সংগঠক, সংগঠন বা উদ্যোক্তার কার্যাবলি (Functions of an Organiser or an Organisation or Entrepreneur)
সংগঠক উৎপাদন প্রতিষ্ঠান দক্ষভাবে পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। নিচে তা আলোচনা করা হলো:
১. পরিকল্পনা প্রণয়ন: কীভাবে উৎপাদন করা হবে, ভূমি, শ্রম ও মূলধনের মিশ্রণ কীরূপ হবে, উৎপাদিত দ্রব্যটি কী হবে, কী ধরনের শ্রমিক নির্ধারণ করা হবে ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে উদ্যোক্তাকে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়।
২. লক্ষ্য নির্ধারণ: উৎপাদিত দ্রব্যের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ, সর্বোচ্চ মুনাফার জন্য কতটুকু দ্রব্য উৎপাদন করা উচিত, উপযুক্ত শ্রমিক নিয়োগ করে কীভাবে উৎপাদন খরচ নিম্ন পর্যায়ে রাখা যায়। এরূপ সিদ্ধান্ত উদ্যোক্তাকে নিতে হয়।
৩. উপকরণের সমন্বয়সাধন: উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় ভূমি, শ্রম ও মূলধন এ তিনটি উপকরণের সমন্বয়সাধন করেন সংগঠক। উদ্যোক্তা প্রয়োজনীয় মূলধন ও দক্ষ শ্রমিক নির্ধারণ করে এবং উপযুক্ত জায়গা নির্বাচন করে উৎপাদন কাজ পরিচালনা করেন। তাই অর্থনীতিবিদ সুমপিটার উদ্যোক্তাকে engine of economic development’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
৪. মূলধন সংগ্রহ: ব্যাংকের সুদের হার এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সুদের হারের সাথে নিজের মূলধনের সমন্বয় সাধনের কাজ উদ্যোক্তাকে করতে হয়।
৫. শ্রম বিভাজন: শ্রমবিভাগ বা শ্রম বিভাজনের মাধ্যমে শ্রমিকদের উচ্চ থেকে নিম্ন পর্যায় পর্যন্ত কাজের জবাবদিহিতা সৃষ্টি করতে পারলে সময়ের অপচয় রোধ হয়। উৎপাদিত দ্রব্যের মান এবং পরিমাণ শ্রম বিভাজনের ওপর নির্ভরশীল।
৬. ঝুঁকি গ্রহণ: উদ্যোক্তাকে ঝুঁকি নিতে হয়। ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে লোকসান হতে পারে। এই সম্ভাবনা ধরে নিয়েই উদ্যোক্তা অগ্রসর হন, যেখানে উৎপাদনের অন্যান্য উপকরণের কোনো ঝুঁকি নেই
৭. তত্ত্বাবধান: সংগঠকের দক্ষতার ওপর নির্ভর করে শ্রমিক ও কর্মচারীদের উৎপাদনের পরিমাণ বা কাজের পরিমাণ। তাই সংগঠককে দক্ষতার সাথে তত্ত্বাবধান করতে হয়।
৮. পণ্য বাজারজাতকরণ; উৎপাদিত দ্রব্য বাজারজাতকরণের কৌশল অবলম্বন করতে হয় উদ্যোক্তাকে। এজন্য উদ্যোক্তাকে ভোক্তার রুচি ও পছন্দের ওপর দৃষ্টি রেখে পণ্য বাজারজাতকরণ করতে হয়।
৯. আয় বণ্টন: উৎপাদিত দ্রব্য বিক্রি করে উদ্যোক্তা আয় করে থাকেন। উপার্জিত আয় উৎপাদনের উপকরণগুলোর মধ্যে কীভাবে বণ্টিত হবে বা কোন অনুপাতে তাদের মধ্যে বিতরণ করা হবে তা উদ্যোক্তা নির্ধারণ করে থাকেন।
১০. সর্বনিম্ন খরচ: কম খরচে কীভাবে বেশি দ্রব্য উৎপাদন করা সম্ভব, সেজন্য প্রতিষ্ঠানে কী ধরনের পরিবর্তন আনা উচিত তা উদ্যোক্তাকেই নির্ধারণ করতে হয়।
১১. নতুনত্ব: উৎপাদিত দ্রব্যের গুণগত পরিবর্তনের ওপর উদ্যোক্তাকে নজর রাখতে হয়। সময়ের চাহিদা অনুযায়ী উদ্যোক্তাকে উৎপাদিত দ্রব্যের মধ্যে নতুনত্ব আনতে হয়। অর্থনীতিবিদ জে. বি. ক্লার্কের মতে, “উদ্যোক্তার প্রধান কাজ হলো উৎপাদনের নতুন নতুন উপায় উদ্ভাবন করে তা প্রবর্তন করা।”
১২. বিজ্ঞাপন ও প্রচার: উৎপাদিত দ্রব্যের গুণাগুণ, উপকারিতা সম্পর্কে ভোক্তা অবহিত না হলে দ্রব্য ক্রয়ে ভোক্টারা অনিচ্ছুক থাকবে। সেজন্য উদ্যোক্তাকে বিজ্ঞাপন প্রচার করে তার উৎপাদিত পণ্য সম্পর্কে ভোক্তাদের অবহিত করতে হয়।
১৩. মুনাফা অর্জন: উদ্যোক্তার মূল উদ্দেশ্য হলো সর্বাধিক মুনাফা অর্জন। তিনি উদ্যোগ গ্রহণ, উৎপাদন কার্য পরিচালনা করতে হয়।এবং ঝুঁকি বহনের পারিতোষিক হিসাবে মুনাফা অর্জন করেন।
১৪. বাজার সৃষ্টি: বিশ্ববাজার ধারণা প্রবর্তিত হওয়ার পর থেকে উদ্যোক্তার পণ্য বিপণন নিজ অঞ্চলে বিস্তারের পরিবর্তে সমগ্র বিশ্বের বাজারে উন্মুক্ত। ফলে সহজেই উদ্যোক্তা তার প্রয়োজনমতো বাজার সৃষ্টি করতে পারেন।
১৫. ভোক্তাদের আস্থা বৃদ্ধি: উৎপাদিত দ্রব্যের গুণগত মান নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে ভোক্তাদের আস্থা বৃদ্ধি পায়। দ্রব্যের প্রতি ভোক্তাদের আস্থা বৃদ্ধির কাজটি উদ্যোক্তাই করে থাকেন।
সুতরাং, বর্তমান উৎপাদন ব্যবস্থায় সংগঠক বা উদ্যোক্তার ভূমিকা অনস্বীকার্য ।
Recent Posts