?> ইসলামি অর্থনীতি কী? এর বৈশিষ্ট্য ও প্রয়োজনীয়তা - Best Information
ইসলামি অর্থনীতি

ইসলামি অর্থনীতি কী? এর বৈশিষ্ট্য ও প্রয়োজনীয়তা

ইসলামি অর্থনীতি কী, এর বৈশিষ্ট্য ও প্রয়োজনীয়তা

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। এখানে মানবজীবনের সামগ্রিক সমস্যাবলির সমাধান রয়েছে। ইসলামি অর্থনীতির মূলনীতি হলো:
(ক) পৃথিবীর সকল সম্পদের মালিক আল্লাহ। মানুষ এসব সম্পদের আমানতদার।
(খ) আল্লাহর নির্দেশিত পথে মানুষ কুরআন হাদিসের ভিত্তিতে হালাল-হারাম দেখে উৎপাদন, ভোগ, বণ্টন ইত্যাদি কার্যাবলি সম্পাদন করবে
(গ) যাকাত, ওশর, জিজিয়া কর প্রবর্তন করা
(ঘ) উত্তরাধিকার আইন বাস্তবায়ন
(ঙ) সুদ (রিবা), ঘুষ, শোষণ, মজুতদার ও জুলুম নিষিদ্ধকরণ। ফলে এখানে সামাজিক, ধর্মীয়, নৈতিক ও অর্থনৈতিক আদর্শের মধ্যে সমন্বয় ঘটে। অর্থনীতির যে শাখা মানুষের অর্থনৈতিক সমস্যাবলি ইসলামের আলোকে আলোচনা করে তাকে ইসলামি অর্থনীতি বলে।

সংক্ষেপে ইসলামের মৌলিক নিয়ম-কানুনের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে ইসলামি অর্থব্যবস্থা বলা হয়। অন্যভাবে কুরআন ও সুন্নাহর ভিত্তিতে গড়ে ওঠা অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে ইসলামি অর্থব্যবস্থা বলা হয়। যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় আল্লাহর দেওয়া বিধান অনুযায়ী মানুষের জীবিকা অর্জন ও যাবতীয় অর্থনৈতিক কার্যাবলি সম্পাদিত হয়, তাকে ইসলামি অর্থনীতি বলে।

 

ইসলামি অর্থনীতি এর উৎস:

ইসলামি অর্থনীতি এর উৎস চারটি

১. পবিত্র আল কুরআন
২. রাসূল (স) এর সুন্নাহ তথা আল হাদিস
৩. ইজমা তথা বিতর্কিত বিষয়ে ঐকমত্য
৪. কিয়াস পূর্বের অনুরূপ সমস্যার সমাধান প্রয়োগ।

 

ইসলামি অর্থনীতি এর বৈশিষ্ট্যসমূহ (Characteristics of Islamic Economy):

ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন বিধান। ইসলামি অর্থনীতি এ পরিপূর্ণ জীবন বিধানের একটি অংশ মাত্র। কুরআন ও সুন্নাহর ভিত্তিতে একটি যুগোপযোগী গতিশীল অর্থনীতি হলো ইসলামি অর্থনীতি। এ অর্থনীতির মৌলিক বৈশিষ্ট্যসমূহ নিচে আলোচনা করা হলো

১. ইসলামি অর্থনীতির মৌলিক বৈশিষ্ট্য হলো সকল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে ইসলামি নীতির বাস্তবায়ন। মৌলিক অর্থনৈতিক সমস্যা পবিত্র কুরআনের নির্দেশ, ইসলামের মূল আদর্শ এবং হাদিসের আলোকে সমাধানের পথ নির্দেশিত হয় ইসলামি অর্থনীতিতে

২. অবৈধ বা হারাম পথে অর্থ ও সম্পদ উপার্জন ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ওজনে কম দেওয়া, পতিতাবৃত্তি ও ব্যভিচারের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন, মদ উৎপাদন ও ব্যবসা, জুয়া, মূর্তি তৈরি, সুদ ইত্যাদি অবৈধ পথে উপার্জন করা ইসলামে সমর্থন করে না।। রাসূল (স) বলেন, “সর্বোত্তম কাজ হলো সৎ পথে অর্থ উপার্জন করা।”

৩. ইসলামি অর্থনীতিতে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব স্বীকার করে ব্যক্তিমালিকানা স্বীকার করা হয়। ইসলামের বিধান হলো“পৃথিবীর সবকিছুর অবিচ্ছিন্ন মালিক আল্লাহ্ তায়ালা’ [আল বাক্কারাহ:২৮৪]। ফলে মানুষ সামগ্রিকভাবে এসবের ট্রাস্টি মাত্র। এ ট্রাস্টি শর্ত হচ্ছে যে, আল্লাহর এই সম্পদসমূহ থেকে মানুষ সমান সমানভাবে উপকৃত হবে।

৪. ইসলামি অর্থনীতি ন্যায়বিচার ও ইনসাফপূর্ণ বণ্টন ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য যাকাত, আল্লাহর রাস্তায় খরচ, ওশর, জিজিয়া, ওয়াকফ, সদকাহ্, ফিত্রা প্রভৃতির বিধান বাস্তবায়ন করে। কুরআনে সম্পদ বণ্টনের কিছু নীতিমালা দেওয়া হয়েছে। যেমন— সম্পদ যেন কেবল তোমাদের ধনীদের মধ্যে আবর্তিত না হয়’ [হাশর:৭]।

৫. ইসলামি অর্থনীতিতে ধনসম্পদ সঞ্চয় ও পুঞ্জীভূত করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

৬.ইসলামি অর্থনীতিতে অপব্যয় নিষিদ্ধ। ‘আল্লাহ্ অপব্যয়কারীকে পছন্দ করেন না’ (আল আন-আম:১৪১)।

৭.ইসলামি অর্থনীতিতে সুদ, ঘুষ, মদ, জুয়া, মজুতদারি, কালোবাজারি, অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন, চুরি, ডাকাতি ইত্যাদি সম্পূর্ণরূপে নিষেধ করা হয়েছে।

৮.ইসলামি অর্থনীতির অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো যাকাত ও ওশর ব্যবস্থার প্রবর্তন। অর্থনীতিতে বৈষম্য দূরীকরণ এবং সুবিচার প্রতিষ্ঠার বিশেষ হাতিয়ার হলো যাকাত। যাকাতের ফলে গরিব, মিসকিন, পঙ্গু, দাস, ঋণগ্রস্ত, মুসাফির, মুজাহিদগণ এবং এতিমগণ উপকৃত হয়ে থাকে। যাকাতের হার ২.৫ ভাগ হলো নগদ অর্থ ও সোনা, রূপা ইত্যাদির জন্য। ওশর জমির ফসলের জন্য ৫% থেকে ১০% আদায় করা হয়।

৯. এ অর্থনীতির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো বায়তুলমালের প্রতিষ্ঠা। বিভিন্ন উৎস হতে অর্জিত ও রাষ্ট্রের কোষাগারে জমাকৃত অর্থকে বায়তুল মাল বলে।

১০. ইসলামি শ্রমনীতির লক্ষ্য হলো মালিক-শ্রমিক পরস্পর ভাই ভাই।’
১১. ইসলামি অর্থব্যবস্থা সকল প্রকার শোষণের হাতিয়ার বন্ধ ইসলামি অর্থব্যবস্থায় ঘুষ, ফটকা কারবার, কালোবাজারি, চোরাচালানি, মজুতদারি, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির কোনো সুযোগ নেই। ওজনে কম দেওয়া, ভেজাল দেওয়া, নকল করা এসব নিষেধ করা হয়েছে।

১২. ইসলামি অর্থনীতিতে সামাজিক নিরাপত্তা একটি উল্লেখযোগ্য দিক। আল কুরআনে এরশাদ হচ্ছে, “তারা প্রকৃত কল্যাণকর কাজ করলো, যারা আল্লাহ, পরকাল, কিতাব, ফেরেশতা ও নবীদের প্রতি ঈমান আনলো এবং তাদের ধন সম্পদ আল্লাহর ভালোবাসায় নিকট আত্মীয়, এতিম, মিসকিন, মুসাফির, ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসের জন্য দান করলো।” (আল বাক্কারাহ: ১৭৭)

১৩. ইসলামি অর্থনীতিতে সুদকে হারাম এবং সুদবিহীন ব্যাংক ব্যবস্থা প্রচলনের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। ১৪. ইসলামি উত্তরাধিকার আইনে ধন বৈষম্য কমে যায় এবং মুষ্টিমেয় লোকের হাতে সম্পদ জমা হয় না।

১৫. ইসলামি অর্থনীতিতে বিনা সুদে অভাবগ্রস্তকে ঋণ দেয়াকে কর্জে হাসনা বলে। এতে অভাবগ্রস্ত লোক অভাব থেকে মুক্ত হয়।
১৬. ইসলামি অর্থনীতির মূল লক্ষ্য হলো মানবকল্যাণ তথ্য সমাজকল্যাণ। দরিদ্র জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণের পাশাপাশি ক্ষেত্র বিশেষে বায়তুলমাল হতে মাসোহারা দেওয়ারও ব্যবস্থা গৃহীত হয়।

১৭. ইসলামি রাষ্ট্রে অমুসলিম নাগরিকদের স্বার্থ সংরক্ষিত থাকে। তাই ইসলামি অর্থব্যবস্থায় মহান আল্লাহর পবিত্র কুরআন ও রাসূল (স)-এর সুন্নাহর ভিত্তিতে উৎপাদন, ভোগ, বণ্টন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়, ফলে শোষণহীন ও কল্যাণকর রাষ্ট্র অর্জিত হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *