?> যোগান: যোগানের সংজ্ঞা, যোগানের বিধি ও যোগানের নির্ধারকসমূহ -

যোগান: যোগানের সংজ্ঞা, যোগানের বিধি ও যোগানের নির্ধারকসমূহ

যোগান: যোগানের সংজ্ঞা (Definition of Supply), যোগানের বিধি ও যোগানের নির্ধারকসমূহ (Determinants of Supply)

ধরা যাক, কৃষক মোট ১০০ মণ ধান উৎপাদন করে। ১০০ মণ ধানের মধ্যে সে ৫০ মণ ধান নিজের পরিবারের খাবারের জন্য রাখে। ফলে বাকি ৫০ মণ ধান সে বিক্রি করতে পারে। এ ৫০ মণ ধানই হলো বিক্রয়যোগ্য দ্ৰব্য বা মজুদ। এখন একটি নির্দিষ্ট সময়ে প্রতি মণ ধানের দাম ৫০০ টাকা হলে, সে যদি ২০ মণ ধান বিক্রি করতে রাজি থাকে তা হলে ঐ ২০ মণ ধানই হলো যো*গা*ন ।

সাধারণত কোনো দ্রব্যের বিক্রয়যোগ্য পরিমাণকে যো*গা*ন বলে। কিন্তু অর্থনীতিতে যোগান ধারণাটি একটি বিশেষ অর্থে ব্যবহৃত হয়। অর্থনীতিতে কোনো নির্দিষ্ট সময়ে একটি নির্দিষ্ট দামে বিক্রেতা কোনো দ্রব্যের যে পরিমাণ বিক্রি করতে প্রস্তুত থাকে, তাকে সে দ্রব্যের যোগান বলে। মূলত দামের ওপর দ্রব্যের যোগান নির্ভর করে। দামের সাথে যোগানের সম্পর্ক প্রত্যক্ষ বা সমমুখী। এজন্য দ্রব্যের দাম বাড়লে যোগান বাড়ে এবং দাম কমলেও যো*গা*ন কমে।

উপরের আলোচনা থেকে বলা যায়,” কোনো নির্দিষ্ট সময়ে একটি নির্দিষ্ট দামে কোনো বিক্রেতা বা উৎপাদক প্রতিষ্ঠান একটি উৎপাদিত দ্রব্যের যে পরিমাণ বিক্রি করতে প্রস্তুত বা ইচ্ছুক থাকে, তাকে ঐ দ্রব্যের যো*গা*ন বলে।

ক. যোগান ও মজুদ: অর্থনীতিতে যো*গা*ন (Supply) ও মজুদ (Stock) ভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়। সাধারণত বিক্রয়যোগ্য দ্রব্যের যে পরিমাণ বাজারে বর্তমান থাকে, তাকে মজুদ বলে। অর্থনীতিতে কোনো নির্দিষ্ট সময়ে একটি নির্দিষ্ট দামে বিক্রেতা মজুদ দ্রব্যের যে মোট অংশ বা পরিমাণ বিক্রির জন্য রাজি থাকে, তাকে যো*গা*ন বা সরবরাহ বলা হয়।

খ. মজুদ ও যোগানের তুলনা: কোনো নির্দিষ্ট সময়ে যে মোট পরিমাণ দ্রব্য বাজারে বর্তমান থাকে, তাকে মজুদ দ্ৰব্য বলে। কিন্তু সরবরাহ হলো মজুদ দ্রব্যের অংশবিশেষ যা বিক্রেতা একটি নির্দিষ্ট দামে বিক্রি করে থাকে।
উদাহরণ: বাজারে একজন বিক্রেতার নিকট মোট ৭০ টন চাল আছে। বাজারে প্রতি টন চালের মূল্য ১০,০০০ টাকা। যদি উক্ত দামে বিক্রেতা ৩০ টন চাল বিক্রি করতে ইচ্ছুক থাকে, তবে সে অবস্থায় ৭০ টন চাল মজুদ এবং ৩০ টন চাল হবে তার যোগান বা সরবরাহ। সুতরাং, যো*গা*ন হলো মজুদের একটি অংশ।

 

যোগান ও মজুদ
যোগান ও মজুদ

চিত্রে বিষয়টি দেখানো হয়েছে। যো*গা*ন , মজুদ ধারণা অপেক্ষা ছোট বা সমান হতে পারে কিন্তু বড় হবে না।

 

যোগান বিধি (Law of Supply).

চাহিদা বিধির মতো যোগানেরও একটি বিধি রয়েছে। প্রতিটি পণ্যের বিনিময় মূল্য আছে। বিনিময় মূল্যের হ্রাসবৃদ্ধির কারণে চাহিদা যেমন প্রভাবিত হয়, তেমনি যোগানও প্রভাবিত হয়। যো*গা*ন বিধি অনুসারে অন্যান্য অবস্থা অপরিবর্তিত (ceteris paribus) থেকে কোনো পণ্যের দাম বাড়লে যো*গা*ন বাড়ে এবং দাম কমলে যোগান কমে। অন্যান্য অবস্থা বলতে বিভিন্ন উপকরণের দাম, কারিগরি অবস্থা, প্রাকৃতিক অবস্থা, সময়, কর ও ভর্তুকি ইত্যাদিকে বোঝায়। অতএব, দাম ও যোগানের মধ্যে সমমুখী সম্পর্ক যে বিধির মাধ্যমে দেখানো হয়, তাকে যো*গা*ন বিধি বলে। যো*গা*ন বিধিকে তাঁর চিহ্নের সাহায্যে নিম্নভাবে দেখানো যেতে পারে

P↑S ↑ যখন অন্যান্য অবস্থা স্থির থাকে।

P↓S ↓ যখন অন্যান্য অবস্থা স্থির থাকে।

এখানে, P = দাম, S = যোগান
দাম ↑ যো*গা*ন = ঊর্ধ্বগতি
দাম ↓ যো*গা*ন = নিম্নগতি

অধ্যাপক মার্শাল (Prof. Marshall)-এর মতে, “অন্যান্য অবস্থা অপরিবর্তিত থেকে যদি কোনো দ্রব্যের দাম বাড়ে তাহলে তার যো*গা*ন বাড়বেএবং দাম কমলে যোগান ও কমবে।”
যোগান বিধির ব্যাখ্যা: যো*গা*ন বিধিকে দু’ভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। যথা-
১. যো*গা*ন সূচি (supply schedule)
২. যোগান (supply curve)

যো*গা*ন এর নির্ধারকসমূহ (Determinants of Supply)
কোনো দ্রব্যের যোগান কতকগুলো বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। এ বিষয়গুলোই হলো যোগানের নির্ধারক। সুতরাং, যেসব বিষয়ের ওপর কোনো দ্রব্যের যো*গা*ন নির্ভরশীল ঐসব বিষয়কে যোগানের নির্ধারক বলে।

নিচে যোগানের নির্ধারকসমূহ আলোচনা করা হলো:

১.পণ্যের দাম: পণ্যের নিজস্ব দামের ওপর যো*গা*ন অনেকাংশে নির্ভর করে। সাধারণত কোনো পণ্যের দাম বাড়লে যো*গা*ন বাড়ে এবং দাম কমলে যোগান কমে। কারণ দাম বাড়লে মুনাফা বাড়ে, দাম কমলে মুনাফা কমে। ফলে যোগান রেখা ডানদিকে উর্ধ্বগামী হয়।

২.অন্যান্য পণ্যের দাম: সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দ্রব্যের দাম বিবেচ্য দ্রব্যের যোগানকে প্রভাবিত করে। যেমন- চিনির বিকল্প গুড়ের দাম কমলে চিনির যো*গা*ন কমবে।

৩.দ্রব্যের চাহিদা: দ্রব্যের চাহিদা বৃদ্ধি পেলে দাম ও বৃদ্ধি পাবে এবং সাথে সাথে যোগানও বৃদ্ধি পাবে।

৪. উৎপাদনকারীর ভোগ: উৎপাদনকারী নিজের উৎপাদিত দ্রব্য অধিক পরিমাণে ভোগ করলে বাজারে সেসব দ্রব্যের যো*গা*ন হ্রাস পায়। বিপরীতভাবে, উৎপাদনকারী কম ভোগ করলে সেসব দ্রব্যের যো*গা*ন বৃদ্ধি পায়।
৫. কৌশলের পরিবর্তন: উৎপাদনে নতুন নতুন কৌশল ও আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ফলে উৎপাদন পদ্ধতি উন্নত হয়। এর ফলে উৎপাদন খরচ কমে এবং একই দামে পূর্বের চেয়ে বেশি যোগান দেওয়া সম্ভব হয়।

৬. সময়: অনেক সময় কম সময়ের কারণে চাহিদানুযায়ী যো*গা*ন দেওয়া সম্ভব হয় না।

৭. আবহাওয়ার প্রভাব: আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কৃষি উৎপাদন বাড়ে এবং প্রতিকূলে থাকলে কৃষি উৎপাদন পায়। যেমন— ধানের মৌসুমে একেবারেই যদি বৃষ্টি না হয় তবে ধান উৎপাদন ব্যাহত হয়। ফলে আবহাওয়া যোগানের ওপর প্রভাব বিস্তার করে।

৮. কর ও ভর্তুকির প্রভাব: দ্রব্যের যো*গা*ন , কর ও ভর্তুকির দ্বারা প্রভাবিত হয়। কর আরোপ করলে উৎপাদন বায় বৃদ্ধি পায়। ফলে উত্ত দ্রব্যের যোগান হ্রাস পায়। অন্যদিকে, কোনো দ্রব্যের উৎপাদনে ভর্তুকি প্রদান করলে উৎপাদন ব্যয় হ্রাস পায়। তাই যো*গা*ন বৃদ্ধি পায়।

৯. যুক্ত যোগান: যেসব পণ্য যুক্তভাবে উৎপাদিত হয় তাদের একটির যো*গা*ন বাড়লে অপরটির যোগানও বাড়ে। যেমন— তুলার যোগান বাড়লে দামের পরিবর্তন ছাড়াই তুলা বীজের যো*গা*ন বাড়ে।

১০. বাজারের ভিন্নতা: যে বাজারে ক্রয়-বিক্রয়ের পরিমাণ বেশি, সে বাজারে দ্রব্যের যো*গা*ন বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। যে বাজারে ক্রয়-বিক্রয়ের পরিমাণ কম, সে বাজারে দ্রব্যের যোগান হ্রাস করা দরকার।

সুতরাং বলা যায় যে, যো*গা*ন উপরের নির্ধারকসমূহের ওপর নির্ভরশীল।

 

Recent Posts

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *