?> মূলধনের যোগান (Supply of Capital )কী? মূলধনের যোগানের উৎস
মূলধনের যোগান (Supply of Capital )কী মূলধনের যোগানের উৎস

মূলধনের যোগান (Supply of Capital )কী? মূলধনের যোগানের উৎস

মূলধনের যোগান (Supply of Capital )কী, মূলধনের যোগানের উৎসসমূহ

একটি নির্দিষ্ট সময়ে অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে উৎপাদনের জন্য যে পরিমাণ কাঁচামাল, মূলধনী যন্ত্রপাতি ও অর্থ-তহবিল প্রাপ্তব্য হয় তাকেই মূলধনের যোগান বলে।
উৎপাদনের জন্য কাঁচামালের প্রয়োজন পড়ে। প্রধানত, কৃষিখাতেই বেশির ভাগ কাঁচামাল উৎপাদিত হয়। তবে কিছু কিছু কাঁচামাল শিল্পোৎপাদিত দ্রব্যও হয়। বাংলাদেশে উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামালের বেশির ভাগ কৃষিক্ষেত্রেই উৎপাদন হয়। এক্ষেত্রে পাট, আখ, তামাক, চামড়া ইত্যাদির নাম উল্লেখ করা যায়। এগুলোর যোগান সন্তোষজনক। দেশে কৃষির উন্নতির সাথে সাথে কৃষিজ কাঁচামালের যোগান আরও বাড়বে বলে আশা করা যায়। উৎপাদনে কিছু শিল্পোৎপাদিত দ্রব্যও কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হয়, যেমন পোশাক শিল্পের জন্য কাপড়, বস্ত্র শিল্পের জন্য সুতা; সার, ওষুধ, সিমেন্ট ইত্যাদি শিল্পের জন্য রাসায়নিক পদার্থ। এসবের বেশির ভাগ দ্রব্যই বিদেশ থেকে উচ্চ মূল্যে সংগ্রহ করতে হয়। এগুলোর যোগান প্রয়োজনের তুলনায় বেশ কম। উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধনী যন্ত্রপাতি দেশেও উৎপাদিত হয়; আবার বিদেশ থেকেও আমদানি করা হয়। দেশে উৎপাদিত হলে তা প্রয়োজনমাফিক যোগান দেওয়া যায়; তবে তা যদি আমদানি করতে হয় সেক্ষেত্রে তার যোগান কম। হতে পারে। বাংলাদেশে উৎপাদনের জন্য দরকারি মূলধনী যন্ত্রপাতির প্রায় সবটাই আমদানি করতে হয়। বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রায় মূলধনী যন্ত্রপাতির যোগান অত্যন্ত সীমিত।

সাম্প্রতিককালে বিনিয়োগযোগ্য অর্থ তহবিলকে উৎপাদনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এটি দেশের ভিতর ও বাহির থেকে হয়। বাংলাদেশে বাণিজ্যিক ব্যাংক, বিমা কোম্পানি, বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান, স্টক এক্সচেঞ্জ ইত্যাদি থেকে বিনিয়োগযোগ্য তহবিল, পাওয়া যায়। এর যোগান প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। বিদেশি উৎসগুলো থেকে প্রাপ্ত ঋণ-তহবিল প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট কম, অনিশ্চিত ও শর্তযুক্ত। সব মিলিয়ে এখানে অর্থ তহবিলের যোগান চাহিদার প্রেক্ষিতে নিতান্তই কম। উপরের আলোচনার আলোকে বলা যায়, বাংলাদেশে মূলধনের যোগান প্রয়োজনের তুলনায় বেশ কম।

 

মূলধনের যোগান এর উৎসসমূহ (Sources of Supply of Capital )

যেকোনো দেশে মূলধনের যোগান দু’ভাবে হতে পারে। যথা—

ক. অভ্যন্তরীণ উৎস এবং খ. বৈদেশিক উৎস।

 

ক. অভ্যন্তরীণ উৎস (Internal Sources): মূলধন যোগানের অভ্যন্তরীণ উৎসসমূহ হলো

১. রাজস্ব উদ্বৃত্ত: সরকার বাজেটে যে ব্যয় বরাদ্দ করে তার পরিমাণ যদি রাজস্ব আয় থেকে কম হয়, তখন রাজস্ব উদ্বৃত্ত সৃষ্টি হবে যা মূলধন যোগানের উপাদান হিসাবে বিবেচিত।

২.অতিরিক্ত কর আরোপ: দেশে উন্নয়ন পরিকল্পনার অর্থসংস্থানের জন্য সরকার অনেক সময় বাজেটে বিদ্যমান করের হার বৃদ্ধি করে এবং অতিরিক্ত কর আরোপ করে মূলধনের যোগান সৃষ্টি করে।

৩.নিট মূলধন আয়: ব্যাংক জনসাধারণের নিকট সরকারি বন্ড ও বিভিন্ন প্রকার ঋণপত্র বিক্রয় করে যে মূলধন সংগ্রহ করে তা সরকারের নিট মূলধন আয় হিসেবে গণ্য হয়। এছাড়াও রাষ্ট্রায়ত্ত ও স্বায়ত্তশাষিত সংস্থার সংরক্ষিত তহবিল এবং সঞ্চয় হতে সরকার মূলধন যোগান দিয়ে থাকে।

৪. বেসরকারি সঞ্চয়: দেশের ব্যাংক, বিমা ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জনগণের অর্থ সঞ্চিত থাকে। এসব সঞ্চয় থেকে ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে মূলধনের যোগান দেয়া যায়।

৫. বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান: বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক, গ্রামীণ ব্যাংক এবং NGOসহ বিভিন্ন

উন্নয়নধর্মী আর্থিক প্রতিষ্ঠান মূলধনের যোগান দৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে। এছাড়া সরকার নতুন মুদ্রা ছাপিয়েও এরূপ তহবিল গঠনে ভূমিকা রাখে।

খ. বৈদেশিক উৎস (External Sources): বিশ্বের বহুদেশ তাদের মূলধন যোগানের জন্য বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে সাহায্য ও ঋণ গ্রহণ করে। বেশির ভাগ অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশ অভ্যন্তরীণ উৎস দ্বারা প্রয়োজনীয় মূলধনের সংস্থান করতে পারে না, তাই বাধ্য হয়ে ঐ সব দেশ বৈদেশিক উৎস হতে মূলধন সংগ্রহ করে।

 

Recent Posts

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *