?> মূলধনের প্রকারভেদ (Classification of Capital) - Best Information
মূলধনের প্রকারভেদ (Classification of Capital)

মূলধনের প্রকারভেদ (Classification of Capital)

মূলধনের প্রকারভেদ (Classification of Capital)

মূলধনকে বিভিন্নভাবে ভাগ করা যায়। মূলধনকে স্থায়িত্ব, প্রকৃতি, মালিকানা অনুযায়ী বিভক্ত করা যায়। নিচে এসব শ্রেণিবিভাগ আলোচনা করা হলো

ক. স্থায়িত্বের ভিত্তিতে মূলধনের প্রকারভেদ; স্থায়িত্বের ভিত্তিতে মূলধনকে দু’ভাগে ভাগ করা

১.মূলধন এবং

২. চলতি মূলধন।

 

১. স্থায়ী মূলধন (Fixed Capital): যেসব মূলধন উৎপাদন কাজে বারবার ব্যবহার করা হলেও এদের কোনো ক্ষতি বা পরিবর্তন হয় না। তাকে স্থায়ী মূলধন (Fixed Capital) বলা হয়। যেমন- কারখানাঘর, সেখানকার ভারি যন্ত্রপাতি, রেললাইন, সমুদ্রগামী জাহাজ, দালান-কোঠা ইত্যাদি। একজন শিল্পপতি তার কারখানায় যে ভারী যন্ত্রপাতি স্থাপন করে তা একবার ব্যবহার করলেই নিঃশেষ হয়ে যায় না; বরং তা বারবার ব্যবহার হয়ে অধিক উৎপাদনে সহায়তা করে এবং দীর্ঘকাল টিকে থাকে। তবে ব্যবহারজনিত কারণে মূলধনের অবচয় বা ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং নির্দিষ্ট সময়ের পর পুনঃস্থাপনের প্রয়োজন পড়ে। যেমন- কৃষকের লাঙল, শিল্পপতির কারখানা, ডাক্তারের যন্ত্রপাতি হলো স্থায়ী মূলধন।

২. চলতি মূলধন (Circulating Capital): যেসব মূলধন একবার ব্যবহারেই নিঃশেষ হয়ে যায় বা একবার ব্যবহার করলেই অন্যরূপ ধারণ করে তাকে চলতি মূলধন (Circulating Capital) বলা হয়। এ ধরনের মূলধন উৎপাদন ক্রিয়ার মধ্যে বৃত্তের মতো আবর্তিত হয় বলে একে আবর্তিত মূলধনও (circulating capital) বলে। যেমন- ধান উৎপাদনের ক্ষেত্রে বাঁজ হলো মূলধন। বীজ দ্বারা ধান উৎপাদিত হলে তার কিছু অংশ আবার ব্যবহারের জন্য বীজ হিসাবে রাখা হয়। আবার কয়লার কথাই ধরা যাক, এ কয়লা কোনো কারখানায় একবার ব্যবহার করা হলে এর অস্তিত্ব আর থাকে না। এটা পুড়ে ছাইয়ে পরিণত হয়। অনুরূপভাবে, তুলা হতে সুতা তৈরি করলে তুলা আর তুলা থাকে না। সুতরাং, যেসব মূলধন ক্ষণস্থায়ী, একবার ব্যবহার করলেই নিঃশেষ হয়ে যায় সেগুলোই চলতি মূলধন।

 

 

চলতি মূলধন:

(১) ক্ষণস্থায়ী

(২) রূপগত পরিবর্তন হয়

(৩) স্থায়ী চিত্র: আবর্তিত মূলধনের প্রবাহ চিত্র সম্পতি সচল রাখে

(৪) ব্যবসায়ের সুনাম বৃদ্ধি ঘটায়

(৫) অধিক স্থিতিস্থাপক

(৬) দৈনিক কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত হয়

(৭) স্বল্পমেয়াদী উৎস থেকে সংগৃহীত হয়।

 

খ.মালিকানার ভিত্তিতে মূলধনের প্রকারভেদ: তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

১. ব্যক্তিগত মূলধন

২. সামগ্রিক মূলধন

৩. জাতীয়

১. ব্যক্তিগত মূলধন (Private Capital): যেসব মূলধনের মালিকানা ব্যক্তি বিশেষের হাতে থাকে তাকে ব্যক্তিগত মূলধন বলা হয়। কারো মালিকানায় থাকা একটি গম ভাঙার কল, ব্যক্তিগত কারখানা, ঘর-বাড়ি, শেয়ার ইত্যাদি হলো ব্যক্তিগত মূলধনের উদাহরণ।

২. সামগ্রিক মূলধন (Collective Capital): সমাজের বা জনসাধারণের মালিকানায় যে মূলধন থাকে তাকে সামগ্রিক বা যৌথ মূলধন বলে। যেমন- বাংলাদেশের রেলপথ, রেল ইঞ্জিন, কর্ণফুলী জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র প্রভৃতি হলো সামগ্রিক বা যৌথ মূলধনের উদাহরণ।

৩.জাতীয় মূলধন (National Capital): একটি দেশের সরকারি ও বেসরকারি মূলধনের সমষ্টিকে জাতীয় মূলধন বলে। অর্থাৎ সকল ব্যক্তিগত ও সামগ্রিক মূলধনের সমষ্টি হচ্ছে জাতীয় মূলধন। যেমন- বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের একটি সমুদ্রগামী জাহাজ হলো জাতীয় মূলধন। এ ধরনের মূলধনের মালিকানা রাষ্ট্রের এবং ব্যাক্তির উভয়ের মালিকানার সমষ্টিকে বুঝিয়ে থাকে। যেমন- রাষ্ট্রীয় মালিকানায় কলকারখানা, ব্যাংক-বিমা, রেলওয়ে, পোস্ট অফিস, বিমানবন্দর ইত্যাদি থাকে। ব্যক্তিগত কলকারখানা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি সব কিছুই জাতীয় মূলধনের অন্তর্ভুক্ত।

 

গ. ব্যবহারের ভিত্তিতে মূলধনের প্রকারভেদ: ব্যবহারের ভিত্তিতে মূলধনকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

১. আবদ্ধ বা নিম্নজ্জমান মূলধন

২. অনাবদ্ধ বা ভাসমান মূলধন।

১. আবদ্ধ বা নিমজ্জমান মূলধন (Sunk Capital): যে মূলধন কেবল এক জাতীয় উৎপাদন কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে এবং অন্য ক্ষেত্রে বা অন্য উদ্দেশ্যে ব্যবহার হতে পারে না তাকে আবন্ধ বা নিমজ্জমান মূলধন বলা হয়। যেমন- লাঙল, রেলইঞ্জিন, লৌহ গলানোর চুরি ইত্যাদি। কাঠের লাঙল কেবল জমি চাষের কাজেই লাগে,অন্য কোনো কাজে লাগে না। আবার রেলইঞ্জিন কেবল রেলের বগি বা রেলগাড়ি টানার কাজে লাগে, অন্য কোনো কাজে লাগে না। এগুলো তাই আবদ্ধ মূলধন।

২. অনাবদ্ধ বা ভাসমান মূলধন (Floating Capital): যেসব মূলধন একাধিক উৎপাদন কাজে ব্যবহার করা যায় এবং প্রয়োজনবোধে একস্থান হতে অন্যস্থানে স্থানান্তর করা যায় তাকে ভাসমান মূলধন (Floating Capital) বলে। যেমন কাঁচামাল, বিদ্যুৎ, কয়লা ইত্যাদি। এ ধরনের মূলধন যেকোনো জায়গায় ব্যবহার করা যায়।

 

ঘ. ভোগের ভিত্তিতে মূলধনের প্রকারভেদ: ভোগের ভিত্তিতে মূলধনকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

১. উৎপাদক মূলধন

২. ভোগ্য

১. উৎপাদক মূলধন (Producer’s Capital): যেসব মূলধন প্রত্যক্ষভাবে উৎপাদন কাজে ব্যবহৃত হয় তাকে উৎপাদক মূলধন বলা হয়। যেমন— কলকারখানা, যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল ইত্যাদি।

২. ভোগ্য মূলধন (Consumer’s Capital): যেসব মূলধন উৎপাদন চলাকালে শ্রমিকদের ভরণ-পোষণ ও জীবনযাত্রা নির্বাহের জন্য ব্যবহৃত হয় তাকে ভোগ্য মূলধন বলা হয়। যেমন- শ্রমিকদের খাদ্যবস্তু, বাসস্থান ইত্যাদি।

 

আরও কিছু মূলধনের প্রকারভেদ হলো

১. মূলধন: সম্পত্তিগত মূলধন এমন সব দ্রব্যের সমন্বয়ে গঠিত, যা অর্থমূল্যে পরিমাপকৃত এবং যা থেকে আয়প্রবাহ আশা করা যায়। মার্শাল উৎপাদকের মূলধনকে বাণিজ্য মূলধন এবং ভোক্তার মূলধনকে ভোগ্য মূলধন বলে অভিহিত করেন।

২.অর্থগত মূলধন: সাধারণত অর্থের মাপকাঠিতে মূলধন পরিমাপ করা হয়। তবে অর্থের সবটাই উৎপাদন কাজে ব্যবহার হলো কিনা এবং তা থেকে আয় সৃষ্টির সম্ভাবনা আছে কিনা এ বিষয়টি অর্থের মাপকাঠিতে মূলধন পরিমাপ করার সময় বিবেচনা করতে হয়। যেমন, কোনো ব্যবসায়ী নিজ ভোগের জন্য কিছু টাকা আলাদা করে রাখলেন, তখন সেই টাকা মূলধন বলে গণ্য হতে পারে না। পক্ষান্তরে, যন্ত্রপাতি কিংবা কাঁচামাল ক্রয়ের জন্য টাকা আলাদা করে রাখলে তাকে মূলধন বলা যাবে।

৩. ঋণগত মূলধন: বন্ড (bonds) বা সরকারি ঋণপত্র ক্রয়ের মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের সম্ভাবনা থাকে। ঋণপ্রদানকারীর আয়ের উৎস হিসেবে তা গণ্য হয়। ঋণ কালক্রমে অর্থগত মূলধনে রূপান্তর হয়। ব্যবসায়ীরা উৎপাদন কাজে ঋণ প্রদান করে প্রত্যক্ষভাবে অর্থ উপার্জন করে। সুতরাং, ব্যবসায়ে খাটানো সমস্ত অর্থই ঋণগত মূলধন হিসাবে বিবেচনা করা হয়

 

অর্থনৈতিক উন্নয়নে মূলধনের গুরুত্ব

(Importance of Capital in Economic Development) একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে মূলধন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

১. অর্থনৈতিক অবকাঠামোর উন্নয়ন: অর্থনৈতিক অবকাঠামোর উন্নয়ন বলতে দেশের রাস্তাঘাট ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ শক্তি, সেচ ব্যবস্থা, নদীবন্দর, বিমানবন্দর ইত্যাদির উন্নয়ন সাধন করা বোঝায়। এজন্য বিপুল পরিমাণ মূলধন দরকার হয়।

২. প্রাকৃতিক সম্পদের পূর্ণ ব্যবহার: একটি দেশে নানা ধরনের প্রাকৃতিক সম্পদ থাকে। এসব সম্পদের পূর্ণ ব্যবহারের ওপর দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি নির্ভর করে। একমাত্র মূলধনের ব্যাপক প্রয়োগ দ্বারাই দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের পূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়। বাড়ে। ফলে

৩. জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন: মূলধন ব্যবহারের ফলে মাথাপিছু উৎপাদনের পরিমাণ ও শ্রমিকের মজুরি শ্রমিকরা বেশি পরিমাণ দ্রব্যসামগ্রী ক্রয় করতে পারে এবং তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়।

৪. শ্রমিকের দক্ষতা বৃদ্ধি: মূলধন শ্রমিকের দক্ষতা বৃদ্ধি করে। ফলে দেশে দক্ষ জনশক্তির সৃষ্টি হয়। এরূপ অনশক্তি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

৫. কর্মসংস্থান সৃষ্টি: মূলধন ব্যবহারের ফলে মানুষের আয় বাড়ে। ফলে মূলধন গঠিত হয় যা পরবর্তীতে বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশে নতুন নতুন শিল্প কারখানা গড়ে ওঠে। ফলে উৎপাদিত দ্রব্যসামগ্রীর চাহিদা ক্রমাগত বৃদ্ধি পায় এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ-সুবিধার সম্প্রসারণ ঘটে।

৬.উৎপাদন বৃদ্ধি: মূলধন ব্যবহারের ফলে শ্রমিকের দক্ষতা বাড়ে। ফলে গড় ও প্রান্তিক ব্যয় হ্রাস পায় এবং উৎপাদনক্ষেত্রে কিছু সময়ের জন্য ক্রমবর্ধমান উৎপাদন বিধি কার্যকর হয়। এতে কম খরচে সমাজের মোট উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।

৭. কৃষি উন্নয়ন: কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কৃষিক্ষেত্রে আধুনিক চাষপদ্ধতির প্রবর্তন এবং উত্তম বীজ, সার, কীটনাশক ইত্যাদির প্রয়োগ করতে হয়। এসব উপকরণের জন্য মূলধন একান্ত প্রয়োজন।

৮. শিল্পোন্নয়ন: দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি শিল্পোন্নতির ওপর নির্ভর করে। মূলধনের যোগান বৃদ্ধি পেলে নতুন নতুন শিল্প কারখানা গড়ে ওঠে।

৯. যন্ত্রপাতি ও উৎপাদন পদ্ধতি আবিষ্কার: মূলধন ব্যবহারের ফলে উৎপাদনক্ষেত্রে আধুনিক কলাকৌশল প্রয়োগ ও গবেষণামূলক কাজ পরিচালনা করা যায়। ফলে নতুন নতুন যন্ত্রপাতি ও উৎপাদন পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয় এবং অর্থনৈতিক উন্নতির হার বৃদ্ধি পায়।

১০. পরিকল্পনার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন: দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য পরিকল্পনা অপরিহার্য। তবে পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়নের জন্য প্রচুর পরিমাণ মূলধন দরকার। প্রয়োজনীয় মূলধন ছাড়া পরিকল্পনার সুষ্ঠু বাস্তবায়নের কথা চিন্তা করা যায় না।

১১. অর্থনৈতিক ও সামাজিক বুনিয়াদ গঠন: যোগাযোগ ও পরিবহণ ব্যবস্থা, বন্দর, বিদ্যুৎ শক্তি, সেচ ব্যবস্থা ইত্যাদিকে অর্থনৈতিক বুনিয়াদ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ইত্যাদিকে সামাজিক বুনিয়াদ বলে। দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সুদৃঢ় অর্থনৈতিক ও সামাজিক বুনিয়াদ গঠন করা প্রয়োজন। এ কাজে মূলধনের ব্যবহার অপরিহার্য।

তাই মূলধনকে অর্থনীতির ‘প্রাণশক্তি’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। মূলধন আধুনিক, বৃহদায়তন উৎপাদন ব্যবস্থার চালিকাশক্তি ।

 

Recent Posts

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *