়ে আগের চেয়ে কম পরিমাণ দ্রব্যসামগ্রী ও সেবাকর্ম ক্রয় করা যায়) বিপরীত অবস্থায় তাই প্রকৃত মজুরি বাড়ে ।

৩.কাজের প্রতি শ্রমিকের আগ্রহ আর্থিক মজুরির ওপর কম নির্ভর করে। কিন্তু প্রকৃত মজুরি বিচার করেই শ্রমিক কোনো কাজের প্রতি কম বা বেশি আগ্রহ প্রকাশ করে। যেমন— একজন শ্রমিক A মিলে কাজ করে মাসিক মজুরি হিসেবে কেবল ৯,০০০ টাকা পেতে পারে। তবে সে যদি B মিলে কাজ করে তার মাসিক মজুরি হিসেবে ৮,০০০ টাকা ও বিনামূল্যে বাসস্থান, পরিবহণ সুবিধা ইত্যাদি পায় তাহলে সে দ্বিতীয়োক্ত কাজটিই বেছে নেবে। কারণ এখানে প্রকৃত মজুরি বেশি। অধ্যাপক এ. মার্শাল বলেন, ‘কোনো কাজের প্রতি আকর্ষণ আর্থিক উপার্জনের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে বরং নিট সুবিধার ওপর নির্ভরশীল হয়।’

৪. শ্রমিকের জীবনযাত্রার মান ও অর্থনৈতিক কল্যাণ আর্থিক মজুরির চেয়ে প্রকৃত মজুরির ওপর বেশি নির্ভর করে। অর্থনীতিবিদ এডাম স্মিথ বলেন, ‘শ্রমিক ধনী না দরিদ্র, উপযুক্ত না অনুপযুক্ত পারিশ্রমিক পায় তা প্রকৃত মজুরির দ্বারা বিচার করতে হয়, আর্থিক মজুরি দ্বারা নয়।’

মজুরি আয় (Earnings):

শ্রমিক তার শ্রমের বিনিময়ে নিয়োগকারীর কাছ থেকে চুক্তি অনুসারে যে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পায় তা হলো মজুরি। আর কেউ উৎপাদন, ব্যবসায় বা অন্য কোনো উপায়ে অর্থোপার্জন করলে তা আয় হিসাবে গণ্য হয়। ধারণা দুটির মধ্যে নিম্নরূপভাবে তুলনা করা যায়।

মজুরির সাথে আয়ের তুলনা (Comparison between Wage and Income ) ধারণা দুটির মধ্যে নিম্নরূপভাবে তুলনা করা যায়:

১. শ্রমের আর্থিক আয়কে মজুরি বলে। উৎপাদন বা ব্যবসায় পণ্য বা সেবা বিক্রয় থেকে যে অর্থ পাওয়া যায় তাকে আয় বা রাজস্ব বলে।

২. মজুরি হলো চুক্তিভিত্তিক প্রাপ্তি; কিন্তু আয়ের ক্ষেত্রে এরকম চুক্তির কোনো অস্তিত্ব থাকে না।

৩. মজুরির পরিমাণ নির্দিষ্ট; একটি নির্দিষ্ট সময়কালে তা একই থাকে। কিন্তু আয়ের পরিমাণ নির্দিষ্ট নয়; একটি নির্দিষ্ট সময়কালে তা কম-বেশি হতে পারে।

৪. মজুরি প্রকাশিত থাকে; কিন্তু আয় অপ্রকাশিত থাকে।

৫. অধিক কায়িক বা মানসিক শ্রম দিলেও মজুরির তারতম্য ঘটে না; কিন্তু অধিক কায়িক বা মানসিক শ্রম দিয়ে আয় অনেক বাড়ানো যায়।

৬. মজুরি একটি ক্ষুদ্র ধারণা, কিন্তু আয় একটি বৃহত্তর ধারণা। কারণ আয় মজুরিকে ধারণ করে। ৭. মজুরি একটি বদ্ধ ধারণা। কিন্তু আয় একটি প্রবাহ ও বিস্তৃত ধারণা

৮. মজুরির সংকেত w এবং আয়ের সংকেত বা TR বা R = Revenue |

৯. একজন শ্রমিক তার কায়িক ও মানসিক শ্রমের বিনিময়ে যা অর্জন করে তাকে মজুরি বলে। অন্যদিকে, ব্যবসায় ও। বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্জিত আর্থিক সুবিধাই হলো আয়।

১০. শ্রমিকের কর্মপরিধি অনেক ছোট কিন্তু ব্যবসায় ও বাণিজ্যের পরিধি ব্যাপক। কারণ ব্যবসায় (B) = (শিল্প I) + বিনিময় (Trade) + বিনিময় সহায়ক কার্য (AT = Auxiliaries to Trade) ৰাণিজ্য (C) = বিনিময় (Trade = T) + বিনিময় সহায়ক কার্যাবলি (AT – Auxiliaries to Trade)

১১. মজুরির উদ্দেশ্য অর্থনৈতিক অন্যদিকে, আয়ের মধ্যে অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য ছাড়াও মানবিক উদ্দেশ্য, সামাজিক উদ্দেশ্য, জাতীয় উদ্দেশ্য ও সাংগঠনিক উদ্দেশ্য জড়িত থাকে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *