?> ইসলামী বীমার গুরুত্ব (Importance of Islamic Insurance)
ইসলামী বীমার গুরুত্ব

ইসলামী বীমার গুরুত্ব (Importance of Islamic Insurance)

ইসলামী বীমার গুরুত্ব (Importance of Islamic Insurance)

বীমাব্যবস্থাপনায় ইসলামী বীমার গুরুত্ব অপরিসীম। যে কারণে ইসলামী বীমা সারাবিশ্বে প্রচলিত হয়েছে এবং বর্তমানেও অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ সুবিধা থাকায় বর্তমান বিশ্বে ইসলামী বীমা নতুনভাবে উৎসাহ সৃষ্টি করেছে। এখানে ইসলামী বীমার গুরুত্বসমূহ উল্লেখ করা হলো।

 

. ধর্মীয় জীবনে ইসলামী বীমার গুরুত্ব:

 ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ইসলামী বীমার গুরুত্ব অপরিসীম। সাধারণভাবে বীমাকে ধর্মীয় কোনো কাজ মনে না হলেও মানুষের ধর্মসম্মত আর্থিক জীবন পরিচালনার ক্ষেত্রে বীমা বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

 

. ইবাদত কবুলের মাধ্যম : ইবাদত কবুল হওয়ার জন্যে জীবিকা হালাল হওয়া শর্ত। যে হালাল জীবিকা গ্রহণ করে তার ইবাদত কবুল হয়, আর যে হালাল জীবিকা গ্রহণ করে না তার ইবাদত কবুল হয় না। মহানবী (সা.) বলেন,

لا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ لَحْمُ نَبَتَ مِنْ سُحْتِ

 

“যে গোশত হারাম থেকে গঠিত, তা বেহেশতে প্রবেশ করবে না। যে সকল গোশত হারাম মাল থেকে গঠিত তার জন্য দোযখই শ্রেষ্ঠ স্থান ।

 

হালাল জীবিকা উপার্জনে ইসলামী বীমা একটি সহায়ক মাধ্যম। তাছাড়া সুদমুক্ত এবং ইসলামী শরী’আহর ভিত্তিতে পরিচালিত হওয়ায় এ বীমা হালাল উপার্জনের প্রেরণা। মোটকথা হালাল জীবিকার যোগানদাতা হিসেবে ইসলামী বীমা ইবাদত কবুলের মাধ্যমে পরিণত হয়েছে।

 

. হালাল উপার্জনের নিশ্চয়তা বিধান : হালাল উপার্জনের গুরুত্ব সম্পর্কে মহানবী (সা.) ঘোষণা করেন,

كسب الْحَلَالِ فَرِيضَةٌ بَعْدَ الفَرِيضَةِ

 

“হালাল উপার্জন করা ফরযের পর আরেকটি ফরয।” (বায়হাকী হাদীস-১১৬৯৫) তাই মুসলমানদের জন্যে হালাল উপার্জন করা ফরয তথা অত্যাবশ্যক। ইসলামী বীমা ব্যবসায় বীমার শেয়ারহোল্ডার ও বীমাগ্রহীতাদের জন্যে হালাল উপার্জন নিশ্চিত করে। ইসলামী বীমা সুদভিত্তিক লেনদেন পরিত্যাগ করে। তাবারুর ও মুদারাবা নীতি অবলম্বনের কারণে এতে অনিশ্চয়তা, অস্বচ্ছতা ও জুয়ার কোন উপাদান থাকে না। এ সকল কারণে ইসলামী বীমার উপার্জন হালাল ও বৈধ।

 

. হালাল পদ্ধতিতে বীমাকরণ : ইসলামী বীমা মুসলমানদেরকে হালাল পদ্ধতিতে বীমা করার সুযোগ প্রদান করেছে। কেননা ইসলামী বীমার নীতি, আদর্শ, পরিচালনা পদ্ধতি এবং কার্যক্রম সম্পূরূপে ইসলামী শরী’আহভিত্তিক।

 

. ব্যক্তিগত জীবনে বীমার গুরুত্ব : ব্যক্তিগত জীবনে ইসলামী বীমার গুরুত্বগুলো নিচে তুলে ধরা হলো :

 

. অর্থ সঞ্চয়ের সুযোগ সৃষ্টি : ইসলামী বীমার পদ্ধতিটি এমন যে, একবার কেউ বীমাচুক্তিতে আবদ্ধ হলে নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত পলিসিটি চালু রাখার জন্যে প্রিমিয়াম পরিশোধ করে যেতে হয়। এ প্রিমিয়ামের অর্থ একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত উত্তোলন করা যায় না। কাজেই অনেকটা বাধ্যতামূলকভাবে অর্থ সঞ্চয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয় ।

 

. সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি প্রতিরোধক : মানুষ ব্যক্তিগত জীবনে যেকোনো কাজ-কর্মে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে; ইসলামী বীমা এসব ক্ষতির ক্ষতিপূরণের নিশ্চয়তা প্রদান করে। প্রয়োজনে সম্ভাব্য ঝুঁকি থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্যে বীমা প্রতিষ্ঠান মূল্যবান পরামর্শ দিয়ে থাকে।

 

. বিপদের প্রতিরক্ষা বিধান : ব্যক্তি জীবনে যাতে কোনো বিপদ-আপদ না। আসতে পারে অথবা আসলেও যাতে ন্যূনতম ক্ষয়-ক্ষতি হয়, তার জন্যে বীমাকারী বীমাগ্রহীতাকে প্রাক-সতর্কতা এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্যে পরামর্শ, উপদেশ ও সাহায্য-সহযোগিতা দিয়ে থাকে।

 

. নিশ্চয়তা প্রদান: মানুষের জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে সীমাহীন অনিশ্চয়তা বিরাজ করে। ইসলামী বীমা মানুষের ব্যক্তিগত অনিশ্চয়তা দূর করে তার চলার পথকে চিন্তামুক্ত করে। নির্ধারিত প্রিমিয়ামের বিনিময়ে বীমাগ্রহীতা বীমাকৃত বিষয়ের ঝুঁকি সম্পর্কে নিশ্চয়তা বোধ করে। কেননা রীমাকৃত বিষয়বস্তুতে কোনো ক্ষতি-লোকসান হলে চুক্তি মোতাবেক বীমাপ্রতিষ্ঠান তাকে ক্ষতিপূরণ প্রদান করবে।

 

. নিরাপত্তা প্রদান : পরিবার ও ব্যক্তির কোনো বিপদ-বিপত্তি, দুর্ঘটনা, মৃত্যু ইত্যাদি কারণে কোনো ক্ষতি হলে উক্ত বিষয়ের ওপর বীমা থাকলে বীমাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিপূরণের প্রতিশ্রুতিতে তার নিরাপত্তা প্রদান করে থাকে। ক্ষতি-লোকসান যাতে না হয় সে জন্যে বীমাপ্রতিষ্ঠান প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করে থাকে ।

 

. ব্যক্তিকে স্বাবলম্বী করে: ইসলামী বীমা মানুষকে পরনির্ভরশীলতার অভিশাপ থেকে রক্ষা করে এবং স্বাবলম্বী করে তোলে। মেয়াদ উত্তীর্ণ বীমা অথবা ক্ষতিপূরণ দেয়া বীমার অর্থ ব্যক্তিকে যেকোনো অবস্থায় অপরের বোঝা হওয়ার বিড়ম্বনা থেকে রক্ষা করে থাকে।

 

. লাভজনক বিনিয়োগ : ইসলামী বীমার মাধ্যমে মানুষ হালালভাবে অর্থ সঞ্চয়ের সুযোগ পায় । বীমার মেয়াদপূর্তির পরে বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে সে এককালীন হিসেবে একটি মোটা অঙ্কের টাকা পায়। এ টাকা কোন লাভজনক ব্যবসায় বিনিয়োগ করে সে নিজের ও দেশের সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে পারে।

 

. দেউলিয়াত্ব থেকে রক্ষা : ব্যক্তিগত অথবা ব্যবসায়িক ঝুঁকি প্রতিরোধের জন্যে বীমা করা হয়। কোনো কারণে লোকটির মৃত্যু হলে অথবা ব্যবসায়ে বিপর্যস্ত হলে। বীমাদাবির টাকা পরিশোধ করা হয়। তাই মৃতের পরিবার সর্বস্বান্ত হয় না। ব্যবসায়ীও দেউলিয়াত্ব থেকে রক্ষা পায় ।

 

. শেষ বয়সের অবলম্বন : সক্ষম বয়সের বীমা অক্ষম বয়সের আর্থিক নিরাপত্তা বিধান করে থাকে। মেয়াদ উত্তীর্ণ বীমার অর্থ পেনশনের মতো গ্রহণ করে ভাবনাহীনভাবে জীবন কাটানো সম্ভব হয়।

 

. বীমার সামাজিক গুরুত্ব

 

. স্বচ্ছ জীবনযাপনের সুবিধা : সমাজবদ্ধ মানুষকে ইসলামী বীমা সঞ্চয়ী করে তোলে। সঞ্চয় মানুষের দুর্দিনের বন্ধু। তাই স্বাভাবিক অবস্থায় সচ্ছল মানুষ বীমার কল্যাণে যেকোনো খারাপ অবস্থায়ও সচ্ছল জীবনযাপন করতে পারে। বীমার ক্ষতিপূরণের অর্থ অথবা মেয়াদ উত্তীর্ণ বীমা তার সচ্ছলতা নিশ্চিত করে থাকে।

 

. সামাজিক নিরাপত্তা বিধান : ইসলামী বীমা সামাজিক নিরাপত্তা বিধান করে। মানুষ সামাজিক জীব। সমাজে কোনো প্রকার অসঙ্গতি অথবা অনিয়ম ব্যক্তি ও সমাজের ক্ষতি করে। সামাজিক উৎকর্ষতার ভিত্তি ভেঙ্গে দেয়। আর্থিক অসঙ্গতি অক্ষম ব্যক্তিদেরকে নানারকম অসাধুতার পথ অবলম্বনে বাধ্য করে। ইসলামী বীমা এই অব্যবস্থা নিরসন করে। মেয়াদোত্তীর্ণ বীমা তহবিল বা ক্ষতিপূরণের অর্থ ব্যক্তিকে সামাজিক নিরাপত্তা প্রদান করে থাকে।

 

. জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন: বীমার মাধ্যমে ব্যক্তিগত ও গোষ্ঠীগত শিক্ষা, গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত ঝুঁকির বিপক্ষে আর্থিক ক্ষতিপূরণ ও সুষ্ঠু তদারকির ব্যবস্থা করা থাকে। তাই সমষ্টিগত সামাজিক উন্নয়ন সাধ‌ীত হ‌য়ে থা‌কে।

 

. বীমার অর্থনৈতিক গুরুত্ব : বীমা একটি অর্থনৈতিক কাজ। তাই স্বাভাবিক কারণে বীমার আর্থিক গুরুত্ব সীমাহীন। নিচে ইসলামী বীমার অর্থনৈতিক গুরুত্ব আলোচনা করা হলো।

 

. জাতীয় সঞ্চয় বৃদ্ধি : বীমায় একটি নির্ধারিত সময় পর্যন্ত প্রিমিয়াম দিতে হয়। মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পূর্বে পলিসি ভেঙ্গে সাধারণত অর্থ উত্তোলনের সুযোগ থাকে না বলে মানুষ বাধ্যতামূলকভাবে সঞ্চয় করে থাকে। ব্যক্তির বাধ্যতামূলক সঞ্চয় জাতীয় সঞ্চয়কে বৃদ্ধি করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।

 

. অর্থের নিরন্তর সরবরাহ : অর্থনীতি হলো একটি দেশের চালিকাশক্তি। যে দেশের অর্থনীতি যত উন্নত সে দেশ তত উন্নত। অর্থনৈতিক কার্যক্রমের ক্রমাগত পরিমাণ ও মান বৃদ্ধি একটি দেশকে উন্নতির শীর্ষ স্থানে পৌঁছে দিতে পারে। আর অর্থনৈতিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্যে প্রয়োজন অর্থের অবাধ সরবরাহ। ইসলামী বীমা অর্থের নিরস্তর ও অবিরাম সরবরাহ নিশ্চিত করে থাকে।

 

. কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি : ইসলামী বীমা নতুন নতুন কর্মের সুযোগ সৃষ্টি * করে। প্রথমত বীমাপ্রতিষ্ঠান নিজেই কিছু কাজের ব্যবস্থা করে বীমাপ্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পর্যায়ে কর্মী নিয়োগ করা হয়। তারপর মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়া অথবা ক্ষতিপূরণ নেয়া বীমার অর্থে ছোট ছোট অনেক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। বীমাপ্রতিষ্ঠান উৎপাদন বৃদ্ধি ও মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে নিজেও কলকারখানা স্থাপন করে। এভাবে বিভিন্ন কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়ে থাকে।

 

. মূলধন গঠনে সহায়তা প্রদান: ইসলামী বীমাপ্রতিষ্ঠান বীমাগ্রহীতাকে দীর্ঘ সময় ধরে সঞ্চয় করার সুযোগ দিয়ে থাকে। বীমার মেয়াদ পূর্ণ হলে অথবা ক্ষতিপূরণের মতো কোনো ক্ষতির লোকসান হলে একসাথে অনেক টাকা পাওয়া যায়। অর্থ মূলধন হিসেবে বিভিন্ন ব্যবসায় বাণিজ্যে বিনিয়োগ করা যেতে পারে। তাই বীমার মেয়াদি সঞ্চয় মূলত মূলধন গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।

 

. আমদানি রপ্তানি প্রক্রিয়া সহজকরণ : দ্রব্যসামগ্রী আমদানি-রপ্তানিতে বিভিন্ন রকম ঝুঁকি থাকে। ইসলামী বীমাপ্রতিষ্ঠান এ ঝুঁকি গ্রহণ করে থকে। ফলে দ্রব্যাদি আমদানি-রপ্তানি সহজ হয়ে যায়।

 

. উদ্যোক্তার সংখ্যা বৃদ্ধি : ইসলামী বীমা বিভিন্ন পর্যায়ের সঞ্চয়কারীদের নিকট মেয়াদ শেষে বা ক্ষতিপূরণের মাধ্যমে একটি বড় অঙ্কের মূলধন প্রদান করে। সঞ্চয়কারীরা এ মূলধন ব্যবসায় বাণিজ্যে বিনিয়োগ করে থাকে। এভাবে উদ্যোক্তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় ।

 

. মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস করে: অর্থের অবাধ সরবরাহ, প্রয়োজনীয় কর্মসংস্থান, উৎপাদনের গতি অব্যাহত রাখা প্রভৃতির মাধ্যমে ইসলামী বীমা মুদ্রাবাজার স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা প্রদান করে থাকে। ফলে মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস পায়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *