মুশারাকা ও মুদারাবার মধ্যে পার্থক্য(Differences between Mushraka and Mudaraba)
মুদারাবা মুশারাকার মতোই অংশীদারি ব্যবসায়। তবে মুশারাকা ও মুদারাবা পদ্ধতিদ্বয়ের মধ্যে কিছু মৌলিক পার্থক্য বিদ্যমান। মুশারাকা ও মুদারাবার মধ্যে পার্থক্যসমূহ নিম্নরূপ :
১. ব্যুৎপত্তিগত পার্থক্য : আরবি শব্দ শিরকাত বা শরীকাত বা শিরক থেকে মুশারাক পরিভাষার উৎপত্তি। তাই ব্যুৎপত্তিগত দিক থেকে মুশারাকা অর্থ অংশীদারিত্ব । পক্ষান্তরে, আরবি দারবুন শব্দ থেকে মুদারাবা শব্দের উৎপত্তি। দাররুন শব্দের বহুবিধ অর্থের মধ্যে একটি অর্থ হচ্ছে ভ্রমণ (Travel) আল্লাহর ফদল’ অন্বেষণে ব্যবসার উদ্দেশ্যে ভ্রমণই হচ্ছে মুদারাবার মৌলিক বিষয়।
২. পরিভাষাগত পার্থক্য: যে বিনিয়োগে দুই বা ততোধিক উদ্যোক্তা মূলধন যোগান দেয়, কেউ অথবা সকলে বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনায় অংশ নিয়ে চুক্তি অনুযায়ী লাভ করে এবং লোকসান হলে মূলধন অনুপাতে বহন করে তাকে মুশারাকা বলে। পক্ষান্তরে যে বিনিয়োগে একপক্ষ যোগান দেয় এবং অপরপক্ষ শ্রম, মেধা, যোগ্যতা ও সময় ব্যয় করে এবং চুক্তি অনুযায়ী লাভ হলে ভাগ করে নেয় অথবা দ্বিতীয় পক্ষ মুদারিবের অবহেলাজনিত কারণ ছাড়া সমুদয় ক্ষতি মূলধন যোগানদাতা সাহিব-আল-মাল বহন করে তাকে মুদারাবা বলে।
৩. লাভের অংশ : মুশারাকা কারবারে অংশীদারগণ লাভ-লোকসানে অংশীদারি হন । পক্ষান্তরে, মুদারাবা কারবারে উভয় পক্ষে লাভের অংশীদারি হয়।
৪. মূলধন যোগান : মুশারাকা কারবারে সকল অংশীদার মূলধন যোগান দেয়। অন্যকথায় মুশারাকা কারবারের সকল অংশীদার মূলধন সরবরাহ করেন। পক্ষান্তরে, মুদারাবা কারবারে শুধু সাহিব আল মাল বা রাব্বুল মাল মূলধন যোগান দেন। অন্যকথায় মুদারাবার ক্ষেত্রে একপক্ষ অর্থ সরবরাহ করে অপরপক্ষ শ্রম বিনিয়োগ করেন। মুদারিব দক্ষতা ও শ্রম নিয়োজিত করেন।
৫. কারবার ব্যবস্থাপনা : মুশারাকা কারবারে সকল অংশীদারের কারবার ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার অধিকার থাকেন। মুদারাবা কারবারে শুধু উদ্যোক্তা বা মুদারিব কর্তৃক কারবার পরিচালিত হয়। মুদারাবায়’ রাব্বুল মাল কারবার ব্যবস্থাপনায় অংশগ্রহণের কোনো অধিকার রাখেন না।
৬. মুনাফা বণ্টন : মুশারাকা কারবারে লাভ হলে অংশীদারগণ সম্মত হারে ভাগ করে নেয়। পক্ষান্তরে, মুদারাবা কারবারে লাভ হলে মুদারিব ও রাব্বুল মাল চুক্তিসম্মত হারে ভাগ করে নেন।
৭. লোকসান ভাগাভাগি : মুশারাকা কারবারে সকল অংশীদার স্বীয় মূলধনের পরিমাণ অনুপাতে লোকসান বহন করেন। অন্যকথায় ব্যবসায়িক লোকসানের দায়ভার সকল পক্ষকে বহন করতে হয় এবং মূলধনের আনুপাতিক হারে তাদের মধ্যে লোকসানের দায়ভার বণ্টিত হয়। পক্ষান্তরে, মুদারাবা কারবারে সাধারণত মুদারিব কোনো আর্থিক ক্ষতি বহন করেন না। লোকসান মূলধন/পুঁজির মালিকের। কেননা, মুদারিব-তো কোনো মূলধনই বিনিয়োগ করেন না। আর লোকসন শুধু এতটুকু যে, শ্রম ও সময় বিফলে গেল এবং কোনো পারিশ্রমিক পেল না। তবে এই নীতিমালা এ শর্তের সাথে সম্পৃক্ত যে, মুদারিবকে এমন পূর্ণ সতর্কতা এবং দায়িত্বের সাথে কাজ করতে হবে যা সাধারণত এ জাতীয় ব্যবসার জন্য জরুরি মনে করা হয়; কিন্তু মুদারিব যদি উদাসীনতা এবং বেপরোয়া হয়ে কাজ করে বা নীতি বিরোধী কোনো আচরণ করেন, তাহলে বেপরোয়া এবং অসতর্কতার কারণে ব্যবসায় যে লোকসান হবে তা মুদারিবকে বহন করতে হবে।
৮. অংশীদারগণের দায়: মুশারাকা কারবারে সাধারণত অংশীদারগণের দায় সীমাহীন। এ জন্যে সম্পদের চেয়ে অতিরিক্ত দায় প্রত্যেক অংশীদারকে আনুপাতিক হারে বহন করতে হয়। তবে যদি সকল অংশীদার একমত হন যে, কোনো অংশীদার আর কোনো বিনিয়োগ সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে না; তবে অতিরিক্ত দায় সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগগ্রহীতা অংশীদারকেই বহন করতে হয়। পক্ষান্তরে, মুদারাবায়? ব্যাপারটি ভিন্ন ধরনের। যদি সাহিব-আল- মাল মুদারিবকে তার পক্ষ থেকে বিনিয়োগ গ্রহণের অনুমতি না দেন তবে তার (সাহিব-আল-মাল এর) দায় মূলধনের মধ্যে সীমিত থাকে। তবে সাহিবুল মাল যদি মুদারিবকে তার (সাহিব-আল-মালিক) পক্ষ থেকে বিনিয়োগ গ্রহণের অনুমতি দিয়ে থাকে, তাহলে অতিরিক্ত বিনিয়োগের দায়িত্ব সাহিব-আল-মালকে বহন করতে হবে।
৯. সম্পদের মালিকানা: মুশারাকার সকল সম্পদ অংশীদারগণের যৌথ মালিকানায় পরিগণিত হয়। সুতরাং লাভ না হলেও সম্পদের মূল্য বৃদ্ধির (যদি হয়) সুবিধা সকলে পেয়ে থাকে। পক্ষান্তরে, মুদারাবায়’ ক্রয়কৃত সমুদয় সম্পদের মালিক শুধু সাহিব-আল-মাল । মুদারিব শুধু ব্যবসায়ে লাভের ভাগীদার, তাই সে সম্পদের মূল্য বৃদ্ধির কোনো অংশ পায় না। এটা সাহিব আল-মালের প্রাপ্য।
১০. পুঁজির ঝুঁকি: মুশারাকা কারবারে পুঁজি রূপান্তরের ঝুঁকি সকল অংশীদারই বহন করেন । পক্ষান্তরে, মুদরাবায়া সাহিব-আল-মাল পুঁজির ঝুঁকি বহন করে ।