Sub-Heading
প্রশ্ন: মদীনা সনদ কী? গুরুত্ব উল্লেখ পূর্বক ইহার ধারাগুলো উল্লেখ কর।
উপস্থাপনা:
বিশ্ব নবী (সা:) কর্তৃক প্রণীত ‘মদিনা সনদ’ বিশ্বের ইতিহাসে একটি প্রামান্য দলীল এবং প্রথম লিখিত সংবিধান। মদীনা আগমনের পর তথায় সুশাসন ও শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তিনি এ ঐতিহাসিক সনদ প্রবর্তন করেন। এ সম্পর্কে পি.কে. হিট্টি বলেন, Out of the religious community of Al-Madina the later and large state of Islam arose.
মদীনা সদনদের পরিচয়:
মদীনা বসবাসের উপযোগী হওয়ায় সেখানে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী লোক বসবাস করত। ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে রাসূল (সা:) অনুধাবন করেন যে, মদীনার নিরাপত্তা বিধান, কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, সুশাসন কায়েম ও সকলের মাঝে শান্তি স্থাপন করার জন্য একতার বন্ধন সুদৃঢ় করা একান্তই প্রয়োজন। এ উদ্দেশ্যে তিনি একটি লিখিত সনদ প্রনয়ন করেন, যাকে كتاب الرسول বা The charter of Madin তথা মদিনা সনদ বলা হয়। এ সনদের শুরুতে বলা হয়েছে,
هذا كتاب من محمد النبى (صلى) بين المؤمنين والمسلمين من قريش يثرب ومن تبعهم فلحق بهم وجاهد معهم-
পি.কে হিট্টি বলেন, It was the first written constitution of the world.
মদিনা সনদের প্রধান প্রধান ধারা সমুহ:
মদিনা সনদে ৪৭ মতান্তরে ৫২ বা ৫৩টি ধারা ছিল। নিম্নে প্রধান ধারাসমূহ উল্লেখ করা হলো:
১. মদীনা সনদে স্বাক্ষরকারী ইহুদ, খ্রিষ্টান, পেওত্তলিক ও মুসলমান সকলে সমান অধিকার ভোগ করবে এবং তারা একটি ঐক্যবদ্ধ উম্মাত গঠন করবে। যেমন সনদে বলা হয়েছে: انهم امة واحدة من دون الناس
২. সনদ অনুযায়ী রাসূল (সা:) মদীনা রাষ্ট্রের প্রধান এবং মদীনার সর্বোচ্চ বিচারালয়ের প্রধান পদে অধিষ্টিত হবেন।
৩. মদীনা রাষ্ট্রে পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা বজায় থাকবে। সকলে নিজ নিজ ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করবে।
৪. সনদে সাক্ষরকারী কোন সম্প্রদায় ও কুরাইশদের সথে কোন প্রকার সন্ধি বা মিত্রতা স্থাপন করতে পারবে না।
৫. সাক্ষরকারী কোন সম্প্রদায় বহি:শত্রু কর্তৃক আক্রান্ত সকল গোত্র সম্মিলিতভাবে মোকাবিলা করবে এবং যুদ্ধের ব্যয়ভার বহন করবে।
৬. কোন ব্যক্তি অপরাধ করলে তা ব্যক্তিগত অপরাধ বলে গণ্য হবে। এজন্য সম্প্রদায়কে দায়ী করা যাবে না।
৭. এ সনদের মাধ্যমে মদীনাকে পবিত্র ঘোষণা করা হলো আর এখানে রক্তপাত, হত্যা ও অপরাধমূলক সকল কার্যকলাপ চিরতরে নিষিদ্ধ করা হলো:
৮. আপরাধীকে উপযুক্ত শাস্তিভোগ করতে হবে এবং সর্বপ্রকার পাপ ও অপরাধকে ঘৃণার চোখে দেখতে হবে।
৯. ইহুদীদের মিত্ররাও সমান সুযোগ-সুবিধা ও নিরাপত্তা পাবে, যদি তারা আনুগত্য করে।
১০. রাসূল (সা:)-এর অনুমতি ব্যতীত বাইরের কোন গোত্রের সাথে কোন গোত্র যুদ্ধে লিপ্ত হতে পারবে না।
১১. সাক্ষরকারী গোত্রগুলোর মধ্যে কোন বিরোধ দেখা দিলে, রাসূল (সা:) আল্লাহর আইন অনুযায়ী তার ফায়সালা দিবেন।
১২. দুর্বল ও অসহায়কে অর্বতোভাবে সাহায্য করতে হবে।
১৩. এই সনদের শর্ত ভঙ্গকারীর উপর আল্লাহর লানত বর্ষিত হবে।
মদীনা সনদের গুরুত্ব:
১. প্রথম লিখিত সংবিধান:
রাসূল (সা:) কর্তৃক প্রণীত মদীনা সনদ বিশ্বে শান্তি সুশৃংখল সমাজপ্রতিষ্ঠায় পৃথবীর ইতিহাসে সর্ব প্রথম লিখিত সংবিধান। ঐতিহাসিক হিট্টি বলেন, It was the first written constitution of the world.
২. রাজনৈতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠা:
যে সময় আরবদের মাঝে কোন রাজনৈতিক ঐক্য ছিল না। রাসূল (সা:) সর্বপ্রথম মদীনা সনদের মাধ্যমে ঐক্যপ্রতিষ্ঠা করেন। ঐতিহাসিক পি.কে. হিট্টি বলেন, “This was the first attempt in the history of arabia at a social organization with religious rather than bloods basis.”
আর মহান আল্লাহ ঐক্য প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে বলেন, واعتهو ابحبل الله جميعا
৩. ইসলামী প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা:
রাসূল (সা:) তৎকালীন বিশ্বে ধর্ম ও রাজনীতির সমন্বয়ে মদীনা সনদের মাধ্যমে ইসলামী প্রজাতন্ত্রী প্রতিষ্ঠা করেন। পি.কে. হিট্টি বলেন, ‘Out of the religions of Al-madina the lates and large state islam arose.
৪. যুগান্তকারী মহানায়ক:
মহানবী (সা:) শুধুমাত্র একজন ধর্মপ্রচারই নন; বরং তিনি যে বিশ্ব ইতিহাসে একজন শ্রেষ্ঠ রাজনীতিক বিপ্লবী মহাপুরুষ ছিলেন, তাও এ সনদে প্রমাণিত হয়। উইলিয়াম মুর বলেন,“It reveals the man in his real greatness a master mind not only of his own age but of all ages.’
৫. শান্তিস্থাপন:
এ সনদ শতধাবিভক্ত আরববাসীর মধ্যে গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটায় যার ফলে সমাজে শান্তি শৃংখলা স্থাপিত হয়। ড. হাসান ইব্রাহীম বলেন,
استطاع ان يوحد بين جميع المسلمين على اختلاف شعوبهم وقبائلهم-
৬. ইসলামের প্রসার:
মদীনা সনদের মাধ্যমে পরবর্তীতে ইসলামের সমৃদ্ধি ও সম্প্রসারণের পথ প্রশস্ত হয়। دارالمعاد প্রণেতা বলেন,
خعشاء الاسلام فيها لايغى ذار وقد دخلها الاسلام-
৭. মুহাজির ও আনসারদের সম্পর্কস্থাপন:
মহান আল্লাহ বলেন,
إِنَّ ٱلَّذِينَ آمَنُواْ وَهَاجَرُواْ وَجَاهَدُواْ بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ وَٱلَّذِينَ آوَواْ وَّنَصَرُوۤاْ أُوْلَـٰئِكَ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَآءُ بَعْضٍ
উপসংহার:
ধর্ম, রাষ্ট্র ও সমাজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে মদিনা সনদের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। এসনদের মাধ্যমেই মদিনার বুজে শান্তির ঝরনা ধারা প্রবাহিত হয় এবং এ সনদের পরই মহানবী (সা:) এর ব্যক্তিত্বের পরিপূর্ণ বিকাশ হতে থাকেতাই প্রাচ্যের মনীষীগণ আবেগজড়িত কণ্ঠে বলেন, Oh men of the world if you want of find out peace from this world you never find you may go to madina you may go to madina.
মদীনা সনদ এর উপর ভিত্তি করে নিচে একটি কুইজ দেওয়া আছে।
নিচের কুইজটির উত্তর প্রদান করে নিজের দক্ষতা যাচাই করুন।
রিয়াজুলকে অনুসরণ করুন:
ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সকল সাবজেক্ট এর উত্তর পত্র পেতে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।
যোগাযোগ করার ঠিকানা: