?> শ্রম: শ্রমের ধারণা (Concept of Labour ), প্রকারভেদ ও শ্রমের বৈশিষ্ট্য
শ্রম এর ধারণা (Concept of Labour ), প্রকারভেদ ও শ্রমের বৈশিষ্ট্য

শ্রম: শ্রমের ধারণা (Concept of Labour ), প্রকারভেদ ও শ্রমের বৈশিষ্ট্য

শ্রম: শ্রমের ধারণা (Concept of Labour ), প্রকারভেদ ও শ্রমের বৈশিষ্ট্য

শ্রম বলতে সাধারণত শারীরিক পরিশ্রমকেই বোঝায়। তবে অর্থনীতিতে শ্রম শব্দটি ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয় (উৎপাদনে মানুষের শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রম, যার বিনিময়ে অর্থ উপার্জন হয় তাকেই অর্থনীতিতে শ্রম বলে। অধ্যাপক এ. মার্শাল বলেন, “মানসিক বা শারীরিক যেকোনো প্রকারের পরিশ্রম যা আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে আনন্দ ছাড়া,অন্য কোনো উপকারের জন্য করা হয় তাই শ্রম। “

অধ্যাপক নিকোলসনের মতে, “শ্রম হলো সকল ধরনের সর্বোন্নত পেশাগত দক্ষতা ।

 

শ্রম কে দুইভাবে চিন্তা করা হয়। উৎপাদনশীল এবং অনুৎপাদনশীল শ্রম।

১. ভূমিবাদীদের (ফিজিওক্রাট) মতে, (যে শ্রম অতিরিক্ত কিছু দ্রব্য উৎপাদন করে তাকে উৎপাদনশীল শ্রম বলে ) যেমন কৃষি ও শিল্প ক্ষেত্রের শ্রম । আবার যে শ্রম অতিরিক্ত কোন দ্রব্য উৎপাদন করে না তাকে অনুৎপাদনশীল শ্রম বলে। যেমন ব্যবসায় নিয়োজিত শ্র*ম ।

২. ক্লাসিক্যাল অর্থনীতিবিদদের মতে (‘যে শ্র*ম দৃশ্যমান বা বস্তুজাত দ্রব্য উৎপাদন করে তাকে উৎপাদনশীল শ্র*ম বলে। যেমন- কৃষক, শিল্প শ্রমিক। যে শ্রম দৃশ্যমান বা বস্তুজাত দ্রব্য করে না, তাকে অনুৎপাদনশীল শ্র*ম বলে। যেমন- শিক্ষক, ডাক্তারের শ্রম।

৩. আধুনিক অর্থনীতিবিদগণের মতে, যে শ্র*ম বস্তুগত ও অবস্তুগত দ্রব্য সেবার মাধ্যমে উপযোগ সৃষ্টি করে তাকে উৎপাদনশীল শ্র*ম বলে। যেমন- কৃষক, শিক্ষক, ডাক্তার, উকিল।
আবার যে শ্র*ম কোনো উপযোগ সৃষ্টি করে না এবং কোনো বিনিময় মূল্য নেই, তাকে অনুৎপাদনশীল শ্রম বলে। সুতরাং সকল ধরনের পরিশ্রম যা অর্থের বিনিময়ে প্রদান করা হয় তাকে অর্থনীতিতে শ্র*ম বলে

 

শ্রম এর বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Labour )

উৎপাদনের মৌলিক উপাদান হিসাবে শ্রমের কতগুলো বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যা নিম্নরূপ :
১. শ্রম একটি জীবন্ত উপকরণ: শ্রমিকের জীবন আছে তাই শ্র*ম একটি জীবন্ত উপকরণ বা উপাদান। শ্রমিক যতদিন জীবিত থাকে ততদিন শ্রমের অস্তিত্ব থাকে। কারণ শ্র*ম ও শ্রমিক একই সূত্রে গাঁথা।

২. শ্রমিক ও শ্রম অবিচ্ছিন্ন: শ্রমিকের মধ্যেই শ্র*ম দানের ক্ষমতা নিহিত থাকে। শ্রমিক থেকে শ্রমকে বিচ্ছিন্ন করার উপায় নেই। কিন্তু জমির বেলায় জমির মালিক ও জমি ভিন্ন হতে পারে। একইভাবে মূলধনের মালিক ও মূলধন একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন। তাদের পৃথক অস্তিত্ব আছে।

৩. শ্রমিক শ্রম বিক্রয় করে, নিজেকে নয়: একজন শ্রমিক মজুরির বিনিময়ে তার শ্র*ম বিক্রি করে, নিজেকে নয়। একটি পশু ক্রয় করলে তার দেহ ও সেবার মালিক হওয়া যায়। মজুরির বদলে একজন শ্রমিকের কেবল সেবাই নেওয়া যায়, কিন্তু তার দেহ ও মনের ওপর অধিকার জন্মায় না। কারণ প্রয়োজনে শ্র*ম থেকে দেহ-মন পৃথক করা যায় না।

৪. শ্রমের সচলতা: শ্রম একটি গতিশীল উপাদান। একস্থান থেকে অন্যস্থানে শ্রমিক সহজেই চলাচল করতে পারে। তবে ভৌগোলিক বাধা, ভাষা ও সংস্কৃতির পার্থক্য, পরিবহন ব্যয় এসব শ্রমিক চলাচলের ক্ষেত্রে বিঘ্ন সৃষ্টি করে।

৫. শ্রমের যোগান পরিবর্তন সময়সাপেক্ষ: জনসংখ্যার আয়তন, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার, শিক্ষা শ্রমের দক্ষতা ইত্যাদি বিষয়ের ওপর শ্রমের যোগান নির্ভর করে। এ বিষয়গুলো ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়। তাই মজুরি বাড়ানোর সাথে সাথে শ্রমের যোগান বাড়ানো যেমন সম্ভব হয় না, তেমনি মজুরি কমলে তার যোগানও কমানো যায় না। ফলে সময় সাপেক্ষে শ্রমের যোগানের পরিবর্তন হয়।

৬. শ্রমিকের সামাজিক ও মানবিক মূল্যবোধ কার্যকর: শ্রমিক মানুষ বলে তার মধ্যে মানবিকতা ও সামাজিকতা উভয়ই বিদ্যমান। শ্রমিকের কাজের সময় ও কাজের প্রকৃতিতে মানবিক দিক বিবেচনা করা হয়। যেমন- শিশুশ্রম মানবিকভাবে কাম্য নয়। শ্রমিকের বয়স ও কাজের সময়সীমা নির্ধারণ সমাজ কাঠামোর প্রেক্ষিতে বিবেচিত হয়।

৭. শ্রমিকের দরকষাকষির দক্ষতা: শ্রম ক্ষণস্থায়ী এবং সংরক্ষণের অযোগ্য। ফলে অব্যবহৃত শ্র*ম চিরতরে নষ্ট হয়ে যায়। শ্রমের এ ক্ষণস্থায়ী বৈশিষ্ট্যের জন্যই শ্রমিক নিয়োগকর্তার সাথে মজুরির হার নিয়ে বেশি দরকষাকষি করতে পারে না। তাই শ্রমিক খুব কম মজুরিতেও কাজ করতে বাধ্য হয়।

৮. শ্রমের যোগান তুলনামূলকভাবে অস্থিতিস্থাপক: মজুরি বাড়লেও শ্রমের যোগান বাড়তে সময় লাগতে পারে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে শ্রমিক সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। দক্ষ শ্রমিকের যোগান সময়সাপেক্ষ, কারণ দক্ষতা অর্জনে সময় লাগে। কাজেই শ্রমের দাম বাড়ানো হলেও শ্রমিকের যোগান বাড়বে এমনটি সব সময় নাও হতে পারে। আর বাড়লেও মাত্রাগত দিক থেকে তা কম হবে।

৯. মজুরি হারের সাথে শ্রমের যোগানের সম্পর্ক বিপরীত: শ্রমের বেলায়, মজুরি বাড়লে শ্রমিক বিশ্রাম বা অবসর বেশি নেয়। আবার মজুরি কমলে আয় বাড়ানোর জন্য বেশি শ্র*ম প্রদান করে। ফলে মজুরি হারের সাথে শ্রমের যোগানের সম্পর্ক বিপরীতমুখী।

১০. শ্রম সক্রিয় উপকরণ: ভূমি ও মূলধন নিজে নিজে কোনকিছু উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে না, কারণ এরা নিষ্ক্রিয় . উপকরণ হিসাবে গণ্য হয়। মানুষ কর্মপ্রচেষ্টা গ্রহণ করলেই কেবল তারা উৎপাদন করতে পারে। তাই শ্র*ম একটি সক্রিয় উপকরণ হিসাবে গণ্য হয়।

১১. শ্ৰম ক্ষণস্থায়ী: জমি ফেলে রাখলে বা খনিজ সম্পদ অব্যবহৃত অবস্থায় রাখলে তা নষ্ট হয় না। কিন্তু শ্রমিক শ্র*ম প্রদান না করলে শ্রমিকের বয়সক্রমে শ্র*ম ক্ষমতা কমে আসবে। যে সময়ের জন্য শ্রমিক কর্মহীন থাকল, সেই সময় আর ফিরে আসবে না। কাজেই শ্র*ম প্রদানের বিষয়টি সময়ের প্রেক্ষিতে ক্ষণস্থায়ী। শ্র*ম প্রদান না করলে তা মূল্যহীন। কিন্তু জমি ফেলে রাখলেও তা মূল্যবান থাকে।

 

Recent Posts

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *