?> জরথুষ্ট্র ধর্ম: ধর্মীয় বিশ্বাস, উৎসব ও অনুষ্ঠান - Best Information
জরথুষ্ট্র ধর্ম

জরথুষ্ট্র ধর্ম: ধর্মীয় বিশ্বাস, উৎসব ও অনুষ্ঠান

জরথুষ্ট্র ধর্ম: ধর্মীয় বিশ্বাস, উৎসব ও অনুষ্ঠান 

Abstract: Zoroastrianism was an ancient Persian religion in mid-Asia. Zarathustra was the founder of this religion. He was born in 700 B.C. according to another view in 660 B.C. in a city named Rae. Which is a part of the province of Azerbaijan in Media and was died in 583 B.C. He was mainly a follower of Majucy. Next he abandoned Majucy and founded distinct religion named Zarathustra. Zarathustra was set up on monotheism. Ahura Mazda, a soul of learning, was regarded as the creator of all. According to theologists, Zarathustra was the Famaus historical personality, who founded a widening religious faith, and rule completely. He endeavoured to free the ancient system of Persian groups from faults. Next, the idea of Polytheism was created in this religion. Zend-Avesta was a Sacred book in this religion. In this article a dependable authenticity of religious faith, festivals and ceremonies of Zarathustra has been presented serially.

 

সারসংক্ষেপ: ডারথুষ্টবান হ’ল মধ্য এশিয়ার একটি প্রাচীন পারসিক ধর্ম। জরথুই হলেন এ ধর্মের প্রবর্তক। তিনি মিডিয়ার আজরাবাইজান প্রদেশের ‘রয়ে’ নামক শহরে খ্রীষ্টপূর্ব ৭০০ মতান্তরে ৬৬০ অব্দে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন এবং খ্রীষ্টপূর্ব ৫৮৩ অব্দে ইস্ত্রিকাল করেন। তিনি ছিলেন মূলত মাজুসী ধর্মাবলম্বী। পরবর্তীতে তিনি মাজুসী ধর্ম পরিত্যাগ করে জরথুষ্ট্র নামে স্বতন্ত্র ধর্মের প্রবর্তন করেন। জারথুষ্ট্র ধর্ম ছিল একশ্বরবাদের উপর প্রতিষ্ঠিত। আহুরা মাজদা তথা এক জ্ঞানময় সত্তাকে পৃথিবীর সকল কিছুর স্রষ্টা হিসেবে মনে করা হয় ধর্মতত্ত্ববিদদের মতে, জরথুষ্ট্র হলেন বিখ্যাত ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব, যিনি একটি পুরোপুরিভাবে বিকশিত ধর্মীয় বিশ্বাস ও বিধি বিধানের প্রবর্তন করেন। তিনি পারসিক গোত্রগুলোর সনাতন প্রথাকে দোষ-ত্রুটি মুক্ত করার প্রয়াস লাভ করেন। পরবর্তীতে এ ধর্মে বিভিন্ন ঈশ্বরের ধারণা সৃষ্টি হয়। জেন্দ আবেস্তা হ’ল এ ধর্মের ধর্মীয় গ্রন্থ। আলোচ্য প্রবন্ধে জরথুষ্ট্রদের ধর্মীয় বিশ্বাস, উৎসব ও অনুষ্ঠান সম্পর্কে বস্তুনিষ্ট তথ্য ধারাবাহিকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।]

 

জরথুষ্ট্র ধর্ম এর পরিচয়

জরথুষ্ট্রবাদ (Zoroastrianism) হ’ল মধ্য এশিয়ার একটি প্রাচীন পারসিক ধর্ম। এটি সনাতন ধর্ম হিসেবে ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টান ধর্মের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত। বর্তমানে এ ধর্মের অনুসারীগণ সাধারণত পার্শী নামে পরিচিত লাভ করেছে। আবেস্তা বা জেন্দ আবেস্তা (Avesta/Zend Avesta) হ’ল তাদের পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থ। তারা আহুরা মাজদা (Ahura Mazda) অর্থাৎ এক জ্ঞানময় সত্ত্বার অস্তিত্বে বিশ্বাসী। এ কারণে তাদেরকে মাজদাবাদ (Mazdaism) নামেও আখ্যায়িত করা হয়। এ ধর্মের মৌলিক বিশ্বাস হ’ল অগ্নিকে পবিত্র জ্ঞান মনে করে উপাসনা করা। এজন্য তাদেরকে অগ্নি উপাসকও বলা হয়ে থাকে। ৩

 

জরথুষ্ট্র হলেন এ ধর্মের প্রবর্তক। তিনি মিডিয়ার (Media) অধিবাসী। তবে তিনি কবে, কোথায় ও কিভাবে জন্মগ্রহণ করেন এ বিষয়ে তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ববিদদের নিকট মতপার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। তবে অধিকাংশ ধর্মতত্ত্ববিদদের মতে, ভারট মিডিয়ার আজরবাইজান প্রদেশে রয়ে (Roe) বা রঘ নামক শহরে খ্রিষ্টপূর্ব ৭০০ মতান্ত বে ৬৬০ অব্দে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন এবং খ্রিষ্টপূর্ব ৫৮৩ অব্দে ইন্তে কাল করেন। তাঁর প্রকৃত নাম নিষ্পতম। পিতার নাম পৌরুস্প এবং মাতার নাম দুগ্ধোবা। বিবাহ ও কিছুকাল গার্হস্থ্য জীবন যাপনের পর জরথুষ্ট্র গৌতম বুদ্ধের ন্যায় গৃহত্যাগ করেন। অবশেষে নিস্পতম ঈশ্বরের পরম জ্ঞান লাভ করেন এবং জরথুস্ট্র (জরথ- সুবর্ণময়, উষ্ট্র- আলোক) নামে পরিচিতি লাভ করেন।

 

জরথুষ্ট্র ছিলেন মূলত মাজুসী ধর্মাবলম্বী। পরবর্তীতে তিনি মাজুসী ধর্ম পরিত্যাগ করে জরথুষ্ট্র নামে স্বতন্ত্র ধর্মের প্রবর্তন করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেন, জরথুষ্ট্র ছিলেন সর্বপ্রথম জগৎ শুরু; যিনি জনসমাজে মানব জীবনের নৈতিক দায়িত্বের কথা প্রচার করেছেন। তাঁর ধর্মমত খ্রিষ্টপূর্ব ১৪০০ থেকে ১০০০ অব্দে পারস্যে (বর্তমান ইরান) উৎপত্তি হয় বলে ঐতিহাসিকগণ মনে করেন। অতঃপর খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ হতে চতুর্থ অব্দ পর্যন্ত উত্তর ইরান থেকে আরম্ভ হয়ে দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকে ক্রমান্বয়ে বিস্তার লাভ করে।”

 

জরথুষ্ট্রধর্ম ছিল একেশ্বরবাদের উপর প্রতিষ্ঠিত। পরবর্তীতে বিভিন্ন ঈশ্বরের ধারণা সৃষ্টি হয়। জরথুস্ট্রের মৃত্যুর পর সাসানিয়া সাম্রাজ্য মুসলমানদের অধিকারে আসলে ইসলামের সুমহান আদর্শে আকৃষ্ট হয়ে ব্যাপক ভাবে জরথুষ্ট্ররা তাদের ধর্মমতকে পরিত্যাগ করে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করতে থাকে। বর্তমানে  ইরানে জরথুষ্ট ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা প্রায় কুড়ি হাজার (২০০০০)। কিন্তু ভারতবর্ষে এদের সংখ্যা প্রায় দুই লক্ষ (২,০০০০০)। যারা প্রধানত গোম্বাই অঞ্চলে এবং ভারতের অন্যান্য শহরে বসবাস করছে। এক পরিসংখ্যানে জানা যায় যে, ভারতে জনসংখ্যার শতকরা ০.০১ জন জরথুষ্ট্রবাদী।

 

ধর্মীয় বিশ্বাস মানব সভ্যতার অতি প্রাচীনকাল থেকে ধর্ম মানুষের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বর্তমান বিশ্বে অসংখ্য ধর্ম পরিলক্ষিত হয়। প্রত্যেক ধর্মেই ধর্মীয় বিশ্বাস। উৎসব ও অনুষ্ঠানাদি বিদ্যমান। জরথুষ্ট্র ধর্ম এর ব্যতিক্রম নয়। নিম্নে তা ধারাবাহিকভাবে বিধৃত হ’ল:

 

. আহুরা মাজদা

জরথুষ্ট্র ধর্ম মূলত একেশ্বরবাদের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। এ ধর্মে আহুরা মাজদা তথা এক জ্ঞানময় সত্ত্বাকে পৃথিবীর সকল কিছুর স্রষ্টা হিসেবে মনে করা হয়। এ কারণে এটিকে মাজদাবাদ (Mazdaism) নামেও আখ্যায়িত করা হয়। আহুরা মাজ (Ahura Mazda) শব্দের অর্থ হ’ল The wise Lord বা জ্ঞানী প্রভু। তিনি হলেন আলোক, সত্য এবং ধার্মিকতা বা ধর্মানুরাগের প্রতীক। তিনি পাপ এবং শয়তানের উর্দ্ধে। তাঁর সত্যের আলো সর্বত্র ব্যাপৃত। এ প্রসংগে আধুনিক তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ববিদ Kedar Nath Tiwari স্বীয় Comparative Religion গ্রন্থে বলেন, “Ahura Mazda is the one supreme God who is regarded as all- powerful, all-wise and all-good. He is also regarded as the creator and ruler of the world.”

 

. ইজদ আহরিম্যান

জরথুষ্ট্রধর্মের অনুসারীদের মধ্যে যখন ক্রমান্বয়ে চিন্তা চেতনার উম্মেষ ঘটতে লাগল, তখন তারা অনুভব করল যে, মঙ্গল ও অমঙ্গলকারী দেবতা এক হতে পারে না। ত তারা মঙ্গলের দেবতা ইজদ’ আর অমঙ্গলের দেবতা ‘আহরিম্যান’ এ দ্বিত্ব ঈশ্বরের পূজা অচর্না শুরু করে। এমনকি তারা তৎকালীন রাজা বাদশাহর পার্শ্বে উক্ত দেখতাদ্বয়ের মূর্তি স্থাপন করে। কারও কল্যাণ বা অকল্যাণ ঘটলে রাজার বিচারানুযায়ী শাস্তি বা পূজা পাবর্ণের নিয়ম প্রচলন করে। এভাবে কারও পুত্র সন্তান জন্ম গ্রহণ করলে ‘ইজন’ মূর্তির সামান আনুষ্ঠানিকভাবে লোভনীয় নৈবদ্য উৎসর্গ করা হত। আবার কারও পুত্র সন্তান মৃত্যুবরণ করলে আহরিম্যান মূর্তির পৃষ্ঠদেশে বেত্রাঘাত করা হত

 

ধর্মতত্ত্ববিদগণ মনে করেন যে, ‘ইজদ’ দেবতার অপর নাম হ’ল Spenta Mainyu (শুভ আত্মা) আর আহরিম্যান দেবতার নাম হ’ল Angra Mainyu (অশুভ আত্মা)। যিনি সকল মন্দ ও অপকারী জিনিসের সৃষ্টিকর্তা। এ প্রসংগে Comparative Religion গ্রন্থের ভাষ্য নিম্নরূপ”, The world is pictured as a batteground of two forces- the force of good as represented by spenta Mainyu and the force of evil as represented by Angra Mainyu or the evil spirit, which is also called Ahriman, The battle will go on and on until finally the force of good prevails over that of evil.**

 

এভাবে, অশুভ আত্মাতথা Angra Mainyu এর অনুসারীদেরকে ‘দীব পন্থী’ বলা হয়। তারা পারস্যে বসবাসের নিরাপদ স্থান না পেয়ে পূর্ব দিকে সিন্ধু উপত্যকায় অবস্থান নেয়। পর্যায়ক্রমে তারা যাযাবর বৃত্তি পরিত্যাগ করে কৃষি ও পশুপালন কার্যে নিমগ্ন হয়। পরবর্তীতে তারাই ভারতীয় আর্য নামে পরিচিতি লাভ করে।

 

. অগ্নি উপাসনা

অগ্নি হ’ল জরদুই ধর্মের অনুসারীদের এক বিশেষ উপাদান। তাই মন্দির অথবা উপাসনালয়ে সার্বক্ষনিক অগ্নি প্রজ্জ্বলিত করে রাখা হ’ত এবং তা কয়েক প্রজন্ম পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। তারা রাজ আসনেও অগ্নি স্থাপন করত। সকল কিছু অগ্নি হতে সৃষ্টি হয়েছে বলে তারা বিশ্বাস করে থাকে এবং এটিকে ন্যায়-অন্যায়ের প্রতীক হিসেবে গণ্য করে থাকে। এ ছাড়া অগ্নিকে তারা জীবনের সর্বস্তরে পবিত্রতা রক্ষাকারী বস্ত্র হিসেবেও বিবেচনা করে । এ প্রসংগে The Encyclopedia Americana তে বলা হয়েছে।”, Fire is an object of special reverence. It is kept burning in the temple and fed at fixed intervals, and embers form all the fires of the community are brought to it periodically for regeneration. কেননা তাদের মতে, অগ্নি হ’ল আলো, যা স্বর্গ থেকে উৎসারিত। এটি পানি ধ্বংস করে এবং উদ্ভিদের খাদ্য সঞ্চারণ করে। এভাবে অগ্নি চক্রাকারে মানুষ ও প্রাণীর মধ্যে খাদ্যের উৎস ও উষ্ণতা দান করে।

 

উল্লেখ্য যে, একদিন এক পরিদর্শক জরথুষ্ট্র কে জিজ্ঞাসা করলেন যে, আপনি কি একজন অগ্নি উপাসক নন? উত্তরে তিনি বললেন, একদা প্রাচীনকালে লোকেরা অগ্নি উপাসনা করত। আমার ধর্মীয় দৃষ্টিকোণে আমি সূর্য এবং অগ্নিকে সম্মান করি। উভয়েই আলোর আধার। ঈশ্বরের উদারতায় সবচেয়ে উপকারী জিনিস। এগুলো ছাড়া জীবন অন্ধকার। কিন্তু মানুষকে এই ভয়াবহ অন্ধকার পৃথিবীর মুখোমুখি হতে হত; যখন ঈশ্বর তাঁর সাহায্যের জন্য অগ্নি এবং আলো পাঠান। আমরা একমাত্র পবিত্র ঈশ্বরের উপাসক এবং অগ্নি হলো তাঁর (ঈশ্বর) পবিত্রতা ও শক্তির প্রতীক।

 

৪. জরই একজন নবী

জরপুষ্ট্রধর্মের অনুসারীরা জরথুষ্ট্রকে একজন নবী হিসেবে বিশ্বাস করে থাকে। তারা দাবী। করে যে, জরথুষ্ট্র ঈশ্বর কর্তৃক নবুওয়াত প্রাপ্ত। ধর্মতত্ত্ববিদ A. C. Bouquct বলেন, Yet he has never been regarded as the incarnation of deity, but solely as the revered prophet“ ঐতিহাসিকগণ মনে করেন যে, ভারথুষ্ট মূলত ছিলেন ইতিহাসে একজন প্রখ্যাত ধর্মতত্ত্ববিদ। তিনিই প্রথম নবী, যিনি একটি পরিপূর্ণভাবে বিকশিত ধর্মীয় বিশ্বাস ও বিধি-বিধানের প্রবর্তন করেন। তিনি পারসিক গোত্রগুলোর সনাতন প্রথাকে দোষ ত্রুটি মুক্ত করার প্রয়াস লাভ করেন। বিশেষ করে তিনি বহু দেব-দেবী বা উপাস্যের পূজা করা, প্রাণী বলি দেয়া এবং যাদু প্রদর্শন প্রভৃতি বিলুপ্ত করার পক্ষে প্রচারনা চালান। অধিকতর সুসংবদ্ধ এবং নৈতিক ভিত্তির উপর পারসিক ধর্ম ব্যবস্থাকে তিনিই প্রতিষ্ঠা করেন। ২৩ এ প্রসঙ্গে ধর্মতত্ত্ববিদ Ganga Somany বলেন, ” He had to struggle against troubles and temptations and against a society riddled with evil and corruption. He fought to establish the kingdom of God and Truth in the world, and preached for the moral welfare of mankind.” কিন্তু ইসলাম জরথুস্ট্রের নবুওয়াতকে মোটেই সমর্থণ করে না। বরং এটিকে অযৌক্তিক বলে দাবি করে। তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ববিদ ইবন হাযম আল- আন্দালুসী বলেন, অগ্নিপুজক ও মুসলামানদের একদল জরথুস্ট্রের নবুওয়াতকে স্বীকার করে। কিন্তু তাদের এই স্বীকৃতির পিছনে কোন বলিষ্ঠ প্রমাণ নেই। জরথুষ্ট হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর পূর্ববর্তী যুগের লোক। তার নবুওয়াতের বিষয়টি সম্পূর্ণ পরিতাজ্য। কারণ আল-কুরআনের পূর্ববর্তী কোন আসমানী গ্রন্থের তার নবুওয়াতের স্বীকৃতি নেই।

 

. আলো অন্ধকার

জরথুষ্ট্ররা বিশ্বাস করে যে, আহুরা মাজদা নামক ঈশ্বর বা দেবতা এই পৃথিবীকে একটি মহাজাগতিক রণক্ষেত্র বা কর্মক্ষেত্ররূপে সৃষ্টি করেছেন। তাদের মতে, এই পৃথিবীতে ভাল। মন্দের মধ্যে অবিরত দ্বন্দ্ব চলছে এবং তা চলবে। পরিশেষে ভালোর বিজয় ও মন্দের সম্পূর্ণ পরাজয় ও ধ্বংসের ভিতর দিয়ে এই ছন্য শেষ হবে। ভালোর প্রতীক হ’ল আলো এবং এর নেতা হলেন পারসিক দেবতা তরমুজ (Ormuzd)। তাঁকে আবার সাহায্য করেন পারসিক ত্রাণকর্তা মিগ্রাস। অপরদিকে খারাপ বা মন্দের প্রতীক হ’ল অন্ধকার পারসিক শয়তান আহরিম্যান ( Ahriman) এর স্রষ্টা। তাকে আবার সাহায্য করেন দোযখ বা নরকের সর্বোচ্চ পর্যায়ের উপদেষ্টারা এবং অসংখ্য ছোট ছোট শয়তান বা নারকীয় সহকারী

 

. পুরস্কার শান্তি

জরথুষ্ট্র বিশ্বাস করেন যে, এই পৃথিবীর যে সব মানুষ ভাল কাজ করবে বা ভালর প্রতি আনুগত্য দেখাবে, তারা মৃত্যুর পর একটি পুরোপুরি সুখী জীবন লাভ করবে। আর এটিই হবে তাদের পুরষ্কার। আহুরা মাজদা তাঁকে উত্তম পুরস্কার দিবেন। অন্যদিকে নির্বোধের মত দুষ্টুমি করে যারা আহরিম্যানকে সমর্থন ও অনুস্মরণ করবে এবং মন্দ। কাজ করবে, তাদের আশ্রয় হবে আগুনের সরোবরে এবং গন্ধকের হ্রদে ধর্মতত্ত্ববিদ Charles S. Braden স্বীয় The World’s Religions গ্রন্থে বলেন, “The good, those who had done the will of Ahura Mazda, were to be rewarded; the evil were to suffer the torments of hell.” তবে একবার যদি ভাল চূড়ান্ত রূপে মন্দের উপর বিজয় লাভ করতে পারে এবং আহরিম্যান ও তার নারকীয় সহযোগীদের পরাজিত ও ধ্বংস করতে পারে; তাহলে এই Physical Universe বা ভৌগলিক বিশ্বজগতের অবসান ঘটবে। ফলে বিশ্বব্রহ্মান্ড সৃষ্টির পশ্চাতে যে সব উদ্দেশ্য ছিল তা পূরণ হবে।

 

. বেহেশত দোযখ

জরথুষ্ট্র ধর্মে প্রত্যেক মানুষকে মৃত্যুর পর স্বীয় কর্মকাণ্ডের ভাল-মন্দের বিচারের কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে। তখন আহুরা মাজদাই শেষ পর্যন্ত খারাপ, মন্দ ও মিথ্যার বিরুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয় লাভ করবেন ” মিশরীয় ধর্মতত্ত্ববিদগণ মনে করেন যে, আহুরা মাজদা মৃত ব্যক্তি ধার্মিক ছিল কি না তা বিচার করবেন এবং তাদের জীবিতকালীন কর্মকাণ্ডের তালিকার ওজন করবেন। এ সময় ভাল ও সত্য খারাপ এবং মিথ্যা উপর জয়লাভ করবে। পরিশেষে মানুষ তাঁর ভাল কৃতকর্মের জন্য বেহেশতে প্রবেশ করবে। তথায় তারা চিরস্থায়ী সুখ স্বাচ্ছন্দ ভোগ করবে। পক্ষান্তরে, অসৎ ও খারাপ লোক দোযখে প্রবেশ করবে। তথায় অসৎ কর্ম ও চিন্তারই সম্মুখীন হবে না, বরং তাকে দৈহিক কঠিন শাস্তিও ভোগ করতে হবে

 

. পুলসিরাত

জরথুষ্ট্ররা পুলসিরাতের বিশ্বাসী। এই পুলটির নাম ‘আল-বার’। যা ইরানের উত্তরে একটি উঁচু পাহাড়ে অবস্থিত। যার তলদেশে নরকের আগুন বিস্তৃত। পূন্যবান ব্যক্তিরা ঐ আগুনের মধ্য দিয়ে এমনভাবে অতিক্রম করবে; যেমনভাবে দুধের নহর দিয়ে অতিক্রম করে। কিন্তু পাপীরা তাতে ভস্ম হয়ে যাবে। পূন্যবান লোক পুলটি অতিক্রম করার সময় খুবই প্রশস্ত হয়ে যাবে। কিন্তু পাপী লোক অতিক্রম করার সময় তা চুলের চেয়েও অধিক সুক্ষ্ম হয়ে যাবে। ১ এ প্রসঙ্গে ধর্মতত্ত্ববিদ Charles S. Braden এর ভাষা প্রনিধানযোগ্য। তিনি বলেন, “Final proof of good or evil was extablished by the ordeal of passing through molten metal, which to the righteous seemed as Lukewarm milk, but to the wicked was a consuming fire.” T

 

. অহম

জরথুষ্ট্র ধর্মাবলম্বীরা ‘অহম’ এর অস্তিত্বে বিশ্বাসী। ‘অহম’ এর অর্থ হ’ল আমিত্ব বিশিষ্ট সত্ত্বা। জরদুষ্ট্রের দর্শন অনুযায়ী মানুষের ‘অহম’ তার সকল প্রকার কর্মকান্ড নিরূপন ও নিয়ন্ত্রন করে। ফলে যাবতীয় কৃতকর্মের প্রতিক্রিয়া অহমের উপর প্রতিফলিত হয় জীবনকালে ক্রমবিকাশের স্তর পর্যায়ক্রমে অতিক্রম করতে থাকে। পরিশেষে মৃত্যুর পর আত্মা কৃতকর্মের জন্য পুরষ্কার অথবা শাস্তি ভোগ করে।

 

১০. ফেরেশতার অস্তিত্ব

জরথুষ্ট্ররা ফেরেশতাদের অস্তিত্বকেও বিশ্বাস করে। তাদের মতে, ফেরেশতা সর্বদা ঈশ্বরের চতুর্দিকে অবস্থান করে এবং তাঁর আদেশের জন্য সার্বক্ষনিক অপেক্ষা করতে থাকে। ৩৪ আধুনিক তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ববিদ Kedar Nath Tiwari এ প্রসঙ্গে বলেন, “It also believes in the existence of angels who always stand surrounding God and wait for his orders.”

 

১১. ব্যক্তি, চিন্তা ইচ্ছার স্বাধীনতা

জরথুষ্ট্র ধর্ম হ’ল মানুষের ব্যক্তিগত ইচ্ছা, চিন্তা ও কর্মের স্বাধীনতার বিশ্বাসী। এ ক্ষেত্রে কারও হস্তক্ষেপ করা মোটেই সমীচীন হবে না। কারণ মানব জীবন হ’ল ভাল ও মন্দের মধ্যে একটা অবিরাম বা অবিরত যুদ্ধ ক্ষেত্র। আহুরা মাজদা হচ্ছেন ভাল ও সত্যের প্রতীক। কিন্তু তাঁর শত্রু হ’ল আহরিম্যান। যা একটি ঘূনিত শক্তি এবং খারাপ ও মিথ্যার প্রতীক। আহুরা মাজদা এবং আহরিম্যান মানব সমাজকে নিয়ে একটা মহা জাগতিক যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে। এই যুদ্ধ সহস্র বছর যাবৎ চলে আসছে। কিন্তু জরথুষ্ট্রের মতে, মানুষ এই সংগ্রামের নামমাত্র তেজারতির বস্তু সামগ্রী নয়। প্রত্যেক ব্যক্তি কোন দিকে যাবে সে সম্পর্কে নিজে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়। তাঁর মতে, মানুষকে হয় ভাল ব্যবহার এবং সত্য কাজ করতে হবে অথবা শয়তানী বা দুষ্টের পথ বেছে নিতে হবে। তিনি আরও বলেন যে, আহুরা মাজদা এবং আহরিম্যানকে পছন্দ করা বা না করা সম্পর্কে মানুষের স্বাধীন ইচ্ছা শক্তি রয়েছে। সামগ্রিক জীবনকে নিয়ন্ত্রন করার জন্য মানুষের নিজেদের দ্বারা পরিচালিত হতে হবে। এক্ষেত্রে ব্যক্তির ইচ্ছা, স্বাধীনতা ও সিদ্ধান্তই হবে চুড়ান্ত।

 

১২.বোছ অংগ্র

জরথুষ্ট্ররা বোহু ও অগ্র নামে দু’টি সত্তায় বিশ্বাসী। বোহু শব্দের অর্থ হ’ল সু। আর অংগ্র শব্দের অর্থ হ’ল মন্দ বা কু। তাদের মতে, মানুষের মনে সৃষ্টিলগ্ন থেকে দু’টি বিষয়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। তন্মধ্যে একটি ‘সু’ আর অপরটি ‘কু’। মানুষ যখন স্বাধীনভাবে কোন একটি কাজ করতে যায়, তখন সুমতি বা ‘সু’ সে কাজটি অন্যায় হলে বলে একাজ অন্যায়। এটি করতে নেই। কিন্তু কু এসে বলে কর। এ দুজনের দ্বন্দ্বের মধ্যে যে জয়ী হয়, মানুষ সেই পথেই চলে। সু পরাজিত হলে কু জয়ী হয়ে। যায়। আর এ ‘ফু’ ও ‘সু’ এর দ্বৈতবাদ নিয়েই জরথুষ্ট্র ধর্ম।

 

১৩. যাযাবর বৈরাগ্যতা

জরথুষ্ট্র ধর্ম একটি গঠনমূলক ও সার্বজনীন ধর্ম। জরথুষ্ট্ররা যাযাবর ও বৈরাগ্য জীবনকে চরমভাবে ঘৃণা করে। যা মানুষের মৌলিক চাহিদা ও দর্শনকে হতাশা ও অন্ধকারের দিকে প্রভাবিত করে। এভাবে দস্যূতা, লুটতারাজ ও রক্তপাতকেও নিষেধ করা হয়েছে।

 

১৪. ভাগ্য বা তকদীর

জরথুষ্ট্রবাদীরা মানুষের ভাগ্য বা তকদীরকে বিশ্বাস করে। তবে সততা, একাগ্রতা ও প্রচেষ্ঠার মাধ্যমে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটে। তারা আরও বিশ্বাস করে যে, ভাল আত্মা পুরকৃত হয় এবং মন্দ আত্মা শান্তি প্রাপ্ত হয়। জরথুষ্ট বলেন, ‘স্বর্গ’ এবং নরক আমাদের আত্মার মধ্যেই নিহিত। তাই যেমন কর্ম তেমন ফল। তবে তিনি মানুষের ভাগ্য এবং ভবিষ্যৎ গঠনমূলক সুন্দর জীবন লাভের জন্য তিনটি বিষয়ে উপদেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন,Manasni – ভাল চিন্তা – প্রকৃত ধার্মিক Gavashi ভাল কথা উদার কথা Kunusni – ভালকর্ম- উদারতার মধ্যে সৃষ্টির প্রশংসা

 

১৫. ব্যক্তিগত জবাবদিহিতা

জরদুইবাদ একান্তভাবে একটি ব্যক্তিগতধর্ম। এতে সমষ্টিগত অপেক্ষা ব্যক্তির উপর অধিকতর দায়িত্ব অপর্ণ করা হয়েছে। কারণ ব্যক্তিকেই তার কাজ ও কথার জন্য জবাবদিহিতা ও দায়ী করা হবে। আর এজন্য ব্যক্তিকেই পুরষ্কৃত বা শাস্তিদান করা হবে। তাছাড়া আহুরা মাজদা রাষ্ট্র অথবা গোত্রের কাউকে পৃষ্ঠপোষকতা করেনা। তিনি কেবলমাত্র ঐ সমস্ত ব্যক্তির অভিভাবকত্ব করেন, যারা আহুরা মাজদার নিদের্শমত সত্য। “ও ন্যায়ের জন্য কাজ করেন।

 

১৬. সৎ অসৎ চিন্তা

চরিত্র দর্শনের ক্ষেত্রে জরথুষ্ট্র ধর্মের মৌলিক বিশ্বাস হ’ল, মানুষের কর্মকান্ড তাঁর চিন্তা- ভাবনা ও ধ্যান-ধারণার আওতাধীন। তাই সৎ চিন্তার ফল সৎকর্ম এবং অসৎ চিন্তা অনিবার্যরূপে অসৎ কর্মের দিকে নিয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে আশা তথা সত্য ও সততার গুরুত্ব অপরিসীম। পক্ষান্তরে, এর বিপরীতে রয়েছে “দুরূণ’ তথা মিথ্যা ও অসত্য। জরথুস্ট্রের মতে, মন্দের ভিত্তি হ’ল মিথ্যাচার। এ থেকে সকল মানুষকে সর্তক ও বিরত থাকতে হবে।

 

১৭. স্বর্গীয় রাজ্য

মরপুইরা বিশ্বাস করে যে, মানুষের মৃত্যুর পর শেষ বিচার প্রক্রিয়া একটি স্বর্গীয় রাজ্যের ধারণার সাথে সম্পর্কযুক্ত। যারা জীবিতকালে ভালকাজ করবে এবং সৎপথে চলবে, তাদের জন্য এই স্বর্গীয় রাজ্য সৃষ্টি করা হবে। তারা আহুরা মাজদার সাথে একটি মরনোত্তর জীবনে প্রবেশ করবে। এটিকে জরথুষ্ট্র House of Song বা সঙ্গীতের আবাসগৃহ এবং Abode of Good thought বা ভালচিন্তার অবস্থান হিসেবে অভিহিত করেছেন।

 

১৮. ধর্মীয় গ্রন্থ

জরথুষ্টুদের পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থ হ’ল আবেস্তা বা জেদ আবেস্তা (Avesta or Zend. Avesta)। এটি জরদুট কর্তৃক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্তব ও ছন্দে রচিত। গ্রন্থটি পাঁচটি অধ্যায়ে বিভক্ত। 1. The Yasna (including the Gathas) 2. The Visparat 3. The Vandidad (the videvdaf) 4. The Yashts 5. The Khorde Avesta. ভারথীরা আবেস্তা গ্রন্থকে জীবনের সর্বত্র ওরে অনুস্মরণ, অনুকরণ ও পালন করে। থাকে। তন্মধ্যে পঞ্চম অধ্যায় তথা The Khorde Avesta কে তারা দৈনন্দিন প্রার্থনার জন্য Smaller Avesta হিসেবে বিশ্বাস করে থাকে।

 

১৯. পুনরুত্থান

জন্তুষ্টধর্ম পুনরুত্থানে বিশ্বাসী। তারা মনে করে যে, মানুষ দৈহিক মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে ধ্বংস হয় না, বরং আত্মার অস্তিত্ব থেকেই যায়। তারা আরও বিশ্বাস করে, মৃত্যুর পর আত্মা শরীরের সঙ্গে তিন দিন পর্যন্ত সংযুক্ত থাকে এবং কৃতকর্মের উপর মনযোগ দেয়। চতুর্থ দিনে আত্মা শরীর থেকে বের হয় এবং বিচার কার্যালয়ের জন্য যাত্রা শুরু করে। এরপর আত্মাগুলো কৃতকর্ম অনুযায়ী পৃথিবী ধ্বংস হওয়া পর্যন্ত স্বর্গ অথবা নরকে অপেক্ষা করে। প্রলয় দিবসে আত্মগুলো নরক থেকে বের হবে এবং পরিশুদ্ধ হবে। পরিশুদ্ধের পর তারা ধার্মিক আত্মার সঙ্গে যোগদান করবে এবং পৃথিবীতে একটি নতুন চক্র শুরু হবে, যেখানে কোন প্রকার পাপ ও কার্পণ্যতা থাকবে না ।

 

২০. বিচার দিবস

জরথুষ্ট্রধর্মে বিশ্বাসীরা মনে করে যে, মানুষ মৃত্যুর পর ভাল ও মন্দ কৃতকর্মের জন্য বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। সেদিন সকলকে বিশেষ এক জায়গায় একই সময়ে উপস্থিত হতে হবে। তাদের মধ্যে ভাল মন্দের বিচার করা হবে। যারা মন্দ লোক, তারা সাদা রং বিশিষ্ট ভেড়ার মত হবে। ৭ এ প্রসংগে তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ববিদ Quinter M. Lyon (In the Judgment Day) all men stand up; whoever is righteous and whoever is wicked, every Human creature, they rouse up from the spot where its life depasts. Then is the assembly of the sadvastaran, where all manking will stand at this time; in that assembly every one sees his own good deeds and his own avil deeds; and then, in that assembly, a wicked man becomes as conspiciuaus as a white sheep among those that are black.

 

উৎসব অনুষ্ঠান

 

২১. নাভজুট

নাডজুট (Navjote) জরথুষ্ট্রদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় অনুষ্ঠান। এটি সাধারণত বয়ঃসন্ধিকালে এবং ছেলে-মেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রেই একই ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও আইনের প্রয়োগ করা হয়। পবিত্র জামা ‘Sudre’ এবং পবিত্র সূতা Kusti এর সঙ্গে ছেলে মেয়েদের পর্যবেক্ষনের অনুষ্ঠানই Navjote নামে পরিচিত। এ অনুষ্ঠানে ন্যায়ের প্রতীক আগুনকে প্রজ্জ্বলিত করে রাখা হয়। পাশাপাশি নতুন কাপড়ের সঙ্গে নতুন জামা ও নতুন সূতা নির্দিষ্ট ট্রেতে রাখা হয়।

 

অনুষ্ঠানটি প্রার্থনার মধ্য দিয়ে আরম্ভ হয়। ছেলে মেয়েরা এ সময় আহুরা মাজদা পাঠ করতে থাকে। পুরোহিতরা তাদেরকে পবিত্র পোশাক উপহার দেন। তখন তিনবার পবিত্র সূতা কোমরের চারিদিকে ঘুরানো হয়। অতঃপর ছেলে মেয়েরা নিম্নোক্ত বাক্যগুলো পড়তে থাকে।

 

ক. আমি অঙ্গীকার করছি যে, জরথুষ্ট্রর শিক্ষা ও বিশ্বাসকে স্মরণ করব।

খ. অসৎ এর বিরুদ্ধে আমার সংগ্রাম চিরস্থায়ী।

গ. আমি ন্যায়ের পথ অনুস্মরণ করব।

ঘ. ঈশ্বরের প্রতি আমার বিশ্বাস থাকবে। আমি আহুরা মাজদার প্রতি সকল ভাল আরোপ করব।’

 

অঙ্গীকার পাঠের পর ছেলে মেয়েদেরকে ভারতীয় জিনিস তথা ফুল, চাল, কুমকুম, পানপাতা, নারিকেল দ্বারা উপহার স্বরূপ আশির্বাদ করা হয়।

 

২২. নাভরোজ

নাভরোজ (Navroz) একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানের নাম। যা জরথুষ্ট্ররা নতুন বছরে জীবনের নতুনত্ব সম্পাদনের জন্য গুণকীর্তন করে। কারণ এ সময় তারা ঈশ্বরের নিকট কৃতজ্ঞতা, উদারতা ও ভালবাসা প্রকাশ করে। ৯ ধর্মতত্ত্ববিদ Ganga Somany এর ভাষায়, “It is the new year which celebrates the renewal of life in the spring. The Gahambars were seasonal festivals ment for thanksginving to God for his bounty and gifts of nature.

 

২৩. বিবাহ

বিবাহ জরথুষ্ট্র ধর্মে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। যা দু’টি আত্মার পবিত্র মিলন ও ত্যাগের আদর্শ অনুশীলনের মধ্য দিয়ে একে অন্যের পরিপূরক। এর পদ্ধতি হ’ল প্রথমে বর ও কনে পূন্যস্নান ও পর একে অন্যের মুখোমুখি করে বসানো হয়। তারপর একটি পর্দা তাদের সামনে ঝুলানো হয় এবং তাদের ডান হাত এটে ধরা হয়। দুইজন পুরোহিত মন্ত্র পাঠ করতে করতে তাদের আটকানো হাত তুলার সুতা দিয়ে বাঁধেন। তারপর সাতবার সুতা ঘুরানোর পর পর্দা উঠে যায় এবং একে অন্যের উপর চাউল নিক্ষেপ করেন। এসময় অনেক পাহলবি শ্লোক ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ করা হয়। এভাবে উভয়ে পাশাপাশি বসেন এবং দু’জন সাক্ষীর উপস্থিতিতে তিনবার চুক্তিপত্র পাঠ করা হয়।

 

২৪. মৃত ব্যক্তির সৎকার

মৃত্যু ব্যক্তিদের সৎকারের ব্যবস্থা হিসেবে দাহ করা, কবর দেয়া অথবা পানিতে নিক্ষেপ করা অবৈধ বলে জরথুষ্ট্ররা মনে করে। এ কারণে তারা মৃত্যু দেহকে উচ্চ স্থানে শেখ কাক, চিল ও কুকুরে ভক্ষণযোগ্য করে। এ প্রথা অনুযায়ী Prsees and Gadars অধিবাসীরা Towers of Silence বা নিস্তব্ধতার স্তম্ভ নামক এক উচ্চ স্তম্ভের উপর মৃত্যু দেহ রেখে সৎকার করে থাকে

 

২৫. উৎসর্গ করণ

জরথুষ্ট্রধর্মে অন্যতম ধর্মীয় অনুষ্ঠান হ’ল Sacrifice বা উৎসর্গকরণ। এ অনুষ্ঠানে আহুরা মাজদাকে সন্তুষ্ট করার জন্য পানি ও দুধ মিশ্রিত পদার্থ আগুনে নিক্ষেপ করা হয়। এমনকি অনুষ্ঠান উদযাপনের সময় আবেস্তা এবং জরথুষ্ট্র কবিতার অংশবিশেষ পাঠ করা হয়। জীবন মৃত্যুর জন্য Yasna বা Sacrifice তাদের একটি অত্যাবশ্যকীয় ধর্মীয় অনুষ্ঠান। ৩০

 

২৬. ২৫ শে ডিসেম্বর

এ ধর্মে মিথরা (সূর্য) নামক দেবতা প্রচন্ড শক্তিশালী ও বীর। ২৫শে ডিসেম্বর তাঁর জন্মদিন পালন করা হয়; যে দিনটি পৃথিবীর সূর্য পরিক্রমার সঙ্গে বিশেষভাবে যুক্ত । জরথুষ্ট্ররা এ উপলক্ষে বিশেষ উৎসব ও অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে।

 

২৭. ডোজোৎসব পালন

জরথুষ্ট্ররা পূর্ণ ও নতুন চাঁদে বিশেষ ভোজোৎসব পালন করে থাকে। এ সময় ত্রুটি ও দুধ হলো তাদের উৎসর্গকৃত খাদ্য। এছাড়াও তারা haoma নামক গাছের ডাল পো করে রস বের করে এবং তা আগুনের সামনে রেখে প্রতিনিধিত্বকারী পুরোহিতকে গান করানো হয়।”

 

২৮. প্রার্থনা

জরথুষ্ট্ররা মন্দিরে ঈশ্বরের নিকট উপাসনা ও প্রার্থনা করে। তবে পুরোহিতদেরকে দৈনিক পাঁচবার মন্দিরে প্রবেশ করতে হয়। এসময় তারা নাক ও মুখ আবৃত করে মন্দিরে প্রবেশ করে, যাতে তাঁর শ্বাস প্রশ্বাস পবিত্র আগুনকে দূষিত না করে ।

 

উপসংহার

জরথুষ্ট্রবাদ একটি প্রাচীন পারসিক ধর্ম। জরথুষ্ট্র হলেন এ ধর্মের প্রবর্তক। তিনি এ ধর্মকে মূলতঃ Ahura Mazda তথা এক জ্ঞানময় সত্ত্বার উপর প্রতিষ্ঠিত করেন। পরবর্তীতে এ ধর্মে বহু ঈশ্বরের অনুপ্রবেশ ঘটে। জরথুষ্ট ধর্মের ধর্মীয় বিশ্বাস, উৎসব ও অনুষ্ঠানাদি ছিল অনেকটা গঠনমূলক ও যুক্তিসম্মত। ইয়াহুদী, খ্রিষ্টান ও ইসলাম ধর্মের সঙ্গে তার কিছুটা। সামঞ্জস্যতা খুঁজে পাওয়া যায়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *