সংগঠন: সংগঠনের ধারণা , সফল সংগঠক বা উদ্যোক্তার গুণাবলি
Organisation শব্দটি Organ শব্দ থেকে এসেছে। এর অর্থ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ বা সুরসামগ্রী। তবে এটি ব্যবসায়ে নিয়োজিত সামগ্রীকে বোঝায়। উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণগুলোর মধ্যে সংগঠন অন্যতম। সংগঠন, ভূমি, শ্রম ও মূলধনের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে। উপকরণগুলোকে বিশ্লেষণ করলে যায়, এদের প্রয়োজনীয়তা, সঠিকভাবে ভূমির ব্যবহার, শ্রম বিভাজন, শ্রমিকের দক্ষতা নির্ধারণ, শ্রম নিবিড়তা, মূলধন নিবিড়তা, শ্রমিক-মালিক সম্পর্ক, প্রযুক্তির ব্যবহার ইত্যাদির সমন্বয় সাধনের প্রয়োজন হয়। এই সমন্বয়ের কাজটি করে থাকে সংগঠন। সুতরাং, দক্ষতার সাথে উৎপাদনের উপকরণের সমন্বয় সাধনকে সংগঠন বলা হয়। অধ্যাপক মিলওয়ার্ড-এর মতে, “কর্ম ও কর্মীর মধ্যে সামঞ্জস্যপূর্ণ পারস্পরিক সম্পর্কে সংগঠন বলে।”
অধ্যাপক মার্শাল-এর মতে, “সংগঠক হলো শিল্পের চালক বা প্রভু।”
সুতরাং, কোনো উৎপাদনের উদ্দেশ্যে ভূমি, শ্রম ও মূলধনের আনুপাতিক সংগ্রহ, সংযোজন এবং উৎপাদনে নিয়োগ করার উদ্যোগ বা প্রচেষ্টাকে সংগঠন বলে। কারবারে পরিকল্পনা গ্রহণ, নীতি নির্ধারণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ, ব্যবসার সকল তত্ত্বাবধান ও ঝুঁকি বহনের দায়িত্ব সম্পাদনের নৈপুণ্যকেই সংগঠন বলা হয়।
সংগঠন এর বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Organisation)
১. উৎপাদনের জন্য সর্বশেষ উপাদান হলো সংগঠন।
২. উৎপাদনে সংগঠক বা উদ্যোক্তা এক বিশেষ ধরনের শ্রমের উপস্থিতি।
৩. সংগঠক বা উদ্যোক্তা হলো অর্থনৈতিক উন্নয়নের ইঞ্জিন বা চালিকাশক্তি।
৪. সংগঠনকে জীবন্ত উপাদান হিসেবে গণ্য করা হয়।
৫. সংগঠক উৎপাদন কর্মকাণ্ড পরিচালনা ও সকল ধরনের তত্ত্বাবধান করে থাকেন।
৬. উৎপাদন কর্মকাণ্ডের সকল প্রকার ঝুঁকি সংগঠক বহন করে থাকেন।
৭. সংগঠনের মূল উদ্দেশ্য হলো মুনাফা অর্জন এবং কল্যাণ বৃদ্ধি করা।
সংগঠক/উদ্যোক্তা (Organiser / Entrepreneur)
১৭২৩ সালে ফ্রান্সে ফরাসি ভাষায় প্রকাশিত একটি অভিধান (Dictionaire Universal De Commerce) এ সর্বপ্রথম Entreprendre শব্দটি ব্যবহৃত হয়। Entreprendre শব্দটির ইংরেজি শব্দ হলো Entrepreneur, যার অর্থ কোনো কিছু করার দায়িত্ব গ্রহণ (To Undertake)। ১৯৩৩ সালে ফ্রান্সে বলা হয় যে, একটি প্রতিষ্ঠান স্থাপনে যিনি উদ্যোগ গ্রহণ করেন বিশেষভাবে মূলধন ও শ্রমিকের মধ্যে মধ্যস্থতা করেন, তিনি উদ্যোক্তা। যে ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ নতুন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গঠনের নিমিত্তে সর্বপ্রকার ঝুঁকি বহন করে উদ্যোগ গ্রহণ করে, তাকে বা তাদেরকে উদ্যোক্তা বলে।
উৎপাদনের উপকরণগুলোকে সংগঠনের মাধ্যমে সমন্বয় করে উৎপাদন কাজটি সঠিকভাবে যে ব্যক্তি পরিচালনা করেন তাকে সংগঠক বা উদ্যোক্তা বলা হয়। সংগঠক বা উদ্যোক্তা ব্যবসায় বা শিল্প প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে থাকেন। অর্থনীতির প্রধান বা অন্যতম সমস্যা- কী পরিমাণ, কীভাবে, কার জন্য উৎপাদন করা হবে এবং কীভাবে বণ্টন করা হবে। তা নির্ধারণ করে থাকেন সংগঠক। উৎপাদন প্রতিষ্ঠান পরিচালনার ওপর প্রতিষ্ঠানের সফলতা নির্ভর করে। দক্ষ সংগঠক প্রতিষ্ঠানের সফলতা নিশ্চিত করতে পারেন। তাই অধ্যাপক মার্শাল সংগঠককে Captain of the industry বা শিল্পের চালক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
সুতরাং, যে ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ মুনাফা লাভের উদ্দেশ্যে উৎপাদনের সমস্ত উপকরণকে একত্রিত করে উদ্যম, কর্মস্পৃহা, উদ্ভাবনী শক্তি এবং প্রেরণার সাহায্যে সংগঠনকে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে আসার লক্ষ্যে দায়িত্ব গ্রহণ করেন তাকে। উদ্যোকা বলে। সংগঠনের প্রকৃতি অনুযায়ী উদ্যোক্তাই সংগঠক, ব্যবস্থাপক, নিয়ন্ত্রক, ঝুঁকিবাহক বা ব্যবসায়ের মালিক বা শিল্পোদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
সফল সংগঠক বা উদ্যোক্তার গুণাবলি :
সংগঠক বা উদ্যোক্তার যোগ্যতা ও গুণাবলির ওপর সংগঠনের সফলতা ও বিফলতা নির্ভর করে। এজন্যই উদ্যোক্তার গুণাবলি ও যোগ্যতার কারণে ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা বৃহৎ ব্যবসায় রূপ নেয়। আবার দক্ষতার অভাবে বৃহৎ ব্যবসায় ক্রমাগত্ত ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যায়। বাস্তবে এসবের জ্বলন্ত প্রমাণ ও উদাহরণ বিদ্যমান। তাই একজন উদ্যোক্তার যেসব গুণাবলি থাকা আবশ্যক তা হলো:
১.সাংগঠনিক সক্ষমতা: সফল উদ্যোক্তার জন্য সাংগঠনিক দক্ষতা ও ক্ষমতা অর্জন অপরিহার্য। তা না হলে সফলতা অর্জন সম্ভব নয়।
২. উদ্যোক্তার আকাঙ্ক্ষা: তীব্র আকাঙ্ক্ষা পোষণকারী ব্যক্তিরা শিল্পোেদ্যাক্তা হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারেন। কারণ, আকাঙ্ক্ষা অর্জনের তীব্র চাহিদা তাকে কঠোর পরিশ্রম করতে প্রেরণা যোগায়।
৩.বুদ্ধিমত্তা: উপস্থিত ও সম্ভাব্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য উদ্যোক্তাকে চৌকস ও বুদ্ধিমান হতে হবে। কারণ, সামান্য পুঁজি ও সম্পদ নিয়ে অনেকে বুদ্ধিমত্তার গুণে সফল উদ্যোক্তা হয়েছে।
৪.নেতৃত্বের যোগ্যতা: একজন সফল উদ্যোক্তার ভিতর নেতার গুণাবলি থাকতে হবে।
৫.ঝুঁকি গ্রহণ: একজন সফল উদ্যোক্তার সকল প্রকার ঝুঁকি গ্রহণের মানসিকতা নিয়েই উদ্যোগ গ্রহণ করতে হয়।
৬. কর্মে দৃঢ়তা: সফল উদ্যোক্তা সুদৃঢ়ভাবে কর্মে নিয়োজিত থাকেন এবং কর্মে জয়লাভ করেই ক্ষান্ত হন।
৭. স্বাধীনচেতা: একজন উদ্যোক্তা আত্মনির্ভরশীল ও স্বাধীনচেতা থাকেন। অন্যের ওপর নির্ভরশীলতা তিনি পছন্দ করেন না।
৮.সৃষ্টিশীলতা: উদ্যোক্তা নতুন কিছু সৃষ্টি করতে ভালোবাসেন, নব নব সৃষ্টি একজন উদ্যোক্তা পছন্দ করেন।
৯.দূরদর্শিতা: সফল উদ্যোক্তার একটি বিশেষ গুণ হলো দূরদর্শিতা। এর মাধ্যমেই একজন উদ্যোক্তা বর্তমানে ভবিষ্যৎকে পরিগণনা করেন।
১০. বিবিধ গুণাবলি: এসব গুণাবলির পাশাপাশি সিদ্ধান্ত গ্রহণে সঠিকতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, অধ্যবসায়, ভালো চরিত্র, পূর্ব অভিজ্ঞতা, সততা ইত্যাদি গুণাবলি একজন সফল ও আত্মবিশ্বাসী উদ্যোক্তার মধ্যে থাকা প্রয়োজন।
Recent Posts
- শ্রমবাজার কী? শ্রমবাজারের প্রকাভেদ, শ্রমের দক্ষতা নির্ধারক বিষয়সমূহ
- খাজনা তত্ত্ব (Theory of Rent)
- যৌথ মূলধনী কারবার (Joint Stock Company) বৈশিষ্ট্য, সুবিধা ও অসুবিধা
- যোগান: যোগানের সংজ্ঞা, যোগানের বিধি ও যোগানের নির্ধারকসমূহ
- মোট খাজনা (Gross Rent)