হজরত মুহাম্মদ (স) জীবনী
যুগে যুগে পথহারা মানবজাতিকে সঠিক পথের সন্ধান দেওয়ার জন্য মহান আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীতে নবি রাসুল প্রেরণ করেছেন। এই ধারাবাহিকতায় আরবসহ সমগ্র বিশ্বে যখন পৌত্তলিকতা, ইহুদি ও খ্রিষ্টান ধর্মের মধ্যে বিভ্রান্তি চরমে উঠেছিল, তখনই আরব ভূখণ্ডে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হজরত মুহাম্মদ (স)-কে ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দে বিশ্বের রহমতস্বরূপ প্রেরণ করা হয়। মহানবি (স) ৬১০ খ্রিষ্টাব্দে নবুয়তপ্রাপ্ত হয়ে দীর্ঘ ২৩ বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন। এ অধ্যায়ে হজরত মুহাম্মদ (স)-এর বাল্যজীবন, মক্কাজীবন, নবুয়তপ্রাপ্তি, হিজরত, মদিনা সনদ, বদর, ওহুদ ও খন্দকযুদ্ধ, হুদায়বিয়ার সন্ধি, মক্কা বিজয়, বিদায় হজ, সংস্কার, চারিত্রিক গুণাবলি ও কৃতিত্ব সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
মহান নবী হজরত মুহাম্মাদ (সাঃ): শৈশব জীবন, মক্কায় জীবন এবং নবুওয়া অর্জন
বংশপরিচয় : হজরত ইব্রাহিম (আ)-এর পুত্র ইসমাইল (আ)-এর বংশধর থেকে কুরাইশ বংশের উৎপত্তি। হজরত ইসমাইল (আ)-এর বংশীয় আদনান মক্কা নগরীতে বসতি স্থাপন করেন। তাঁর পুত্র মা’আদ এবং মা’আদ পুত্র ছিলেন ফিহর। ফিহর ব্যবসায়-বাণিজ্যে প্রসার লাভ ও খ্যাতি অর্জন করেন বলে আরবগণ তাঁকে কুরাইশ (সওদাগর বা বণিক) নামে অভিহিত করে। কুরাইশের (ফিহর) বংশধর কুশাই খ্রিষ্টীয় পঞ্চম শতাব্দীতে মক্কা ও সমগ্র হেজাজে কর্তৃত্ব স্থাপন করে কাবাগৃহকে তীর্থভূমিতে পরিণত করেন।
৪৮০ খ্রিষ্টাব্দে কুশাইয়ের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র আবদুদ্দার তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন। আবদুদ্দারের মৃত্যুর পর তাঁর পৌত্র ও ভ্রাতা আব্দুল মান্নাফের পুত্রদের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি হয়। মান্নাফের পুত্র আব্দুস শামসকে মক্কার পানি সরবরাহ ও কর আদায়ের দায়িত্ব প্রদান এবং আবদুদ্দারের পৌত্রের উপর কাবাগৃহ, মন্ত্রণাগৃহ ও সামরিক বিভাগের দায়িত্ব দিয়ে এ বিবাদ মীমাংসা করা হয়। আব্দুস শামস তাঁর ভাই হাশিমকে ক্ষমতা অর্পণ করেন।
হাশিম শায়বা নামে এক পুত্রসন্তান রেখে মারা যান এবং তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর ভ্রাতা মুত্তালিব তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন। ৫২০ খ্রিষ্টাব্দে মুত্তালিবের মৃত্যুর পর হাশিম পুত্র শায়বা তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন। শায়বাকে মক্কাবাসী ভুলবশত মুত্তালিবের ভৃত্য মনে করে নাম দেন আব্দুল মুত্তালিব। তাঁর অনন্য যোগ্যতার কারণে কুরাইশগণ তাকে নেতা হিসেবে স্বীকার করে নেয়।
আব্দুল মুত্তালিব হিজাজের নেতৃত্বে থাকাকালীন দক্ষিণ আরবের ইয়ামেনের খ্রিষ্টান রাজা আবরাহা রাজধানী সানাতে বিরাট গির্জা নির্মাণ করে একে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ উপাসনালয় ও তীর্থস্থানে পরিণত করার উদ্যোগ নেন। কিন্তু মানুষ কাবামুখী হলে আবরাহা কাবাঘর ধ্বংস করার জন্য (৫৭০-৫৭১) খ্রিষ্টাব্দে ৬০ হাজার সৈন্য ও ১২টি হাতি নিয়ে কাবা আক্রমণ করেন। আবরাহা হাতির পিঠে চড়ে এ যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। মক্কাবাসী ইতোপূর্বে হাতি দেখেনি বলে তারা উক্ত বছরকে ‘আমুল ফিল’ বা হস্তীর বছর নামে অভিহিত করে। এ যুদ্ধে আবাবিল পাখির পাথরের আঘাতে আবরাহা বাহিনী চরমভাবে পরাজিত হয়। যা পবিত্র কুরআনের সূরা ফিলে উল্লেখ আছে।
আব্দুল মুত্তালিবের ১২ জন পুত্র ও ৬ জন কন্যা ছিল। এদের মধ্যে ১০ জন পুত্রের নাম ইতিহাসে উল্লেখ আছে। তাঁরা হলেন- হারিস, আবু লাহাব, আবু তালিব, আব্বাস, হামজা, যুবায়ের, আবুল উৎবা, জাফর ও আব্দুল্লাহ। হস্তীর বছরের কিছুকাল পূর্বে আব্দুল মুত্তালিব তাঁর সর্বকনিষ্ঠ পুত্র আব্দুল্লাহর সঙ্গে মদিনার বনি জোহরা গোত্রের প্রধান আবদুল ওহাবের কন্যা আমিনার বিবাহ দেন। কিছুদিন পর আব্দুল্লাহ সিরিয়ায় বাণিজ্য থেকে ফেরার পথে মদিনায় অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং মাত্র ২৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। এ সময় বিবি আমিনা সন্তানসম্ভবা ছিলেন। হজরত মুহাম্মদ (স)ই ছিলেন আব্দুল্লাহ ও বিবি আমিনার সন্তান।
জন্ম ও বাল্যজীবন : হজরত মুহাম্মদ (স) ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের ২৯শে আগস্ট (১২ রবিউল আউয়াল) সোমবার প্রত্যুষে (মতান্তরে ৫৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২০শে এপ্রিল) মা আমিনার গর্ভ হতে ভূমিষ্ঠ হন। দাদা আব্দুল মুত্তালিব পিতৃহীন এ নবজাতকের নাম রাখেন ‘মুহাম্মদ’ বা প্রশংসিত এবং মাতা আমিনা নাম রাখেন ‘আহমদ’ বা চরম প্রশংসাকারী । প্রাচীন আরব আভিজাত্য অনুযায়ী জন্মের দু’সপ্তাহ পর মুহাম্মদ (স)-কে লালনপালনের
জন্য তায়েফের বানু সাদ গোত্রের আবু খাবসার পত্নী বিবি হালিমার নিকট প্রেরণ করা হয়। বিবি হালিমার গৃহে অবস্থানকালে পাঁচ বছর বয়সে শিশু মুহাম্মদ (স)-এর জীবনে এক অলৌকিক ঘটনা ঘটে। একদিন তিনি তাঁর দুধভাই ও অন্য বালকদের সাথে মাঠে মেষ চরানোর সময় দুজন ফেরেশতা এসে তাঁকে নির্জনে নিয়ে তাঁর বক্ষ বিদীর্ণ করে অন্তরাত্মাকে পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করে দেন। সেখানে তিনি ছয় বছর পর্যন্ত ধাত্রীমাতার এক ছেলে ও তিন মেয়ের সাথে বেড়ে ওঠেন এবং বিশুদ্ধ আরবি ভাষা আয়ত্ত করেন।
মাতা ও পিতামহের মৃত্যু : ছয় বছর বয়সে হজরত মুহাম্মদ (স) নিজ গৃহে ফিরে আসেন। মাতা আমিনা তাঁকে ও দার্সী আয়মনকে নিয়ে স্বামীর কবর জিয়ারত ও পৈতৃক বাড়ি ভ্রমণের জন্য মদিনা গমন করেন। মদিনা হতে ফেরার পথে আবওয়া নামক স্থানে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ৫৭৬ খ্রিষ্টাব্দে বিবি আমিনা মারা যান। এরপর শিশুপুত্রের দেখাশোনার ভার দাদা আব্দুল মুত্তালিবের উপর অর্পিত হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্য, দাদা আব্দুল মুত্তালিবও ৫৭৯ খ্রিষ্টাব্দে ইন্তেকাল করেন। এভাবে মুহাম্মদ (স) অতি অল্প বয়সে পিতা-মাতা ও পিতামহের স্নেহবঞ্চিত হয়ে এতিম হিসেবে বেড়ে ওঠেন।
আবু তালিবের অভিভাবকত্ব : হজরত মুহাম্মদ (স) এর দাদার মৃত্যুর পর তাঁর লালনপালনের দায়িত্ব পড়ে চাচা আবু তালিবের উপর। তিনি মুহাম্মদ (স)কে নিজ সন্তানের ন্যায় লালনপালন করেন। আবু তালিব সামান্য আতর ও কাপড়ের ব্যবসায় দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করতেন। মুহাম্মদ (স)ও চাচাকে সহযোগিতার জন্য পার্শ্ববর্তী পর্বত ও উপত্যকায় মেষ ও উট চরাতেন। অবসরে কাবার তীর্থযাত্রীদের পানি সরবরাহ করতেন। দারিদ্র্য ও তৎকালীন আরবের অপ্রতুল শিক্ষাব্যবস্থার দরুন মুহাম্মদ (স) কোনো আনুষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাননি। কিন্তু মুক্ত প্রকৃতির নিকট তিনি জীবনের মূল্যবান শিক্ষাই গ্রহণ করেন।
সিরিয়া গমন : হজরত মুহাম্মদ (স) মাত্র ১২ বছর বয়সে ৫৮২ খ্রিষ্টাব্দে চাচা আবু তালিবের সাথে বাণিজ্য উপলক্ষে সিরিয়ায় গমন করেন। সেখানে নেস্টেরিয় খ্রিষ্টান পাদ্রী ‘বাহিরা’ মুহাম্মদ (স)-এর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য লক্ষ করে তাঁকে ইঞ্জিলে বর্ণিত নবি হিসেবে আখ্যায়িত করেন এবং তাঁকে রক্ষার জন্য আবু তালিবকে পরামর্শ দেন। এ বাণিজ্যে আবু তালিব প্রচুর মুনাফা করেন এবং মুহাম্মদ (স) নতুন অভিজ্ঞতা লাভ করেন।
‘আল-আমিন’ উপাধি লাভ বাল্যকাল থেকেই মুহাম্মদ (স) সত্যবাদী ও ন্যায়পরায়ণ ছিলেন। তাঁর বিনম্র স্বভাব, বিশুদ্ধ চরিত্র, অটল বিশ্বাস, সরলতা, গভীর কর্তব্যনিষ্ঠা ও বিশ্বস্ততার জন্য মক্কার জনগণ তাঁকে ‘আল-আমিন’ বা বিশ্বাসী নামে অভিহিত করে।
হারবুল ফুজ্জার : ৫৮৪ খ্রিষ্টাব্দে উকায় মেলার ঘোড়দৌড়, জুয়া খেলা ও কাব্য প্রতিযোগিতাকে কেন্দ্র করে পবিত্র জিলকদ মাসে কুরাইশ ও হাওয়াজিন গোত্রের মধ্যে এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের সূচনা হয়। পবিত্র জিলকদ মাসে এ যুদ্ধ হওয়ায় একে ‘হারবুল ফুজ্জার’ বা অন্যায়ের সমর বলা হয়। এ যুদ্ধ ৫ বছর স্থায়ী হয়েছিল। এ যুদ্ধে অনেক লোকের প্রাণহানি ঘটে। মুহাম্মদ (স) এ যুদ্ধে নিক্ষিপ্ত তাঁর সংগ্রহ করে চাচার হাতে তুলে দিতেন। কিন্তু তিনি এ যুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করেননি।
হিলফুল ফুজুল গঠন : হারবুল ফুজ্জারের যুদ্ধের বীভৎসতা ও সহিংসতা দেখে মুহাম্মদ (স) অত্যন্ত ব্যথিত হলেন। তিনি সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা স্থাপনের জন্য ৫৯৫ খ্রিষ্টাব্দে কতিপয় শান্তিপ্রিয় সমমনা যুবক ও পিতৃব্য যুবাইরকে নিয়ে পঠন করেন ‘হিলফুল ফুজুল’ বা শান্তি সংঘ। এ সমিতির ফজল, ফাজেল, ফাজায়েল ও মোফাজ্জেলের নামানুসারে এর নামকরণ হয় হিলফুল ফুজুল।
- এ সংঘের মূল উদ্দেশ্য ছিল দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা।
- বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে সদ্ভাব রক্ষা করা ও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করা।
- অত্যাচারিতকে অত্যাচারীর হাত থেকে রক্ষা করা
- দুর্বল, অসহায় ও এতিমদের সাহায্য করা।
- বিদেশি বণিকদের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়া।
- সব প্রকার অন্যায়-অবিচার অবসানের চেষ্টা করা।
এই শান্তি সংঘ প্রায় ৫০ বছর স্থায়ী ছিল। সৈয়দ আমীর আলী বলেন, “এই ‘ফুজুল সংঘ’ দুর্বল ও মজলুম মানুষের স্বার্থ সংরক্ষণে প্রভূত শক্তি সঞ্চার করেছিল এবং এ প্রতিষ্ঠানের প্রথম বর্ষেই এর হস্তক্ষেপে সব ভীতি প্রদর্শন, বলশালীর আইনশৃঙ্খলা লঙ্ঘন দমন এবং সহায়হীনদের প্রতি অন্যায়ের প্রতিকারবিধানে যথেষ্ট ছিল।” (Ref: The Spirit of Islam, P-77)
হজরত মুহাম্মদ (স) এর সাথে বিবি খাদিজার বিবাহ : হজরত মুহাম্মদ (স)-এর সরলতা, সততা, সত্যবাদিতা, বিশ্বস্ততা ও চারিত্রিক গুণাবলির কথা আরবে আলোচিত ও প্রশংসিত হতে লাগল। এ সময় মক্কায় হানিফ সম্প্রদায়ভুক্ত বিবি খাদিজা নামে একজন ধনাঢ্য বিধবা মহিলা বসবাস করতেন। নিষ্কলুষ চরিত্রের অধিকারী হিসেবে তিনি ‘খাদিজাতুত তাহিরা’ নামে পরিচিত ছিলেন। মুহাম্মদ (স)-এর কর্মদক্ষতা ও বিশ্বস্ততার কথা শুনে বিবি খাদিজা হজরতের উপর তাঁর ব্যবসায়ের ভার অর্পণ করেন। অল্পদিনেই ব্যবসায় ব্যাপক উন্নতি হয়। বিবি খাদিজা তাঁর চারিত্রিক মাধুর্যে আকৃষ্ট হয়ে বিবাহের প্রস্তাব দেন। মুহাম্মদ (স) চাচা আবু তালিবের সম্মতিক্রমে ৫৯৫ খ্রিষ্টাব্দে ২৫ বছর বয়সে ৪০ বছর বয়সী বিবি খাদিজাকে বিবাহ করেন। সৈয়দ আমীর আলী বলেন, “এ বিবাহ তাঁর জন্য বয়ে এনেছিল শান্তি ও প্রাত্যহিক পরিশ্রম থেকে মুক্তি, যা তাঁর মহান কাজে তাঁর মন প্রস্তুত করার জন্য অপরিহার্য ছিল।”
বিবি খাদিজার গর্ভে হজরতের তিন পুত্র কাশেম, আব্দুল্লাহ তৈয়ব ও তাহির এবং রুকাইয়া, জয়নাব, কুলসুম ও ফাতিমা নামে চার কন্যার জন্ম হয়। এ মহীয়সী নারীর সহযোগিতা ও সহানুভূতি হজরতের চিন্তাধারাকে বিকশিত করেছিল। সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণকারী এ রমণী সম্পর্কে মহানবি (স) বলেন, “যখন কেউই আমাকে বিশ্বাস করেনি। তখন তিনিই সর্বপ্রথম আমার উপর বিশ্বাস স্থাপন করেন।”
হাজরে আসওয়াদ স্থাপন : দীর্ঘদিন সংস্কার না করা ও ৫৯৩ খ্রিষ্টাব্দের বন্যায় কাবাগৃহের ক্ষতিসাধন হলে ৬০৫ খ্রিষ্টাব্দে এর সংস্কারকাজ শুরু হয়। কুরাইশদের চারটি গোত্র এর সংস্কারকাজ ভাগাভাগি করে সম্পন্ন করে। কিন্তু কাবাগৃহে হাজরে আসওয়াদ (কালোপাথর) স্থাপনকে কেন্দ্র করে গোত্রগুলোর মধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কা দেখা দেয়। কেননা প্রত্যেক গোত্রই পাথরটি কারাগৃহে স্থাপন করে পুণ্য অর্জন করতে চেয়েছিল। এমন পরিস্থিতিতে মুহাম্মদ (স) অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে নিজের গায়ের চাদর খুলে এর উপর পাথরটি রেখে চার গোত্রের চারজন অধিপতিকে দিয়ে পাথরটি স্থাপন করে ভয়াবহ রক্তপাত বন্ধ করতে সক্ষম হন।
নবুয়ত লাভ : বিবাহের পর আর্থিক সচ্ছলতা এলে হজরত মুহাম্মদ (স) পাপ-পঙ্কিল, কুসংস্কার ও পৌত্তলিকতাপূর্ণ আরবে শাস্তি প্রতিষ্ঠার চিন্তায় ব্যাকুল হয়ে পড়েন। ৩৫ বছর বয়স হতে হজরত মুহাম্মদ (স)-এর মধ্যে ভাবান্তর ও পরিবর্তন সূচিত হয়। এ জন্য তিনি কাবা থেকে তিন মাইল দূরে ‘জাবাল আল নূর’ বা নর পাহাড়ের হেরা নামক গুহায় প্রতিবছর এক মাস নির্জনে ধ্যানমগ্ন থাকতেন।
এ অবস্থায় ৪০ বছর বয়সে ৬১০ খ্রিষ্টাব্দে পবিত্র রমজান মাসের ২৭ তারিখ আল্লাহর নিকট হতে ফেরেশতা জিবরাঈল (আ)-এর মাধ্যমে ওহি লাভ করেন। ফেরেশতা জিবরাঈল (আ) হেরা গুহায় হজরতের সামনে আবির্ভূত হয়ে তাঁকে বলেন, ‘ইকরা’ অর্থাৎ ‘পড়ুন”। মুহাম্মদ (স) বললেন, “আমি তো পাঠকারী নই।” এরপর জিবরাঈল (আ) তাঁকে সজোরে বুকের সাথে চেপে ধরেন। এতে তিনি তীব্র বেদনা অনুভব করেন। এভাবে তিনবার চাপ দেওয়ায় তাঁর মানসিক দুর্বলতা দূর হয়ে যায়। তারপর তিনি জিবরাঈল (আ)-এর সাথে পড়তে থাকেন “ইকরা বিসমি রাব্বিকাল্লাজি খালাক্ব”। এভাবে তিনি নবুয়তপ্রাপ্ত হয়ে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবির মর্যাদা লাভ করেন। এরূপে দীর্ঘ ২৩ বছর বিভিন্ন ঘটনা ও বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন পদ্ধতিতে হজরতের নিকট ওহি নাজেল হয়।
ওহি লাভের পর তিনি ভীত, কম্পিত অবস্থায় ঘরে ফিরে এসে বিবি খাদিজাকে এ অলৌকিক ঘটনা বর্ণনা করেন। বিবি খাদিজা হজরত মুহাম্মদ (স)-কে তাঁর অন্ধ বৃদ্ধ চাচাতো ভাই হানিফ সম্প্রদায়ভুক্ত ওয়ারাকা বিন নওফেলের কাছে নিয়ে গিয়ে সমস্ত ঘটনার বর্ণনা দেন। সব শুনে তিনি মন্তব্য করলেন যে, অনুরূপ ঐশী রাণী মুসা (আ) ও ঈসা (আ)-এর কাছেও এসেছিল। সুতরাং মুহাম্মদ (স) অচিরেই নবি হবেন। তিনি তাঁকে ৎিসাহ প্রদান করেন।
গোপনে ইসলাম প্রচার : নবুয়ত লাভের পর মহানবি (স) গোপনে নিকটাত্মীয়দের মধ্যে তাওহিদের বাণী প্রচার করতে লাগলেন। তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে স্ত্রী বিবি খাদিজা (রা) সর্বপ্রথম ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলেন। পুরুষদের মধ্যে হজরত আলী (রা) ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নেন। এরপর যায়েদ, আবু বকর, ওসমান, তালহা, যুবাইর, বেলাল, সা’দ বিন আবিওয়াক্কাস, আব্দুর রহমান বিন আউফ, আবু ওবায়দাসহ মক্কার বেশকিছু ধনী ব্যক্তি ও যোদ্ধা ইসলামে দীক্ষিত হন। এভাবে প্রথম তিন বছর গোপনে ইসলাম প্রচারের সময় প্রায় ত্রিশজন লোক ইসলামের ছায়াতলে সমবেত হন।
প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচার প্রকাশ্যে
৬১৩ খ্রিষ্টাব্দে মহানবি (স) ওহি লাভ করে প্রকাশ্যে ধর্ম প্রচারের জন্য নির্দেশ পেয়ে সাফা পর্বতের পাদদেশে একটি সম্মেলন আহ্বান করেন। মহানবি (স) ঘোষণা করেন, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”— ‘অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া উপাস্য নেই।’ তিনি পৌত্তলিকতা পরিহার করে এক আল্লাহর আরাধনার জন্য সাহাবিদের ইসলাম গ্রহণের আহ্বান জানান।
মহানবি (স) ও মুসলমানদের উপর অত্যাচার
মহানবি (স)-এর আহ্বানে কুরাইশগণ সাড়া না দিয়ে উপরন্তু তাঁর উপর অত্যাচার শুরু করল। সৈয়দ আমীর আলীর মতে, মক্কার কুরাইশদের ইসলাম গ্রহণ না করার ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় কাজ করেছিল—
১। পৌত্তলিকতা তাদের মধ্যে গভীরভাবে শিকড় গেড়ে বসেছিল।
২। প্রাচীন ধর্মমতে নানা স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রলোভন বিস্তার করেছিল। কিন্তু নতুন ধর্মমতে সে ধরনের কোনো প্রলোভন ছিল না। ৩। প্রাচীন ধর্ম উপাসনায় কুরাইশদের কায়েমি স্বার্থ ছিল এবং রক্ষণাবেক্ষণের সাথে তাঁদের মানসম্মান জড়িত ছিল।
এসব কারণে কুরাইশগণ ইসলামের অনুসারী না হয়ে ইসলামের বিরোধিতায় উঠেপড়ে লাগল। কুরাইশ নেতা আবু জেহেল, আবু লাহাব, আবু সুফিয়ান প্রমুখ মহানবি (স)-কে ধর্মদ্রোহী ও পাগল বলে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করতে লাগল। কিন্তু তাঁদের উপহাসে মহানবি (স) তাঁর দায়িত্ব থেকে বিন্দুমাত্র পিছপা হলেন না। এ পর্যায়ে কুরাইশরা মুহাম্মদ (স)-কে সুন্দরী নারী, অঢেল সম্পদ ও নেতৃত্ব প্রদানের প্রলোভন দেখিয়ে ইসলাম প্রচার থেকে বিরত রাখতে চেষ্টা করে।
এতেও সফল না হয়ে তাঁরা মহানবি (স) ও তাঁর অনুসারীদের উপর অমানুষিক নির্যাতন শুরু করে। আবু লাহাবের স্ত্রী উম্মে জামিলা মহানবি (স)-এর মাথায় ময়লা-আবর্জনা নিক্ষেপ এবং চলার পথে কাঁটা বিছিয়ে রাখত। হারেজ বিন আবিহালা, ইয়াসার ও তাঁর স্ত্রী সামিয়া এবং বেলালসহ বহু নবদীক্ষিত মুসলমানকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে এবং অনেককে অন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এমনকি পুড়িয়েও মারা হয়েছিল।
হজরত মুহাম্মদ (স) আবিসিনিয়ায় হিজরত
প্রথম পর্যায় : মুসলমানদের উপর কুরাইশদের অত্যাচারের মাত্রা চরম আকার ধারণ করলে হজরত (স) আল্লাহর নির্দেশে হজরত ওসমান (রাঃ) এবং তাঁর স্ত্রী রোকাইয়াসহ ১৪ জন নবদীক্ষিত ৬১৫ খ্রিষ্টাব্দে আবিসিনিয়ায় (ইথিওপিয়া) হিজরতের পরামর্শ দিলে তাঁরা আবিসিনিয়ায় হিজরত করেন।
পরে আরও ত্রিশটি পরিবার আবিসিনিয়ায় হিজরত করে। এটা মুসলমানদের প্রথম হিজরত। তখন আবিসিনিয়ায় খ্রিষ্টান বাদশাহ নাজ্জাসী (প্রকৃত নাম আসহেমা) তাঁদের আশ্রয় দেন। আবিসিনিয়া হতে মুসলমানদের তাড়িয়ে দেওয়ার জন্য কুরাইশগণ আব্দুল্লাহ বিন রাবিয়াহ ও আমর বিন আল আসের নেতৃত্বে এক প্রতিনিধিদল আবিসিনিয়ার রাজদরবারে প্রেরণ করে। কিন্তু নাজ্জাসী মুসলমানদের তাড়িয়ে দিতে রাজি না হলে কুরাইশ দল ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসে।
দ্বিতীয় পর্যায় : দুই-তিন মাস পর হিজরতকারী মুসলমানগণ মক্কায় ফিরলে কুরাইশরা এবার তাঁদের উপর অত্যাচারের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। মহানবি (স) আবার ১৮ জন মহিলাসহ প্রায় ১০০ জন মুসলমানকে আবিসিনিয়ায় প্রেরণ করেন। এটাই মুসলমানদের আবিসিনিয়ায় দ্বিতীয় হিজরত নামে পরিচিত। এবারও আবিসিনিয়ার শাসক মুসলমানদের আশ্রয় দেন।
আবিসিনিয়ায় হিজরতের গুরুত্ব : আবিসিনিয়ায় হিজরত ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। মুইর বলেন, “তারা অর্থাৎ নবদীক্ষিত মুসলমানগণ যেসব কাজ সম্পাদন করে ইসলামের ইতিহাসে তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।” নিচে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো
প্রথমত, এটি ইসলামের প্রতি মুসলমানদের ত্যাগের প্রমাণ বহন করে। পাশাপাশি তারা ইসলামের জন্য ভবিষ্যতে যেকোনো ত্যাগের শিক্ষা লাভ করে।
দ্বিতীয়ত, কুরাইশগণ চেষ্টা করেও মুসলমানদের আবিসিনিয়া থেকে ফেরত আনতে পড়ে। এত দিন তারা ভেবেছিল মুসলমানদের উপর অত্যাচার করলে তাঁরা পূর্বের ধর্মে ফিরে আসবে। কিন্তুউল্টো মুসলমানদের ঈমানি শক্তির দৃঢ়তা দেখে তাঁরা দুর্বল হয়ে পড়ে।
তৃতীয়ত, আবরাহার মক্কা আক্রমণ (৫৭০-৫৭১ খ্রি) ও ধর্মীয় কারণে কুরাইশদের সাথে আবিসিনিয়ার সম্পর্ক “খারাপ ছিল। যে কারণে মুসলমানগণ কুরাইশদের অত্যাচার থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য একটি উপযুক্ত স্থান খুঁজে পায়।
চতুর্থত, আবিসিনিয়ায় গমন হজরত মুহাম্মদ (স)-এর মদিনা হিজরতের পথ সুগম করে। কুরাইশদের মীমাংসা প্রস্তাব এত প্রতিকূলতার মধ্যেও ইসলামের উত্থানে ভীত হয়ে কুরাইশ দলপতিগণ আবু তালিবের নিকট মুহাম্মদ (স)-এর সাথে বিরোধ মেটানোর প্রস্তাব দেন। এর জবাবে মহানবি (স) বলেন, “যদি কেউ আমার ডান হাতে সূর্য এবং বাম হাতে চন্দ্র এনে দেয় তবুও আমি ইসলাম বর্জন করতে। পারব না।” ফলে এ প্রস্তাব নাকচ হয়। হামজা ও ওমরের ইসলাম গ্রহণ এ অবস্থায় নবুয়তের ৬ষ্ঠ বর্ষে বীরকেশরী হজরত হামজা (রা) ও হজরত ওমর (রা)-এর ইসলাম গ্রহণে মুসলমানদের শক্তি বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। সৈয়দ আমীর আলী বলেন, “এ সময়ে নতুন ধর্ম ওমরের মতো একজন দৃঢ়চেতা সমর্থক লাভ করল। তাঁর চরিত্রশক্তি ইসলামের ভাবী গণতন্ত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে কাজ করেছিল।
কুরাইশদের বয়কটনীতি : দমন-পীড়ন সত্ত্বেও ইসলামের সাফল্যে কুরাইশগণ বিমর্ষ হয়ে পড়ে। নবুয়তের সপ্তম বছরে তারা হাশেমি গোত্র ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে সামাজিক ও অর্থনৈতিক বয়কট আরোপ করে। কুরাইশরা মুসলমানদের সাথে কথাবার্তা, ক্রয়-বিক্রয়, বিবাহ, সাহায্য-সহযোগিতা সবকিছু বন্ধ করে দেয়। তারা ৬১৭-৬১৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত হাশেমি গোত্র ও মুসলমানদের শিআবে আবু তালিব নামক গিরি উপত্যকায় জনবিচ্ছিন্ন করে রাখে। এতে কোনো লাভ না হলে কুরাইশরা তাদের অনৈতিক কার্যকলাপের জন্য অনুশোচনাগ্রস্ত হয়ে বয়কটনীতি প্রত্যাহার করে। ফলে হাশেমি ও মুসলমানগণ স্ব-স্ব গৃহে ফিরে আসে।
আমুল হুজন বা দুঃখের বছর : কুরাইশদের বর্জননীতির ধাক্কা সামলে উঠতে না উঠতেই মহানবি (স)-এর জীবনে শোকের ছায়া নেমে আসে। ৬১৯ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর জীবনসঙ্গিনী বিবি খাদিজা ৬৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁকে জান্নাতুল মু’আল্লায় দাফন করা হয়। সৈয়দ আমীর আলীর মতে, “খাদিজার মৃত্যু ছিল মুহাম্মদের জন্য এক দুঃসহ আঘাত। তিনি ছিলেন চিরকালের জন্য মুহাম্মদের আশা ও সান্ত্বনার স্বর্গীয় দূত।” খাদিজার মৃত্যুর মাত্র ৫ সপ্তাহ পর রাসুল (স)-এর অভিভাবক ও পরামর্শদাতা পিতৃব্য আবু তালিব মৃত্যুবরণ করেন। এ দুজন পরমহিতৈষীকে হারিয়ে তিনি দারুণ ব্যথিত ও মর্মাহত হন। তাই এ বছরকে ‘আমুল হুজন’বা ‘দুঃখের বছর’ বলা হয়।
তায়েফ গমন : আবু তালিবের মৃত্যুর পর বিধর্মী আবু লাহাব তাঁর স্থলাভিষিক্ত হলে কুরাইশরা সুযোগ পেয়ে হজরতের উপর অত্যাচারের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। মহানবি (স) পালিত পুত্র যায়েদকে নিয়ে মক্কার ৭৫ মাইল দক্ষিণে তায়েফ শহরে হজরত বনু আহলাফ দলের নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করে সেখানে ইসলাম প্রচার শুরু করেন। কিন্তু তায়েফবাসী ইসলামের বাণী অনুধাবন করতে না পেরে তাঁকে লাঞ্ছিত ও অপমানিত করে এবং শেষ পর্যন্ত প্রস্তরাঘাত করে তায়েফ থেকে তাড়িয়ে দেয়। এর পরও তিনি তায়েফবাসীকে অভিশাপ দেননি। তদুপরি বলেন, “আল্লাহ এদের জ্ঞান দাও।”
মিরাজ গমন : প্রিয়জনের মৃত্যু ও তায়েফ থেকে বিফল হয়ে ফিরে শোকাচ্ছন্ন থাকা অবস্থায় মহান আল্লাহ। তাকে সান্ত্বনা ও প্রেরণা দেওয়ার জন্য মিরাজের (ঊর্ধ্বগমনের) মাধ্যমে তাঁর সান্নিধ্য লাভ করান। ৬২০ খ্রিষ্টাব্দের রজব মাসের ২৬ তারিখ দিবাগত রাতে মহানবি (স) আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে পবিত্র মসজিদুল আকসা থেকে বোরাক ও রফরফ নামক দ্রুতগতির বাহনে চড়ে আল্লাহর দিদার লাভ করেন। তিনি মিরাজ থেকে ৫ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ (বাধ্যতামূলক) আদায়ের নির্দেশ পান।
আল আকাবার শপথ
প্রথম শপথ : তায়েফ হতে ফেরার পর মহানবি (স) শুধু হজ মৌসুমে বিদেশি তীর্থযাত্রীদের মাঝে ইসলামের দাওয়াত দিতে লাগলেন। ৬২০ খ্রিষ্টাব্দে হজের সময় খাজরাজ গোত্রের ৬ জন লোক মহানবি (স)-এর সাথে আকাবা পাহাড়ের পাদদেশে সাক্ষাৎ করে। তাদের ইসলাম গ্রহণ ও প্রচারে সহযোগিতার আশ্বাসের অঙ্গীকার ‘আকাবার প্রথম শপথ নামে পরিচিত।
দ্বিতীয় শপথ : ৬২১ খ্রিষ্টাব্দে হজ মৌসুমে (মদিনা) হতে ১০ জন খাজরাজ এবং ২ জন আউস গোত্রের লোক মহানবির (স) সাথে আকাবা পাহাড়ের পাদদেশে সাক্ষাৎ করে ইসলাম গ্রহণ করেন। তারা হজরত মুহাম্মদ (স) কে নবি হিসেবে মান্য করে প্রতিজ্ঞা করলেন যে, আমৃত্যু ইসলামের জন্য সংগ্রাম করবেন। তাদের এই শপথ বায়াত-উল-আকারা বা আকাবার দ্বিতীয় শপথ নামে খ্যাত। এ দলের সাথে পবিত্র কুরআন শিক্ষা দেওয়ার জন্য মুসাবকে ইয়াসরিবে পাঠানো হয়।
তৃতীয় শপথ : ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে পরবর্তী হজ মৌসুমে ২ জন মহিলাসহ ৭৫ জন ইয়াসরিববাসী মক্কায় এসে আকাবায় হজরত মুহাম্মদ (স) এর সাথে সাক্ষাৎ করে ইসলাম গ্রহণ করেন। পাশাপাশি তারা মহানবি (স)-কে ইয়াসরিব যাওয়ার আমন্ত্রণ জানান। তারা মহানবি (স)-কে ইসলাম প্রচারে সাহায্য করার জন্য বজ্রকঠোর শপথ গ্রহণ করেন, যা আকাবার তৃতীয় শপথ নামে পরিচিত।
মহানবি (স)-এর ওফাত (৬৩২ খ্রি.) : ম ক্কায় হজ পালন শেষে মদিনায় ফেরার পর হজরত মুহাম্মদ (স) এর শরীর ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়তে লাগল। বেশ কিছুদিন রোগ ভোগের পর তিনি একাদশ ১২ই রবিউল আউয়াল (৬৩২ খ্রিষ্টাব্দের ৮ই জুন) সোমবার বিকেলে ৬৩ বছর বয়সে ওফাত লাভ করেন।
আরো জানুন: