বায় সালাম বা অগ্রিম মূল্যে পণ্য বিপণন (Investment Method of Bai Salam)
বায় সালাম হচ্ছে অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয়। এ পদ্ধতিতে পণ্যের মূল্য আগে পরিশোধ করা হয়। আর বিক্রেতা কর্তৃক ক্রেতার নিকট পণ্য সরবরাহ করা হয় ভবিষ্যতের একটি নির্ধারিত সময়ে। অগ্রিম মূল্য প্রদান এবং নির্দিষ্ট সময়ান্তে মাল হস্তান্তরের শর্তে যে ক্রয়-বিক্রয় অনুষ্ঠিত হয় তাকে বায়’ সালাম বা অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয় বলা হয়।
বায় সালাম পরিচিতি (Introduction of Bai-Salam)
সালাম আরবি শব্দ । এর অর্থ সমর্পণ করা, হস্তান্তর করা, অগ্রিম প্রদান করা, অর্পণ করা, সোপর্দ করা ইত্যাদি। চুক্তি স্বাক্ষরের বৈঠকেই মালামালের মূল্য বিক্রেতার কাছে সমর্পণ করা হয় বলে একে বায়’ সালাম বলে। বায়’ সালাম অর্থ অগ্রিম ক্রয়। যে পণ্য এখনও উৎপাদিত হয়নি বা তৈরি হয়নি, ভবিষ্যতে হবে সে পণ্য অগ্রিম বিক্রয় করাকে বলে ‘বায়’-সালাম’। অগ্রিম মূল্য প্রদান এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ান্তে পণ্য হস্তান্তরের শর্তে এ ধরনের ক্রয়-বিক্রয় অনুষ্ঠিত হয়। অগ্রিম মূল্যে নির্দিষ্ট সময়ান্তে হস্তান্তরযোগ্য নির্ধারিত পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করাকে বায়’ সালাম বলে।
পারিভাষিক সংজ্ঞা
অগ্রিম মূল্যে নির্দিষ্ট সময়াস্তে হস্তান্তরযোগ্য নির্ধারিত পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করাকে বায়’ সালাম বলে। বায়’ সালাম এমন একটি বিক্রয় চুক্তি যাতে পণ্যের মূল্য তাৎক্ষণিকভাবে প্রদান করা হয় এবং নির্দিষ্ট/কাঙ্ক্ষিত পণ্য ভবিষ্যতের এক সুনির্দিষ্ট সময়ে সরবরাহ করা হয়।
১. ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড-এর বায়’ সালাম ম্যানুয়ালে বলা হয়েছে, “Bai-Salam is a sale where by the seller undertakes to supply some specific commodity (ies) / Product (s) to the buyer at a future time in exchange of an advanced price fully paid on the spot.”
অর্থাৎ, “বায়’ সালাম’ এমন এক ব্যবসায়িক চুক্তি যার আওতায় আগামী কোনো নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পণ্য সরবরাহের শর্তে ব্যাংক মালের দাম আগাম পরিশোধ করে। নির্দিষ্ট সময়ে ব্যাংক গ্রাহকের কাছ থেকে পণ্য সরবরাহ নিয়ে তা যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করতে পারে।”
২. ‘সেন্ট্রাল শরী’আহ্ বোর্ড ফর ইসলামিক ব্যাংকস অব বাংলাদেশ” কর্তৃক প্রণীত ও বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রেরিত (প্রস্তাবিত) ইসলামী ব্যাংক কোম্পানি আইন’ এ ‘বায়সালাম’-এর যে সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে তাতে বর্ণিত আছে, ‘বায়’ সালাম (Bai- Salam) বলতে এমন এক ক্রয়-বিক্রয় চুক্তিকে বুঝাবে, যেখানে ভবিষ্যতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পণ্য/মালামাল সরবরাহ করার শর্তে ব্যাংক গ্রাহকের সাথে তার সম্মতির ভিত্তিতে নির্ধারিত ক্রয়মূল্য আগাম পরিশোধ করবে। এ চুক্তি সম্পাদনের সময় পণ্যের গুণগত মান, পরিমাণ, ধরন, সরবরাহের স্থান ও সময় উল্লেখ করতে হবে। ব্যাংক এ ধরনের চুক্তি সম্পাদনের সময় গ্রাহককে অর্থের যোগান দেয় ।
৩. মুহাম্মদ হাবীবুর রহমান-এর মতে, “বায়’ সালাম ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে সম্পাদিত এমন একটি চুক্তি যার আওতায় বিক্রেতা কোনো নির্দিষ্ট পণ্য বা উৎপাদিত বস্তু ক্রেতার কাছে একটি সম্মত মূল্যে বিক্রি করে। ক্রেতা চুক্তি কার্যকর হওয়ার সাথে সাথে তার মূল্য পরিশোধ করে; কিন্তু ভবিষ্যতের কোনো নির্দিষ্ট সময়ে এবং কোনো নির্দিষ্ট স্থানে পণ্যের স্থিরীকৃত আকার, গুণ ও পরিমাণ অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ নিয়ে থাকে। অর্থাৎ ভবিষ্যতের নির্ধারিত কোনো সময়ে সরবরাহের শর্তে এবং তাৎক্ষণিক সম্মতমূল্য পরিশোধসাপেক্ষে নির্দিষ্ট পরিমাণ শরী’আহ্ অনুমোদিত পণ্যসামগ্রী অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয় করাকে বায়’ সালাম বলে। বায়’ সালাম বিনিয়োগের বেলায় পণ্যের মূল্য তাৎক্ষণিকভাবে পরিশোধ করা হয় এবং কাঙ্ক্ষিত পণ্য ভবিষ্যতের কোনো নির্দিষ্ট তারিখে সরবরাহ করা হয়।
৪. ড. মোহাম্মদ হায়দার আলী মিয়া লিখেছেন, “বায়’ সালাম মানে আগাম ক্রয়। এ পদ্ধতিতে জিনিসের মূল্য অগ্রিম পরিশোধ করা হয়; কিন্তু জিনিসটি সরবরাহ করা হয় ভবিষ্যতে কোনো এক নির্দিষ্ট সময়ের ভেতর। সুতরাং বায়’ সালাম অর্থ আগে ধার্যকৃত মূল্য পরিশোধ করা, পরে চুক্তি অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের ভেতর মাল সরবরাহ করা ।
৫. মুফতি মুহাম্মদ তাকী উসমানী-এর মতে, “সালাম এমন একটি ক্রয়-বিক্রয় যার মাধ্যমে বিক্রেতা এই দায়িত্ব গ্রহণ করে যে, সে ভবিষ্যতের কোনো একটি তারিখে নির্দিষ্ট জিনিস ক্রেতাকে সরবরাহ করবে এবং তার বিনিময়ে পূর্ণ মূল্য বিক্রির সময়ই অগ্রিম নিয়ে নেয় ।
(Salam is sale whereby the seller undertakes to supply some specific goods to the buyer at a future date in exchange of an advanced price fully paid at spot)বায়’ সালাম এমন একটি বিক্রয় চুক্তি যাতে পণ্যের মূল্য তাৎক্ষণিকভাবে প্রদান করা হয় এবং নির্দিষ্ট/কাঙ্ক্ষিত পণ্য ভবিষ্যতের এক সুনির্দিষ্ট সময়ে সরবরাহ করা হয়। 1 ক্রয় চুক্তির শর্তানুযায়ী ক্রীত দ্রব্য ব্যাংকের নিকট নির্দিষ্ট দিনক্ষণে অর্পণ করা হয়। কৃষি উৎপাদন তথা কৃষিজাত পণ্য ও শিল্পপণ্যের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি অত্যন্ত উপযোগী।
ইসলামী শরী‘আহর দলিল (Evidence of Islamic Shariyah)
বায়’ সালাম বা অগ্রিম মূল্যে পণ্য ক্রয়-বিক্রয় শরী’আহসম্মত একটি বিনিয়োগ পদ্ধতি। বায়’ সালাম পদ্ধতির বৈধতা কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমা দ্বারা প্রমাণিত । এখানে বায়’ সালাম বা অগ্রিম মূল্যে পণ্য ক্রয়-বিক্রয় বৈধ হওয়ার প্রমাণগুলো তুলে ধরা হলো-
১. কুরআন মজিদে ইরশাদ করা হয়েছে।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا تَدَا يَنتُمْ بِدَيْنِ إِلَى أَجَلٍ مُسَمًّى فَاكْتُبُوهُ
“হে ঈমানদারগণ, তোমরা যখন নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য একে অন্যের সাথে কোনো লেনদেন কর তখন তা লিখে রাখো।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, উপরিউক্ত আয়াতে বায়’ সালামকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ দ্রব্যের মূল্য অগ্রিম পরিশোধের মাধ্যমে চুক্তিতে ক্রয়ই হচ্ছে বায়’ সালাম । একে আল্লাহ তার কিতাবে হালাল করেছেন এবং অনুমোদন দিয়েছেন। তিনি আরো বলেছেন, এ আয়াত বিশেষভাবে বায়’ সালাম সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে।
২. হাদীস দ্বারাও বায়’ সালাম পদ্ধতি অনুমোদিত
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا، قَالَ: قَدِمَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ المَدِينَةَ وَهُمْ يُسْلِفُونَ بِالتَّمْرِ السَّنَتَيْنِ وَالثَّلَاثَ، فَقَالَ: مَنْ أَسْلَفَ فِي شَيْءٍ. فَفِي كَيْلٍ مَعْلُومٍ ، وَوَزْنٍ مَعْلُومٍ إِلَى أَجَلٍ مَعْلُومٍ
অর্থাৎ, “হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন, মহানবী (সা.) যখন হিজরত করে মদীনায় আসেন তখন সেখানকার অধিবাসিগণ এক বছর ও দুই বছর মেয়াদের জন্য বায়’ সালাম পদ্ধতিতে খেজুর ক্রয়-বিক্রয় করছিল। মহানবী (সা.) তা দেখে বললেন, “যে অগ্রিম মূল্যে ক্রয়-বিক্রয় করতে চায় সে যেন ওজন ও পরিমাপ সুনির্দিষ্ট করে, নির্দিষ্ট মেয়াদে পরিশোধ করার কথা দিয়ে অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয় করে
৩. মহানবী (সা.), প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর (রা.) ও দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রা.)-এর যুগে সাহাবিগণ বায়’ সালাম পদ্ধতিতে ক্রয়-বিক্রয় করেছেন এবং কেউ এ পদ্ধতির বিরোধিতা করেননি।
৪. সকল ফকিহগণ সালাম চুক্তির বৈধতার ব্যাপারে সর্বসম্মতভাবে একমত। মানুষের বাস্তব প্রয়োজন পূরণ ও কল্যাণ সাধনের জন্যই বায়’ সালামকে বৈধতা দেওয়া হয়েছে। ইবনুল মুনযির বলেন, সকলের মতামতে সালাম চুক্তি এমন একটি চুক্তি যেখানে একজন আরেকজনের কাছে কোনো বস্তু নির্দিষ্ট আকার, ওজন ও সরবরাহ তারিখের ভিত্তিতে বিক্রয় করে যা ইসলামী শরী’আতে অনুমোদিত। ২৬৫ সকল মাযহাবের ফকিহগণ বায়’ সালাম বৈধ হওয়ার ব্যাপারে ইজমা (ঐকমত্য পোষণ) করেছেন। এ পদ্ধতির বৈধতার ব্যাপারে কেউ ভিন্নমত পোষণ করেননি।
বায়‘ সালামের বৈশিষ্ট্যসমূহ(Characteristics of Bai-Salam)
১. বায়’ সালাম পদ্ধতিতে ক্রয়-বিক্রয়ের সময় ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে চুক্তি সম্পাদিত হতে হবে ।
২. পণ্যসামগ্রীর নির্ধারত মূল্য পরিশোধ করে অগ্রিম ক্রয় করা হয়। এ পদ্ধতির একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এতে ক্রয়-বিক্রয়কালে পণ্যের অস্তিত্ব থাকবে না। এক্ষেত্রে ব্যাংককে অবশ্যই দেখতে হবে যে, উক্ত পণ্য হস্তগত হওয়াকালীন বাজারে উক্ত পণ্যের চাহিদা থাকবে কি-না। অথবা ক্রেতা পেতে কোনো সমস্যা যেন না হয় তা বিবেচনায় রাখতে হবে। মোটকথা বায়’ সালাম একটি বিক্রয় চুক্তি যার অধীনে ইসলামী ব্যাংক ভবিষ্যতে কোনো নির্দিষ্ট সময়ে সরবরাহের শর্তে ক্রয়চুক্তিকৃত পণ্যের মূল্য বিক্রেতাকে অগ্রিম পরিশোধ করে।
৩. অগ্রিম গৃহীত অর্থের দ্বারা পণ্য তৈরি করে সরবরাহ করা হয়, তাই পণ্য পরে দেয় এবং দাম আগে নেয়।
৪. ব্যাংক পুঁজি দিয়ে পণ্য নেয়- সম্পূর্ণ দাম চুক্তির সময়ই দিতে হয়।
৫. একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ব্যাংক পণ্য সংগ্রহ করে থাকে। সময়, মূল্য, ডেলিভারি পদ্ধতি ইত্যাদি ব্যাংক ও গ্রাহক উভয়েরই আগে থেকে জানা থাকে।
৭. ব্যাংক গৃহীত দ্রব্য যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রি করতে পারে।
৮. ব্যাংক ক্রয়মূল্য এমনভাবে নির্ধারণ করবে যাতে ক্রয়কৃত দ্রব্যটি বিক্রি করে ব্যাংক মুনাফা অর্জন করতে পারে।
৯. ক্রয়কৃত দ্রব্যসামগ্রী সময়মতো প্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্যে সহায়ক জামানত নেয়া যেতে পারে।
১০. বায়’ সালামে দু’টি পণ্যের বিনিময় হয়। এতে রূপান্তর ও ঝুঁকি আছে।
১১. ক্রয়মূল্য যুক্তিসঙ্গত ও ন্যায়সঙ্গত হওয়া উচিত।
১২. ব্যাংক পণ্যসামগ্রী কিস্তিতে গ্রহণ করতে পারে।
১৩. বায়’ সালাম বিনিয়োগের আওতায় উৎপাদিত হয়নি এমন পণ্য অগ্রিম বিক্রি করা যাচ্ছে এ শর্তে যে, মালামালের পরিমাণ ও গুণাগুণ নির্ধারিত থাকতে হবে। মালামালের পরিমাণ নির্ধারণ না করে যদি কেউ কোনো পণ্য উৎপাদনের পূর্বে বিক্রি করে তবে তা বৈধ হবে না। যেমন : কেউ যদি আমের মুকুল বিক্রি করে তা বৈধ নয়; কারণ এখানে আমের পরিমাণ অনুপস্থিত।
বায় সালামের শর্তাবলি(Terms of Bai-Salam)
ক. মালের সাথে সম্পর্কিত শর্তাবলি(Terms Related to Goods)
১. এ ধরনের ক্রয়-বিক্রয়ে পণ্যের বিস্তারিত বিবরণ, পণ্যের Specification সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। অর্থাৎ চুক্তিপত্রে পণ্যের নাম, মূল্য, পরিমাণ, গুণাগুণ, মূল্য পরিশোধের সময় ও পদ্ধতি, মালামাল সরবরাহের স্থান, সময় ও ধরন, গুদাম ভাড়া, পরিবহন খরচ ইত্যাদি শর্ত সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে।
২. পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করতে হবে, চুক্তিতে তা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে এবং নির্ধারিত মূল্য চুক্তি করার সময়ই তাৎক্ষণিকভাবে পরিশোধ করতে হবে।
৩. কখন, কোথায়, কার খরচে পণ্য সরবরাহ করতে হবে তার উল্লেখ থাকতে হবে।
৪. পণ্য পরিশোধের দায়িত্ব বিক্রেতাকে নিতে হবে। পণ্য সরবরাহ করতে ব্যর্থ বিক্রেতা কর্তৃক গৃহীত মূল্য ফেরত দিতে হবে।
৫. বায়’ সালাম চুক্তি লিখিত হতে হবে এবং সাক্ষী থাকতে হবে।
৬. পণ্যের নাম, বিবরণ, পরিমাণ, গুণাগুণ, আকার, এককপ্রতি দাম, মোট দাম ইত্যাদি সুস্পষ্টভাবে চুক্তিপত্রে উল্লেখ থাকতে হবে।
৭. পণ্যের পরিবহন, বীমা, গুদামজাতকরণ ইত্যাদি বিষয়ে যদি কোনো শর্ত থাকে তবে তা সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্টভাবে চুক্তিতে উল্লেখ থাকতে হবে।
৮. চুক্তি একটি নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্যে হতে হবে। চুক্তি সম্পাদিত হওয়ার পর ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে কোনো এক পক্ষের এককভাবে চুক্তি বাতিলের এখতিয়ার থাকবে না। চুক্তিপত্র খালি ও তারিখবিহীন রাখা যাবে না। ৯. চুক্তিকৃত দ্রব্যসামগ্রী সরবরাহকালে বাজারে তা সহজলভ্য (Available) হতে হবে।
১০. বিক্রয় প্রতিনিধি নিয়োগের ক্ষেত্রে গ্রাহকের সাথে প্রতিনিধিত্ব চুক্তি সম্পাদন করতে হবে।
১১. শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্তৃক ক্রয়কৃত পণ্য সরেজমিনে পরিদর্শন ও গ্রহণপূর্বক ব্যাংকের এজেন্ট ও গ্রাহকের এজেন্টকে মালামাল বুঝিয়ে দিতে হবে।
১২. চুক্তিপত্রে ইসলামী শরী’আহ্ পরিপন্থি কোনো শর্তারোপ করা যাবে না।
খ. মূল্যের সাথে সম্পর্কিত শর্তাবলি (Terms Related to Price)
১. বায়’ সালামে পণ্যের মূল্য ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের জানা থাকতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো অস্পষ্টতা গ্রহণযোগ্য নয় ।
২. অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয়ের মূল্য নগদ অর্থের দ্বারা পরিশোধ করা যায়। আবার মালের দ্বারাও পরিশোধ করা যায়। সেবাকেও মূল্য হিসেবে প্রদান করা যাবে। যেমন : চাল, ধান, গম, যব ইত্যাদি। কাজেই চুক্তির সময়ই স্পষ্টভাবে এ কথা বলে দিতে হবে যে, মূল্য নগদ অর্থে পরিশোধ হবে, না মালের মাধ্যমে পরিশোধ করা হবে। নির্ধারিত মেয়াদের জন্যে ভাড়াযোগ্য বাসা ব্যবহার কিংবা বিমান বা নৌ ভ্রমণ ইত্যাদি সেবাও বায়’ সালামের ক্ষেত্রে মূল্য হতে পারে।
৩. মালের মাধ্যমে পরিশোধযোগ্য হলে তা ওজনযোগ্য (মণ, সের, কেজি) না পরিমাপযোগ্য (গজ, ফুট, মিটার) না গণনাযোগ্য তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে।
৪. নগদ অর্থ দ্বারা পরিশোধ করা হলে তা দেশীয় মুদ্রায়, না বিদেশি মুদ্রায় পরিশোধযোগ্য হবে তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে ।
৫. মূল্য নগদ অর্থে পরিশোধ করা হোক বা মালের দ্বারা পরিশোধ করা হোক এর পরিমাণ উল্লেখ থাকতে হবে। ওজনযোগ্য বা গণনাযোগ্য বস্তু হলে এসবের দিকে ইশারা করে মূল্য সাব্যস্ত করা হলে এই হুকুম প্রযোজ্য হবে।
৬. মূল্য নগদ অর্থে পরিশোধ করা হলে তা হাত-হাতে লেন-দেন করতে হবে।
৭. মূল্য মজলিশেই পরিশোধ করতে হবে। অন্যথায় স্থান ত্যাগের সাথে সাথেই চুক্তি বাতিল হয়ে যাবে।
৮. বায়’ সালামে মালকে ঋণের মালামালের মূল্য হিসেবে বিবেচনা করা বৈধ নয়।
সমান্তরাল বায়‘ সালাম/প্যারালাল সালাম(Parallel Bai Salam )
বায়’ সালাম চুক্তির বিক্রেতা চুক্তিকৃত মালামাল সরবরাহের জন্যে কোনো বিক্রেতার সাথে প্রথম চুক্তির অনুরূপ পণ্য সংগ্রহের জন্য অন্য একটি পৃথক সালাম চুক্তি সম্পাদন করলে দ্বিতীয় চুক্তিটিকে প্যারালাল সালাম (Parallel Salam) চুক্তি বলা হয় ।
প্যারালাল সালামের নিয়মনীতি (Principles of Parallel Baisalam) :
আধুনিক ইসলামী ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান যেহেতু প্যারালাল সালামের পদ্ধতি ব্যবহার করছে, সেজন্যে এই পদ্ধতি সঠিক হওয়ার জন্য কয়েকটি শর্ত মনে রাখা অপরিহার্য। যেমন-
১. প্যারালাল সালামে ব্যাংক ভিন্ন দু’টি চুক্তিতে চুক্তিবদ্ধ হয়। এক চুক্তি অনুযায়ী ব্যাংক ক্রেতা হয় এবং আরেকটি চুক্তি অনুযায়ী বিক্রেতা হয়। এই দু’টি চুক্তির প্রত্যেকটি অপরটি হতে পৃথক ও স্বতন্ত্র হওয়া উচিত ।
২. প্যারালাল সালাম (Parallel Salam) শুধু তৃতীয় পার্টির সাথে করা জায়েজ। প্রথম চুক্তিতে যে ব্যক্তি বিক্রেতা হবে, তাকে দ্বিতীয় প্যারালাল সালাম চুক্তিতে ক্রেতা বানানো যাবে না। কেননা, তা বায়’ ব্যাক (Bai Back) চুক্তি হয়ে যাবে, যা শরী’আহর দৃষ্টিতে বৈধ নয়। এমনকি দ্বিতীয় চুক্তিতে ক্রেতা যদি তার স্বীয় স্বাতন্ত্র্যিক আইনগত বিধান রাখে, কিন্তু তা সম্পূর্ণভাবে ঐ ব্যক্তির মালিকানায় থাকে যে প্রথম চুক্তিতে বিক্রেতা ছিল, তাহলেও এই চুক্তি (দ্বিতীয় চুক্তি) বৈধ হবে না। কেননা, কার্যত তা বায়’ ব্যাকের সাদৃশ্য হয়ে যায়।
৩. বায়’ সালামের অন্যান্য বিধিবিধান সমাস্তরাল বায়’ সালামের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।
আরো জানুন: মুশারাকা ও মুদারাবার মধ্যে পার্থক্য