?> যৌথ মূলধনী কারবার (Joint Stock Company) বৈশিষ্ট্য, সুবিধা ও অসুবিধা
যৌথ মূলধনী কারবার (Joint Stock Company) বৈশিষ্ট্য, সুবিধা ও অসুবিধা

যৌথ মূলধনী কারবার (Joint Stock Company) বৈশিষ্ট্য, সুবিধা ও অসুবিধা

যৌথ মূলধনী কারবার (Joint Stock Company) বৈশিষ্ট্য, সুবিধা ও অসুবিধা

ব্রিটেনে সতেরশ শতাব্দীতে সর্বপ্রথম এ কারবার চালু হয়। বর্তমানে সকল দেশে এ কারবার প্রচলিত আছে। এক মালিকানা কারবার ও অংশীদারি কারবারের অসুবিধাসমূহ উত্তরণের জন্য যৌথ মূলধনী কারবারের উদ্ভব হয়েছে। কয়েকজন ব্যক্তি যৌথভাবে মূলধন সংগ্রহ করে কারবার পরিচালনা করলে তাকে যৌথ মূলধনী কারবার বলে। যৌথ মূলধনী কারবারে বৃহদায়তন উৎপাদন করা যায়।

১৯৯৪ সালে কোম্পানি আইন ২-১ (খ) ধারায় বলা হয়েছে, কোম্পানি বলতে এ আইনের অধীনে গঠিত এবং নিবন্ধিত কোনো কোম্পানি বা কোনো

বিদ্যমান কোম্পানিকে বোঝায়। সুতরাং, বহুসংখ্যক ব্যক্তি সম্মিলিতভাবে মূলধনের যোগান দিয়ে যৌথভাবে যে কারবাস প্রতিষ্ঠা করে তাকে যৌথ মূলধনী কারবার বলে।

 

যৌথ মূলধনী কারবার এর গঠন প্রণালি

১.সাধারণত এক বা কয়েকজন ব্যক্তি যৌথ মূলধনী কারবার গঠনের পরিকল্পনা করেন।

২. কোম্পানির নাম, উদ্দেশ্য, মূলধনের পরিমাণ উল্লেখ করে একটি স্মারকলিপি (article of memorandum) তৈরি করে অনুমোদনের জন্য তা যৌথ মূলধনী কারবারের রেজিস্টারের নিকট দাখিল করা হয়।

৩. সরকারের অনুমোদনের পরে কোম্পানি আইনগতভাবে একটি পৃথক প্রতিষ্ঠানের রূপ লাভ করে থাকে।

৪. তারপর শেয়ার বিক্রি করে কারবারের মূলধন সংগ্রহ করে। যারা কারবারের অংশ (share) ক্রয় করে তাদেরকে অংশীদার (share holder) বলে।

 

যৌথ মূলধনী কারবার এ মূলধন সংগ্রহ (Capital Collection of Joint Stock Company)

১. অনুমোদিত মূলধনের সবটুকু শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে সংগ্রহ করে না।

২. যে পরিমাণ শেয়ার বাজারে বিক্রির জন্য প্রচার করা হয় তাকে তার ইস্যুকৃত মূলধন বলে।

৩. বিক্রীত মূলধনের যে অংশ ক্রেতাদের থেকে নগদে আদায় করা হয় তাকে paid up capital বলা হয়।

যৌথ মূলধনী কারবার যথাক্রমে (ক) শেয়ার বিক্রি করে (খ) ঋণপত্র বিক্রি করে (গ) ঋণ গ্রহণ করে (ঘ) সংরক্ষিত তহবিল সৃষ্টি করে । (ঙ) জনগণের অর্থ গচ্ছিত রেখে মূলধন সংগ্রহ করে।

যৌথ মূলধনী কারবার দুই প্রকার। যথা:

১. প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি ও

২. পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি। প্রাইভেট লিমেটেড কোম্পানি গঠন করা হয় সর্বনিম্ন দুই জন থেকে সর্বোচ্চ পঞ্চাশ জন সদস্য নিয়ে। তাই তাদের শেয়ারের মালিকানা হস্তান্তর করতে পারে না। আবার সর্বনিম্ন সাতজন থেকে অনির্দিষ্ট সংখ্যক লোক নিয়ে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি গঠিত হয় এবংতারা তাদের শেয়ার হস্তান্তর করতে পারে।

যৌথ মূলধনী কারবার এর বৈশিষ্ট্যসমূহ (Characteristics of Joint Stock Company)

১.আইনে বর্ণিত নিয়ম অনুযায়ী যৌথ মূলধনী কারবার গঠিত হয়। কতিপয় লোক স্বেচ্ছায় আইন মেনে কোম্পানি গঠন করে। আবার কেউ শেয়ার কিনে এর সদস্য হতে পারে। আবার তা বিক্রি করে বিদায়ও নিতে পারে।

২. কোম্পানির সদস্য সংখ্যা আইন দ্বারা নির্দিষ্ট করা হয়েছে। প্রাইভেট কোম্পানির ক্ষেত্রে এ সংখ্যা সর্বনিম্ন ২ ও সর্বোচ্চ ৫০ এবং পাবলিক কোম্পানির ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ৭ ও সর্বোচ্চ শেয়ার সংখ্যা দ্বারা সীমাবদ্ধ।

৩. এ ধরনের ব্যবসায় অনেক শেয়ার থাকে, সেগুলো বিক্রি করে অনেক পরিমাণ মূলধন সংগ্রহ করা যায়।

৪.পরিচালক পর্ষদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রদত্ত শেয়ার বা পরিশোধিত মূলধন অনুপাতে শেয়ার হোল্ডারদের মধ্যে মুনাফা বণ্টন করা হয়। কোনো শেয়ার হোল্ডার ইচ্ছে করলেই নিজের নামের শেয়ারগুলো অন্যকে হস্তান্তর করে দিতে পারেন।

৫.পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিকে বাধ্যতামূলকভাবে জনসাধারণের প্রতি শেয়ার ক্রয়ের আহ্বান জানাতে হয়।

৬. শেয়ার হোল্ডারগণ প্রত্যক্ষভাবে ভোট দিয়ে পরিচালক পর্ষদ নিয়োগ করে এবং পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোম্পানি পরিচালিত হয়।

৭.শেয়ার হোল্ডারদের লভ্যাংশের ওপরও কোম্পানির অর্জিত মুনাফার কর ধার্য করা হয়।

৮. আইনের মাধ্যমে গঠিত কোম্পানি আইনের মাধ্যমেই বিলোপ সাধন ঘটাতে পারে।

 

যৌথ মূলধনী কারবার এর সুবিধা (Advantages of Joint Stock Company)

যৌথ মূলধনী কারবারের সুবিধাসমূহ নিম্নরূপ:

১.উৎপাদন সুবিধা: অধিক উৎপাদন করলে উৎপাদন খরচ কম হয়। তাছাড়া বৃহদায়তন উৎপাদন প্রতিষ্ঠানে দক্ষ শ্রমিকের সমাবেশ ঘটে। যৌথ মূলধনী কারবারে এই সুবিধা পাওয়া যায়।

২. মূলধন সংগ্রহ: যৌথ মূলধনী কারবারে পর্যাপ্ত মূলধন সংগ্রহ করা যায়। এসব প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনে শেয়ার হস্তান্তর, বিক্রি করে মূলধনের পরিমাণ বাড়াতে পারে। ফলে উৎপাদন কাজ পরিচালনায় অসুবিধা হয় না।
৩.স্থায়িত্ব: এসব ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের স্থায়িত্ব বেশি হয়। এখানে কোনো সদস্য মারা গেলে বা দেউলিয়া হলে যৌথ মূলধনী কারবারের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয় না। ফলে এ কারবার একটি স্থায়ী প্রতিষ্ঠানে রূপ নেয়।

৪. সীমাবদ্ধ ব্যয় ও শেয়ার হস্তান্তর; প্রত্যেক শেয়ার হোল্ডার তার অংশীদারি অনুসারে কোম্পানির দায় বহন করেন। ফলে সীমাবদ্ধ খরচ হয়। যেকোনো বিনিয়োগকারী তার প্রয়োজনে শেয়ার বিক্রি করে নগদ টাকা সংগ্রহ করতে পারেন।

৫.অধিক ঝুঁকি বহন: অধিক ঝুঁকি নিয়ে যৌথ মূলধনী কারবার ব্যবসায় পরিচালনা করতে পারে। ফলস্বরূপ, নতুন নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্র খুঁজে পাওয়া যায়।

৬.দক্ষ পরিচালনা: যৌথ মূলধনী কারবারে দক্ষ পরিচালকের সাথে সাথে দক্ষ কর্মচারীদের সমাবেশ ঘটে। ফলে অধিকতর দক্ষতার ভিত্তিতে কারবার পরিচালিত হয়ে থাকে।

৭.জনগণের আস্থা : সরকারের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ও যৌথ মূলধনী কারবারের মৌলিক নীতিমালা দেশের আইন অনুযায়ী এ কারবার পরিচালিত হয় বলে জনগণের আস্থা অত্যাধিক থাকে।

৮.উন্নত কলাকৌশল প্রয়োগ: ভারি যন্ত্রপাতি ও অধিক উন্নতমানের কলাকৌশল এ শিল্প প্রতিষ্ঠানে ব্যবহার করা যায়। ফলে উন্নতমানের দ্রব্য ও সেবা উৎপাদিত হয়।
৯. বিস্তৃত ৰাজার; এ কারবারে বৃহদায়তনের উৎপাদন পরিচালিত হয়। ফলে উৎপাদন খরচ ও দ্রব্য সেবার মূল্য শুরু হয়। এর প্রেক্ষিতে বাজার বিস্তৃত হয়। একসঙ্গে প্রচুর পরিমাণে কাঁচামাল ক্রয় এবং বিপুল পরিমাণ উৎপাদিত তথ্য ও সেবা বিক্রি করা হয়। ফলে রুয়ের ক্ষেত্রে সুবিধা ও বিক্রয়ের ক্ষেত্রে কম খরচ পড়ে।

 

যৌথ মূলধনী কারবারের অসুবিধা (Disadvantages of Joint Stock Company)

যৌথ মূলধনী কারবারের অসুবিধাসমূহ নিম্নরূপ:

১.পরিচালক ও অংশীদারদের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি: অসংখ্য শেয়ার হোল্ডার বিরাজমান থাকায় পরিচালকদের সাথে শেয়ার হোল্ডারদের যোগাযোগ থাকে না। ফলে ব্যবসার উন্নতি ঘটে না।

২.অগণতান্ত্রিক চর্চা বৃদ্ধি: যারা পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকেন তারা প্রায়ই ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। ফলে সকলের জন্য মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়ে।

৩.শ্রমিক মালিক সম্পর্ক: শ্রমিকদের সাথে মালিকদের প্রায়ই ভুল বোঝাবুঝি হয়। এজন্য শ্রমিকরা প্রায়ই ধর্মঘট,হরতাল ও প্রতিষ্ঠান ধ্বংসযজ্ঞে লিপ্ত হয়।

৪.সাংগঠনিক জটিলতা: সরকারি নীতিমালা মেনে যৌথ মূলধনী কারবার পরিচালনা করতে হয়। তাছাড়া প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এ সাংগঠনিক জটিলতা লক্ষ করা যায়।।

৫.দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি: ব্যবসায় পরিচালনায় নিয়োজিত ব্যক্তিরা দুর্নীতির আশ্রয় গ্রহণ করে নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করে। অনেক সময় নিজের আত্মীয় স্বজন কর্মচারীদের অন্যায় সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে। ফলে এ ব্যবসায় মুনাফা হ্রাস পেয়ে ব্যবসা ধ্বংস হয়। পরিচালকগণ একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য বিভিন্ন মত পোষণ করে থাকেন। ফলে প্রায়ই তাদের মধ্যে মতানৈক্যের সৃষ্টি হয়। ফলে এ কারবারে ক্ষতি হয়

৬.সম্পদ কেন্দ্রীভূতকরণ: যৌথ মূলধনী কারবারের মাধ্যমে কতিপয় ব্যক্তি অনেক টাকার মালিক হয়। যা সমাজে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য সৃষ্টি করে। ফলে এ কারবারের মাধ্যমে সামাজিক ভারসাম্য বিনষ্ট হয়।

৭.অপচয় বৃদ্ধি পায়: দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিদের অবহেলার কারণে ও কর্মচারীদের আন্তরিকতার অভাবে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের অপচয় বৃদ্ধি পায়। ফলে কারবারে ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দেয়।

৮.ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ: কতিপয় শেয়ার ক্রেতা বিভিন্নভাবে ও ভিন্ন নামে অধিকাংশ শেয়ার ক্রয় করে প্রতিষ্ঠানের আসল নিয়ামক হয়ে ওঠেন। তারা নিজেদের স্বার্থে প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করেন। ফলে সাধারণ অংশীদারদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয়।

 

Recent Posts

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *