?> বৌদ্ধ ধর্ম - Best Information
বৌদ্ধ ধর্ম

বৌদ্ধ ধর্ম

বৌদ্ধ ধর্ম

বৌদ্ধ ধর্ম দর্শনের ঊষালগ্নে উত্তর ভারতে হিন্দু ধর্মে তিন ধরনের ধর্মকর্তৃত্বের উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়।

  • ১. বৈদিক ঐতিহ্যের ধারক ও রক্ষকরূপে উচ্চ বর্ণের শিক্ত ব্রাহ্মণ পুরোহিততন্ত্র।
  • ২. সর্বত্যাগী নগ্ন সন্ন্যাসী সম্প্রদায়।
  • ৩. বস্ত্র পরিহিত পরিব্রাজক সন্ন্যাসী সম্প্রদায়।

প্রথম ধারা হিন্দু ব্রাহ্মণ্যবাদের বিরোধিতা করে দ্বিতীয় ধারার সম্প্রদায় থেকে জৈন ধর্মের উদ্ভব হয় এবং তৃতীয় ধারার মধ্যে থেকেই জন্ম হয় বৌদ্ধ ধর্ম এর

 

বৌদ্ধ ধর্ম এর প্রবর্তক

জৈন ধর্মের সিদ্ধপুরুষ মহাবীরের ৩৬ বছর পরে খ্রি: পূর্ব ৬২৩ মতান্তরে ৫৬৩ অব্দে গৌতম বুদ্ধের (সিদ্ধার্থ) জন্ম হয়” কপিলাবস্তুর শাক্য বংশীয় ক্ষত্রিয় রাজবংশের রাজা শুদ্ধোদন ও মাতা রানী (মায়াদেবী) মহামায়ার গৃহে। জন্মের পর সপ্তম দিবসে মাতৃবিয়োগ ঘটে এবং বিমাতা গৌতমীর গৃহে প্রতিপালিত হন। জ্যোতিষীর ভবিষ্যত্বাণী অনুযায়ী ‘তিনি সংসারত্যাগী হবেন এই আশঙ্কায় রাজপুত্রকে সংসারী করার যাবতীয় প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা হয়। এমনকি তাকে পরমাসুন্দরী রমনী গোপা (যশোধরা)-এর সঙ্গে বিয়ে দেয়া হয়। তার স্বাচ্ছন্দের কোন অভাব ছিল না। তথাপি তিনি স্ত্রী সন্তান ও সংসার ত্যাগ করে সন্ন্যাসব্রত গ্রহণ করেন। জরা, ব্যাধি ও মৃত্যু দেখে বিচলিত হয়ে দুঃখ-কষ্ট থেকে মুক্তির উপায় বের করতে গভীর ধ্যানমগ্ন হন। ১০৪ গয়া শহর থেকে সাত মাইল দূরে নিরঞ্জনা নদীর কূলে এক অশ্বত্থতলায় ধ্যানমগ্ন অবস্থায় ‘সমাধি’ বা বোধিসত্বা লাভ করেন। তাঁর মতে ভোগ-বিলাস পরিহারের মধ্য দিয়ে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করে দুঃখ কষ্ট জয় করার নাম নির্বাণ। নির্বাণ পরম লক্ষ্য। এই মতবাদ প্রায় ৪৫ বছর প্রচার করে ৪৮৩ খ্রি: পূর্বাব্দে বারানসীর কুশিনগরে ৮০ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।

গৌতম বুদ্ধ গভীর সাধনা বলে যে চারটি আর্যসত্যের সন্ধ্যান পেয়েছিলেন তা নিম্নরূপ:

  • ক) জগতে দুঃখ আছে
  • খ) দুঃখের কারণ আছে
  • গ) দুঃখকে প্রতিরোধ করা যায় এবং ঘ) দুঃখ থেকে পরিত্রাণের উপায় আছে।

ভোগ, বাসনা, কামনা, লোভ, লালসা প্রভৃতি কুপ্রবৃত্তি চরিতার্থ করণে মানুষ যে সব অপকর্ম সম্পাদন করে সেটাই জগতে দুঃখের কারণ। অশুভ কর্ম হল জগতের দুঃখ এবং ভোগ বাসনা চরিতার্থ করার অস্থির চিত্ততা হল দুঃখের কারণ। বুদ্ধের শিক্ষা হল ব্যক্তিক বা সামষ্টিক ভাবে যাবতীয় অপকর্ম হতে বিরত থেকে চিত্তকে পরিশুদ্ধ রেখে সুকর্ম সম্পাদন করা। তাহলে দুঃখকে প্রতিরোধ করা সম্ভব। আর দুঃখ থেকে পরিত্রাণের জন্য অষ্টাঙ্গিক মার্গের সন্ধান দিয়েছেন। মার্গ বা পন্থা হলো:

ক) সম্যক দৃষ্টি: বিদ্যাহীনতা থেকে মিথ্যার জন্ম। অবিদ্যাই অন্ধকার। অন্ধকার হল পাপ-পঙ্কিল জগৎ। সম্যক দৃষ্টিই হল জ্ঞান প্রদীপ যা সকল অন্ধকার ও পাপ পঙ্কিলতা দূরীভূত করে।

খ) সম্যক সংকল্প: সম্যক দৃষ্টির ফলে যে সত্য উপলব্ধি হয় তা বাস্তবায়নের দৃঢ় সংকল্পই সম্যক সংকল্প।

গ) সম্যক বাক্য: মিথ্যা, অপবাদ, পরনিন্দা, কটু কথা, গালমন্দ পরিহার করে সংযমী হওয়া।

ঘ) সম্যক সমাচার: পরিশীল আচার, সুআচার, নীতি নৈতিকতা অবলম্বন করা।

ঙ) সম্যক প্রচেষ্টা: কুচিন্তার বিনাশ সাধন এবং সুকর্মের পুনঃপুন: চেষ্টা করা।

চ) সম্যক জীবিকা: সৎ পন্থায় জীবিকা নির্বাহ করা। প্রবঞ্চনা পরিহার করা।

ছ) সম্যক স্মৃতি: সৎ চিন্তা ও মানসিকতা অবলম্বন করা। এতে স্মৃতি শানিত হবে,সাধনা সফল হবে, অবসাদ দূরীভূত হবে।

জ) সম্যক সমাধি: একাগ্রচিত্তে, মনোযোগসহকারে, গভীর ধ্যানসহযোগে লক্ষ্যে পৌঁছা। চরম মুক্তি বা ‘নির্বাণ লাভ হয়।

 

বৌদ্ধ ধর্ম গ্রন্থসমূহ

গৌতম বুদ্ধ নিজে কোন গ্রন্থ রচনা করে যাননি। তাঁর মুখনিঃসৃত বাণী ও উপদেশাবলী অগণিত শিষ্যের মাধ্যমে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, চীন, জাপান, কোরিয়া, ভিয়েতনাম, বার্মা, শ্রীলংকা, সুমাত্রা, জাভা প্রভৃতি অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। তাঁর তিরোধানের পর শিষ্য কাশ্যপ, উযালী ও আনন্দ তিন পণ্ডিত পালি ভাষায় তার উপদেশ সমূহ গ্রন্থকারে লিপিবদ্ধ করেন যা ‘ত্রিপিটক’ নামে পরিচিত।

পালি ভাষায় ‘তিপিটক’ আর সংস্কৃত ‘ত্রিপিটক’ সমঅর্থবোধক। ‘তি’ বা ‘ত্রি’ অর্থ তিন আর পিটক অর্থ ঝুড়ি। গৌতম বুদ্ধের শিক্ষা, ভিক্ষু জীবন বিধান, বৌদ্ধধর্ম দর্শন সার্বিক ভাবে এই তিনটি ঝুড়িতে সংকলিত হয়েছে। প্রথমটি বিনয়ের সংরক্ষণ আধার বা বিনয়পিটক। এটি তিন ভাগে বিভক্ত যা ধর্মশৃঙ্খলা, ভিক্ষুর জীবন ব্যবস্থার বর্ণনা ও নির্দেশনার সমাহার। দ্বিতীয়টি সুত্ত (সূত্র) সংরক্ষণের আধার বা সুত্তপিটক। এটি পাঁচ ভাগে বিভক্ত সেখানে বুদ্ধের বৌদ্ধত্ব লাভ, তদসংশ্লিষ্ট শিক্ষা, ধর্মাদেশসমূহ স্থান পেয়েছে। তৃতীয়টি অভিধর্ম সংরক্ষণের আধার বা অভিধম্ম পিটক। এটি সাতটি খণ্ডে বিভক্ত যেখানে বৌদ্ধ ধর্মের জটিল বিশ্লেষণসমূহ ও বুদ্ধের উচ্চমার্গ শিক্ষাসমূহ সংকলিত হয়েছে। বুদ্ধের মৃত্যুর প্রায় পাঁচ শত বছর পরে প্রথম খ্রিস্টাব্দের দিকে তালপাতায় লিখে এগুলি তিনটি বাক্সে সংরক্ষণ করা হয় সেই থেকে এটি ‘ত্রিপিটক’ নামে পরিচিতি পায়।

 

বৌদ্ধ ধর্ম এর বিশ্বাস

বৌদ্ধ ধর্ম এ ঈশ্বরের কথা নেই। মানুষের মধ্যে চিন্তা-ভাবনা, সুখ-দুখ, আনন্দ-বেদনা, কামনা-বাসনা প্রতিনিয়ত উদিত হচ্ছে। চেতনার এই অবিরাম প্রবাহই আত্মা। আত্মার লক্ষ্য নির্বাণ লাভ। নির্বাণই চূড়ান্ত লক্ষ্য, স্বর্গ বা নরক সেক্ষেত্রে নিরর্থক। এই ধর্ম কর্মবাদে বিশ্বাসী। ভাল কর্মের মাধ্যমেই নির্বাণ লাভ করা যায়। নির্বাণের মধ্য দিয়ে সে নতুন জীবন লাভ করে।

বৌদ্ধ ধর্ম এর অনুসারীদের মতে বুদ্ধ মানুষ নয়, অবতার। পরবর্তীতে তাঁর মধ্যে দেবত্ব আরোপ করা হয়। বুদ্ধ প্রভু, ভগবান। যদিও বুদ্ধ জীবদ্দশায় প্রভু বা ভগবান সম্পর্কে নীরব ছিলেন। সুকর্ম ও ধ্যানের মাধ্যমে বোধিসত্তা ও নির্বাণ লাভ করতে পারলে দুঃখ ও জরাকে জয় করা যায়। জাগতিক আকর্ষণ বিলুপ্ত হয়। জগতের সবকিছু অস্তিত্বহীন মনে হয়। এ যেন শুণ্যবাদে বিশ্বাস।
বৌদ্ধ উপদল

১. হিনযানী সম্প্রদায় : দক্ষিণাঞ্চলীয় সম্প্রদায় ভারত ও শ্রীলঙ্কায় প্রসার লাভ করেছে।

২. মহাযানী সম্প্রদায়: পূর্ব-উত্তর অঞ্চলীয় সম্প্রদায়। চীন, জাপান, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও কোরিয়া অঞ্চলে প্রসার লাভ করেছে।”

 

আরো জানুন:

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *