অলিগোপলি বাজার (Oligopoly Market): অলিগোপলির উৎপত্তি, অলিগোপলির প্রকারভেদ, অলিগোপলির বৈশিষ্ট্যসমূহ
যে বাজারে বিক্রেতা দুয়ের অধিক কিন্তু খুব বেশি নয়, অর্থাৎ ফার্মের সংখ্যা দুয়ের বেশি কিন্তু দশের সমান বা কম হয়, এমন বাজারকে অলিগোপলি বাজার বলা হয়।
উইলিয়াম ফেলনার (William Feliner) এরূপ বাজারকে স্বল্পের মধ্যে প্রতিযোগিতা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। মোবাইল ফোন কোম্পানি, ঢেউটিন, ইস্পাত, মোটরগাড়ি, এ্যালুমিনিয়াম ইত্যাদি উৎপন্ন দ্রব্যের ক্ষেত্রে এই বাজার পরিলক্ষিত হয়।
অলিগোপলি অপূর্ণ প্রতিযোগিতার অধীনে এমন একটি বাজার, যেখানে দুইয়ের অধিক বিক্রেতা বা উৎপাদনকারীগণ উৎপাদন কর্মে নিয়োজিত থাকে। কিন্তু তাদের সংখ্যা অনেক নয় এবং একটি দ্রব্য উৎপাদন ও বিক্রি করে তবে তাকে অলিগোপলি বাজার বলে। এ ধরনের বাজারকে আবার কয়েকজনের মধ্যে প্রতিযোগিতাও (competition among few ) বলা হয়। উল্লেখ্য যে, যখন বিক্রেতার সংখ্যা দুই থেকে দশ জন পর্যন্ত থাকে তখন অলিগোপলি বাজার সৃষ্টি হয়। দুই বিক্রেতার বাজারকে ডুয়োপলি এবং এক বিক্রেতার বাজারকে একচেটিয়া কারবার বলে।
চারটি কারণে অলিগোপলি বাজার এর উৎপত্তি হয়। যেমন-
১. বৃহদায়তন উৎপাদনের ব্যয় সংকোচ
২. কারবারির উদ্দেশ্য, বেশি মুনাফা, বেশি ক্ষমতা, বেশি আধিপত্য।
৩. শিল্পে প্রবেশে বাধা।
৪. বিভিন্ন ত্রুটিপূর্ণ সরকারি আইন।
অলিগোপলি বাজার এর প্রকারভেদ (Types of Oligopoly)
অলিগোপলি বাজার চার প্রকার । যথা
১. বিশুদ্ধ অলিগোপলি ও পৃথকীকৃত অলিগোপলি: স্বল্পসংখ্যক বিক্রেতা সমজাতীয় দ্রব্য বিক্রি করে এমন বাজারকে বিশুদ্ধ অলিগোপলি বলে। কিন্তু বাজারে স্বল্পসংখ্যক প্রতিযোগী বিক্রেতা প্রায় একই দ্ৰব্য অথচ সম্পূর্ণ সমজাতীয় নয় এরূপ দ্রব্য বিক্রি করলে সে বাজারতে পৃথকীকৃত অলিগোপলি বাজার বলা হয়।
২.খোলা অলিগোপলি ও বন্ধ অলিগোপলি: যে অলিগোপলির বাজারে নতুন প্রতিযোগী ফার্ম সহজেই প্রবেশ করতে পারে তাকে খোলা অলিগোপলি বলে। অন্যদিকে, যে অলিগোপলির বাজারে নতুন প্রতিযোগী ফার্ম সহজেই প্রবেশ করতে পারে না তাকে বন্ধ অলিগোপলি বলা হয়।
৩. আংশিক অলিগোপলি ও পূর্ণ অলিগোপলি:যে অলিগোপলি বাজারে মাত্র একটি বা অতি অল্পমাত্র বৃহদায়তন ফার্ম থাকে এবং বাজারে সে ফার্মগুলো দাম বিষয়ে নেতৃত্ব দিয়ে থাকে ও অন্যান্য ক্ষুদ্রায়তন ফার্ম সেই দাম মেনে চলে তাকে আংশিক অলিগোপলি বলে। অপরপক্ষে, যে অলিগোপলি বাজারে প্রত্যেক ফার্ম নিজের ইচ্ছামতো বা স্বাধীনভাবে দ্রব্যের যোগান দেয় বা দাম নির্ধারণ করে সেই অলিগোপলি বাজারকে পূর্ণ অলিগোপলি বাজার বলে।
৪. যোগসাজশপূর্ণ অলিগোপলি ও যোগসাজশবিহীন অলিগোপলি: যে অলিগোপলি বাজারে বিক্রেতা ও ফার্মগুলোর মধ্যে যোগসাজশ থাকে তাকে যোগসাজশপূর্ণ অলিগোপলি নামে অভিহিত করা হয়। অন্যদিকে, যে অলিগোপলি বাজারে প্রতিদ্বন্দ্বী ফার্মসমূহের মধ্যে কোনো যোগসাজশ থাকে না তাকে যোগসাজশবিহীন বা ষড়যন্ত্রহীন অলিগোপলি বলা হয়।
অলিগোপলি বাজার এর বৈশিষ্ট্যসমূহ (Characteristics of Oligopoly) :
১. ফার্মসমূহের মধ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পারস্পরিক নির্ভরশীলতায় স্বল্পসংখ্যক ফার্মের মধ্যে প্রতিযোগিতা বিদ্যমান থাকায় দাম এবং উৎপাদন নির্ধারণের ক্ষেত্রে পারস্পরিক নির্ভরশীলতা সৃষ্টি হয়।
২. অলিগোপলিতে একজন বিক্রেতা অপর বিক্রেতার সাথে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত হয়। অন্যের কাছ থেকে ক্রেতা কীভাবে ছিনিয়ে নেয়া যায় এবং নিজ দ্রব্যের ভোক্তাদেরকে কীভাবে ধরে রাখা যায় ঐ বিষয়ে প্রত্যেক বিক্রেতা চিন্তিত। তাই নিজ দ্রব্যের গুণাগুণ প্রচারের জন্য বিজ্ঞাপনের আশ্রয় নেয়।
৩. মুনাফা সর্বাধিক করার জন্য কয়েকটি ফার্ম দলীয়ভাবে উৎপাদন কাজ পরিচালনা করতে পারে যা দলীয় মনোভাব সমঝোতামূলক বা চুক্তিমাফিক হতে পারে।
৪. অলিগোপলি ফার্মসমূহের আয়তনের মধ্যে খরচের মধ্যে পার্থক্য থাকতে পারে। কোনো কোনো ফার্ম আয়তনে অনেক বড় আবার কোনো কোনো ফার্ম আয়তনে ছোট হতে পারে।
৫. মুষ্টিমেয় বিক্রেতার মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকায় একজনের পরিবর্তিত দামের দ্বারা অন্যজনের ওপর কীরূপ প্রভাব পড়ে সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায় না। যেমন—একটি ফার্ম দাম কমালে প্রতিযোগী ফার্মগুলো দাম কমাবে না কি অপরিবর্তিত রাখবে তা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। আবার দাম যদি হ্রাস করে তবে তা কতটুকু হবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। ফলে কোণ বা কিং চাহিদা রেখা সৃষ্টি হয়।
৬. এ বাজারে দ্রব্যসমূহ সমজাতীয় বা অসমজাতীয় অর্থাৎ গুণগত বা আকৃতিতে পার্থক্য থাকে। আর সমজাতীয় দ্রব্যের বাজারকে বিশুদ্ধ অলিগোপলি বলে।
৭. এ বাজারে দাম অনমনীয় থাকে। তাই কোনোরূপ অনিশ্চয়তা বা ঝুঁকি এড়ানোর জন্য দামের যুদ্ধে উৎপাদনকারীরা। করতে চায় না। ফলে এ বাজারে দামের অনমনীয়তা পরিলক্ষিত হয়।